
আজ আমাদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। এ দেশের রাজনীতিতে রাষ্ট্রপতির বিষয়টি খুব একটা আগ্রহের জায়গায় নেই। রাষ্ট্রপতি কিভাবে নির্বাচিত হয়, কারা নির্বাচিত হতে পারে, রাষ্ট্রপতির কি কাজ এই নিয়ে কোন আলোচনা নেই। বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রপতিকে পুতুল, শো পিস, কাগজের বাঘ এসব বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয়। আসলে এভাবে ভাবার কারণ হচ্ছে আমাদের রাষ্ট্রপতিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজে দেখা মিলে না। উনাকে বিভিন্ন কনভোকেশন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে দেখা যায়, কবর জিয়ারত ও মাঝেমধ্য চিকিৎসার জন্য বিদেশে সফর করার সময় উনার কথা শুনা যায়। এছাড়া উনাকে রাষ্ট্রীয় কোনো গরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে খুব একটা দেখা মিলে না । এত বড় একটা পদ এটাকে সবাই গুরুত্বহীন মনে করার কারণ কী?
আসলে আমাদের সংবিধান রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা অনেকটাই খর্ব করেছে। তারপরেও রাষ্ট্রপতির হাতে যেসব ক্ষমতা ও দায়িত্ব আছে সেগুলিও ঠিকভাবে করা হয় না। গত ১০ বছর থেকে আমাদের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ খান, আগামী মাসে উনার বিদায় হবে। উনার কথা মনে হলে আমি শিউর সবার মনে প্রথমে উনার হাস্যরসাত্মক কিছু বাণী চোখের সামনে ভাসবে। যেগুলি উনি বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশন প্রোগ্রামে দিয়েছেন। অথচ উনি কত বিশাল দায়িত্ব ও ক্ষমতা নিয়ে বসেছিলেন উনি টেরই পাননি। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়ন নিয়ে উনি কোন সেমিনার সিম্পোজিয়াম। উনার অফিসে উনি কখনো শিক্ষামন্ত্রীকে চা খাওয়ার জন্য ডেকেছেন কিনা মনে পড়ছে না। আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রপতি সরকারের কোন সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে না পারলেও, তদারকি করার ক্ষমতা আছে। উনি ওনার মোরাল অফিসে শিক্ষামন্ত্রী ও সচিবকে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিতে পারতেন। উনার উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারতেন। ব্যাঙের ছাতার মত যে রাস্তার মোড়েমোড়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গজিয়েছে এগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সকল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে গবেষণামূলক কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিতে পারতেন। সর্বোপরি উনার দায়িত্ব কালে উনি সিগনিফিকেসেন্ট কোন কিছু করেছেন কিনা আমার চোখে পড়েনি। আপনাদের পড়ছে কিনা কে জানে!
এবারের বইমেলায় উনি একটি বই বের করতে যাচ্ছেন উনার জীবনে নিয়ে। সেখানে কিছু পাওয়া যায় কিনা দেখা যাক, বইটি পড়ার ইচ্ছা আছে। হয়তো জাতির অজান্তে উনি অনেক বড় বড় কাজ করেছেন কে জানে! নাকি এপিজে আবুল কালামের দেখাদেখি উনারও নিজের জীবনী নিয়ে বই বের করতে ইচ্ছা জেগেছে!
যাই হোক আমাদের এই রাষ্ট্রপতি চলে যাচ্ছেন। উনার জায়গায় নতুন রাষ্ট্রপতি আসবেন। উনার অবস্থাও বাকি রাষ্ট্রপতিদের মত হবে সেটা আন্দাজ করা যায়। তারপরেও আশা থাকবে নতুন রাষ্ট্রপতি তার হাতে যতটুকু ক্ষমতা ও দায়িত্ব আছে সেগুলি সঠিকভাবে প্রয়োগ ও পালন করবেন। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করবেন, বাকি বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে গড়ে তুলতে সহায়তা করবেন। নিজের কর্মজীবনে এমন কিছু জাতিকে দিয়ে যাবেন যাতে সারা জীবন জাতি উনাকে স্মরণ করতে বাধ্য হয়। সামনের দিনগুলোতে মানুষ যেন রাষ্ট্রপতির পদটাকে একটি গুরুত্বহীন পদ মনে না করে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



