কয়েকদিন আগের কথা। সকাল থেকেই প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি! বৃষ্টির শব্দেই ঘুম ভাঙে। বাইরের পরিবেশটা উপভোগ করতে সম্মুখ বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখি গগনভেদ করে বৃষ্টির ফোয়ারা। পুরো পরিবেশ যেন ধুয়ে মুছে যাচ্ছে। সিক্ত হয়ে আছে আশেপাশের গাছ গুলো। কেমন একটা বিষন্ন সময়। ভগ্ন হৃদয় নিয়ে মেঘলা আকাশ ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করি।
নিত্য নৈমিত্তিক প্রথাবদ্ধ জীবনে আচমকা কিছু খন্ড মুহুর্ত আসে। নিজস্ব অনুভূতি ও বৈচিত্র্যময়তার কারণে মানুষকে অনন্য একটি স্মৃতিময় দিন উপহার দিয়ে যায়।
আমার মনটা জীবনের নানা রকম জটিল সমীকরণের গোলকধাঁধায় আহত হয়ে ছিল। বলা যায় প্রচন্ড মানসিক আঘাতে রক্তাক্ত!
বৃষ্টিধারার তীব্রতা কমে এলে আমি দু'তলা বাসা থেকে নিচে নামি।
বাসার সামনে একটা বিশাল শাখা প্রশাখা বেষ্টিত কড়ই গাছ। তাঁর নিচে থাকা অবকাশ যাপনের চেয়ারে বসে বিদেশি সবুজ ঘাসে বৃষ্টি ছুঁয়ে যাওয়া প্রকৃতির অন্যরূপ দেখি। বৃষ্টি পর মাটিতে লেপ্টে থাকা ঘাস গুলো বেশ মোহনীয় সৌন্দর্যের আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে চারপাশে।
মাথার উপরে কাকেদের ডাক শোনা যায়! আমি একবার কড়ই গাছের দিকে তাকাই। কাকের দল এক ডাল থেকে আরেক ডালে খেলা করছে। বৃষ্টির পর পরস্পরের খোঁজ নিচ্ছে। আমি কিছুটা সময় হাঁটাহাটি করি।
একটা ছোট্ট বিড়াল পাশ দিয়েই নীরবে হেটে যাচ্ছিল। মাঠেই কোথা থেকে একটা পাখা ভাঙা কাকের বাচ্চা মাঠে এসে পড়ে। সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটার বা উড়ার চেষ্টা করছে। আমি একাকী নীরবতায় ঢেকে থাকা প্রকৃতি দেখছিলাম।
হঠাৎ দেখি বিড়ালটা ভাঙা পাখার কাকের বাচ্চার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। অসহায় কাকের বাচ্চার উপর বিড়ালের আক্রমনে আরও কয়েকটা কাক কোথা থেকে মাঠে চলে আসে। ঘিরে ধরে বিড়ালটাকে। তারপর আরও কিছু কাক! মুহুর্তে পুরো এরিয়া কাকদ্বীপে পরিনত হল। মাথার উপরে প্রতিটি গাছে গাছে শত শত কাক! বিড়ালটা ভয়ে এমন দৌড়। আর কিছুক্ষণ হলে কাকেরা হয়তো বিড়ালটাকে ছিঁড়ে খেতো। আমি অনেকটাই আতংকে বাসায় ফিরলাম।
প্রকৃতির মধ্যেই যাপিত জীবনের গল্প লুকিয়ে থাকে।
তারপর পুরো ঘটনাটা মনের মধ্যে কেমন একটা শিহরণ দিয়ে গেল।দূর্বল পেলেই সবাই আক্রমণ আর আঘাত করতে চায়। যখন দূর্বল মানুষটার শক্তি গুলো ঘিরে ধরে তখন বিড়ালের মতো প্রাণ সব ভয়ে পালিয়ে যায়।
জগতের নিয়মটাই হয়তো এমন! কার ভেতরে কী অদ্ভুত শক্তি লুকিয়ে আছে কেউ জানে না। কাউকেই ছোট বা দূর্বল ভাবা ঠিক না।
(বিঃদ্রঃকাউকে বাইরে থেকে দূর্বল ভেবে বিনাকারণে আঘাত করার চেষ্টা করলে তাঁর জন্য বড় আঘাত অপেক্ষা করতে পারে।)
----নুরুন নাহার লিলিয়ান
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২২ রাত ১০:১০