মুক্তিযুদ্ধের ৪৮ বছর পরে এসে রাজাকারদের পূর্ণাঙ্গতালিকা প্রকাশ করার মতো উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ, কিন্তু এত বছর পরে এই ধরনের তালিকা করা খুব সহজ কাজ নয়। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব কিংবা তাজউদ্দিন সাহেব এরকম উদ্যোগ নিলেও কাজটি সহজ হতো না। পাকিস্তান সরকারের আনুগত্য করা, অখন্ড পাকিস্তান কামনা করা অনেক সেক্রেটারিয়েট প্রশাসনে রেখে এমন তালিকা প্রকাশ করাও তখন দুঃসাধ্য হয়ে যেত। যাইহোক তারপরও শেখ হাসিনা এই উদ্যোগ নিয়েছে তার জন্য তার সরকার সাধুবাদ পেতে পারে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে শেখ হাসিনা ছাগল দিয়ে হাল চাষ করাতে পছন্দ করেন বেশি। এ ধরনের অদক্ষ লোক নিয়োগ দিয়ে এমন সেনসিটিভ ও জটিল কাজ করিয়ে নেওয়া সহজ কিছু নয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে যখন প্রশ্ন করা হয়, মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারী, সেক্টর কমান্ডার, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কের স্বাক্ষর সম্বলিত সার্টিফিকেটধারী মুক্তিযোদ্ধাদের নাম কিভাবে এই রাজাকার তালিকা এসেছে? ঐ সময় দালাল আইনে অনেকের নামে মামলা হয়েছিল, যাদেরকে আদালত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল, তাদের নাম কিভাবে এই তালিকায় সংযুক্ত হলো? উনি এই প্রশ্ন শুনে উত্তর দিয়েছেন যে, “উনার মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে তালিকা পাঠানো হয়েছে সেটা প্রকাশ করেছে এর বাইরে আর কিছু করেনি।” এখন এই মানুষটিকে কে বোঝাবে, তালিকা স্বরাষ্ট্র থেকে আসুক আর মহারাষ্ট্র থেকে আসুক এটার যাচাই-বাছাই না করে কিভাবে উনি প্রকাশ করে দিলেন। উনার এটা বোঝা উচিত ছিল এটা প্রকাশ হলে, এর মধ্যে অসঙ্গতি থাকলে, উনার মন্ত্রণালয়েরই সুনাম ক্ষুন্ন হবে।
এই তালিকাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আসার পর উনার নাওয়া খাওয়া হারাম হয়ে যাওয়ার কথা! মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে উনি এটা নিয়ে গবেষণা করবেন, বারবার ক্রস চেক করবেন এবং এটা নিশ্চিত করবেন উনি মন্ত্রী থাকা অবস্থায় যেন কোন প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধে এই তালিকার ভিতর না ঢুকে পড়ে। যাচাই-বাছাই করার পরে যে অসঙ্গতি গুলো ধরা পড়বে উনি সে গুলি উল্লেখ করে তালিকাটি আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠাবেন এবং বলবেন এগুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নতুন করে তালিকা উনার মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য। কেননা বেশি অসঙ্গতি তালিকায় থাকলে উনাকে পদত্যাগ করতে হতে পারে। সবকিছু বাদ দিলেও উনার পদ এবং দলের ভাবমূর্তির কথা চিন্তা করে উনার এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করার কথা।
যাইহোক, তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর এর মাঝে অনেক বিতর্কিত নাম আসার পরেও উনি স্বপদে বহাল থেকে গতকাল বিবৃতি দিয়েছেন যে, তালিকাটির মাঝে বেশি সমস্যা থাকলে তালিকাটি বাদ দিয়ে পুনরায় নতুন তালিকা প্রকাশ করা হবে।
বারাক ওবামা একবার এক সেমিনারে বলেছিলেন “ তৃতীয় বিশ্বের যেসব দেশের সরকার প্রধানদের সত্তরোর্ধ্ব বয়স সেসব দেশে সামাজিক সমস্যা সবচেয়ে বেশি এবং ঐসব দেশগুলি আধুনিক বিশ্ব থেকে পিছিয়ে পড়ছে।” বারাক ওবামা কথাটি ভুল বলেননি, তবে আরও হতাশার কথা হচ্ছে আমাদের দেশের যুবক শ্রেনির লোক ক্ষমতায় গেলেও অবস্থার উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ইতিমধ্যেই প্রশ্ন ফাঁস জেনারেশন প্রশাসন ও রাজনীতিতে প্রবেশ করা শুরু করেছে।
হতাশা বাড়ছে......
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:১২