somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১০টি অপরূপ রূপের বিষাক্ত ফুল যা হতে পারে মৃত্যুর কারণ

০৪ ঠা মে, ২০২১ বিকাল ৪:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অপ শব্দটাই নেতিবাচক। তাই কেউই অপয়া অপবাদ শুনতে চায়না। অপব্যাখ্যা বা অপসংস্কৃতি যেমন কারে কাম্য নয় তেমনি অপরূপের মাঝেও রয়েছে নেতিবাচক ধারণা। নারীর রূপের সাথে যদি নেতিবাচক কিছু যোগ হয় তখন তা হয় অপরূপা। দৃশ্যতঃ সুন্দরী নারীরা হয় দেমাগী/অহংকারী নিষ্ঠুর। সুন্দরী নারীদের কৃপা লাভের জন্য কতো যে পুরুষ আত্মহুতি দিয়েছে তার ইয়াত্তা নাই। সুন্দরী হেলেনের জন্য পুড়েছে ট্রয় নগরী। ইতিহাস বা মিথোলজি, সবক্ষেত্রেই ট্রয় নগরী ধ্বংসের জন্য দায়ী কর হয় হেলেনকে। প্রায় সোয়া তিন হাজার বছর আগে ট্রয় নগরী ধ্বংস হয়েছিল, সেই সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী স্পার্টার রানি ও ট্রয় রাজপুত্র প্যারিসের প্রেমিকা হেলেনের জন্য। তাই অপরূপা নারী সম্ভবত ধ্বংশই টেনে আনে। যাক অপরূপ নারী সম্বপর্কে নেতিবাচক ধারণা। এবার আসি অপরূপ রুপে ভরা সৈন্দর্য্যের রানী ফুলের কথায়। ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক। শান্তি, ভালোবাসা আর শুভ কামনার বার্তা বহন করে ফুল। ফুল বিধাতার এমনই এক সৃষ্টি, যা দেখলে যে কারো মনই ভালো হয়ে যেতে বাধ্য। আপনার মন খারাপ? কিছুক্ষণ ফুলের রাজ্য থেকে ঘুরে আসুন। দেখবেন আপনাআপনিই মন ভালো হয়ে গেছে। কাছের কারো মন খারাপ? তাকে এক তোড়া তারই পছন্দের ফুল কিংবা ফুলের মালা উপহার দিন। দেখবেন, তার মনের আকাশ থেকেও মেঘ সরে গিরে সূর্যের আলো উঁকি দিতে শুরু করেছে। ফুলের বৈচিত্রময় রঙ, হরেক রকম গন্ধ, ফুলের ওপর প্রজাপতির উড়ে বেড়ানোর মতো দৃশ্যগুলো কীভাবে যেন আমাদের বিষণ্ন মনের জন্য প্রতিষেধক রুপে কাজ করে। তবে সেই ফুলও হতে পারে ভয়াবহ বিষাক্ত। তাই সুন্দরকে ভালোবাসার আগেই দেখে নিন এর ভেতরটাকেও। ফুল সুন্দর। সব সুন্দরেই মধুরতা থাকে। ফুলের সৌন্দর্য দেখে কিন্তু কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই কোন ফুলটি তার স্বর্গীয় সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে ভয়াবহ মৃত্যুফাঁদ। কিছু কিছু সুন্দর ফুল জন্ম নেয় অসম্ভব তীব্র গরল বুকে নিয়ে। যা ঘটাতে পারে মানুষের মৃত্যু। ২০১৪ সালে রহস্যজনকভাবে মারা যান যুক্তরাজ্যের এক মালি। তার মৃত্যুর রহস্য এখনও পুরোপুরি উদ্ঘাটিত হয়নি। তবে ধারণা করা হয়ে থাকে, একটি বিষাক্ত ফুলের সংস্পর্শে আসার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছিল। আজকের লেখায় পৃথিবীর এমনই ১০াট বিষাক্ত ফুল সম্পর্কে পরিচিত হবো, যেগুলোর বাহ্যিক রুপ আপনাকে মুগ্ধ করবে ঠিকই, কিন্তু ভেতরের রুপ হতে পারে আপনার মৃত্যুর কারণ। প্রথমেই শুরু করি আমাদের দেশীয় ফুল ধুতরা দিয়ে


১। ধুতরা ফুলঃ
আমাদের দেশে ঝোপ-ঝাড়ে বা রাস্তার ধারে অযত্নে বেড়ে ওঠে ধুতরা গাছ। যাদের বাসার আশেপাশে এই ফুলগাছ থাকে, তাদের অনেকেই গাছগুলো কেটে ফেলেন। যারা কাটেন না, তারাও তাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের খুব করে সতর্ক করে দেন, যেন তারা খেলার ছলে হলেও কোনোভাবেই এই ফুল মুখে না দেয়। কারণ ধুতরা ফুল দেখতে শুভ্র পবিত্র হলেও এটি একটি বিষাক্ত ফুল। বিষাক্ত গাছ হিসেবে ধুতুরা গাছ খুব এগিয়ে। এতে আছে বিপজ্জনক মাত্রার ট্রোপেইন নামক বিষ। এই গাছের বিষক্রিয়ায় মানুষ বা পশুপাখির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ কারণে অনেক দেশেই ধুতুরার উৎপাদন, বিপনন ও বহন আইনত নিষিদ্ধ। বাংলাদেশে প্রতি বছর বহু লোক ধুতুরা বিষে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এই ফুল খেয়ে মৃত্যুর ঘটনা অনেক শোনা যায়। তাই ধুতরা ফুলকে শয়তানের শিঙ্গা বা devil's trumpets বলা হয়। তবে আমাদের সাধারণ জ্ঞানে এ ফুল সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব থাকলেও সৃষ্টিকর্তা মানুষের কল্যাণের জন্যই। পৃথিবীতে সৃষ্টি কর্তা যা কিছুইা সৃষ্টি করেছেন তা মানুষের কল্যাণের জন্য । যেমন ধুতরা ফুল বিষাক্ত হলেও ধুতুরার বীজ থেকে চেতনানাশক পদার্থ তৈরি করা হয়। ভেষজ চিকিৎসায় এর ব্যবহার আছে। চৈনিক ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্রে বর্ণিত পঞ্চাশটি প্রধান উদ্ভিদের একটি এই ধুতুরা।


২। করবীঃ
করবী ফুল আমাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত। এর ইংরেজী নাম অলিয়েন্ডার। বিশ্বে নানা রং ও নানা আকারের অলিয়েন্ডার রয়েছে যেমনঃ শ্বেত করবী, হলুদ করবী ও রক্ত করবী। এই ফুল দেখতে আকর্ষনীয় হলেও মানুষের শরীরে প্রচন্ড রকমের বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এর মাত্র একটি পাতা খেলেই মানুষের মৃত্যু হতে পারে। কারন আগাগোড়া বিষে মোড়া এই ফুল ও ফুলের গাছটি। তাই এই গাছের সব অংশই বেশিরভাগ মেরুদন্ডীপ্রাণীর জন্য বিষাক্ত কারণ এতে হৃৎপিণ্ডের ক্ষতিকারক গ্লাইকোসাইড থাকে। বিষক্রিয়ার ধরন হচ্ছে ফল মারাত্মক অবসাদক, পঙ্গুত্ব আরোপক ও ঘাতক। করবী ফুল নিয়ে মানুষের ইচ্ছাকৃত এবং দুর্ঘটনাজনিত বিষক্রিয়ার অনেক ঘটনা জানা যায়। এই উপমহাদেশ ও অন্যান্য কিছু পার্শ্ববর্তী উপমহাদেশে করবী ফুলের বিষে আত্মহত্যা করার সংখ্যাটাও খুব একটা কম নয়। সামান্য পানির মাধ্যমেই নিজের বিষ মানবদেহে ছড়িয়ে দিতে পারে এই ফুলটি। দক্ষিণ ভারতের প্রচুর মানুষের আত্মহত্যার সঙ্গে এ ফুলটির নাম জড়িয়ে আছে। তবে করবী যে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, ঠিক একই সমস্যার সমাধানেও ঠিক তাকেই কাজে লাগানো সম্ভব। করবী ফুল গিলে ফেললে এর প্রভাবে হৃদস্পন্দন ধীর হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, একই ফুলের নির্যাস হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিরোধেও কাজে লাগানো হয়। পাশাপাশি মৃগী রোগ, অ্যাজমা, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধকল্পেও এই ফুলের নির্যাস ব্যবহার করা হয়।


৩। মিস্‌লটোঃ
সুপরিচিত এই গাছটির জনপ্রিয়তার কারণটি বেশ চমৎকার। একে ভালোবাসার প্রতীক রুপে গণ্য করা হয়ে থাকে। সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষকে প্রথমবার চুম্বনের সময় পাশ্চাত্য দেশগুলোতে এই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কাজটি করার একটি প্রবণতা দেখা যায়। মাঝে মাঝে এমনও ব্যবস্থা থাকে, যেখানে আলাদা করে ঝোলানো মিস্‌লটো শাখার নিচে দাঁড়িয়েই কপোত-কপোতী কাজটি সেরে নেয়।
ভালোবাসার প্রতীক মিস্‌লটোর ফুলের চরিত্র পুরোপুরিই আলাদা। এটা মানুষের মৃত্যুর কারণ না হলেও ভুলবশতঃ ফুলটির কোনো অংশ পেটে চলে গেলে বমি বমি ভাব, ঝাপসা দৃষ্টি এবং ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই মিস্‌লটোর কোন অংশ পেটে গেলেই সাথে সাথেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এবার তার গুনের কথাঃ প্রাচীনকালে গ্রিকরা বিশ্বাস করতো, মিস্‌লটো হলো উর্বরতার প্রতীক এবং এটি নবজীবন দানে সক্ষম। স্ক্যান্ডিনেভিয়ানরা একে শান্তির বৃক্ষ হিসেবে মনে করতো এবং এর নিচেই বিভিন্ন শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করতো। তবে বাস্তবতা হলো, অধিক পরিমাণে ফুলের অংশ পেটে গেলে সে আপনার জীবনটা নিয়েই টান দেবে!


৪।ওয়াটার হেমলকঃ
প্রচন্ড বিষে ভরপুর ওয়াটার হেমলক। একে উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বিষাক্ত গাছও বলা হয়ে থাকে। ফুলগুলো বিষাক্ত হলেও ওয়াটার হেমলকের সবচাইতে বিষাক্ত অংশটি হচ্ছে এর শিকড় যার মাধ্যমে মানুষের মৃত্যু হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। ২০১০ সালে লন্ডনে প্রেমিকাকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন লাখভির কাউর সিং। তিনি তার সাবেক প্রেমিকা লাখভিন্দর চিমাকে কোন বন্দুক বা ছুরি দিয়ে খুন করেননি। তিনি বেছে নিয়েছিলেন বিষাক্ত ওয়াটার হেমলক। তিনি খাবারের সঙ্গে গাছের শিকড় রান্না করে চিমাকে খাইয়েছিলেন। এরপর থেকে তার নাম হয় ‘কারি কিলার’। বিষাক্ত হেমলকের আরেক নাম ইন্ডিয়ান একোনাইট। হেমলক ফুল দেখতে অনেকটা সাদা বা সবুজ ছাতার মতো। ভারতে দার্জিলিংয়ের পাহাড়ে ও পশ্চিমবঙ্গে এর দেখা মেলে। তবে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকাতেই বেশি দেখা যায়। এই গাছ এক মিটার লম্বা ও আধা মিটার চওড়া হয়ে থাকে। সব ধরনের মাটিতেই জন্মে। এর বিষ পেটে যাওয়ার ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার মধ্যেই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। এই ফুলটির বিষ একবার শরীরে প্রবেশ করলেই বমি, মাথা ঘোরা সঙ্গে প্রচণ্ড কাঁপুনি। এছাড়াও আরো নানারকম প্রদাহ দেখা যায়। দ্রুত চিকিৎসা না নিলে মরণ ডেকে আনবে এই সুন্দর ওয়াটার হেমলক ফুলটি। তবে সবচেয়ে বিষাক্ত অংশ হচ্ছে এ ফুলগাছটির শিকড়। ফুলটিতে সিকোটক্সিন নামে এক ধরনের বিষ থাকে, যা মারাত্মক হৃদরোগের কারণ হতে পারে।


৫) পয়জন হেমলকঃ
কনিয়াম ম্যাকুল্যাটাম (হেমলক বা পয়জন হেমলক) এমন একটি আগাছা যা প্রায় সমস্ত বিশ্বজুড়ে প্রাণী এবং মানুষের কাছে এটির বিষাক্ততার জন্য প্রায় বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এটিতে পাইপরিডিন অ্যালকালয়েডস কনইইন, এন-মিথাইলকোনিন, কনহাইড্রাইন এবং কনসাইন রয়েছে যা অন্যান্য হিমলক ক্ষারকোষগুলির পূর্বসূরী। পয়জন হেমলক ফুলের উৎপত্তি মূলত ইউরোপ ও আফ্রিকায়। অবশ্য পরবর্তীকালে উত্তর আমেরিকা, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতেও ঘটেছে এর আগমন। এটি এতটাই ভয়ানক যে, শখের বশে কেবলমাত্র গন্ধ শোঁকাও আপনার মৃত্যুর কারণ হতে পারে! পয়জন হেমলক শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ করে একজন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটাতে পারে। বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিসের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে পয়জন হেমলকই ব্যবহার করা হয়েছিল।


৬। ড্যাফোডিলঃ
শীতপ্রধান দেশে বরফের প্রকোপ কমে এলে পাথরমাটি ভেদ করে প্রথম যে গাছটি মাথা বের করে প্রকৃতি দেখার চেষ্টা করে সেটি ড্যাফোডিল। ড্যাফোডিল এর আরেক নাম নার্সিসাস। এর আদি নিবাস ইউরোপের মেডিটেরিয়ান এলাকায় হলেও পুরো ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় ব্যাপকভাবে দেখা যায়। ছয় পাপড়ির এ ফুলটি সাধারণত হলুদ ও সাদা রঙের হয়ে থাকে। তবে কমলা বা গোলাপী ড্যাফোডিলও দেখা যায়। তবে বিশ্বব্যাপী এ ফুলের প্রায় পঞ্চাশটি প্রজাতি আছে, আছে হাজার খানেক হাইব্রিড জাত। মূলত হলুদ সাদা রংয়ের আধিক্য থাকলেও এখন লাল কমলা রংয়ের ড্যাফোডিলের দেখা পাওয়া যায়। ইংরেজ কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ মজেছিলেন বসন্তের ফুল ড্যাফোডিলে। হলুদ রঙের টিউলিপ জাতের ফুলটি তার এতই পছন্দ হয়েছিল যে, আস্ত একখানা কবিতাই লিখে ফেলেছিলেন। গ্রিক মিথে এ ফুলের নাম নার্সিসাস। প্রেম প্রত্যাখ্যানের করুণ মৃত্য থেকে এ ফুলের জন্ম হয় বলে মিথলজিতে উল্লেখ করা হয়েছে। নার্সিসাস ছিলো অসম্ভব সুন্দর একটি ছেলে। জলপরী, বনপরী, ঝর্নাপরী, সুন্দরী মেয়ে এমনকি ছেলেরাও তার সঙ্গে প্রেম করতে চাইতো। সে ছিলো কিছুটা দাম্ভিক প্রকৃতির। প্রায়শই বলতো- তোমরা কেউ আমার যোগ্য নও। বনপরী ‘ইকো’ তো তাকে না পেয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছিলো। নার্সিসাস সবাইকে কাছে টানতো, কিন্তু কাউকে আপন করে নিতো না। এভাবে অনেক পরী তার কাছে প্রতারিত হয়। এক পরী প্রতিশোধের দেবী নেমেসিসকে বলেছিল- ‘নার্সিসাস যেন কোনদিন ভালবাসা না পায়।’ পরীর কথা নেমেসিস শুনেছিলেন এবং তিনি নার্সিসাসের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। নার্সিসাস ফুলের আরেক নাম নার্গিস। আমাদের প্রেম ও দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর নাম দিয়েছিলেন নার্গিস। নজরুলের কবিতায় এ ফুলের নাম এসেছে গ্রিক মিথের কাহিনির আদলে। ১৯২১ সালে কুমিল্লার দৌলতপুরে এক অচেনা পল্লী বালিকার প্রেমে পড়েন নজরুল। সেই পল্লীবালার নাম ছিল নার্গিস। দুই মাসের মধ্যে নজরুল নিজ হাতে সেই প্রেম হত্যা করে কুমিল্লা ছেড়ে চলে এলেন কলকাতায়। মিশে গেলেন কলকাতার কোলাহল আর কর্মস্রোতে। কিন্তু নজরুলের এ প্রেম কখনো হারায়নি। ধীরে ধীরে সেই নিহত প্রেমের শবদেহে জন্মাতে লাগল নজরুলের কবিতা ও গান। তিনি লিখলেন- ‘বুলবুলি নিরব নার্গিস বনে/ ঝরা বন গোলাপের বিলাপ শুনে।’ মূলত ভারতীয় উপমহাদেশে এ নামটি বেশি পরিচিত।এই ফুল দেখতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে পুরান ঢাকার বলধা গার্ডেনে। সুন্দর এ ফুলটির গোটা গাছটিই বিষে পূর্ণ। এটি পেটে গেলে প্রথমে ঝিমানি ভাব দেখা দেবে। সঙ্গে প্রচণ্ড পেটব্যাথা, বমি ও পাতলা পায়খানা। বেশি পরিমাণে খেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দেখা গেলেও উত্তর আমেরিকায় এটি বেশি দেখা যায়।


৭। রডোডেনড্রনঃ
ডোডেনড্রন এশিয়ার নানা প্রান্তে পাওয়া যায়। এছাড়াও নর্থ আমেরিকার পাহাড়ি অঞ্চলে এই উদ্ভিদটির আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। সমগ্র ভারতেই এই উদ্ভিদের আলাদা আলাদা ৮০ টি প্রজাতির খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীগণ|হিমালয় পর্বতের নানা রকম উচ্চতায় এই উদ্ভিদের নানা রকম আধিক্য দেখা যায়। পূর্ব হিমালয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি এই গাছের অস্তিত্ব দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় এই গাছের ১৯টি প্রজাতির খোঁজ ইতিমধ্যেই পাওয়া গেছে। এই ফুলটি সাধারণত শীতকালের শেষের দিক থেকে ফুটতে শুরু করে। এই গাছটির চারপাশে সাধারণত মস ও লাইকেন জাতীয় গাছের আধিক্য দেখা যায়। লাল রঙ এর অসম্ভব সুন্দর দেখতে এই ফুলগুলো সবচাইতে বেশি দেখা যায় আমাদের পাশের দেশ নেপালে। এই ফুলটিকে নেপালের জাতীয় ফুলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে|
নেপালের জাতীয় ফুল এটি। এতে মধু থাকে খানিকটা। তবে সেই সাথে অনেক বেশি বিষাক্তও। এর পাতাগুলো মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই মুখ পুড়ে যায় মানুষের। বমি এবং ডায়রিয়ার উপদ্রব তো হয়ই, সেই সাথে এ ফুলগুলো মুখে দেওয়ার পরপরই শরীরে দেখা যায় ছোটছোট ফুসকুড়ি। যার শেষ পরিণতি গিয়ে দাড়ায় হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়াতে। চিকিৎসক না ডেকে আনলে খানিক সময়ের ভেতরে কোমায় চলে যেতে মারে মানুষ এ ফুলটির বিষক্রিয়ায়।


৮। জানটেডেসিয়াঃ
জানটেডেসিয়া নামক এই অত্যন্ত সুন্দর ও বিভিন্ন রঙ এর ফুলটিকে কলা লিলি বলেও চেনে অনেকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে খুঁজে পাওয়া যায় এই ফুলগুলোকে। তবে আর দশটা ফুলের চাইতে একটু ভিন্ন কলা লিলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক পদার্থ। মাত্র একটি পাতার মাধ্যমে মানুষকে মৃত্যুর দোরগোড়ায় পোঁছে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই ফুলের। একবার চীনের একটি রেষ্টুরেন্টে খাবারের ভেতরে ভুল করে একটি কলা লিলির পাতা পড়ে গেলে পুরো খাবারটি বিষাক্ত হয়ে ওঠে এবং রেষ্টুরেন্টের সবাইকে হাসপাতালে পাঠাতে হয়।


৯। অটাম ক্রোকাসঃ
দেখতে অন্য অনেক ফুলের চেয়ে সুন্দর এবং বিষাক্ততায়ও ভয়াবহ এমন একটি ফুল হলো- অটাম ক্রোকাস। অটাম ক্রোকাসের আরেক নাম ন্যাকেড লেডি বা নগ্ন নারী। সাধারণত শরৎকালেই এ ফুল ফোটে। বসন্তের শেষে শীতের পূর্বে গাছের পাতাগুলো মরে যাওয়ার পর শুধু এই গাছের গোড়ায় পেঁয়াজের মতো কন্দ থেকে পাতাবিহীন বড় বড় কাণ্ডে সারি সারি ফুল ফোটে। গাছের পাতাগুলো মরে যাওয়া লতা বা পাতাবিহীন কাণ্ডগুলোর উপরিভাগে ফুল নিয়ে একপ্রকার নগ্নভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। বহুদিন পর সেখান থেকে এই ফুল ফোটে বলে এর নাম ‘ন্যাকেড ওমেন’ বা ‘নগ্ন নারী’। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ ফুল দেখা যায়। রূপসী এই ফুলের বিষে প্রথমে শুরু হয় কাঁপুনি। তারপর রক্তচাপ কমতে শুরু করে। অবশেষে হৃদস্পন্দন থেমে মৃত্যুএ ফুলটির কিছু উপাদান দিয়ে ওষুধ তৈরি হলেও ফুলটি খেলে তা মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। আর্সেনিকের মতোই তীব্র এর বিষ। আর্সেনিক আক্রান্ত ব্যক্তি ও অটাম ক্রোকাসের বিষ পেটে যাওয়া ব্যক্তির লক্ষণগুলো একই। ।এ কারণেই চোখ ধাঁধানো বর্ণিল এ ফুলটি পরিচিত ‘রূপসী মৃত্যুফুল’ নামে। এ ফুলটির কিছু উপাদান দিয়ে ওষুধ তৈরি হলেও ফুলটি খেলে তা মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং এখন পর্যন্ত এ বিষের কোনো প্রতিষেধকও আবিষ্কৃত হয়নি।


১০। বেলাডোনাঃ
বেলাডোনার আরেক নাম ভয়াবহ রাতের ছায়া। যদিও পুরনো নাম এ্যাট্রোপা । গ্রীক দেবী এ্যাট্রোপাসের নামানুসারে এই নাম রাখা হয়েছে। পরে এর নাম হয় বেলাডোনা, যার অর্থ ‘সুন্দরী নারী’। মধ্যযুগে নারীদের চোখের মণি বড় ও আকর্ষণীয় করতে এই ফুলের রস আইড্রপ হিসেবে ব্যবহার হতো। সেজন্য এর নাম সুন্দরী নারী। এই গাছ দেড় মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। ঘণ্টার আকৃতির ফুলগুলো বেগুনী, লাল, সাদা, গোলাপী রঙের হয়ে থাকে। সোলানাসিয়া গোত্রের এ উদ্ভিদটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়া এবং কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়। ফুলটিতে থাকা ট্রপেন এ্যালকলাইডিস নামে বিষের কারণে মাথাব্যথা, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি ইত্যাদি সমস্যা হয়। রানী প্রথম এলিজাবেথের সময় কেউ কেউ না বুঝে এ ফুলটি প্রসাধনসামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করতেন। বিষাক্ত হলেও সেই প্রাচীণকাল থেকেই ওষুধ ও প্রসাধনসামগ্রীতে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মধ্যযুগে শল্যচিকিৎসকরা রোগীদের অজ্ঞান করার সময় এ্যানেসথেটিক হিসেবে এটি ব্যবহার করতেন। প্রাচীন রোমে বিষ হিসেবে এ ফুল ব্যবহার করা হতো। রটনা রয়েছে- রোমান সম্রাট অগাস্টাস ও তার স্ত্রী ক্লডিয়াসকে এই বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছিল।

সূত্রঃ বিভিন্ন উদ্ভিত সম্পর্কিত ওয়েব সাইট থেকে।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম :-& ফেসবুক-১ :-& ফেসবুক-২
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০২১ রাত ১১:৪০
১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×