আমি জানি না সম্মেলনের মঞ্চ ত্যাগের পর এই বক্তব্য আলেমদের কতটুকি মনে থাকবে।
গতকাল সমাপনী দিনে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানি। এদারার পাঠানো বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উপমহাদেশের প্রাচীনতম কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশের উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী ৩০ সালা দস্তারবন্দী মহা সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। মহাসম্মেলনে মধ্যপ্রাচ্য, ভারত, পাকিস্তান, ইউরোপ ও বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশের দুই শতাধিক আলেম-উলামারা বক্তব্য রাখেন। মহাসম্মেলনে অর্ধশতাধিক প্রবাসী সহ কয়েক হাজার মাওলানা ও হাফেজ ফুযালাকে দস্তারে ফযিলত পাগড়ী প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সিলেট বিভাগের ৫ শতাধিক মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা উক্ত সম্মেলনে যোগদান করে। সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ-এর সদর, আওলাদে রাসুল আল্লামা সায়্যিদ আরশাদ আল মাদানী চলমান বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, বিশ্ববাসী আজ এক অবর্ণনীয় শোচনীয় সময় অতিক্রম করছে। বল-ক্ষমতা প্রয়োগের নীল নকশা, অর্থনীতির মন্দা, অতল সাগরে এবং সামাজিক কার্যক্রম আইয়ামে জাহেলিয়াতের দিকে অবধারিত। সারা বিশ্বে আজ পাশ্চাত্য রীতিনীতির প্রভাবে জাতি ধর্ম-বর্ণ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি নিয়ে দ্বন্দ্ব, রক্তপাত ও হত্যা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত জাযিম আর মজলুম। ইহুদী-নাছারা ও পোত্তলিকরা একজোট হয়ে নিরীহ-নিরস্ত্র মুসলমানদের কে তথ্য ও অস্ত্র সন্ত্রাস দ্বারা নিশ্চিহ্ন করার নীল নকশা বাস্তবায়ন করছে।
আওলাদে রাসূল আরো বলেন, উলামা কেরামের ইলিম, ইমানিয়াত, এখলাস, দাওয়াত ও ইত্তেবায়ে সুন্নতে নববী দ্বারা প্রতিটি অঞ্চলে ইসলামের দূর্গ গড়তে আত্মনিয়োগ করতে হবে। সদরে জমিয়ত বলেন, পাশ্চাত্যের হিংসাত্মক নীতিরীতি থেকে বাঁচতে আজ ইউরোপে ইসলামের নব জাগরণ শুরু হয়েছে। মানুষ বুঝতে সক্ষম হয়েছে ইসলামী অনুশাসন ছাড়া বিশ্বে শান্তি ও মুক্তি সম্ভব নয়। মহানবী (স)থেকে হিজরত করে মদিনায় ইহুদী, নাছারা ও পোত্তলিকদের নিয়ে ইসলামী শাসন কায়েম করে সকল ধর্ম-বর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে অন্ত:বিরোধ দূর করে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করে যে নজির স্থাপন করেছিলেন বিশ্ববাসী আজ সেদিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। তাই আমাদের কর্তব্য ইসলামের সুমহান বাণী আদর্শ, নীতি রীতি ও দর্শন সকলের কাছে পৌছে দেওয়া।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দারুল উলুম দেওবন্দের মুফতি আল্লামা জামিল আহমদ সমাবর্তনকারীদের উদ্দেশ্যে হাদীস শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, উলামায়ে কেরাম আম্বিয়া কেরামের ওয়ারিশ। তাই আমাদেরকে প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় দেশ থেকে দেশান্তরে ইসলামের সুমহান শান্তির বাণী পৌছাতে হবে। সকল ত্যাগ স্বীকারে নজরানা পেশ করতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পাকিস্তানের আল্লামা সায়্যিদ শাহ আব্দুল মজিদ নদীম বলেন, মহানবী (সা) এর আদর্শ আমাদের মধ্যে না থাকার কারণে আজকের এই অধ:পতন। ঢাকা বারিধারা মাদ্রাসার মুহতামীম শায়খুল হাদীস মাওলানা নূর হোসাইন কাসিমী বলেন, ব্রিটিশরা শাসনের নামে শোষণ করে আমাদেরকে গোলাম বানিয়ে ছিল। আমাদের আকাবীররা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে জাতিকে গোলামী থেকে মুক্ত করেছিলেন। আমরা তাদের পথ পুরাপুরি অনুসরণ করলে আমাদেরকেও দমাতে পারবে না। ঢাকা আরযাবাদ মাদ্রাসা মুহতামিম মাওলানা মোস্তফা আজাদ বলেন, আলেম সমাজের বৃহৎ একটি অংশ রাজনীতির বাইরে থাকার কারণে বাংলাদেশে ইসলাম বিরোধীতা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটি ইসলামের জন্য খুবই উর্বর, এ মাটিতেই ইসলামের দূর্গ গড়ে উঠবে। তিনি আরো বলেন, এদেশে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না।
সভাপতির বক্তব্যে বোর্ডের চেয়ারম্যান শায়খুল হাদীস মাওলানা হোসাইন আহমদ বারকোটি বলেন, শায়খুল ইসলাম আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানীর স্বীয় চিন্তাধারায় লালিত আমাদের এ প্রিয় আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তা’লীম। এ বোর্ডকে ঢেলে সাজাতে কায়দে উলামা সদরে জমিয়ত আল্লামা আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়া সহ যত বুযুর্গানে দ্বীন অবদান রেখেছেন আমরা সকলের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। তিনি বলেন, আমার জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে ৩০ সালা দস্তারবন্দি মহা সম্মেলন করতে গিয়ে সকলের সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি। তাই সবাইকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই। আগামীতে এ বোর্ডকে আরো উচ্চ আসনে আসীন করতে সকলের সহযোগিতা ও পরামর্শ কামনা করি। সকল ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার আবেদন করছি।
মহা সম্মেলনে আরো বক্তব্য সৌদি আরবের শায়খ হাফিজ আব্দুল মালিক মক্কী, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দদের মহাসচিব আওলাদে রাসূল ভারতের লোকসভার সদস্য মাওলানা মাহমুদ মাদানী, ইউরোপের মাওলানা আব্দুল আজিজ সিদ্দিকী, মুফতি আব্দুর রহমান, মাওলানা নুরুল ইসলাম, মাওলানা আবুল কালাম জাকারিয়া, মাওলানা মজদুদ্দীন, মাওলানা নুরুল ইসলাম খান, মাওলানা মুফতি মুজিবুর রহমান প্রমুখ। দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ৫টি অধিবেশনে মহাসমাবেশের কার্যক্রম চলে। এতে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে খলিফায়ে মদনী আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়খে ইমাম বাড়ি, মাওলানা মুফতি নোমান, মাওলানা সিকন্দর আলী, মাওলানা আব্দুল হান্নান, সমাপনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বোর্ডের চেয়ারম্যান মাওলানা হোসেন আহমদ বারকোটি, সাবেক সাংসদ এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা আব্দুল মালিক কাসিমী, মাওলানা নজরুল ইসলাম, মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরান, মাওলানা ফখরুল ইসলাম ও মাওলানা এহতেশামুল হক কাসিমীর যৌথ পরিচালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের মহাসচিব আব্দুল বাছিত বরকতপুরী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ, শায়খুল হাদীস মাওলানা শিহাব উদ্দিন, মাওলানা শায়খ জিয়া উদ্দিন, মাওলানা আব্দুল হান্নান শায়খে পাগলা, মাওলানা ইউসুফ খাদিমানী, মাওলানা শফিকুল হক আমকুনি, মাওলানা হাফিজ মুহসিন আহমদ, মাওলানা এনামুল হক, মাওলানা সৈয়দ আব্দুর রহমান, মাওলানা মনছুরুল হাসান রায়পুরী, অধ্যক্ষ হাফিজ মাওলানা আব্দুর রহমান সিদ্দিকী, মাওলানা রেজাউল করিম কাসিমী, মাওলানা মুহিউল ইসলাম বোরহান, মাওলানা আউলিয়া হোসাইন, মাওলানা মুহিব্বুল হক, মাওলানা আতাউল হক জালালাবাদী, মাওলানা আব্দুল বছির, ইউরোপের মাওলানা সুয়াইব আহমদ, মাওলানা সামছুল হক, মাওলানা আহমদ মাদানী, মাওলানা আব্দুল হাফিজ, হাফিজ মাওলানা জুনেদ আহমদ, মাওলানা আবুল হাছান ফয়ছল, মাওলানা আলী নূর সহ বোর্ডের কর্মকর্তা, বিভিন্ন মাদ্রাসার মুহতামিম, মুহাদ্দিস ও শিা সচিববৃন্দ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৩১