
সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বড় ধাক্কা দিয়েছে। তারা বাংলাদেশের সকল রপ্তানি পণ্যের ওপর হঠাৎ করেই ৩৫% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। নিঃসন্দেহে এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলা শুরু করেছে।
ইউনুস সরকারের পক্ষ থেকে আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য বহুবার চেষ্টা ও তদবির চালানো হয়েছে। আলোচনার টেবিলে বসা হয়েছে, কূটনৈতিক নিগোসিয়েশন হয়েছে, তবুও এই বাড়তি ট্যারিফ প্রত্যাহারে কোনো সফলতা আনতে পারেনি ড. ইউনুস!
শেষমেশ সরকার আমেরিকা থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়, উদ্দেশ্য ওয়াশিংটনের সন্তুষ্টি অর্জন। কিন্তু এতেও আদৌ কোনো কাজ হবে বলে মনে হচ্ছেনা!
এখন আসল কারণ শুনুন, যেটা কেউ আলাপ করছেনা...
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় রপ্তানি হওয়া প্রধান পণ্য হলো রেডিমেড গার্মেন্টস (RMG)। আমি এর আগেও আমার এক পোষ্টে বলেছিলাম বাংলাদেশ এই পণ্যে শুধুমাত্র তার সস্তা শ্রমমূল্য যোগ করে। কিন্তু একটি বিষয় প্রায়ই অগোচরে থেকে যায়, এই শিল্পে ব্যবহৃত প্রায় ৮০% কাঁচামাল আমদানি করা হয় চীন থেকে।
এখানেই যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বাণিজ্য নীতির একটা মোক্ষম ফাঁদ কাজ করছে। ট্রাম্প প্রশাসন একটি অনানুষ্ঠানিক নীতি গ্রহণ করেছে যে, যদি কোনো পণ্যের ৪০% বা তার বেশি কাঁচামাল চায়না থেকে আসে, তবে সেটি "Chinese-origin goods in transit" হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ, যদিও পোশাকটি আমরা তৈরি করি, তবে তার মূল উপাদান গুলো যদি চীনের হয়, তবে সেটিকে চীনের পণ্য হিসেবেই ধরা হবে এবং চীনের উপর আরোপিত ট্যারিফ মাথায় রেখেই সেই পণ্যের ট্যারিফ নির্ধারণ করা হবে।
আমরা জানি মার্কিন-চীন প্রতিযোগিতা এক নতুন শীতল যুদ্ধের রূপ নিয়েছে। আর এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই বাংলাদেশ পড়েছে একটি সংবেদনশীল গণ্ডির মধ্যে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশ তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি–এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হোক, অন্যদিকে বাংলাদেশ এখনো চীনের সঙ্গে তার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।
যাইহোক ড. ইউনুস ২৫টি বোয়িং বিমান কেনা দিয়ে হয়তো চাচ্ছে মার্কিন প্রশাসনের মন গলাতে। কিন্তু এতে সমস্যা সমাধান হবে না।
যদিও ড. ইউনুস এই সমস্যা সমাধানে এসব করতে পারবে না তবুও কিছু পদক্ষেপের কথা বলি...
• রপ্তানি বহুমুখীকরণ, গার্মেন্টসের বাইরে অন্যান্য পণ্যে মনোযোগ বাড়ানো।
• দেশীয় কাঁচামাল বা বিকল্প উৎস থেকে র-ম্যাটেরিয়াল সরবরাহের পরিকল্পনা।
•রেডিমেড গার্মেন্টসের যে সকল কাঁচামাল চায়না থেকে আসে সেগুলো লিস্ট করা। সেখান থেকে যে সব পন্য এদেশে উৎপাদন করা সম্ভব সে গুলোর উৎপাদন শুরু করার জন্য জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
• গার্মেন্টসের এক্সেসরিজ গুলোকে বৃহৎ শিল্পের উপর ছেড়ে না দিয়ে মাঝারি শিল্পে কনভার্ট করতে হবে। যারা এসব স্বল্প পরিসরে উৎপাদন করছে বা করতে চায় তাদের উৎসাহ ও প্রণোদনা দিতে হবে।
• বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি (FTAs) এবং নতুন বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ়করণ।
• যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক লবি নিয়োগ ও কনগ্রেস পর্যায়ে কার্যকর সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১১:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


