somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেককাহন

০৬ ই অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[উৎসর্গ- প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় ভূলুআপা। এই ব্লগে তো বটেই; নেটে বাংলা ভাষায় লভ্য রেসিপিগুলোর মধ্যে তাঁরগুলোই সেরা।
প্রিয় সহব্লগার জেমিনির অনুরোধে এই পোস্ট দেয়া।

পোস্টটি নিজ ব্লগে প্রকাশিত; আপডেট করা হচ্ছে। রেসিপি বা রান্নায় আগ্রহ না থাকলে মন্তব্য না করার অনুরোধ রইলো]
[সর্বশেষ আপডেট ২০ জানুয়ারী২০১০]

এক.
পাশ্চাত্যের খাবার অথচ আমাদের উৎসব-আয়োজনের অংশ হয়ে গেছে, কেক এমনই একটা খাবার। ক্রিমের কারুকার্যময় নকশায় জন্মদিনসহ বিভিন্ন উপলক্ষের কেকের সঙ্গে আমাদের পরিচয় আছে। এছাড়া চায়ের অনুষঙ্গ হিসেবে একটু ভারী টেক্সচারের, ক্রিমবিহীন কেকও আমরা কমবেশী খাই। অভিজাত বেকিং-চেইনের উচ্চমূল্যের কেক যেমন আছে; তেমনি আছে পাড়ার মুদিদোকানের বোয়ামে অনামী অখ্যাত বেকারির প্রোডাক্ট। কিংবা বিদেশ থেকে আমদানী করা পলিপ্যাকমোড়া কেক। খেতে কোনটাই খারাপ না।

অন্যদিকে ঘরে কেক বানানোর ঝক্কি অনেক। তবুও কেউ কেউ শখ করে এই কাজটা করেন। যারা একবার ঘরোয়া কেকের মজা পেয়ে যান, দোকানের কেকের স্বাদের ফাঁকিটা সহজেই ধরতে পারেন। এর কারণ হলো দোকানের কেকে খরচ কমানোর জন্য বিকল্প উপকরণের ব্যবহার করা হয়। বেশীদিন মেয়াদ থাকার জন্য প্রয়োগ করা হয় প্রিজারভেটিভ। ক্ষতিকর রাসায়নিক, রং, আর ভেজাল উপকরণের কথা বলাই বাহুল্য। এসব বিবেচনা করে, অথবা নেহাত শখের বশেই কেউ যদি কেক তৈরিতে আগ্রহী হন, তাদের জন্য এই পোস্ট। শুরুতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, উপকরণ, পাত্র ইত্যাদি নিয়ে কিছু কথা থাকবে। তারপর রেসিপি। বাংলাদেশে ঘরোয়া ব্যবহারের জন্য যেসব ওভেন পাওয়া যায় তার সবই বিদ্যুৎ- চালিত। অথচ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই প্রচলিত গ্যাসের চুলা ব্যবহার করে কেক বানানোর বিকল্প উপায় নিয়েও কিছু টিপস থাকবে।

আমাদের চেনাজানা রেসিপি থেকে কেকের রেসিপি একেবারেই আলাদা। এর কারণগুলো বলি।
প্রথমতঃ কেকের প্রস্তুতিতে কিছু যন্ত্রপাতির যোগ আছে।
দ্বিতীয়তঃ যে পাত্রে কেক বানানো হবে তার পূর্বপ্রস্তুতির ব্যাপার আছে।
তৃতীয়তঃ উপকরণগুলো নির্দিষ্ট অনুপাতে বিশেষ কায়দায় মিশিয়ে ওভেনে বেক করতে দেয়া হয়ে গেলে তারপর আর কোনকিছু করার নেই। ফলে প্রথম পর্বের মেশানোতে কোন ভুলত্রুটি রয়ে গেলে সেটা শোধরানোর সুযোগ থাকবেনা।
চতুর্থতঃ কেক তৈরি হয়ে গেলে তা ঠাণ্ডা করা এবং সুন্দরভাবে কাটার জন্য বিশেষ কায়দা আছে।
উপরের ধাপগুলো সব ধরণের কেকের জন্য প্রযোজ্য। এছাড়া বিশেষ উপলক্ষে একাধিক স্তরবিশিষ্ট কেক বানালে ক্রিম তৈরী ও কেক সাজানোর বিভিন্ন পদ্ধতি আছে।

পেশাদার বেইকাররা অনেক উচ্চমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন, সেগুলো ঘরোয়া ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। তারপরও, ঘরে ঠিকঠাক কেক বানাতে কিছু জিনিস অপরিহার্য। এগুলো ছাড়া বানানো কেক স্বাদের বিবেচনায় খেতে ভাল হতে পারে; তবে ঠিক সেরকম নরম বা স্পঞ্জি হবেনা।

১.কিচেন স্কেইল (উপকরণ ওজন করার জন্য)। ইলেকট্রিক বা ডিজিটাল হলে দারুণ।

সাধারণ ডায়ালের হলেও কাজ চলে; এটা একেবারেই সস্তা; তবে বেশীদিন টেকেনা অথবা ঠিকমতো রিডিং দেয়না।


২. ইলেকট্রিক হ্যান্ড মিক্সার; দেশে যেকোন ব্র্যান্ডের শোরুমে পাওয়া যাবে। আমি কিনেছিলাম ফিলিপসেরটা; প্রায় বারো বছর আগে, তখন দাম ছিল হাজার দেড়েক, এখনও সার্ভিস দিচ্ছে :)


৩. ওভেন থার্মোমিটার। এটা খুবই সস্তা। ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ায় টু-ডলার শপেও পাওয়া যায়। দেশে পাওয়া না গেলে বিদেশ থেকে কাউকে আনতে বলতে পারেন নির্দ্বিধায় :)


৪. একটা বড় মিক্সিং বোল, পাইরেক্সের হলে সবচেয়ে ভালো।


৫. বড় হুইস্ক (চ্যাপ্টা বা সরু হলে চলবে না; বেলুনের মতো ফোলানো, বড়সড়)। প্লাস্টিক বা নাইলনের চেয়ে মেটালের হলে ভালো হয়।


৬. খুব নমনীয় (ফ্লেক্সিবল) স্প্যাচুলা। সিলিকনের হলে সবচেয়ে ভালো। প্লাস্টিক হলেও কাজ চলবে তবে সহজে ভেঙ্গে যায় বলে একাধিক রাখতে হবে।




উপকরণ:
দোকানের কেকের মোড়কের গায়ে অন্তত গোটাবিশেক উপকরণের তালিকা লেখা থাকে (যদি আদৌ থাকে :))। তবে ঘরে কেক বানাতে খুব বেশী উপকরণের প্রয়োজন হয়না। উপকরণের দিক থেকে কেক মূলতঃ দু'রকমের। বাটারকেক আর স্পঞ্জ কেক। বাটারকেকের মূল উপকরণ ময়দা, ডিম, চিনি, মাখন, বেকিং পাউডার। স্পঞ্জ কেকে সাধারণতঃ বেকিং পাউডার ও মাখন লাগেনা।

এছাড়া রেসিপির ভিন্নতা অনুযায়ী সামান্য দুধ, টকদই, সাওয়ার ক্রিম, সুগন্ধী যেমন ভ্যানিলা/লেমন/অরেন্জ এসেন্স, বেকিং সোডা, ক্রিম অফ টারটার, লবণ, শুকনো ফল, বাদাম, ফলের মোরব্বা, চটকানো কলা, আনারসের টুকরো, নারকেল কোরা, কমলা বা লেবুর খোসা কোরা, লেবুর রস, কোকো পাউডার, গলানো চকোলেট এসবের কোন কোনটা দেয়া যেতে পারে কেকে।

বেকিং পাউডার, বেকিং সোডা আর ক্রিম অফ টারটার নিয়ে অনেকের বিভ্রান্তি থাকে। তিনটি উপকরণই দেখতে সাদা পাউডারের মতো। বেকিং সোডা হলো সোডিয়াম বাই কার্বোনেট। বাংলাদেশের বাজারে বেকিং সোডা লেবেলবিহীন প্যাকেটেও বিক্রি হয়, এটা খাবার সোডা নামেও পরিচিত। ক্রিম অফ টারটার হলো পটাসিয়াম বাইটারট্রেইট (টারটারিক এসিডের পটাসিয়াম লবণ)। বেকিং পাউডার হলো বেকিং সোডা আর ক্রিম অফ টারটারের নির্দিষ্ট অনুপাতের মিশ্রণ। ক্রিম অফ টারটার আর বেকিং পাউডার দু'টোই দেশে সহজলভ্য।

কেকের জন্য বিশেষ ময়দা পাওয়া যায় (দেশে পাওয়া যায় কিনা জানা নেই)। একে বলে কেক ফ্লাওয়ার (সেল্ফ রেইজিং ফ্লাওয়ার নয় কিন্তু)। সাধারণ ময়দার সঙ্গে এর পার্থক্য হলো এটা কণাগুলো বেশী মিহি এবং ব্লিচ করা হয় বলে প্রোটিনের ভাগ কম থাকে। ফলে কেকের টেক্সচার মসৃণ হয়; কাটার সময় গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ঝরেনা। কেক ফ্লাওয়ার পাওয়া না গেলে ভালো মানের ময়দা তিনভাগ আর কর্নফ্লাওয়ার একভাগ মিশিয়ে নেয়া যেতে পারে (যেমন ছয় কাপ ময়দার সঙ্গে দুই কাপ কর্নফ্লাওয়ার)। হুইস্ক দিয়ে খুব ভালোভাবে নেড়ে মেশাতে হবে। একটা বড় বোয়ামে বা টিনে এই ময়দা ভরে রাখলে প্রতিবার কেক বানানোর সময় নতুন করে মেশানোর ঝামেলা করতে হবেনা।

ডিম, মাখন আর দুধ রুম টেম্পারেচারে থাকতে হবে। ফ্রিজে থাকলে অন্তত একঘন্টা আগে বের করে রাখতে হবে। মাইক্রোওভেন থাকলে মাখন আর দুধ খুব অল্প সময়ের জন্য সেখানে দিয়ে ঠাণ্ডা কাটানো যেতে পারে। মাখন নরম হওয়া চাই; তবে খেয়াল রাখুন যেন গলে তরল হয়ে না যায়।

সহজে মেশে বলে ছোট দানার চিনি ব্যবহার করা উচিত। বাজারে মিহি দানার চিনি ক্যাস্টর সুগার পাওয়া যায়। বিকল্প হিসেবে গ্রাইন্ডারে চিনি গুঁড়ো করে নেয়া যেতে পারে। চিনি গুঁড়ো করার জন্য পরিষ্কার খটখটে শুকনো শিলপাটাও ব্যবহার করা যেতে পারে। একবারে কয়েককাপ চিনি গুঁড়ো করে রাখলে বেশ কয়েকবার ব্যবহার করা যাবে। বোয়ামটি ঠাণ্ডা শুষ্ক জায়গায় রাখুন আর প্রতিবার ব্যবহারের আগে শুকনো কাঁটাচামচ দিয়ে ভালো করে দলাগুলো ভেঙে মসৃণ করে নিন।

কেকপ্যান:
যে পাত্রে কেক বেক করা হবে সেটার মাপ (আয়তন) ঠিকঠাক হওয়া জরুরি। কারণ ওভেনের ভেতরে বেক হওয়ার সময় কেক ফুলে উঠে আয়তনে বাড়বে। কেকের মিশ্রণের তুলনায় প্যানের আকার ছোট হলে ব্যাটার উপচে পড়বে। আবার প্যান বেশী বড় হলে কেকের উচ্চতা বেশী হবেনা। সবচেয়ে বড় কথা কোন ধরণের কেক বানানো হবে তার উপর নির্ভর করবে প্যান নির্বাচন। নাশতার জন্য সাধারণ বাটারকেক বা টি-কেক বানাতে হলে ব্রেড বা পাউরুটির আকারের প্যান আদর্শ। সুইস রোল ধরণের কেক করার জন্য চ্যাপ্টা ট্রের মতো পাত্র দরকার হয়। নকশাকাটা বান্ট প্যানে(Bundt pan) কিছু কিছু কেক (যেমন ফ্রুটকেক বা মার্বেল কেক) দেখতে ভালো লাগে। আবার বিশেষ উপলক্ষে কয়েক স্তরের (ভেতরে ক্রিমের পরত দেয়ার জন্য) কেক বানাতে হলে প্রয়োজনমতো গোল বা চারকোণা প্যান লাগবে। এধরণের পাত্রগুলো দুরকমের হতে পারে; প্যানের চারপাশের দেয়াল সোজা খাড়া হতে পারে অথবা ঢালু হতে পারে। সোজা খাড়া দেয়ালের কেকপ্যানের তলা আর মুখের মাপ সমান। চারপাশ ঢালু হলে প্যানের তলার চেয়ে মুখের দৈর্ঘ/প্রস্থ/ব্যাস বড় হয়। সোজা দেয়ালের কেকপ্যান ব্যবহার করার বাড়তি সুবিধা আছে। নীচের ছবিগুলোর মধ্যে হাতলসহ কেকপ্যানের চারপাশের দেয়াল ঢালু।






গাঢ় রঙের (কালো) বা বেশী চকচকে কেকপ্যান ব্যবহার না করাই ভালো; এগুলো দ্রুত গরম হয়ে কেকের ধারগুলো পুড়িয়ে দেয়। চকচকে না এমন ছাইরঙের অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র হলে চলে; ননস্টিক কোটিং থাকলে ভালো। তবে খুব বেশী দামী ব্র্যান্ড আইটেম কেনার দরকার আছে বলে আমার মনে হয়না।

দুই.




বাচ্চারা কাপকেক পছন্দ করে। কারণ এটা কাগজের কাপে থাকে বলে হাতে ধরে খাওয়া যায়। মায়েরা পছন্দ করেন কারণ বানাতে কম সময় লাগে, এটাতে কাটাকাটির কোন ঝামেলা নেই আর ক্রিম ইত্যাদি দিয়ে সাজানো খুব সহজ। কাপকেক বানাতে এরকম মাফিন ট্রে অথবা কাপকেক টিন ব্যবহার করেন অনেকে। কাপকেক বা মাফিনের প্যানের বাটিগুলোতে ছোট বাটি-আকৃতির কাগজ বসিয়ে দিতে হয়। একে কাপকেক লাইনার অথবা মাফিন কাপ বলা হয়। বিভিন্ন রং ও নকশার কাপ পাওয়া যায়, বাচ্চার পছন্দমতো কিনুন। (উপরে মাফিন টিন ও কাগজের কাপের ছবি আছে)

কেক বানানোর আগে পাত্র বা কেকপ্যানের কিছু প্রস্তুতি দরকার। এটা হলো বেকিং পেপার দিয়ে লাইনিং দেয়া। বেকিং পেপার (পার্চমেন্ট পেপারও বলা হয়) হলো একরকমের ওয়্যাক্স/সিলিকন-কোটেড কাগজ; এটা দিয়ে আস্তর দিলে পাত্রের গায়ে কেক আটকে যাবেনা; আবার কেকের গা থেকে সহজে এই কাগজ ছাড়িয়ে নেয়া যাবে। ঢালু দেয়ালের কেকপ্যান হলে পাত্রের তলার মাপে এই কাগজ কেটে দিতে হবে। খাড়া দেয়ালের কেকপ্যান হলে তলার সঙ্গে সঙ্গে পাশেও বেকিং পেপারের আস্তরণ দিতে পারেন। আস্তরণ দেয়ার আগে পাত্রের গায়ে সামান্য একটু তেল স্প্রে করে নিলে ("অয়েল স্প্রে" না থাকলে কয়েক ফোঁটা তেল ছিটিয়ে বা ব্রাশ করে দেবেন) বেকিং পেপার সেখানে ভালোমতো আটকে থাকবে। বেকিং পেপার পাওয়া না গেলে বিকল্প হিসেবে সাদা কাগজে ভালো করে তেল মাখিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। তেল মাখানোর কাজে ছোট পেস্ট্রিব্রাশ (ছবি আঁকার বড় ব্রাশ হলেও চলবে) ব্যবহার করলে ঝামেলা ও অপচয় হবেনা।

বেকিং পেপার যেভাবে ব্যবহার করতে হয়-
১. শুধু তলার লাইনিংএর জন্য
২. তলা ও পাশে লাইনিংএর জন্য (প্রথমে পাশে দিতে হবে; তারপর তলায়)



বান্ট প্যানের প্রস্তুতিতে বেকিং পেপার ব্যবহার করা যাবেনা (উপরে বান্ট প্যানের ছবি)। এটাতে তেল স্প্রে করতে হবে অথবা ব্রাশ করতে হবে। তারপর সামান্য দু'তিন চিমটি ময়দা ছিটিয়ে দিয়ে প্যান ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তেলের ওপর ছড়ান (চালুনিতে করে দিলে মিহিভাবে ছড়াবে)। উপুড় করে কয়েকবার হাল্কাভাবে ঝাঁকালে বাড়তি ময়দা ঝরে পড়বে।

তিন.



সিলিকোনের কেকপ্যান (উপরের ছবি) আজকাল বাজারে প্রচুর দেখা যায়। দেখতে সুন্দর, অনেক রঙে পাওয়া যায়। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো পরিস্কার করা সহজ। আঁচড় বা স্ক্র্যাচ, মরিচা পড়া এসবের ঝামেলা নেই। আর কাপকেকের জন্য অনেক নকশায় পাওয়া যায়। কোন কোন ব্র্যান্ড দাবী করে, সিলিকোন কেকপ্যানের প্রস্তুতির কিছু নেই; কাগজের লাইনিং দরকার হয়না। কিন্তু এর কিছু অসুবিধাও আছে। এটা যেহেতু খুবই নমনীয়, তাই একটা বেকিং ট্রে লাগে বসানোর জন্য। ওভেনের তাপমাত্রা বা বেকিঙের সময় পুনঃনির্ধারণ করে নিতে হয়। ননস্টিক কেক পেতে হলে রেসিপিতে তৈলাক্ত অংশ বাড়িয়ে দিতে হয়। কেক বের করার জন্য পুরোপুরি ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, যার ফলে কেকের তলা ভেজা-ভেজা হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় কথা, সিলিকোন কেকপ্যানে কেক অতোটা ফোলে না, ফলে একটু ভারী কেক তৈরী হয়।


উপকরণের মাপ:
প্রচলিত রেসিপিগুলোতে সাধারণতঃ আয়তন হিসেবে উপকরণ পরিমাপ করা হয়। যেমন দুই কাপ ময়দা, এক কাপ চিনি, তিন টেবিলচামচ দুধ ইত্যাদি। এই রেসিপিগুলোকে আমি "ফুলপ্রুফ" বলবোনা। প্রথমত কাপের মাপটা ঠিক কী, সেটা বলা হয় না। চায়ের কাপ বিভিন্ন মাপের হতে পারে। দ্বিতীয়ত মাপের কাপও আয়তনের হতে পারে, ২৪০ সিসি(এমএল) আয়তনের কাপ আছে, আবার ২৫০ সিসির কাপও আছে। টেবিল চামচের মাপ কোথাও ১৫ সিসি, কোথাও ২০ সিসি। অতোটি ডিম- এটাও খুব যথাযথ নয় কেকের রেসিপির জন্য। ছোট দেশী মুরগীর ডিম আর বড় ফার্মের ডিমের মাপে যথেষ্ট পার্থক্য; যা কেকমিশ্রণের তরলতার কমবেশী করে, বেকিঙের সময় এবং কেকের টেক্সচারেও প্রভাব ফেলে। এজন্য পেশাদার অথবা খুঁতখুঁতে বেইকাররা ওজন মেপে পরিমাপ করা রেসিপি অনুসরণ করেন।

বেশীরভাগ উপকরণের জন্য ওজনের বিকল্প হিসেবে একটা নির্দিষ্ট আয়তনের উল্লেখ করা সম্ভব। যেমন ২০০ গ্রাম চিনির বদলে ১ কাপ চিনি (২৪০ সিসির কাপে) বলা যেতে পারে। চিনির বোয়ামে কাপটা ঢুকিয়ে কাপে করে চিনি নিলেন। বেশ কিছুটা চিনি ঢিবির মতো উঁচু হয়ে থাকবে; একটা ছুরি দিয়ে বাড়তি চিনি সরিয়ে কাপের মুখ বরাবর চিনি "লেভেল" করে নিতে পারেন। কিন্তু সমস্যা হবে ময়দা মাপার ক্ষেত্রে। এককাপ ময়দা হালকাভাবে কাপে তুলে নেয়া যায়, আবার ঠেসে নিলে এক কাপের মধ্যে বেশ কিছুটা বাড়তি ময়দা ধরে। আবার ময়দা চেলে নিলে বেশ হাল্কা ফুরফুরে হয়ে যায়। সেজন্য ময়দার মাপটা "ওজন" হিসেবে নেয়াই শ্রেয়। যদি ওজন করার জন্য কিচেন স্কেইল না থাকে তাহলে বিকল্প হিসেবে এই কাজটা করতে পারেন। বড় একটা কাগজের উপর মাপের কাপ (২৪০ সিসি বা এমএল) রাখুন। ওপর থেকে চালুনির মধ্য দিয়ে ময়দা চালতে থাকুন। কাপের বাইরে পড়লে সমস্যা নেই, পরে কাগজ থেকে আবার টিনে তুলে রাখতে পারবেন। ময়দা চালতে চালতে কাপ ভরে গিয়ে আরেকটু উঁচু হলে চালা বন্ধ করুন। এক হাতে কাপটা ওখানেই ধরে রেখে আরেক হাতে ছোট পাতলা ছুরি হাল্কাভাবে আড়াআড়ি চালিয়ে বাড়তি ময়দা সরিয়ে কাপের মুখ বরাবর লেভেল করে ফেলুন। খেয়াল রাখবেন ময়দায় যেন চাপ না পড়ে, কাপটাও নাড়াবেন না। এভাবে চালা এককাপ ঝরঝরে শুকনো মিহিকণার ময়দার ওজন মোটামুটিভাবে ১০০ গ্রামের কাছাকাছি থাকে। রেসিপিতে বলা থাকুক আর না থাকুক (বিশেষ করে বাংলা বই বা পত্রিকায় পাওয়া), এক কাপ ময়দা মানেই হলো এভাবে চেলে নেওয়া এক কাপ ময়দা; প্রথমে এক কাপ ময়দা নিয়ে তার পরে চালা নয়।

ময়দা প্রসঙ্গে একটি জরুরি কথা। ময়দা ঝরঝরে শুকনো হওয়া চাই। আর্দ্র পরিবেশে ময়দা সংরক্ষণ করা হলে সেই ময়দা দিয়ে তৈরী কেক ভালো হয়না। কেক ফ্লাওয়ার (আগে আলোচনা করা হয়েছে) পাওয়া না গেলে বিশেষ করে স্পঞ্জ কেকের টেক্সচারে সমস্যা হতে পারে। ছড়ানো পাত্রে ১ ইঞ্চি পুরু করে ময়দা ঢেলে মাইক্রোওভেনে ১০০% পাওয়ারে এক-দেড় মিনিট রাখতে পারেন (পোড়া গন্ধ বের হলে বুঝতে হবে আরো কম সময় রাখতে হবে)। প্রতি ৩০ সেকেন্ড পর শুকনো চামচ দিয়ে একবার নেড়ে দেবেন। তারপর চেলে নেবেন।

চার.
কিছু সাধারণ সমস্যার সমাধানে টিপস-

প্লেন কেক, টি-কেক (চায়ের অনুষঙ্গ হিসেবে খাওয়া হয় বলে এমন নাম) এগুলো সাধারণত বাটার-কেকের রেসিপি অনুসরণ করে বানানো হয়। এটার জন্য সুবিধাজনক প্যান হলো ব্রেড বা পাউরুটি আকারের প্যান বা টিন। চারকোণা, আয়তাকার। এই আকৃতির কেক কাটা সহজ, সংরক্ষণও সহজ। কিন্তু বেক করার সময় ওপরটা ফেটে যায় বলে অনেকে এই প্যান পছন্দ করেন না।



ওপরের ছবিতে ফাটার পাশাপাশি আরেকটা সমস্যা দেখা যাচ্ছে। কেকের বাইরের দিকটা পোড়া পোড়া হয়ে গেছে। এটা রোধের জন্য কিছু টিপস:
১. বেকিং সময় পাঁচ-দশ মিনিট কমিয়ে দিন, সেক্ষেত্রে যদি দেখা যায় ভেতরটা কাঁচা রয়ে গেছে, তাহলে ওভেনের তাপমাত্রা ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করুন। ওভেন থার্মোমিটার ব্যবহার করুন। আর সেটা সম্ভব না হলে তাপমাত্রা কমিয়ে দিন (১৫ডিগ্রি ফারেনহাইট কমিয়ে দেখতে পারেন; বেকিং-সময় বাড়াতে হবে)।
২. কেকের উপরে রং গাঢ় হয়ে এসেছে অথচ ভেতরে হয়নি, আরও কিছু সময় কেক রাখতে হবে ওভেনে- এমন হলে ওই সময় কেকের উপর আলগোছে এক টুকরো এলুমিনিয়াম ফয়েল (কাঁটা চামচ দিয়ে কয়েকটা ফুটো করে) বসিয়ে দিন; চকচকে দিকটা ভেতরে রাখুন। এই ফয়েল ওভেনের উপরের দিক থেকে আসা তাপ ঠেকাবে; আবার ফুটো থাকায় বাষ্প জমে যাবে না।
৩. গাঢ় রঙের কেকপ্যানও এর জন্য দায়ী হতে পারে (কেকের কিনারার দিকে দ্রুত তাপ পরিবহন করে)।

ব্রেডপ্যানে বেক করলে প্লেন কেক ওরকমভাবে ফাটবেই। তবে সুন্দরভাবে ফেটেছে এমন কেকও হয় (নীচের ছবি)



টিপস:
কেক ২০-২৫ মিনিট বেক হয়েছে, এখনও ফাটতে শুরু করেনি, সে অবস্থায় একটা ছুরি (ছোট, ধারালো, তেলমাখানো) নিয়ে কেকের উপরে আধইঞ্চির মতো গভীর করে এমাথা থেকে ওমাথা দাগ কেটে দিন। ক্ষিপ্র হাতে খুব দ্রুত কাজটা করা চাই। অবশ্যই মনে রাখবেন, ধারে কাটতে হবে, ভারে না কিন্তু। তখন ওই দাগ বরাবরই কেকটা ফাটবে। খুব অল্পসময়ের মধ্যে দাগ কাটার কাজটা হওয়া চাই। ওভেনের দরজা বেশীক্ষণ খোলা রাখলে তাপমাত্রা কমে যাবে।

পাঁচ.




বিশেষ উপলক্ষে চাই এরকম কয়েকস্তরের ক্রিম দেয়া কেক। এগুলোকে বলা হয় লেয়ার কেক। এই লেয়ারগুলো তৈরির জন্য গোল বা চারকোণা কেকপ্যানে আলাদা আলাদাভাবে বেক করা যায়, আবার একটা কেক বানিয়ে আড়াআড়ি একাধিক লেয়ার কেটে নেয়া যায়।

তারপর লেয়ারগুলোকে ক্রিমের পরত দিয়ে একটার উপর একটা করে বসানো হয়, ওপরে ও চারপাশে ক্রিম দিয়ে ঢেকে দেয়াকে আইসিং বা ফ্রস্টিং বলা হয়।



লেয়ার কেক তৈরির সময় খুব সাধারণ সমস্যা হলো কেকের ওপরের দিকটা ফেটে যাওয়া, সমানভাবে না ফুলে মাঝখানের দিকটা পাহাড়চূড়ার মতো ফুলে ওঠা। তখন কেকের ওপরের দিক থেকে সমান করে কেটে নিতে হয়।



কিন্তু অনেকসময় দেখা যায় এভাবে কাটতে গিয়ে কেকের বেশীরভাগ অংশই ফেলে দিতে হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানে সমানভাবে ফোলা কেকের জন্য কিছু টিপস:

১. ধাতব পদার্থ খুব দ্রুত তাপ পরিবহন করে। তাই কেকের বাইরের অংশ, যা কেকপ্যানের সংস্পর্শে থাকে, তাড়াতাড়ি বেক হয়ে শক্ত হয়ে যায়, বেশী ফুলতে পারেনা। মাঝখানের অংশে তাপ ধীরে ধীরে পৌঁছায় বলে সেটা সময় নিয়ে বেক হয়, বেশী ফোলে। এ অবস্থায় তাপের ভারসাম্য আনতে ওভেনে ঢোকানোর আগে কেকপ্যানের চারপাশে magi-cake-strip অথবা bake-even-strip নামের একটা জিনিস ভিজিয়ে আটকে দিতে হয়।

এই বস্তুর একটা ঘরোয়া বিকল্পের কথা বলছি। ১০০% সূতির টাওয়েল থেকে প্রয়োজনীয় দৈর্ঘ-প্রস্থের স্ট্রিপ কেটে নিয়ে ভিজিয়ে নিংড়ে কেকপ্যানের চারপাশে ভালোমতো জড়িয়ে কাঠ বা ধাতুর তৈরি ক্লিপ বা পিন দিয়ে আটকে দিন। অথবা কয়েকস্তরে ভাঁজ করা কিচেন পেপার টাওয়েল অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের ভাঁজের মধ্যে রেখে একইভাবে আটকে দিন। আর ওভেনে কেকপ্যান বসানোর পর একটা স্টিলের পেরেক কেকমিশ্রণের মাঝখানে উল্টো করে বসিয়ে দিন। অবশ্যই পেরেকের মাথার দিকটা সমতল হতে হবে, আর সেটা আগেই পানিতে ফুটিয়ে নিতে ভুলবেন না। কেক তৈরি হয়ে গেলে কেকপ্যান উল্টে কেক বের করার পর ঐ পেরেক সহজেই সরিয়ে নেয়া যাবে।
২. উপরের কৌশলের পরও যদি কেক মাঝখানে বেশী ফোলে তবে রেসিপি খেয়াল করুন। এটা যদি বাটার কেকের রেসিপি হয়ে থাকে অর্থাৎ এতে যদি বেকিং পাউডার বা বেকিং সোডা থাকে তাহলে এর পরিমাণ বাড়াতে হবে। বিপরীতে কেক যদি মাঝখানে দেবে যায় তাহলে পরিমাণ কমাতে হবে।
৩. লেয়ার কেকের জন্য স্পন্জকেকের রেসিপি ব্যবহার করুন। বাটার কেকের চেয়ে এটা তুলনামূলকভাবে বেশী কুশলতা দাবী করে।

লেয়ার কাটার জন্য টিপস:
লেয়ারগুলো সমান পুরুত্বের হওয়া চাই। সমানভাবে কাটতে পারা চাই। serrated knife অর্থাৎ ধারালো প্রান্তে করাতের মতো এমন লম্বা ছুরি ব্যবহার করতে হবে। সামনে পিছনে আগুপিছু করে কাটতে হবে। সমানভাবে লেয়ার কাটার জন্য অনেক রকম ঘরোয়া উপায় আছে। দুপাশে সমান উচ্চতার কাঠের ব্লক রাখতে পারেন, যার উপর ছুরি আড়াআড়িভাবে ঠেকিয়ে লেয়ার কাটতে পারেন। অথবা নির্দিষ্ট উচ্চতায় কেকের পরিধি বরাবর কয়েকটা টুথপিক গেঁথে সে বরাবর আড়াআড়ি ছুরি চালাতে পারেন; নীচের ছবিতে দেখুন।


অথবা পেশাদারদের মতো কেক লেভেলার ব্যবহার না করলেও তার ঘরোয়া সংস্করণটি কিনতে পারেন।

ছয়.

প্লেইন কেক / পাউন্ড কেক রেসিপি
(উপকরণের মাপ, তাপমাত্রা, ভৌত অবস্থা, কেকপ্যান প্রস্তুতি, কেক কাটা ইত্যাদি বিষয়ে আগে আলোচনা করা হয়েছে। সেসব টিপস অনুসরণ করলেই ভালো কেক তৈরি করা সম্ভব।)

উপকরণ
ক.
চেলে নেয়া কেকের ময়দা :১৫০ গ্রাম (দেড় কাপ)
চিনি : ১০০ গ্রাম (আধ কাপ; চিনির মিষ্টতা কম হলে পৌনে এক কাপ নিতে পারেন)
বেকিং পাউডার : এক চা চামচের চারভাগের তিনভাগ
লবণ : চার ভাগের এক চা চামচ

খ.
মাখন (নরম) : ১৬০ গ্রাম

গ.
দুধ (তরল) : ৩ টেবিল চামচ (৪৫ গ্রাম)
ডিম (বড়) : ৩ টা (১৫০ গ্রাম; খোসা ছাড়া)
ভ্যানিলা এসেন্স : দেড় চা-চামচ (আধ টেবিল চামচ)

প্রণালী
১. ৮ইঞ্চি বাই ৪ইঞ্চি বাই ২.৫ইঞ্চি মাপের (এটা চার কাপ মাপের; ছয় কাপ মাপ পর্যন্ত যে কোন ব্রেডপ্যান বা বান্টপ্যান এই রেসিপির জন্য উপযুক্ত) ব্রেড প্যান উপুড় করে তার উপর বেকিং পেপার চেপে বসান। চার কোণায় ভাঁজ করে স্ট্যাপল করে নিন। প্যানের মাপের কাগজের লাইনার তৈরি হলো। এটাকে প্যানের ভেতরে বসান। ওভেন ৩৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে প্রিহিট করুন।
২. গ গ্রুপের উপকরণগুলো একটা বাটিতে হাল্কাভাবে মেশান।
৩. বড় মিক্সিং বোলে ক গ্রুপের উপকরণগুলো ৩০ সেকেন্ড ধরে মিক্সারের লো স্পিডে মেশান।
৪. সম্পূর্ণ মাখন এবং গ গ্রুপের মিশ্রণ থেকে খানিকটা (আন্দাজ তিনভাগের একভাগ) যোগ করুন। মিডিয়াম স্পিডে ১ মিনিট মেশান যাতে উপকরণগুলো সমানভাবে ভিজে আসে। এরপর স্পিড বাড়িয়ে সর্বোচ্চ করুন। গ গ্রুপের বাকী মিশ্রণ থেকে অর্ধেকটা করে দুই ধাপে মেশান। সর্বোচ্চ স্পিডে ৫ থেকে ৭ মিনিট মেশান। মাঝে দুতিনবার স্প্যাচুলা দিয়ে বোলের চারপাশ থেকে মিশ্রণ scrape করে মাঝখানে নিয়ে আসুন।
৫. মিশ্রণটি লাইনিং দেয়া কেকপ্যানে ঢালুন। উপরে স্প্যাচুলা দিয়ে সমান করে দিন। প্যানের ওপরের দিকে অন্তত আধইঞ্চি জায়গা ফাঁকা থাকবে।
৬. ৫০-৬০ মিনিট ধরে বেক করুন। বান্ট প্যানের ক্ষেত্রে ৩৫-৪৫ মিনিট লাগবে। এই ধাপে চতুর্থ পর্বে দেয়া টিপসগুলো অনুসরণ করুন।
৭. অন্তত তিন চতুর্থাংশ সময় পার হবার আগে কেক হয়েছে কিনা দেখার জন্য ওভেন খুলবেন না। ন্যূনতম সময় পার হলে কেকের মাঝামাঝি বরাবর একটা টুথপিক ঢুকিয়ে বের করে আনলে যদি ভেজা মিশ্রণ লেগে থাকে তাহলে বুঝতে হবে কেক এখনো হয়নি। আর পরিষ্কার কাঠি বের হলে (বড়জোর তৈলাক্ত গুঁড়ো লেগে থাকতে পারে) বুঝতে হবে কেক হয়ে গেছে।
৮. কেক হয়ে গেলে ১০ মিনিট প্যানের মধ্যেই রেখে ঠাণ্ডা করুন। প্যানটি এসময় একটা rack এর উপর রাখুন (পঞ্চম পর্বে গোল ও চারকোণা rackএর ওপর কয়েকটা কেক রাখা ছবি আছে)। নইলে তলায় ভেজা চিটচিটে হয়ে যাবে। ১০ মিনিট পর প্যান থেকে কেক বের করে কাগজ সরিয়ে rack এর উপর রাখুন। ঠাণ্ডা হলে serrated knife দিয়ে কাটুন।

গ্যাসের চুলার ওপর কেক বসাতে হলে পুরনো (এখন ব্যবহার করেন না এরকম) ভারী লোহার তাওয়া নিন। ওপরে এক ইঞ্চি পুরু করে পরিষ্কার বালি দিন। তার ওপর বড় সসপ্যান ধরনের পাত্র (তলা সমতল) বসান। এর ভেতর কেকপ্যান বসান। ঢাকনা দিন। আঁচ সর্বনিম্ম রাখুন। সবচেয়ে ভালো হয় বড় পাত্রের ভেতর একটা ওভেন থার্মোমিটার বসিয়ে তাপমাত্রা নির্ধারণ করে নিলে এবং এই সসপ্যানের ঢাকনাটা পুরু কাঁচের হলে ভালো হয়।
============================================
সাত

ফ্রুট কেক

উপকরণ
ক গ্রুপ:
ময়দা ২১০ গ্রাম
বেকিং পাউডার ২ চা চামচ
চিনি ১২০ গ্রাম
লবণ এক চা চামচের ৪ভাগের একভাগ
মাখন (নরম) ৯০ গ্রাম

খ গ্রুপ:
দুধ ৮০ সিসি
ভ্যানিলা এসেন্স ১ চা চামচ
ডিম (বড়) ২টি
আদা, চেরি ইত্যাদির মোরব্বা (glace' fruit) আধা-এক কাপ

প্রণালী
ওভেন প্রিহিট করতে হবে ১৮০' সে অথবা ৩৫০'ফা তাপমাত্রায়। একটা বান্টপ্যানে তেল স্প্রে করে রাখতে হবে।

মাখন ছাড়া ক গ্রুপের উপকরণগুলো মিক্সারে লো স্পিডে ৩০ সেকেন্ড ধরে মেশাতে হবে। মাখন দিয়ে ৩০ সেকেন্ড বা প্রয়োজন অনুযায়ী তারও বেশী সময় মিক্সারের লো স্পিডে মেশান।

মোরব্বা ছাড়া খ গ্রুপের উপকরণগুলো আলাদা বাটিতে কাঁটাচামচ দিয়ে মেশাতে হবে। প্রথম মিশ্রণের সাথে তিনবারে যোগ করতে হবে; প্রতিবার মিডিয়াম স্পিডে মিক্সারে ৩০ সেকেন্ড করে মেশাতে হবে।

হাই স্পিডে পাঁচ থেকে সাত মিনিট বিট করতে হবে। থেকে থেকে দুতিনবার স্প্যাচুলা দিয়ে বোলের চারপাশ থেকে মিশ্রণ scrape করে মাঝখানে নিয়ে আসুন।

কেকপ্যানে একটু কেকমিক্স ঢেলে কিছু মোরব্বার টুকরো ছড়িয়ে দিতে হবে। আবার কিছুটা কেকমিক্স, তার উপর মোরব্বা। এভাবে সম্পূর্ণ মিশ্রণ ও মোরব্বা কেকপ্যানে দেয়া হলে সবার ওপরে কেকমিক্সের স্তর থাকবে।

ওভেনে ৩৫-৪০ মিনিট বেক করতে হবে।

টিপস:
কেক বেক হবার পর যদি মনে হয় প্যানের আকার অনুযায়ী আরেকটু বড় কেক তৈরি করা যেতো, তাহলে এই রেসিপি দেড়গুণ করে আরেকটু বড় কেক বানানো যেতে পারে। বেকিং সময় ১০ মিনিট বাড়িয়ে দেবেন। দুই তৃতীয়াংশ সময়ের পর সচ্ছিদ্র এলুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে ঢেকে দিলে ওপরটা পুড়বে না।

চেরির মোরব্বা কেকমিক্সের মধ্যে তলিয়ে নীচে জমা হতে পারে। এই অবস্থা রোধ করতে মোরব্বাগুলো হাল্কা গরম পানিতে ধুয়ে পেপার ন্যাপকিনে শুকিয়ে নিতে হবে। চেরির মোরব্বা দুই ফালি করে কেটে নিতে হবে। আদার মোরব্বা, শুকনো অ্যাপ্রিকট ইত্যাদি ধারালো ছুরি দিয়ে ছোট টুকরো করে নিতে হবে। চালকুমড়ার মোরব্বা, কিসমিস, পেস্তা এসবও দেয়া যেতে পারে।





============================================
স্পঞ্জ কেকের সেরা রেসিপি এখানে পাওয়া যাবে। প্রথম পর্ব,
দ্বিতীয় পর্ব

সহজে খুব ভালো বাটারক্রিম তৈরীর রেসিপি এখানে পাবেন।

কেক ডেকোরেশনের প্রাথমিক ধারণার জন্য এখানে দেখুন।


=============================================


শেষ। আশা করি জেমিনির প্রয়োজন মিটেছে।

ছবিগুলোর শেষ দুটো নিজস্ব। বাকীগুলো নেটে বিভিন্ন পণ্যবিক্রয়মূলক সাইট থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৮
১১০টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নতুন স্বাধীনতার যোগ বিয়োগ চলছে যমুনায়‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৮:৫৩

স্বাধীনতা ২.০ বেনিফিসিয়ারি কারা⁉️ এখানে ক্লিক করে লিংক দেখুন।

কি ঘটছে যমুনায় ⁉️আন্তর্জাতিক চক্রান্তের লীলাভুমি করাই কি প্রাধান্য উদ্দেশ্য ছিলো ‼️ আন্দোলনের আড়ালের মুল কারিগর আসলে কে⁉️কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাইনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ম্যাজিষ্ট্রেট তারাসসুম কি সামুর পোষ্ট পড়ে পালালো?

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪১



নারী ম্যাজিষ্ট্রেট তারাসসুম প্রাণ ভয়ে পালিয়ে গেছেন; সামুর কয়কজন ব্লগার উনাকে দোষী করে পোষ্ট দিয়েছিলেন, অনেকে মন্তব্য করেছেন যে, ম্যাজিষ্ট্রেট তারাসসুম অপরাধ করেছে। আসলে, সরকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - পর্ব ৪

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬

জুলাই২০: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে আটক করা হয়।একই দিনে নিখোঁজ হন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন বলতে কি বোঝানো হয়েছে

লিখেছেন মামুন ইসলাম, ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:২৯


বিশেষ করে এখন আমরা রিসেট শব্দটা নিয়ে বেশ আবেগী হয়ে উঠেছি। ইতোমধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে কিছু মানুষ বিভিন্ন ভাবে তারা উঠে পড়ে লেগেছে রিসেটের পিছনে ।

কিছু মানুষ আছেন যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের ২ মাস পর, "সাধারণ ছাত্রদের" নিয়ে আপনার কি মতামত?

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১১:২৭



জুলাই মাসের ১ম সপ্তাহে ঢাকা ইউনিভার্সিটির "সাধারণ ছাত্ররা" কোটা আন্দোলন শুরু করেছিলো; আজ ২ মাস পরে, আপনারা দেখেছেন দেশের বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। এই ২ মাস পর, সেই "সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×