somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বামন হয়ে চাঁদে হাত

১০ ই মে, ২০১৬ রাত ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অতিধার্মিকদের প্রায়শ বলতে শুনি, আনুগত্য করলে ঈশ্বর নাকি খুশি হন, আর পাপাচার করলে হন রুষ্ট। আসলেই কি? ধারণাটা মানুষের। মানুষের উপলব্ধি মানবিক, অতিমানবিক হয় না। মানুষ কখন খুশি হয়? কীসে সে ক্রুদ্ধ হয়? কেন দুঃখিত হয় বা অভিমান করে?

চাওয়ার আগেই ভালো কিছু পেলে, মহৎ কাজে সফল হলে, খুব উপকৃত হলে খুশি হয়, প্রত্যাশিত সাধারণ জিনিসটি পেয়ে গেলেও হয়। এমনটি দৃঢ়ভাবে মনে হয় না যে, ঈশ্বরের অভাব থাকতে পারে।¹ মহত্ত্ব আপেক্ষিক; দানবীর লক্ষ টাকা বিলালেও অহঙ্কারে এতটুকু স্ফীত হয় না, এদিকে নীচমনা ভিখিরি দুটো টাকা দান করেই নিজেকে অপূর্ব মাহাত্ম্যের সূচক ভেবে বসে। ঈশ্বরের উপকার করা অসম্ভব, মানুষের মতো নেই তাঁর প্রত্যাশা।² দাস মনিবের হুকুম তামিল করলে ঘোষিত আহার্য পাবে, নতুবা শাস্তি পাবে— এখানে মনিবের আনন্দিত বা শোকাতুর হওয়ার কিছু আছে কি? দুনিয়ায় আমরা দেখি যে, দাস অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে মনিব খুশি হয়, ঈশ্বরের অনুভূতি কি অনুরূপ?
অধিকার হারালে যদি প্রতিবাদ করতে না পারে, আঘাত পেলে প্রতিশোধ নিতে না পারে, তবেই মানুষ দুঃখ পায় অর্থাৎ দুর্বলেরাই বেশি দুঃখ পেয়ে থাকে। ষণ্ডাটা নুন আনতে পান্তা ফুরোয় এমন কারও ওপর চড়াও হলে শোষিতের তেমন কিছু করার থাকে না, সে কেবল দুঃখ পায়। এমন দুর্বৃত্ত যখন প্রতাপশালী কারও দিকে হাত বাড়ায়, আক্রান্ত কি তখন হা-হুতাশ করেই ক্ষান্ত হয়? না, হয় না, বরং ক্রুদ্ধ হয়। কারণ সে ক্ষমতাবান, চাইলেই ষণ্ডার বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে। ঈশ্বর মহাপরাক্রমশালী, অতএব তাঁর দুঃখ থাকার কথা না। তবে তিনি রাগান্বিত হন বলে কথিত আছে, অবশ্য অনেকে তাতে সংশয়াকুল।

অভিমান সবার সঙ্গে চলে না, এর চৌহদ্দি ছোট। ছাত্র শিক্ষকের সঙ্গে অভিমান করতে পারে না, যেমন পারে না নির্ভরশীল বাচ্চা তার মায়ের সঙ্গে। কার্যকলাপে অসন্তুষ্ট হলেও একে ঠিক অভিমান বলা যায় না। অবাঞ্ছিত আচরণে প্রিয়তম, বন্ধু, সমবয়সী অভিমান করতে পারে, চলন-বলনে টের পেয়ে গেলে অপরজন তা মিটিয়েও নিতে পারে। পরমেশ্বর অতুল্য ও অবিনশ্বর, সেখানে এসব আদৌ যায় না।
এক ভাদা যুগান্তরে লিখেছিল “বান্দার নেক আমলে আল্লাহ গর্ববোধ করেন”। ভাগাভাগি না করলে পূর্ণ আনন্দ পাওয়া যায় না, তো তিনি গর্বটা প্রকাশ করেন কার কাছে? পরীক্ষাকে তুলনায় টানি:
আঞ্চলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ভালো ফল পেলে তার আত্মীয় ও শিক্ষকেরা গর্বিত হন। জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় পাসের হার বাড়লে শিক্ষামন্ত্রীর নাক উঁচু হয়। মোটের ওপর শিক্ষার হার বাড়লে প্রধানমন্ত্রী সগৌরবে গলাবাজি করেন। দৈশিক পরীক্ষায় রাষ্ট্রপ্রধানের মতলব চরিতার্থ হতে পারে, এসব খতিয়ে দেখা হয় না। হোক যেভাবেই, সাফল্যের খবরটি বিশ্বমঞ্চে পৌঁছাতে পারলে কেল্লা ফতে। অথবা, শীর্ষ শিক্ষোন্নত দেশটি নিজের সাফল্যের জন্যে গর্ব বোধ করতে পারে। তো, আল্লার তো টপকে যাওয়ার কিছু নেই, পেরিয়ে যাওয়ার কোনো মাইলফলক নেই। তিনি কি মানুষ বা দূতের সঙ্গে গর্বের ব্যাপারটা বলাবলি করবেন? করলে, অন্তর্গত সবাই তো বলতে পারে যে, সবকিছুর নিয়ন্তা বলে তিনিই এসব করিয়ে নিয়েছেন। লক্ষণীয়, রাষ্ট্রপ্রধানের রাষ্ট্রচালনা ও জগদীশের পক্ষে সবকিছু পরিচালনা এখানে তুল্য নয়। বেশি বাড়াবাড়ি করলে উৎখাত করা হতে পারে বলে রাষ্ট্রপ্রধানের শঙ্কা আছে, ক্ষমতার সীমা আছে। আল্লা একনায়ক, তাঁর কোনো দৌর্বল্য নেই। অবশ্য নবি-রাসূল স্বীয় অনুসারীদের সাফল্যে গর্বিত হতে পারেন, কারণ এখানে প্রতিযোগের ব্যাপার আছে।

মফস্বলের স্বস্বীকৃত আল্লামারা ওয়াযে বলে, যে প্রভুর আদেশ-নিষেধ ঠিকঠাক মেনে চলে, প্রভু নাকি তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে নেন! এমনটি শুনে আহাম্মক শ্রোতারা ‘সুবহানাল্লা’ বলে উল্লাস করে। এ জগতে আমরা দেখি, নিঃস্ব শ্রমিক মহাজনের ব্যবসায় শ্রম দেয়। কখনও ব্যবসায় লোকসান হলে মহাজনের বলয় ছোট হয়ে আসে, কারবারের গতি কমে আসার সুযোগে আগেকার শ্রমিকটি সামান্য পুঁজি জমিয়ে মহাজনের সম্মতিতে কারবারে অংশী হয়ে যায়। মানুষ মানুষের বন্ধু বা শত্রু হওয়াটা স্বাভাবিক; মানুষ কিন্তু নিজের সৃষ্ট রোবটকে বন্ধু বা শত্রু বলে ভাবে না। বন্ধু হওয়া মানে মোটামুটি সমকক্ষ হওয়া, শত্রু হওয়া মানে ক্ষতি করার ন্যূন সামর্থ্য রাখা। ঈশ্বরের সমকক্ষ কেউ নেই, কিছু নেই। মানুষ ঈশ্বরের উপকার বা ক্ষতি করার সামর্থ্য রাখে না, তাই একে তাঁর বন্ধু বা শত্রু বলে গণ্য করা চলে না। কুমোর আর তার নির্মিত মৃৎশিল্পের মধ্যে যেমন সম্বন্ধ, ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যেও তেমন।

একান্ত ঐশ্বরিক ব্যাপার মানুষের ভাবনার সাধ্যাতীত। এর উল্টো দিকটি কাগজের নৌকো দিয়ে সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার মতো উদ্ভট। ঈশ্বরের অস্তিত্ব, স্রষ্টার স্রষ্টা থাকার কল্পনা, সৃষ্টির জাল সবসময়ই এক অলঙ্ঘ্য রহস্য। সবার কল্যাণ হোক।
░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░░


1. অবচেতনে মনে হয়, ঈশ্বরেরও কিছু অভাব আছে। যেমন অভাবের অভাব, আত্মহত্যা ও সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতার অভাব, যোগ্য সঙ্গীর অভাব ইত্যাদি। এসব (অপ)ক্ষমতা মানুষ পেল কই? নিশ্চয়ই ঈশ্বর দিয়েছেন। দিলেনই তিনি, অতএব এসব তাঁর থেকে থাকবে। যুক্তিবাদী মন বলে, অভাব না থাকা মানে দুর্বলতা নয়, বরং অভাব থাকাই দুর্বলতা। মানবিক ব্যাপারগুলি নিছক তা-ই।



2. বলা হয়, “জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর”। উক্তিটির উদ্দেশ্য মৌলিক নয়। মানুষ স্বজাতির বা অন্যান্য জীবের প্রতি নির্দয় হলে বাড়তি দয়া দেখাতে গিয়ে ঈশ্বরের বাজেটে কি ঘাটতি পড়ে যে, তিনি সাহায্য নেবেন? অথবা, মানুষ সব জীবের প্রতি সদয় হলে কি ঈশ্বরের পরিকল্পিত দয়ার অংশবিশেষ উদ্বৃত্ত রয়ে যায়? ভাবাই যায় না। উদ্ধৃত উক্তিটি মানুষকে স্রেফ শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করতে প্রযোজ্য। দয়ার উৎসই ঈশ্বর; পদ্মপাতায় জমা বিন্দু পুকুরের পানিতে লীন হলে বা না হলে তাতে পুকুরের কিছু আসে-যায় না, কেননা ওই বিন্দু পদ্মপাতায় জমেছেই পুকুরের মাছ লাফিয়ে ওঠার দরুন ছিটানো পানি থেকে।


অনুপম হক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৬ রাত ৮:৫৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×