somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই বীরের গল্প

১৪ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেকদিন আগে এক বাঙালি বালকের সাথে এক আফগান বালকের দেখা হয় । যথারীতি তারা দুজন একে অন্যের সাথে পরিচয় বিনিময় করে । পরিচয়ের পর তারা দুজন নিজেদের পুর্ব পুরুষের কীর্তি নিয়ে আলোচনা করছিল ।

নিজের পূর্ব পুরুষদের গল্প বলতে বলতে এক পর্যায়ে আফগান বালক বলল, “জানো আমার দাদাজান কেমন বীরপুরুষ ছিলেন ? জীবনের শেষ যুদ্ধে তিনি এমন বীরত্ব দেখিয়েছিলেন যার নজির ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না !”
বাঙালি বালক অবাক হয়ে বলল, “তাই নাকি ? আচ্ছা উনার বীরত্বের কাহিনীটা বল তো শুনি ! দেখি তিনি কেমন বীর ছিলেন ।”
আফগানি বলতে শুরু করল, “আমার দাদাজান জীবনের শেষ যুদ্ধে তাঁর ধারালো তলোয়ার নিয়ে দুশমনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন । তাঁর তলোয়ারের নিচে একের পর এক দুশমন খতম হয়ে যাচ্ছিল । দুশমন ফৌজ প্রাণপণ লড়েও শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারলো না । জয় হল দাদাজানের । যুদ্ধের পর দাদাজান প্রচণ্ড ক্ষুধা অনুভব করলেন । তুমি নিশ্চয়ই জানো অনেক বড় বীরদের দেহ যেমন সুঠাম হয় তাদের খিদেও তেমন বেশি হয় । আসলে খিদেটা উনার পেয়েছিল অনেক আগেই । এতক্ষণ ময়দানে ছিলেন বলে খাওয়ার কথা মনে ছিল না । যাহোক বাড়ি ফিরে গিয়ে তিনি জলদি খেতে বসে গেলেন । কিন্তু খাবার তুলতে গিয়ে তিনি খাবার ধরতে পারলেন না । কেন নিজের হাতে দাদাজান খাবার ধরতে পারলেন না বলো তো !”
বাঙালি বলল, “হয়ত যুদ্ধে তরবারির কোপে তোমার দাদাজানের হাতের রগ কেটে গিয়েছিল । ফলে হাতটা অবশ হয়ে গিয়েছিল, তাই তিনি হাত দিয়ে খাবার ধরতে পারলেন না ।”
আফগানি বালক বাঙ্গালির কথা হেঁসে উড়িয়ে দিয়ে বলল, “না তা নয় । আসলে যা ঘটেছিল তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না । যুদ্ধের মাঝে কখন যে শত্রুর তলোয়ারের আঘাতে দাদাজানের হাতটা কব্জির উপর থেকে কেটে পড়ে গিয়েছিল তা তিনি একদম টের পেলেন না । টের পাবেন কিভাবে, হাত রক্ষা করার দিকে তো উনার কোন মনোযোগ ছিল না । উনার সমস্ত মনোযোগ ছিল দুশমনকে খতম করার দিকে । অবশ্য কাটা হাতের জন্য তাঁর কোন আফসোস ছিল না, যুদ্ধে হাত কাটা পড়তেই পারে । তাঁর আফসোস ছিল জীবনের শেষ যুদ্ধের পর তিনি আরাম করে নিজের হাতে নাস্তা খেতে পারলেন না । এমনই বীর ছিলেন আমার দাদাজান !”
বাঙালি বালক অবাক না হয়ে বলল, “হুম, সত্যিই তিনি বড় বীর ছিলেন । কিন্তু আমার দাদার বীরত্বের কাছে তোমার দাদাজানের বীরত্ব তেমন কিছুই না !”
অবাক হল আফগানি, “কি বলছ ? তোমার দাদা কি আমার দাদাজানের চেয়েও বেশি বীরত্ব দেখিয়েছিলেন নাকি ?”
বাঙালি গর্বিত স্বরে বলল, “হ্যাঁ, তিনি অনেক বড় বীর ছিলেন ।”
অবাক আফগানি বাঙ্গালিকে অনুরোধের সুরে বলল, “আমাকে একটু শোনাও তো তিনি কেমন বীরত্ব দেখিয়েছেন !”
-“বেশ, শোনো তাহলে-” বলতে শুরু করল বাঙালি বালক, “আমার দাদা তাঁর জীবনের শেষ যুদ্ধে দুই হাতে দুই তরবারি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন শত্রুবাহিনীর উপর । দাদার তরবারির নিচে একের পর এক শত্রুর মাথা কেটে পড়ছিল । তাঁর যুগল তরবারির সামনে বেশিক্ষন টিকতে না পেরে শত্রুবাহিনী রণে ভঙ্গ দিয়ে পালালো । সহজেই জয় পেলো দাদার সৈন্যবাহিনী । আমার দাদা যুদ্ধের শেষে একটা রীতি পালন করতেন । যুদ্ধের উন্মাদনা কমিয়ে মাথা ঠান্ডা করার জন্য দাদা আচ্ছা করে মাথায় কদুর তেল মাখতেন । তুমি তো নিশ্চয়ই জানো যুদ্ধের সময় বড় বীরদের মাথায় কত বড় চাপ পড়ে । আর আমার দাদা ছিলেন বীরদের মাঝে সেরা বীর, উনার অবস্থাটা একবার ভেবে দেখো । যুদ্ধ করতে করতে আমার দাদার মাথা আগুনের মত গরম হয়ে যেত । তাই যুদ্ধ শেষে মাথা ঠাণ্ডা করতে দাদা অনেকক্ষণ যাবত তেল লাগাতেন । যাহোক, দাদা সেদিনও নিয়ম অনুযায়ী বাড়ি ফিরে মাথায় তেল মাখতে বসলেন । কিন্তু মাথায় তেল দিতে গিয়ে তিনি টের পেলেন তাঁর ঘাড়ের উপর মাথাটা নেই ।”
আফগানি বালক শিউরে উঠলো, “ঘাড়ের উপর মাথাটা নেই মানে ? মাথা কোথায় গেছে ?”
বাঙালি জবাব দিলো, “কেন বুঝতে পারছো না ? যুদ্ধের মাঝেই শত্রুর তরবারির আঘাতে দাদার মাথা কেটে পড়ে গিয়েছিল । কিন্তু কখন যে মাথাটা কাটা পড়েছিল তা দাদা একদম মনে করতে পারলেন না ।”
আফগানি বালক বলল, “মাথা কাটা পড়ে গেল আর তিনি টের পাননি ?”
বিরক্ত স্বরে বাঙালি বালক বলল, “কিভাবে টের পাবেন ? তাঁর মনোযোগ তো ছিল শত্রুর মাথার দিকে । পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শত্রুর মাথা কাটায় তিনি ব্যস্ত ছিলেন, তাঁর নিজের মাথা বাঁচানোর দিকে একদম খেয়াল ছিল না । তাই নিজের মাথা কেটে গেলেও তিনি টের পাননি ।”
সন্দেহ মিশ্রিত কন্ঠে আফগানি বালক জানতে চাইল, “উনার মাথাটাই যদি না থাকে তাহলে তো উনার চোখ দুটিও নেই । আর চোখ যদি না থাকে তাহলে তোমার দাদাজান হেঁটে যুদ্ধের ময়দান থেকে বাড়ি পর্যন্ত গেলেন কিভাবে ?”
বাঙালি বালক এবার আরো বিরক্ত হয়ে জবাব দিল, “আরে, তুমি তো দেখছি একদম বোকা ! চোখ না থাকলে তিনি হাঁটতে পারবেন না কেন ? মানুষ তো চোখ দিয়ে হাঁটে না, মানুষ হাঁটে পা দিয়ে । দাদাজানের চোখ দুটি না থাকলেও পা দুটি ঠিকই ছিল । হাঁটতে তাঁর কোন সমস্যাই হয়নি । আর তাছাড়া আমার দাদা জীবনে এতবেশি যুদ্ধে আসা যাওয়া করেছেন যে পুরো পথ তাঁর চেনা ছিল । এই পথে তিনি চোখ বন্ধ করেও হেঁটে আসা যাওয়া করতে পারতেন । তাই চোখ না থাকলেও আমার দাদাজান ঠিকমতই হেঁটে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন । শুধু তাই নয়, চোখ ছাড়াই তিনি এরপর আবারো যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়েছিলেন ।”
আফগানি নিজের চোখ কপালে তুলে জানতে চাইল, “আবার কেন গেলেন ? তুমি তো বললে সে যুদ্ধটাই ছিল তাঁর শেষ যুদ্ধ । তাহলে আবার কেন গিয়েছিলেন ?”
বাঙালি বালক জবাব দিল, “হ্যাঁ গিয়েছিলেন । তবে পরের বার আর যুদ্ধ করতে যাননি । তিনি গিয়েছিলেন তাঁর হারিয়ে যাওয়া মাথাটি খুঁজতে । দাদা যখন টের পেলেন তাঁর মাথাটি যুদ্ধের ময়দানে কোথাও কেটে পড়ে রয়েছে তখনি তিনি আবার ময়দানে ফিরে গিয়ে মাথা খুঁজতে থাকেন । কিন্তু তন্ন তন্ন করে পুরো ময়দানে খুঁজেও মাথাটা তিনি আর পেলেন না । অবশ্য এটা নিয়ে তাঁর কোন আক্ষেপ ছিল না । যুদ্ধে মাথা কাটা পড়তেই পারে । তাঁর দুঃখ ছিল জীবনের শেষ যুদ্ধের পর তিনি চিরাচরিত রীতি পালন করতে পারলেন না ।”
-“কোন রীতি পালন করতে পারলেন না ?”
-“কোন রীতি আবার ? মাথায় কদুর তেল মাখানোর রীতি । এরপর যতদিন তিনি বেঁচেছিলেন সবসময় এই অসমাপ্ত রীতির জন্য আফসোস করতেন ।”

বাঙালি বালকের মুখে এমন অদ্ভুত বীরত্বগাঁথা শুনে আফগান বালকের মাথাটা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ধাক্কায় দুলতে থাকে । গর্বিত ভঙ্গীতে বাঙালি বালক বলল, “এবার বুঝলে তো কেমন বীর ছিলেন আমার দাদা ?”
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:০৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×