মানুষের অনেকগুলো ভুল ধারণার মাঝে একটি হল মানুষ যদি অপঘাতে মরে যায় তাহলে সেই মানুষটা ভূত হয়ে যায় । দিন যত এগিয়ে যাচ্ছে ভূতের কথা মানুষের মন থেকে তত হারিয়ে যাচ্ছে । এখন আগের মত মানুষ ভূতকে বিশ্বাস করে না ।
ভূত যদি আসলেই থাকতো তাহলে আমার জন্য একটু সুবিধা হত । আমার মাঝে মাঝে নিজে মরে গিয়ে ভূত হয়ে যেতে ইচ্ছে করে ।
ভেবে অবাক হতে হয়, ভূতের কত ক্ষমতা ! ভূত চাইলে কি না করতে পারে ?
‘যক্ষ’ নামের এক ধরনের ভূত ছিল, যক্ষের কাজ ছিল ধনী লোকের গুপ্তধন পাহারা দেয়া । একমাত্র গুপ্তধনের প্রকৃত পাওনাদার সেই গুপ্তধন তুলে নিতে পারবে । অন্য কোন লোভী লোক সেই ধনে হাত দিলে যক্ষ ভূত লোভীর ঘাড় মটকে দিত । একারনেই তো ‘যক্ষের ধন’ বলে বাংলায় একটা কথা আছে ।
আসল কথাটা বলি । আমি যদি ভূত হতাম তাহলে আমার পরিবারের সবাইকে যক্ষের ধনের মত আগলে রাখতাম । এই নষ্ট সমাজের কোন দুষ্ট লোক যেন তাদের দিকে তাকাতে না পারে সেই ব্যবস্থা করে রাখতাম । কেউ তাদের ক্ষতি করতে চাইলে হাত-পা, ঘাড়-মোড় মটকে বট গাছে ঝুলিয়ে রাখতাম ।
হায়রে আমার প্রিয় পরিবার, জীবিত থেকে তো তোমাদের বড় কোন উপকার করতে পারলাম না, আমি যদি ভূত হতাম তাহলে দুনিয়ার সব অনিষ্ট থেকে তোমাদের বাচিয়ে রাখতাম ।
আমি যদি ভূত হতাম তাহলে আরো একটা কাজ করতাম । আমাদের পাশের বাসায় একটা মেয়ে ছিল । সেই মেয়েটা আমার জীবনের একমাত্র মেয়ে যাকে দেখে আমার নাওয়া খাওয়া ঘুম সব হারিয়ে গিয়েছিল । যতই তারে ভুলে যেতে চাইতাম তত সে বড় হয়ে আমার বুকের উপর জুড়ে বসত । আমার বুকের প্রতি পাঁজরের উপর সে তার আলতা রাঙ্গা পা দিয়ে সারাক্ষণ হাঁটাহাঁটি করত । আমি যন্ত্রনায় চোখের জল ফেলতাম । কেউ দেখত না সেই জল । একদিন সেই মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায় । পাশের বাসার মেয়ে কত দূরে চলে গেছে ! আমি আলতা রাঙ্গা পা থেকে মুক্তি পেলাম । আমি যদি ভূত হতাম তাহলে মেয়েটাকে খুঁজে বের করতাম । উঁহু, আমি তার কোন অনিষ্ট করতাম না । আমি তার পাশে বসে বসে দেখতাম কিভাবে সে তার পায়ে এতো সুন্দর করে আলতার ফুল ফুটিয়ে তুলত ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:০৫