somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিথ্যার কাছে পরাভূত সত্য (একটি শিক্ষণীয় গল্প-২)

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সত্য আর মিথ্যা দুই সহদর। দুজনের সাথে দু জনার বেশ ভা্ব। তারা এক সাথে খেলাধুলা করতো ঘাটে মাঠে বনবাদােড়ে ঘুরে বেড়ায়। ঊনিশ শতকের মাঝ পর্যন্ত তাদের এ ভাব বজায় ছিলো। হঠাৎ বদলে যেতে শুরু করলো মিথ্যা। তার কার্যলাম কথাবার্তায় আসলো আমূল পরিবর্ত ন। সত্য তার সাথে চলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেললো। আগের মতো আর সত্যকে সময় দেয়না মিথ্যা। সে থাকে তার মিথ্যার সাথীদের নিয়ে। দূরত্ব বাড়তে থাকে সত্য আর মিথ্যা দুই ভাইয়ের। একদা কোথায় যেন হারিয়ে গেল মিথ্যা সত্যের কাছ থেকে। একা একা মন মরা হয়ে খাকে সত্য। কোন কাজেই যেন তার মন বসেনা। অনেক দিন পরে উনিশ শতকের শেষ ভাগে এক সকালে হঠাৎ করে হাজির হয় মিথ্যা। দেখা হয় সত্য আর মিথ্যা দু ভাইয়ের। মিথ্যার জৌলুশ বেড়েছে অনেক। চালচলনে কেতাদূরস্ত ভাব। সঙ্গী সাথীও জুটিয়েছে অনেক। মিথ্যার পাশে সত্য যেন কেমন নিঃস্প্রাণ। মিথ্যা অনেক গল্প বলে সত্যকে যদিও সত্য তা বিশ্বাস করতে পারেনা। ভাইয়ের মানমরা ভাব দূর করার জন্য মিথ্যা সত্যকে বললো, দেখো আজকের দিনটা কত চমৎকার! সত্য আকাশের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে দেখল, সত্যিই খুব সুন্দর একটা দিন। তারা একসাথে অনেক সময় কাটালো।,
তারপর হঠাৎ দুই ভাই একটা কুয়ার সামনে আসলো। মিথ্যা সত্যকে বললো,
পানিটা খুব ভালো লাগছে চলো গোসল করতে নামি!
বলাবাহুল্য, সত্য বিশ্বাস করেনি মিথ্যার কথা। নিজে পরখ করে দেখল মিথ্যা ঠিকই বলেছে, পানিটা স্ফটিকের মতো আর দারুণ শীতল। অতঃপর তারা কাপড় খুলে কুয়ার পানিতে নেমে পড়ল। হঠাৎ মিথ্যা কুয়ার ভিতর থেকে বের হয়ে সত্যের কাপড় পরে দৌঁড়ে পালাল। কুয়ার পাড়ে পড়ে রাইলো মিথ্যার পোষাক। খানিকক্ষণ অপেক্ষা করার পর মিথ্যাকে ফিরতে না দেখে সত্য উঠে এলো কুয়ো থেকে। না, মিথ্যা তো কোথাও নেই, সত্যের পোশাকও নেই। তবে পড়ে আছে মিথ্যাে পোষাক যা সত্য কখনোই পড়তে পারেনা। রাগে অন্ধ হয়ে সত্য বের হলো মিথ্যাকে খুঁজতে কিন্তু নগ্ন সত্যকে দেখে ছি ছি করল সভ্য মানুষ। এমনকি তেড়েও এলো অনেকে। কারণ এই দুনিয়ায় কেউই সত্যের নগ্নতা দেখতে চায় না! সত্য অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও তাদের বোঝাতে না পেরে রাগে-দুঃখে অপমানে ফের কুয়োয় নেমে গেল। তারপর থেকে সত্যকে আর কখনো কেউ দেখেনি। যাকে দেখেছে কিংবা দেখছে সে সত্যের পোশাক পরা মিথ্যা। সত্য প্রতিদিন মার খাচ্ছে, দগ্ধ হচ্ছে, নগ্ন হচ্ছে। চোখের জলে থমকে দাঁড়াচ্ছে, পথ হারাচ্ছে। হারতে হারতে সত্য আজ নির্বাসিত হয়েছে। মিথ্যার ভয়ে সত্য এমনভাবে লুকিয়েছে যে সত্যকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।


সত্য যখন মিথ্যার কাছে পরাজয় বরন করে তখন সত্য বোবা কান্নায় নিমজ্জিত থাকে। এই বোবা কান্নার ফলাফল এক সময় ভয়াবহ রুপে ধারন করে। মানুষ তখন মিথ্যার আশ্রয় গ্রহন করে আর তখন ধংস অনিবার্য। আগেও সত্যকে নিয়ে সন্দেহ অবিশ্বাস ছিল, এখনো আছে। বদলেছে শুধু সময়, স্থান, কাল পাত্র। সত্য এখন বড় অসহায় অবস্তায় আছে। সত্য এখন খুব সস্তা দরে হাট বাজারে বিক্রি হয়। মিথ্যের কাছে মানুষ বিক্রি হচ্ছে। টাকা দিয়ে সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানানো এখন আর কল্পনা নয় বরং এটাই বাস্তবতা। ধরুন একটা অফিসে সবাই অসৎ। একজন মাত্র মানুষ রয়েছেন যিনি সৎ থাকতে চান। অসৎ লোকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চান। তিনি কি পারবেন। সত্যের মুখোশ পরা সব অসৎরা একজোট হয়ে নিজেদের প্রমাণ করবেন সত্যবাদী। আর সত্যবাদী লোকটা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে হয়ে যাবেন মিথ্যাবাদী। অনেক সময় সংখ্যা দিয়ে আমরা সত্যকে মিথ্যে বানিয়ে দেই। কিন্তু সেটা আসলেই কতটা সত্য তা কখনো খতিয়ে দেখার মতো বিবেচনা শক্তি নিজেদের মধ্যে গড়ে নিতে পারি না। হুমায়ুন আজাদ একটা নিখাদ সত্য কথা বলেছেন, ‘এখানে অসৎরা জনপ্রিয়, সৎ মানুষেরা আক্রান্ত"। এর সাথে তিনি আরও বলেছেন, সত্য একবার বলতে হয়; সত্য বারবার বললে মিথ্যার মতো শোনায়। মিথ্যা বারবার বলতে হয়; মিথ্যা বারবার বললে সত্য বলে মনে হয়। এভাবে টাকার কাছে সত্য হারছে। প্রতিদিন হারছে। কারণ মানুষগুলোই যে মিথ্যের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের হার না মানা মন নেই। আপনার আমার আশপাশের মুখোশ পরা চেনা মুখগুলোর মধ্যে এমন অনেক মানুষ ঘাপটি মেরে বসে আছে। চারিদিকে তাদের জয় জয়কার হচ্ছে। কিন্তু পুরোটাই একটা ধোঁকা। অনেকে বলে থাকেন সব কিছুই নাকি এখন মিথ্যের শক্তিতে পূর্ণ হয়ে উঠছে। তবে সত্য কে কেউ কোন দিন চাপা দিয়ে রাখতে পারে নাই এবং তোন সময় পারবে না। সততার শক্তি যদি ভিতর থেকেই প্রাণশক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়াতে পারে তবে মিথ্যেরা কখনো টিকে থাকতে পারবে না। আর তা যদি মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত হতে পারে তবে মিথ্যেরা পরাভূত হবেই।

মা-বাবাকে ভালো বাসুনঃ একটি শিক্ষনীয় গল্প-১

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫৫
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×