somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতি থেকে, যেসব আজো ভাবায় আমায়। (১)

৩০ শে মার্চ, ২০২২ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মনির মামার মন খুব খারাপ, খারাপ বলতে খুবই খারাপ। আমি উনার বাসায় ঢুকেই উনার মন খারাপের চেহারা দেখে একটু অস্বস্তি ফিল করতে লাগলাম। উনি ইশারায় আমাকে বসতে বললেন। সাধারণত কেউ মন খারাপ করে থাকলে আমি তার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারিনা। অন্য দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি সমস্যা মামা মন খারাপ কেনো? উনি কোনো জবাব দিলো না! বাসার ভিতর থেকে মামী তার ছেলেকে বেধড়ক পিটাচ্ছে। মামাতো ভাইয়ের কান্না শুনে ভিতরে গেলাম, মামীকে বললাম এত মারার কি হলো, রাগ কমান, শান্ত হউন। আমাকে বলুন সাকিব কি করেছে এত মারছেন কেনো ওকে!
বিছানার উপর সাকিবের পরীক্ষার ড্রয়িং খাতা যেটাতে সে একটা ছবি এঁকেছে। একটা লোক একটা মহিলার উপর শুয়ে আছে এমন কিছু। এরপর ব্যাপারটা বুঝতে সময় লাগেনি আর আমার। আসার সময় মামাকে বললাম বাচ্চা বড় হয়েছে তাকে আলাদা রুমে রাখেন আর নিজেরাও একটু সতর্ক হউন।

আমি হলে গিয়ে সিনামা দেখিনি খুব একটা। আমার এইচএসসি পরীক্ষার শেষ সাবজেক্ট দিয়ে সেদিনই হল থেকে বাড়ি চলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হটাৎ কি মনে করে হলে গিয়ে ছবি দেখার ইচ্ছে জাগলো। সবকিছু ঘুচিয়ে রেখে সিনামা দেখার জন্য বের হলাম। তখন নোংরা ছবি চালানোর জন্য অনেক হল বন্ধ করে দিয়েছিল ফখরুউদ্দিন সরকার। আমাদের এখানেও দুইটা সিনামা হলের মধ্যে একটা সিনামা হল বন্ধ করে দেয়। যে সিনেমা হলটিতে ছবি দেখতে গিয়েছিলাম সেটা গিয়ে বন্ধ দেখতে পাই। তাই অন্য সিনেমা হলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ঐখানে যাওয়ার পথে আমাদের জেলা ভূমি রেজিস্ট্রি অফিস পড়ে। আমি হেটেই যাচ্ছিলাম। ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে এসে আমি আমাদের পাশের বাড়ির শরীফ কাকাকে দেখতে পাই। উনি অফিসের ভিতর থেকে জমিলা দাদিকে নিয়ে বের হচ্ছেন। আমি উনাকে দেখে লুকানোর চেষ্টা করি আর উনি আমাকে দেখে লুকানোর চেষ্টা করছিলেন। আশেপাশে খুব বেশি দোকানপাট না থাকায় উনি জমিলা দাদিকে নিয়ে আবার ভিতরে ঢুকে গেলেন।
আমি তখনও কিছু বুঝতে পারিনি, আমার মাথায় আসেনি উনি কেনো আমাকে দেখে লুকানোর জন্য অস্থির হয়ে পড়লেন। যাক এর তিন বছর পর আমি একদিন ঢাকা থেকে বাড়িতে গেলাম, গিয়ে শুনতে পেলাম শরিফ চাচাদের বাড়িতে সালিশ বসেছে। শরিফ চাচার দুই ছোট ভাই উনাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছেন। উনাকে বেঈমান, বিশ্বাসঘাতক বলে মারার জন্য বারবার তেড়ে আসছে। পরে জানতে পারলাম জমিলা দাদি মারা যাওয়ার পর জমিজমা ভাগবাটোয়ারা করতে গিয়ে দেখা যায় জমিলা দাদি নাকি উনার নামে ৮শতক জমি লিখে দিয়ে যান!

আমরা যেবার এসএসসি পরীক্ষা দিই সেবার মোটামুটি পরীক্ষা সহজই হচ্ছিল। আমি ফার্স্ট বয় ছিলাম আমাদের সে ব্যাচের। পরীক্ষা নিয়ে আমার বাড়তি কোনো টেনশন কাজ করছিল না। আমার সামনে আমাদের স্কুলের একটি মেয়ের সিট পড়ছিল। মেয়েটির নাম শারমিন। সে পড়ালেখায় একেবারেই কাঁচা। লাজুক প্রকৃতির মেয়ে ছিল। আমিও তখন মেয়েদের সাথে কথা বলার ব্যাপারে খুবই লাজুক ছিলাম। মেয়েটি লজ্জার জন্য আমাকে কিছুই বলতে পারছিল না। আমার খাতার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নেয়। আমি তাকে আমার খাতা দেখার জন্য কিছুই বলছিলাম না। আবার তাকে সাহায্যও করছিলাম না। সে হয়তো চাচ্ছিল আমি তাকে আমার খাতা দেখার ব্যাপারে অভয় দিই কিন্তু আমি সেরকম কিছুই বলছিলাম না। একাউন্টিং পরীক্ষার দিন আমি প্রায় আধাঘন্টা আগে আমার লেখা শেষ করে বসে আছি। কি মনে করে তার দিকে তাকিয়ে দেখি সে এখনো সাদা খাতা নিয়ে বসে আছি। আমি এই প্রথম তার সাথে কথা বললাম, বললাম আমার খাতা দেখে লেখ। আমি মেলে ধরছি। সে লিখতে লাগলো। এরপর বাকি সব সাবজেক্ট সে আমার খাতা দেখে লিখলো।
আমার রেজাল্ট পাওয়ার পর আমি শারমিনের রেজাল্ট দেখতে লাগলাম। দেখলাম শারমিন ফেল করেছে। কয়েকদিন পর মার্কশিট আসলে আমি ওর মার্কশিট দেখি। দেখলাম একাউন্টিং এর পরের সব সাবজেক্টে শারমিন ভালো ভাবেই পাশ করেছে। বাকি গুলো সে পাশ করতে পারেনি। এরপর থেকে নিজের মধ্যে আমার প্রচন্ড অনুশোচনা আসে! এখনো এই ব্যাপারটা আমাকে খুব কষ্ট দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১১:২৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×