somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেভেন

২৩ শে মে, ২০১৮ সকাল ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের মেসের সবার রুমগুলো একদম নোংরা হয়ে থাকে । ময়লা হওয়া শার্ট প্যান্ট, লুঙ্গি, বই খাতায় পুরো ফ্লোর ভর্তি, পা ফেলার জায়গা নেই । কিন্তু মেসের নামটা চমৎকার,- 'প্যারাডাইস পিস কর্নার !'
এই নামটা রেখেছিলেন মেসের সবচেয়ে প্রবীণ সদস্য পূর্ণ দাদা । পূর্ণ দাদার পুরো নাম পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় । আমি যেদিন প্রথম উনার রুমে গিয়েছিলাম সেদিন অবাক না হয়ে পারিনি । উনার রুমটাকে উনি এত সুন্দর ছিমছাম করে সাজিয়ে রাখলেন, মনেই হবে না উনি আমাদের নোংরা এই মেসের বাসিন্দা । মেসের ভেতর উনার এই রুম যেন অন্য জগত ।
পূর্ণেন্দু দাদা একটা বেসরকারি কলেজের লেকচারার, কলেজটা নাকি দুএক বছরের মাঝে সরকারি হয়ে যাবে ।
দাদার ত্রিশ পার হয়েছে, কিন্তু এখনো বিয়ে করেননি ।
দাদার সাথে আমার বেশ মাখামাখি হয়ে গিয়েছিল । দাদা কারো সাথে সহজে মিশতে চাইতেন না । কিন্তু আমার সাথে উনার ঘনিষ্ঠতা ছিল মেসের অন্যদের জন্য ঈর্ষণীয় ।
প্রথম দিন দাদার রুমে গিয়ে সুন্দর পরিবেশ দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলাম । যার রুচিবোধ এত উন্নত, তার সাথে তো আর হাসিঠাট্টা করা যায় না । আমি দাদার দরজায় দাঁড়িয়ে ভেতরটা দেখছিলাম । দাদা বললেন, “মেসে কি নতুন উঠেছেন ?”
আমি সম্বিৎ ফিরে পেয়ে বললাম, “জী, আপনি পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় ?”
-“হ্যাঁ । ভেতরে আসুন ।” আমি যাবো কি না ভাবছিলাম । আমি তো উনার ভিন্ন জাত, উনি যদি জাতপাতে বিশ্বাসী লোক হন তবে আমার উপস্থিতিতে নিশ্চয়ই বিরক্ত বোধ করবেন ।
আমি দ্বিধা নিয়ে ঢুকলাম । দাদা ইশারায় বসতে বললেন ।
আমি বললাম, “আপনার নাম শুনেই আপনার সাথে দেখা করতে মন চাইল । চট্টোপাধ্যায় নামটা আমি এতদিন শুধু বই পুস্তকে পড়েছি । বিলিভ ইট ওর নট, এই নামের কোন মানুষ জীবনে দেখলাম না, তাই আপনাকে দেখতে এলাম ।” এই একটা কথা দিয়েই আমি সেদিন দাদাকে পটিয়ে ফেলেছিলাম ।
দাদা মুচকি হেসে বললেন, “দারুণ একটা কথা বলেছেন । এদেশে চট্টোপাধ্যায় নামের মানুষরা বিরল প্রজাতির প্রাণী হয়ে গেছে । তো এখন চট্টোপাধ্যায়কে কেমন দেখলেন ?”
আমি বললাম, “চমৎকার ! আপনি এত পরিপাটি ! নাকি সব চট্টোপাধ্যায়রা এমন হয় ?”
দাদা হা হা করে হেসে উঠলেন । সেদিন থেকে আমি আর দাদা ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম ।
আমার একটা অভ্যাস হল পরিচিত লোকদের থেকে কৌশলে তাদের প্রেম কাহিনী শুনে নেয়া । অবশ্য লোকজনের পেট থেকে তাদের প্রেমের ঘটনা বের করতে এত কৌশল খাটাতে হয় না । প্রত্যেকটা মানুষই তার প্রেমের ব্যপার স্যাপার অন্যের কাছে বলতে বেশ আগ্রহী থাকে । সাধারণত বেশিরভাগ প্রেমের ঘটনা প্রায় একইরকম হয় । কিন্তু পূর্ণেন্দু দাদার প্রেমের গল্পটা ছিল সম্পুর্ন ভিন্ন ধাঁচের । আমার আজকের এই গল্প দাদার সেই কাহিনী নিয়ে ।
গল্পটা এতটাই ভিন্ন, এটাকে ঠিক প্রেমের গল্প বলা যায় না । যাহোক, গল্পটা প্রেম না অন্য কিছুর গল্প তা পাঠকরা বিবেচনা করে নেবেন ।
কথা উঠেছিল বিয়ে নিয়ে । একদিন দাদা আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন আমি কবে বিয়ে করব । প্রসঙ্গক্রমে আমিও দাদার কাছে অনুরূপ বিষয় জানতে চাইলাম ।
দাদা বললেন তার বিয়ের জন্য পাত্রির খোঁজ চলছে । কিন্তু সমস্যা হল পাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না । দাদা ব্রাহ্মণের ছেলে, দাদাকে তার জাত মিলিয়ে ব্রাহ্মণী বিয়ে করতে হবে । ঝামেলার ব্যপার হল দাদার পিতা নাকি এমন পাত্রী খুঁজছেন যে শুধু জাতে ব্রাহ্মণী হলে চলবে না, পাত্রীর পরিবারকে দাদাদের মত 'চট্টোপাধ্যায়' হতে হবে ! কি আশ্চর্য, এই যুগেও মানুষ এত রক্ষণশীল হয় ?
দাদাকে বললাম, দাদা আপনার কি মনে হয় আপনি শেষ পর্যন্ত চট্টোপাধ্যায় খুঁজে পাবেন ?
দাদা জবাব দিলেন- মোটেই না, শেষ পর্যন্ত আমার বাবাকে চট্টোপাধ্যায়ের আশা ছাড়তেই হবে ।
আমি আবার বললাম, কি আশ্চর্য ! চট্টোপাধ্যায় কি এতই কম ?
-আসলে চট্টোপাধ্যায় না থাকার ব্যপারটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা নয় । তোমাকে এটা আরেকদিন বলব । আজ একটা চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ের কথা শুনো ।
-বলেন ।
- আমার বয়স যখন আট বছর তখন বাবা খুলনা বি এল কলেজে শিক্ষকতা করতেন । আমরা যেখানে থাকতাম সেখানে আরেক ভদ্রলোকের সাথে আমার বাবার বন্ধুত্ব ছিল । সেই ভদ্রলোকও ছিলেন চট্টোপাধ্যায় । বাবার সাথে ভদ্রলোকের যেমন বন্ধুত্ব ছিল তেমনি উনার স্ত্রীর সাথে আমার মায়ের খাতির ছিল । সেই চট্টোপাধ্যায় বাবুর একটা বাচ্চা মেয়ে ছিল । তার নাম ছিল মালতী চট্টোপাধ্যায়, সবাই ডাকতো হেভেন । হেভেন নামটা কেমন যেন একটু বিচিত্র প্রকৃতির, তাই না ?
-না দাদা, আমার কাছে বিচিত্র লাগছে না । জান্নাতুল ফেরদৌস তো মেয়েদের একটা কমন নাম, ওই জান্নাত আর হেভেন তো একই জিনিস ।
-হ্যাঁ, তাই তো । তো আসল কথা শুনো, হেভেন মেয়েটা আমার চেয়ে চার পাঁচ বছরের ছোট ছিল । আমি তাকে কোলে নিয়ে ঘুরতাম, খেলতাম । একদিন আমার মায়ের কাছে আবদার ধরে বসলাম, মা আমি হেভেনকে বিয়ে করব । মা হাসতে হাসতে কথাটা গিয়ে বললেন হেভেনের মাকে । উনিও যেন কথা শুনে সেরাম মজা পেলেন । ওই দুজন মহিলার হাসি তামাশা দেখে আমি ভয় পেলাম, কোন ভুল করলাম না তো ! হেভেনের মা বলল, এখনো তো নিজের হাতে শুচু করতেও শেখনি, এখনি বিয়ে করে ফেলবে ? আগে বড় হয়ে নিন বাবু ।
দাদার মুখে এই মজার কথা শুনে আমি হাসলাম । তবে দাদা গম্ভির রইলেন, তাই হাসি থামিয়ে জানতে চাইলাম- তারপর ?
-তারপর বলার মত কিছুই হয়নি । সময়ের সাথে সাথে আমরা দূরে চলে গেলাম । উনারা সপরিবারে ইতালি চলে গিয়েছিলেন । বাবার সাথে হেভেনের বাবার চিঠি চলত । বাবা একদিন জানালেন হেভেন নাকি আঠারো বছর বয়স হবার আগেই একটা বখে যাওয়া মেয়ে হয়ে গেছে । আমি ভেবে অবাক হতাম, ছেলেরা বখে যায় শুনেছিলাম । কিন্তু মেয়েরাও বখে যায় ? সে বখে গিয়ে কি করল তা জানার ইচ্ছে ছিল । অনেকদিন পর জানতে পারলাম হেভেন নাকি একটা পর্ন ইন্ডাস্ট্রির সাথে যুক্ত হয়েছে । আমি নেট থেকে খুঁজে হেভেনের পর্ন ভিডিও বের করলাম ।
-এখনো কি উনি এসবের সাথে যুক্ত ?
-হুম, এখনো । এসব করে সে অল্প বয়সেই কোটি টাকা কামিয়ে ফেলেছে । ওর ফ্যান অসংখ্য । তুমি শুনলে আমাকে খারাপ মনে করবে, আমিও কিন্তু হেভেনের পর্ন ভিডিওর ভক্ত । আমি টাকা খরচ করে ওর ওয়েবসাইট সাবস্ক্রাইব করেছি । ওর আপলোড করা যে কোন ভিডিও আমি প্রথম দিনই ডাউনলোড করে নিই ।
-দাদা, আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে ।
-অবিশ্বাসের কি আছে ? আমার ল্যাপটপে তার পঞ্চাশ জিবি ভিডিও আছে । তুমি দেখবে ?
-আরে না না । মানে ব্যপারটাকে রূপকথার মত মনে হচ্ছে ।
-ও । রূপকথাই তো, এ যুগের রূপকথা এরকম হয় । আমি একটা ডিসিশান নিয়েছি । হেভেনকে আমি মনে করিয়ে দেব আমি পূর্ণ, যে তার জীবনের প্রথম বেলার সাথী ছিলাম । আমি তাকে বলব এখনো সে আমার কাছে সেই ছোট্ট শিশুর মত নিষ্পাপ আছে । সে যদি পর্ন ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে সাধারণ জীবনে ফিরে আসতে রাজি হয় তবে আমি তাকে বিয়ে করব ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৮ সকাল ১১:২৩
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×