somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের জীবনের রিয়েল হরর

১০ ই জুন, ২০১৮ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খুব ছোট বয়সে আমাকে গল্প বলার ছলে মা ঘটনাটা বলেছিলেন । ঘটনাটা আমার মায়ের মা অর্থাৎ আমার নানুর জীবনে ঘটে যাওয়া ব্যাখ্যাতীত একটি ঘটনা ।
আমার নানুর প্রথম দুই সন্তান জন্মের পরপরই মারা গিয়েছিল । স্বাভাবিকভাবেই তাঁর তৃতীয় সন্তানের জন্ম হবার সময় তিনি অনেক শঙ্কিত ছিলেন । নানু ঝাড়ফুঁক ও তাবিজ কবজে খুব বিশ্বাস করতেন । তিনি পরিচিত একজন হুজুরের কাছে সন্তানের মঙ্গল কামনা করে অনেক আমল ও তাবিজ গ্রহন করেন ।
নানুর সুস্থ সুন্দর একটি ছেলে সন্তান এলো । সবাই তো আনন্দিত, কিন্তু সন্তানের জীবন নিয়ে নানু তখনো শঙ্কিত । নানুর পরিচিত সেই হুজুর এসে সন্তানের জন্য দোয়া করে গেলেন । হুজুর বলেছিলেন, যদি প্রথম সপ্তাহ ভালোয় ভালোয় কেটে যায় তাহলে নবজাতকের জীবনের আর কোন ভয় নেই । হুজুর পরামর্শ দিয়েছিলেন যদি নানু রাতে ভয় পান তাহলে খারাপ কিছু ঘটতে পারে । যাই ঘটুক, নানু যেন সাহস রাখে । হুজুর আরো বললেন ঘুমানোর সময় সংকোচ লাগলে নানু যেন মাথার কাছে আলো জ্বালিয়ে রাখেন ।
হুজুরের পরামর্শ মতই নানু হ্যারিকেন জ্বালিয়ে রেখে ঘুমিয়ে পড়তেন । দুদিন কোন ঝামেলা ছাড়া কেটে যায় ।
তৃতীয় দিন রাতে নানু যথারীতি ঘুমাচ্ছিলেন । গভীর রাতে ঘুমের মাঝে নানু একটা জোরালো আওয়াজ শুনতে পান । পুরনো বিল্ডিং ভাঙ্গার সময় দেয়ালে বড় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে যেভাবে শব্দ হয়, ঠিক সেভাবেই ঘরের ছাদে কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছে । সেই আঘাতে একটানা ‘ধুম, ধুম’ করে শব্দ হচ্ছে । নানুর ঘুম ভেঙ্গে যায় । তার তন্দ্রা পুরোপুরি কেটে যাবার পর সেই আওয়াজটা বন্ধ হয়ে যায় । নানু ভাবলেন এই আওয়াজটা নিশ্চয়ই স্বপ্ন ছিল । নয়ত ঘুম ভাংতেই আওয়াজ কেন বন্ধ হবে ? যাহোক, ঘুম ভাঙ্গার পর নানু দেখলেন হ্যারিকেনের আলো নিভু নিভু করছে । হ্যারিকেনে তেল ফুরিয়ে গেলে হ্যারিকেন যেভাবে নিভে যায় অনেকটা সেভাবেই হ্যারিকেনের আলোটা নিভে যাচ্ছে । নানু বেশ অবাক হন । কারণ তিনি ঘুমানোর আগেই হ্যারিকেনে তেল ভরে রেখেছেন । এতো তাড়াতাড়ি তেল শেষ হয়ে যাবার কথা নয় । নানু হ্যারিকেন চেক করে দেখলেন তেল ঠিকই আছে, কিন্তু হ্যারিকেনের সলতেটা জ্বলে ক্ষয় হয়ে গেছে । পুরনো সলতে বদলে নতুন সলতে দেবার কথা আগের দিন মনে এলেও সলতে বদলাতে নানু ভুলে গেছেন । নানু সলতে বদলানোর জন্য হ্যারিকেন নিভিয়ে দিলেন । ঘর অন্ধকার হয়ে গেল , ঠিক তখনি নানু শুনতে পেলেন ঘরের ছাদে যেন অনেক মানুষ ধুপধাপ করে পা ফেলে সশব্দে হাঁটছে । নানু প্রথমে ভাবলেন এটা তাঁর মনের ভুল । কিন্তু ধুপধাপ করে মানুষের হাঁটাহাঁটির সেই আওয়াজটা বন্ধ না হয়ে ক্রমে বেড়েই চলছিল । নানু তাড়াতাড়ি নতুন সলতে লাগিয়ে আলো জ্বালালেন । আলো জ্বালানোর পর সব শব্দ থেমে যায় । তারপর হ্যারিকেনের আলোয় নানু দেখতে পেলেন তাঁর রুমের দরজায় একজন বৃদ্ধা মহিলা দাঁড়িয়ে আছে । বৃদ্ধার গায়ে সাদা কাপড়, দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে সাদা কাপড় যেমন তামাটে হয়ে যায়, বৃদ্ধার গায়ে তেমন একটি পুরনো সাদা শাড়ি জড়িয়ে আছে । বৃদ্ধাটি একদৃষ্টে বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা নানুর নবজাতক সন্তানের দিকে তাকিয়ে আছে ।
নানু প্রচণ্ড ভয় পেলেন, তিনি দৌড়ে গিয়ে তাঁর সন্তানকে বুকে নিয়ে খাটের এক কোণায় বসে দোয়া কলমা পড়তে শুরু করেন । কয়েক মুহুর্ত পর নানু দেখেন সেই বৃদ্ধাটি খাটের অপর পাশে একটা শিশুকে কোলে নিয়ে নানুর মত বসে আছে । ধীরে ধীরে বৃদ্ধাটি তার কোলের শিশুর চেহারা দেখালো । স্মল পক্স বা গুটি বসন্ত হলে মানুষের গায়ে যেমন অসংখ্য ছোট ছোট গুটি দাগ দেখা যায়, সেই শিশুর মুখে তেমন গুটির কালো দাগ পড়ে আছে । শিশুটির চোখ খোলা, চোখ দুটোতে কোন মনি নেই, সেই চোখগুলো সাদা ধবধবে । বোঝা যাচ্ছে বৃদ্ধার কোলের শিশুটি মৃত । বৃদ্ধা তার কোলের শিশুকে আমার নানুর দিকে বাড়িয়ে দিলেন । নানু বুঝতে পারলেন সেই বৃদ্ধা তার কোলের মৃত শিশুটি নানুকে দিয়ে নানুর কাছ থেকে জীবিত শিশুটি নিতে চাইছে । নানু চিৎকার দিয়ে কেঁদে ওঠেন । তাঁর চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে আসে । তবে কেউ এসে পৌঁছানোর আগেই সেই বৃদ্ধাটি হাওয়ায় মিলে যায় ।
সেদিনের পর নানু এবং তাঁর সন্তানের আর কোন সমস্যা হয়নি । আমার নানু বারো বছর আগে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন । আর নানুর সেই সন্তান, আমার মামা, এখনো বেঁচে আছেন ।
নানু সারাজীবন বিশ্বাস করতেন এমন ঘটনা মানুষের জীবনে ঘটে, নানুর মত আমার মা বিশ্বাস করতেন । এমনকি, মজার ব্যপার হল আমার আত্মীয় স্বজনদের মাঝে এমন অনেক শিক্ষিত লোকও আছেন যারা এই ঘটনাটাকে ধ্রুব সত্য মনে করেন ।
আমি মনে করি না নানু মিথ্যা বলেছিলেন । তবে আমি ঘটনাটাকে যেভাবে শুনেছি ঠিক সেরকম ভয়ংকর মনে করি না । আমার নানু এই অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা কেন প্রত্যক্ষ করেছিলেন তার একটি স্পষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমি দিতে পারি । আমি নিশ্চিত আমার ব্যাখ্যা শুনে সবাই সন্তুষ্ট হবেন ।
যাহোক, সেই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমি এখানে দিতে চাচ্ছি না । আমার উদ্দেশ্য ছিল গল্পের আকারে নানুর ঘটনা বর্ণনা করা । এই ঘটনার পেছনের কার্যকারণটা পাঠকরাই বের করে নিন ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৮ রাত ১০:২৫
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×