somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নূর মোহাম্মদ নূরু
নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

রসনা তৃপ্ত করা বরিশালের কিছু পরিচিত ফল (২য় পর্ব)

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফলগাছ মানুষের সভ্যতা খাদ্যফসল ও ফলজ বৃক্ষের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে। প্রথাগতভাবে বসতবাড়ির পিছনের আঙিনার ফসল হিসেবে পরিবারের চাহিদা পূরণের জন্য ফলজ উদ্ভিদ রোপণ করা হয়। বাংলাদেশে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে দেশের মোট ফল উৎপাদনের শতকরা ৫৪ ভাগই উৎপাদিত হয় ও বাজারজাত করা হয়। বাকি শতকরা ৪৬ ভাগ ফলের উৎপাদন হয় অবশিষ্ট ৮ মাসে্। অঞ্চলভিত্তিক কিছু কিছু ফল খুবই ভালো হয়; যেমন বরিশালে আমড়া, পেয়ারা, কাউয়া, সফেদা, বিলাতিগাব, কদবেল ইত্যাদি। এছাড়া অন্যান্য সব দেশী ফলও পাওয়া যায় বরিশালে। আমার স্বাদ নেওয়া বরিশালের কিছু ফলের পরিচিতি নিয়ে আমার দ্বিতীয় পর্ব।
প্রথম পর্বের লিংক

চালতাঃ


মুখোরোচক ফল চালতা। চালতা বা চালিতা বা চাইলতে এক রকমের ভারতবর্ষীয় উদ্ভিদ। আমরা যারা গ্রামে কিংবা শহরে বসবাস করি সকলেরই অতি পরিচিত একটি ফল চালতা।গাছটি দেখতে সুন্দর বলে শোভাবর্ধক তরু হিসাবেও কখনো কখনো উদ্যানে লাগানো হয়ে থাকে। চালতা ফল দিয়ে চাটনি ও আচার তৈরি হয়। অনেকের কাছে চালতার আচার খুবই পছন্দনীয়। চালতা প্রাকৃতিক এসিড যেমন-অক্সালিকম, ট্যানিক, ম্যালিক এবং সাইট্রিক এসিডে সমৃদ্ধ। এটা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ও ভিটামিন-এ, বি ও সি এর ভালো উৎস। এই ফলটিতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, ভিয়ামিন বি, সি, থায়ামিন ও রিবফ্লাবিন। এজন্য চালতা যেমন রোগ প্রতিরোধ করে তেমনি পুষ্টি পূরণেও ভূমিকা রাখে। চালতা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ঠান্ডা, জ্বরে পাকা চালতার রস খবই উপকারী। গলাব্যথা, বুকে কফ জমা, সর্দি প্রতিরোধে চালতায় আছে এক অনন্য গুণ। নিয়মিত চালতা খেলে কিডনি ভালো থাকে। বাচ্চাদের পেটের সমস্যা চালতা পাতার রস, মধু ও চিনি মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এছাড়াও কচি ফল পেটের গ্যাস, কফ, বাত ও পিত্তনাশক। পাকা ফলের রস চিনিসহ পান করলে সর্দিজ্বর উপশম হয়। সব মিলিয়ে চালতা এক গুণে ভরা ফল। তাই মৌসুমের সময় আমাদের সবারই এই ফলগুলো খাওয়া উচিৎ।

বেলঃ


বেল একটি পুষ্টিকর এবং উপকারী ফল। এই গরমে ঠান্ডা এক গ্লাস বেলের শরবত নিমেষেই প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি বেলের গুণও রয়েছে অনেক। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়াম। কাঁচা পাকা দুই অবস্থায়ই সমান উপকারী। কাঁচা-বেল ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগে ধন্বন্তরী। পাকা বেলের শরবত সুস্বাদু। বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাসিয়ামের মত মূল্যবান পুষ্টি উপাদান। তা ছাড়া বেলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ, যা মুখের ব্রণ সারাতে সাহায্য করে। যাদের পাইলস আছে, তাদের জন্য নিয়মিত বেল খাওয়া উপকারী। এতে আছে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি গ্রীষ্মকালীন বহু রোগবালাই দূরে রাখে। জন্ডিসের সময় পাকা বেল গোলমরিচের সঙ্গে শরবত করে খেলে উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত বেল খেলে কোলন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কমে। সর্দি হলে বেলপাতার রস এক চামচ খেলে সর্দি ও জ্বর–জ্বর ভাব কেটে যায়।

কদবেলঃ


কৎবেল বা 'কদবেল' এক ধরনের ফল। এর খোলস শক্ত ও বেলের মত খসখসে। ২-৫ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট টেনিস বলের আকারের কৎবেল টক স্বাদের ফল। গাছে ছোট কাঁটা থাকে। বাংলাদেশে বাউকদবেল-১ ও বারিকদবেল-১ নামের উচ্চ ফলনশীল দুটি জাত পাওয়া যায়। বারিকদবেল-১ নিয়মিত প্রচুর ফল প্রদানকারী জাত। ফল গোলাকৃতি। পাকা ফল সবুজাভ বাদামি বর্ণের। ফলের শাঁস গাঢ় বাদামি ও মধ্যম রসালো, আঁশের পরিমাণ কম, স্বাদ টক-মিষ্টি। গাজীপুর, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় বেশি জন্মে। কদবেল যকৃত ও হৃদপিণ্ডের বলবর্ধক হিসেবে কাজ করে। বিষাক্ত পোকা-মাকড় কামড়ালে ক্ষত স্থানে ফলের শাঁস এবং খোসার গুঁড়ার প্রলেপ দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। কচি পাতার রস দুধ ও মিসরির সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে শিশুদের পিত্তরোগ ও পেটের পীড়া নিরাময় হয়।

আমড়াঃ


আমড়া মাঝারি আকারের পর্ণমোচী বৃক্ষে ফলে। বাংলাদেশ ছাড়াও আফ্রিকা, ভারত, শ্রীলংকা এবং ইন্দোনেশিয়ায় এই গাছটি জন্মে। তবে বরিশালের আমড়ার কোন তুলনা নাই। রাস্তার ফেরিওয়ালা থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জে সর্বত্র পাওয়া যায় আমড়া। এর সঙ্গে সবারই পরিচয় রয়েছে। সারাবছরই কম বেশি দেখা যায় এই ফলটি। দামি ফল আপেলের চেয়ে আমড়ায় প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রনের পরিমাণ বেশি। আকারে ছোট এই ফলটির প্রকৃত মৌসুম হচ্ছে জুলাই-আগস্ট। এ সময়ে ফলটি পরিপুষ্ট থাকে এবং আকারে বড় হয়। দেখতে ছোট হলেও ফলটির কিন্তু রয়েছে অনেক গুণ। আমড়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। আমড়ায় জলীয় অংশ রয়েছে ৮৩ দশমিক ২, খনিজ শূন্য দশমিক ৬, লৌহ শূন্য দশমিক ৩৯, আঁশ শূন্য দশমিক ১, চর্বি শূন্য দশমিক ১, আমিষ ১ দশমিক ১, শর্করা ১৫, ক্যালসিয়াম শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ। আমড়ায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, লোহা, ক্যালসিয়াম আর আঁশ রয়েছে। হজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর মধ্যে ভিটামিন সি রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। অসুস্থ ব্যক্তিরা আমড়া খেলে মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আসে। এতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে। শিশুদের দৈহিক গঠনে এটি খুব দরকারি। রক্তস্বল্পতাও দূর করে।

লেবুঃ


লেবু নামটা এসেছে সংস্কৃত ‘নিম্বু’ থেকে। নিম্বু থেকে নিমু পরিশেষে হয়েছে লেবু। লেবু নামটা যত সহজ, ফলটা তত সহজ নয়। এদেশে সিলেটেই আছে প্রায় আশি রকমের লেবু। এক এক লেবুর আকার-আকৃতি ও স্বাদ ভিন্ন রকম- কোনটা ভীষণ টক, কোনটা আবার ভীষণ মিষ্টি। সাধারণভাবে টকজাতীয় বা সাইট্রাসজাতীয় ফল বলা হয় লেবুকে। সুইট অরেঞ্জ, মাল্টা, কমলা, চাইনীজ কমলা-এসব মিষ্টি স্বাদের লেবু। অন্যদিকে কালামুন্সি, কাগজি, এলাচীলেবু- এসব টক স্বাদের। কাগজি লেবুর আর এক নাম পাতিলেবু। বাতাবি লেবু টক-মিষ্টি। ঘ্রাণের দিক দিয়েও এক লেবুর ঘ্রাণ এক এক রকম। লেবুতে উপস্থিত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের কারণেই লেবুর এত ভিন্নতা। কাজেই ভেষজ গুণ যে সব লেবুর একই রকম সেটা ভাবার কোন কারণ নেই। লেবু অত্যন্ত পুষ্টিগুণে ভরপুর। প্রচুর ভিটামিন সি আছে। জ্বর, কাশি, ক্ষুধা মন্দা, বমিনাশক। কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে দু’বেলা পান করলে মেদ কাটে। লেবু, মধু পানি খুব জনপ্রিয়। ফ্যাট কাটাতে এর জুড়ি নেই। লেবু রুচি বাড়ায়, কৃমিনাশক। গরম ভাতে বা ডালের সাথে কাগজি লেবুর রস। রীতিমতো অমৃত স্বাদ। কাগজি লেবুর আচারও খেতে সুস্বাদু। ১০০ গ্রাম লেবুতে ভিটামিন সি আছে ৬৩ মিলিগ্রাম, যা আপেলের চেয়ে ৩২ গুণ এবং আঙ্গুরের দিগুণ। ক্যালসিয়াম আছে ৯০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ১৫ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামি বি .১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২০ মিলিগ্রাম, লৌহ .৩ মিলিগ্রাম।

কামরাঙ্গাঃ


কামরাঙ্গা কাঁচা টক অবস্থায় যেমন সুস্বাদু, তেমনি পাকা মিষ্টি অবস্থায়ও অনেক উপাদেয়। সাধারণত ফল হিসেবে কাঁচা বা পাকা কামরাঙ্গা বেশ জনপ্রিয়। কামরাঙ্গা ফলের উৎপত্তি শ্রীলঙ্কায়। পরে ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কামরাঙ্গা ফলের বিস্তৃতি ঘটে। কামরাঙ্গা ফল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে বিভিন্ন নামে পরিচিত । যেমন- স্টার ফ্রুট বা তারা ফল, ক্যারামবোলা প্রভৃতি। শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রাক ঐতিহাসিক যুগ থেকে কামরাঙ্গা বেশ জনপ্রিয় ফল। খেতে টক হোক বা মিষ্টি, কামরাঙ্গা ফলটির সবটুকুই উপকারী। কোন কোন গাছে একাধিকবার বা সারাবছরই ফল পাওয়া যায়। এটি ভিটামিন এ ও সি এর ভাল উৎস। এশিয়ার অনেক দেশে ডায়াবেটিসসহ আরও কিছু রোগের চিকিৎসায় প্রচুর পরিমাণে কামরাঙ্গার রস একসঙ্গে অথবা প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে অনেক দিন ধরে পান করে থাকে। তবে যাদের কিডনি সমস্যা আছে তারা কামরাঙ্গা বা এর রস পান হতে পুরোপুরিভাবে বিরত থাকবেন।

আমলকিঃ


আমলকী একপ্রকার ভেষজ ফল। আমলকী গাছ বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, কম্বোডিয়া, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও দক্ষিণ আমেরিকায় দেখা যায়।আমলকি ফল ও পাতা দুটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়। আমলকীতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকীতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন 'সি' রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকীতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। আমলকীতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। একজন বয়স্ক লোকের প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ দরকার। দিনে দুটো আমলকী খেলে এ পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। আমলকী খেলে মুখে রুচি বাড়ে। স্কার্ভি বা দন্তরোগ সারাতে টাটকা আমলকী ফলের জুড়ি নেই। এছাড়া পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি ও রক্তহীনতার জন্যও খুবই উপকারী। করোনার হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। এজন্য এমন খাবার খেতে হবে যাতে করে আগের মত শরীর সুস্থ হয়ে ওঠে। এ সময় খাবার তালিকায় রাখতে পারেন আমলকি।

দেশি গাবঃ


গাব আমাদের অতি পরিচিত একটি দেশীয় ফল। দেশি গাব এক প্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদের ফল।এটি সুস্বাদু, মিষ্টি এবং কোষযুক্ত ফল। সংস্কৃত ভাষায় এর নাম 'তিন্দুকা', হিন্দি ভাষায় 'গাব' এবং তামিল ভাষায় 'তুম্বিকা'। আমাদের দেশে প্রচুর গাব গাছ রয়েছে। গ্রামে-গঞ্জে এক সময় সর্বত্রই গাব মিলতো। তেমন অর্থনৈতিক গুরুত্ব ছিল না এই ফলের। কিন্তু আজকাল শহর এলাকায় ফেরিওয়ালার ভ্যানে করে গাব বিক্রি করেন। আবার অনেক অভিজাত ফলের দোকানেও গাব পাওয়া যায়। আর স্বাদে অতুলনীয় গাবের চাহিদাও বাড়ছে দিন দিনই। দেশি গাবের আদি নিবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। গাব ফল দেখতে অনেক সাধারণ হলেও পুষ্টিগুণে আর স্বাদে মোটেও সাধারণ নয়। বরং অন্যান্য দামি ফলের চেয়ে এতে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি রয়েছে। গাবের এসব পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরকে রক্ষা করে নানা রোগ থেকে। ডায়বেটিস রোগীর জন্য কাঁচা ও পাকা গাব উপকারী। সুস্বাদু গাবের অনেক পুষ্টিগুণও রয়েছে। ডায়বেটিস, হৃদরোগ থেকে শুরু করে নানা অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধ করে এই ফল। গাব খেলে সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, বুকে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না এবং অ্যাজমা দূর করে। এতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান থাকার কারণে রোগপ্রতিরোধ প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়। আমাশয় ও পেটের অসুখে গাব গাছের ছাল বেশ উপকারী। স্বাদ ও পুষ্টির কথা বিবেচনা করে মৌসুমি এই ফল খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন সবাই।

বিলাতি গাবঃ


গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের সুন্দর ও সুস্বাদু ফলগুলোর মধ্যে বিলাতি গাব অন্যতম। বিলাতি গাব একটি সুস্বাদু ও মিষ্টি ফল। নাম বিলাতি গাব হলেও আদতে বিলাতের সঙ্গে এই গাবের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ফলটির গায়ের রং লালচে বাদামি, বিলাতের মানুষের মতো। সম্ভবত এ কারনেই দেশি গাব থেকে আলাদা করে চেনার জন্যই এমন নামকরণ। এর আদি নিবাস ফিলিপাইন। তা ছাড়া মালয়েশিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া, জাভা, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে এবং মালয় উপদ্বীপে এদের কয়েকটি বুনো জাতও পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মাগুরা, কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, পিরোজপুর এলাকায় প্রচুর বিলাতি গাব জন্মে । প্রায় সব ধরনের মাটিতে গাবের চাষ করা যায়। তবে উর্বর মাটিতে বিলাতী গাব ভাল হয়। গাছে তেমন যত্নের প্রয়োজন হয় না। শীতের শেষে গাছে ফুল আসে এবং বর্ষার শেষ ভাগে ফল পাকে। গাবগাছ ৮-১০ বছর বয়স হলে স্বাভাবিক ফলন দিতে আরম্ভ করে। গাব ফলনগুলি পুষ্ট হলে উজ্জল ও চকচকে হবে। পুষ্ট হলেই ফল সংগ্রহ করা হয়। বিলাতী গাবের ত্বক রেশমী লোমে আবৃত, ফলের শাঁস মেটে। এটি ওষুধিগুণসম্পন্ন ও বেশ পুষ্টিকর ফল। গাব কার্বহাইড্রেট ও মিনারেল সমৃদ্ধ একটি ফল। বীজ খোসা বাদে এর মাংসর মাখনের ন্যায় নরম সাদা অংশ হালকা মিষ্টি স্বাদের এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফ্রস ফল হিসেবে খাওয়া হয়।গাছের কাঠ শক্ত প্রকৃতির। কাঠ ঘর তৈরির কাজে লাগে।

কাউ ফলঃ


নামটা কাউ হলেও, টক-মিষ্টি স্বাদের ফল এটি। স্থানভেদে কাউফল ডেফল, কাউয়া, কাগলিচু, তাহগালা, ক্যাফল, কাউ গোলা ইত্যাদি নামেও পরিচিত। উপকূলীয় অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে শিশুদের অনেক প্রিয় এই ফল। ভিটামিন-সি তে ভরপুর কাউ ফলে আছে সর্দি-জ্বর ও ঠাণ্ডা সারাবার মতো ভেষজ গুণাগুণ। দিন দিন তাই বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে এই কাউ ফল। চিরহরিৎ অঞ্চল, উষ্ণমন্ডলীয় মালয়েশিয়া, ভারত, চীন, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামে এই ফল দেখা যায়। জলাবদ্ধতা ও লবনাক্ততা সহনীয় হওয়ায় দেশের সিলেট, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, চট্টগ্রামের মতো উপকূলীয় পিরোজপুর, বরিশাল, বাগেরহাট, পটুয়াখালী অঞ্চলের জঙ্গলে, খালের পাড়ে দেখা মেলে কাউ গাছের। পুষ্টিগুণে ভরা ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এই কাউ ফল মুখের অরুচি দূর করে। পরিমিত ক্যালরী সমৃদ্ধ চর্বি, ফাইবার ও এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের স্বাভাবিকবৃদ্ধি-বিকাশে ও রোগ প্রতিরোধে এই ফলের প্রয়োজনীয়তা অনেক।এই ফল সর্দি-জ্বর ও ঠাণ্ডা সারায়। গাছের ছাল আমাশয়, খিচুনি ও মাথা ব্যাথায় উপকারী। কাউ ফলে কপার, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ ও প্রচুর পটাশিয়াম থাকায় হাড় মজবুত রাখে হৃদস্পন্দনে সাহায্য করে। এতে থিয়ামিন, নিয়াসিন ও ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সসহ আরো প্রয়োজনীয় উপাদান থাকায় রক্তচাপ, স্ট্রোক ও করোনারি হার্ট রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। অপুষ্টিজনিত সমস্যায় উপকারী কাউ ফল। অনেকে পাতার রস চুলের খুসকি দূর করতে ব্যবহার করেন।কাশে ও রোগ প্রতিরোধে এই ফলের প্রয়োজনীয়তা অনেক। সর্দি-জ্বর ও ঠাণ্ডা সারায়। গাছের ছাল আমাশয়, খিচুনি ও মাথা ব্যাথায় উপকারী।

পেয়ারাঃ


পেয়ারা একরকমের সবুজ রঙের বেরী জাতীয় ফল। তবে অন্যান্য বর্ণের পেয়ারাও দেখতে পাওয়া যায়। লাল পেয়ারাকে রেড আপেলও বলা হয়। পেয়ারার প্রায় ১০০টিরও বেশি প্রজাতি আছে। তবে আমাদের দেশে পাওয়া যায় ৫০টির মতো জাত যার অধিকাংশ চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ও বরিশাল অঞ্চলে জন্মায়। আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে উষ্ণমন্ডলীয় আমেরিকা থেকে উদ্ভাবিত হয় পেয়ারা। মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রভৃতি স্থানে পেয়ারা বেশি জন্মে। বরিশালের গ্রামের প্রায় সব বাড়িতে জন্মাতে দেখা যায়। পেয়ারা এখন বরিশালের আটঘর, কুড়িয়ানাতে ব্যাপক উৎপাদন হচ্ছে ও প্রায় সারাবছরই কাঁচা ও পাকা আকারে এ পেয়ারা পাওয়া যায় এবং দাম তুলনামূলক অন্য ফলের চেয়ে কম বলে সাধারণ মানুষের পুষ্টির একটি সহজলভ্য উৎসে পরিণত হয়েছে। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ পেয়ারার রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ‘সি’ ও লাইকোপেনসমৃদ্ধ পেয়ারা। পেয়ারা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া চোখের জন্য ভালো, পেটের জন্য উপকারী আর ক্যান্সার প্রতিরোধী। তাছাড়া পেয়ারা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এই ফলের রস সর্দি-কাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশয়সহ পেটের অসুখ সারাতে খুব ভালো কাজ করে।
এ রকম আরাে কিছু রসালো ফলের পিরিচিতি থাকবে আমার ৩য় পর্বে
সূত্রঃ বরিশাল পিডিয়া

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম :-& ফেসবুক-১ :-& ফেসবুক-২
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:১১
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×