দেশের পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেছেন! বিদেশীরা আমাদের বিচার ব্যবস্থার উপরেও হাত দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা ঠিক, বাংলাদেশে সুষ্ঠু বিচার সম্পর্কে মানুষের কিছু নেতিবাচক অভিজ্ঞতা আছে। তার মানে এই নয়, বিদেশীরা আদালতে চলমান বিচারের উপর অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলবে।
ডক্টর ইউনুসের উপর যে বিচারকার্য গুলি চলছিল আমি সেগুলি খুব মনোযোগ সহকারে ফলো করছিলাম। বিচারকের অবজারভেশন, সংবাদপত্র গুলির প্রতিবেদন, টকশোতে আলোচনা সবকিছুই মনোযোগ দিয়ে দেখার এবং বুঝার চেষ্টা করেছি। সব আলোচনা সমান্তরাল ভাবে সাজালে, স্পষ্টতই বুঝা যায় ইউনুস সাহেব অপরাধ করেছেন এবং কিছু অপরাধ উনি জেনে বুঝেই করেছেন। যেগুলি উনি না করলেও পারতেন। একটা কর ফাঁকির মামলায় উনাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং উনি আদলতের নির্দেশে সেই করের টাকা জমা দিয়েছেন।
যাইহোক এখন উনার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা চলছে, এই মামলা চলাকালীন সময় ১৭৫ জন বিদেশী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন চলমান মামলাটি যেন বন্ধ করা হয়! এটা খুবই অবাক করার বিষয় যে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করা! কারণ যেহেতু বিচার প্রক্রিয়া চলমান আছে সেহেতু অবশ্যই এখানে সকল তথ্য প্রমাণ উপস্থাপিত হবে। ডঃ ইউনুসকে কিন্তু সরকার এসব মামলা গুলির ব্যাপারে কোন ফিজিকালি হেরাজমেন্ট করেনি। উনি দেশের নামকরা সব আইনজীবী হায়ার করেছেন। এমনকি উনাকে ফিজিক্যালি অ্যাটেন্ডেন্স থেকেও ছাড় দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কোন মামলায় তড়িঘড়ি করে রায় দেওয়া হয়নি, পর্যাপ্ত হেয়ারিং হয়েছে।
তাহলে এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করার অনুরোধ করাটা কি সঠিক হচ্ছে? উনারা সর্বোচ্চ অনুরোধ করতে পারতেন ডক্টর ইউনুস এর প্রতি যেন অবিচার করা না হয়, সেটা যেন খেয়াল রাখা হয়। কিন্তু সরাসরি বিচার বন্ধ করার অনুরোধ করাটা অন্যায়।
ড. ইউনুস যে পদ্ধতিতে (নিজের এবং পরিবারের সদস্যের নামে ফাউন্ডেশন খুলে সেখানে দান করতেন) কর ফাঁকি দিয়েছেন এটাতে উনাকে সাজা না দিলে বাকিদের এভাবে কর ফাঁকি দেওয়াতে উৎসাহ দেওয়া হতো। উনার রায়টা অবশ্যই একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। নোবেল পুরষ্কার থেকে প্রাপ্ত প্রাইজমানিরও কর উনি দিতে অস্বীকার করেছেন। যুক্তি দিয়েছেন এটা রেমিট্যান্স হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু বিচারক যেভাবে বলেছেন যে, কোন পুরস্কার বিদেশ থেকে দেশের ভিতরে আনতে হলে তার কর দিতে হয়। যেমনটি ক্রিকেট খেলোয়াড়রা দিয়ে থাকেন। কিন্তু উনি এটা মানতে নারাজ। উনার আইনজীবীর যুক্তি গুলোর থেকে আমার কাছে বিচারকের অবজারভেশন গুলি সঠিক মনে হয়েছে।
একজন নোবেল লরিয়েট হিসেবে উনি যে প্রাইজমানি পেয়েছেন উনার উচিত ছিল সেটার কর দিয়ে দেওয়া, ঝামেলা এড়ানোর জন্য হলেও। এখন সম্ভবত উনার বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন করার জন্য মামলা চলছে। আমি চাই অবশ্যই মামলাটি সঠিকভাবে চলুক এবং উনি অপরাধ করলে সেটার সাজা হোক। আর নিরপরাধ হলে উনাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। কিন্তু কোন অবস্থাতেই মামলা বন্ধ করা সঠিক হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০২৩ সকাল ৯:৩৮