somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপকথার কাঠুরিয়াঃ মডার্ন ভার্সন

১৮ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক জঙ্গলের ধারে ছোট একটি গ্রামে বাস করত এক দরিদ্র কাঠুরিয়া । ঐ কাঠুরিয়া বনে গিয়ে সারাদিন কাঠ কেটে বাজারে নিয়ে তা বিক্রি করত । তারপর দুই চার পয়সা যা পেত তা নিয়ে ঘরে ফিরত । কাঠুরিয়ার একটামাত্র স্ত্রী ছিল, সেই স্ত্রীটার চেহারাও তেমন সুবিধার ছিল না । কিন্তু লোকটা তার অসুন্দরি স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতো ।
একদিন কাঠুরিয়া তার স্ত্রীসহ জঙ্গলের ভেতর এক নদীতে জাল মেরে মাছ ধরতে গেল । মাছ ধরার এক পর্যায়ে হঠাৎ করে কাঠুরিয়ার স্ত্রী পা পিছলে পানিতে পড়ে ডুবে গেল ।
একমাত্র বউ পানিতে পড়ে যাওয়ায় কাঠুরিয়া খুব দুঃখ পেয়ে কাঁদতে লাগল ।
কিছুক্ষণ পর নদী থেকে একটা জলকন্যা উঠে এলো । সে কাঠুরিয়াকে বলল, “ভাই তুমি কাঁদছ কেন ?”
কাঠুরিয়া কেঁদে জবাব দিল, “না কাইন্দা কি করমু বইন ? আমার বউটা এই অপয়া নদীর মধ্যে পড়ে একটু আগে ডুবে গেল । এই দুনিয়াতে আমার আর কেউ নাই...” এ কথা বলে কাঠুরিয়া আবার কাঁদতে লাগল ।
জলকন্যার মনে কাঠুরিয়ার প্রতি দয়া হল । সে বলল, “ভাই তুমি কেঁদো না প্লিজ ! আমি ডুব দিয়ে দেখি তোমার বউকে পাওয়া যায় কিনা ।” এই কথা বলে জলকন্যা পানিতে ডুব দিল ।
কিছুক্ষণ পর জলকন্যাটা নদীর তলদেশ থেকে সানি লিয়নকে নিয়ে ফিরে এলো । সে এসে বলল, “দেখো তো ভাই, এই মেয়েটাই কি তোমার বউ ?”
কাঠুরিয়া চিৎকার দিয়ে বলল, “তুমি এইটারে কোত্থেকে ধরে নিয়ে আইছো ! এই মহিলাকে তো আমি ইন্টারনেটে দেখছিলাম ! এইটা আমার বউ না...” এই কথা বলে কাঠুরিয়া ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে লাগল ।
জলকন্যা আবার পানির নিচে ফিরে গেল । কিছুক্ষণ পর সে জয়া আহসানকে নিয়ে উঠে এল । সে এসে বলল, “দেখো তো ভাই, এই মেয়েটাই কি তোমার বউ ?”
কাঠুরিয়া খুব দুঃখিত কণ্ঠে চিৎকার করে বলল, “আরে বইন ! তুমি কি আমার লগে মশকারি শুরু করলা ? এইটা আমার বউ হবে কেন ?” কাঠুরিয়া আবার ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে লাগল ।
জলকন্যা তাড়াতাড়ি আবার পানির নিচে ডুব দিল । কাঠুরিয়া ভাবল এইবার হয়তো পাগলী জলকন্যাটা সাবিতা ভাবি অথবা মাহিয়া মাহিকে নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করবে, এইটা কি তোমার বউ ?
নিজের আসল স্ত্রীকে ফিরে পাওয়ার আশা ত্যাগ করে কাঠুরিয়া কান্নাকাটি করতে লাগল ।
কিছুক্ষণ পর জলকন্যা পানির নিচ থেকে উঠে আসলো । তবে এইবার জলকন্যা কাঠুরিয়ার জেনুইন বউকে চিনতে ভুল করল না ।
কাঠুরিয়া নিজের বউকে ফিরে পেয়ে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো ।
কাঠুরিয়া আর তার বউয়ের এই পুনর্মিলন দৃশ্য দেখে জলকন্যা চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না ।
জলকন্যা কাঠুরিয়াকে বলল, তোমাদের এই সত্যিকারের ভালোবাসা দেখে আমি মুগ্ধ । আমি তোমাদের পুরস্কৃত করতে চাই ।
ইতিপূর্বে তুলে আনা সানি লিয়ন এবং জয়া আহসানকে পুরস্কার হিসেবে জলকন্যা কাঠুরিয়ার হাতে তুলে দিল । আর কাঠুরিয়ার বউকে দিল বিপুল পরিমাণ সোনাদানা অলঙ্কার ।
অতঃপর কাঠুরিয়া তিনজন বউ আর বিশাল বাড়িঘর নিয়ে সুখে দিন কাটাতে লাগল ।

কাঠুরিয়ার প্রতিবেশী ছিল এক চরম নারীলোভী ব্যক্তি । এই লোক সবসময় মধুর কথাবার্তা বলে মেয়েদেরকে পটানোর চেষ্টা করত । সে এভাবে একবার এক সুন্দরী মেয়েকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভাগিয়ে নিয়ে এসে বিয়ে করেছে । তার বউ সুন্দরী হলেও এই লোক নতুন কোন মেয়েমানুষ দেখলে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলত । তার প্রতিবেশী গরিব কাঠুরিয়া জয়া-লিয়নের মত সুন্দরী বউ নিয়া সুখে সংসার করছে দেখে তার খুব হিংসা হল । সে কাঠুরিয়াকে গোপনে ডেকে জিজ্ঞেস করল, “সত্যি করে বল তো এই নতুন মহিলাদের কোত্থেকে আমদানি করছস ?”
কাঠুরিয়া বলল, “ভাইজান কি আর কমু ! পুরাই মিরাকল ঘইটা গেছে । নদীতে আমার বউ পড়ে গেছিল, এক জলপরী আমার বউরে তো তুলে দিছেই, তার লগে সানি লিয়ন আর জয়ারেও এনে দিছে !”
কাঠুরিয়ার কাছে এই ঘটনা জানতে পেরে লোভী লোকটা নিজেও একটা ফন্দি করল । একদিন সে তার বউকে ভালোবাসার মিষ্টি মিষ্টি মিথ্যা কথা বলে নদীর ধারে হাঁটতে যাওয়ার জন্য রাজি করাল । নদীর কাছে নিয়ে সে তার বউকে বলল, “জান, নদীর জল কত কিলিয়ার দেখছ ? চল আমরা লাফ দিয়ে নেমে এই জলের মধ্যে গোছল করি ।”
লোকটার স্ত্রী বলল, “জান, তুমি তো জানো আমি সাঁতার জানি না । যদি নদীর জলে ডুবে যাই ?”
লোকটা হেসে উত্তর দিল, “ধুর, তুমি যে কি কও ! আমি থাকতে তুমি ডুবে যাবা ?”
সহজ সরল মহিলাটা তার স্বামীর ধান্দা বুঝতে না পেরে নদীর পানিতে দিল লাফ । কিন্তু সাঁতার না জানার কারণে সেই মহিলা সাথে সাথেই পানিতে ডুবে গেল ।
লোভী লোকটার মুখে ক্রুর হাসি ফুটে উঠল, মনে মনে সে ভাবল- এখনই আমার আসল খেইল শুরু হবে ।
তারপর লোভী লোকটা আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করতে লাগল, “আমার জান ! সোনা বউ তুমি কই গেলা ? তুমি কেন গেলা ? হায় হায় আমার বউটারে কে তুলে আনতে পারবা । আমার বউটারে কেউ তুলে আনো নইলে আমি শেষ...।”
লোকটা জোরেশোরে চিৎকার করতে লাগল । কিন্তু এভাবে প্রায় এক ঘণ্টা চিৎকার চেঁচামেচি করেও জলকন্যার কোন সাড়া পাওয়া গেল না ।
লোকটার মনে ভয় ঢুকে গেল । সে ভাবতে লাগল, জলপরী কি আসলেই আছে নাকি ঐ কাঠুরিয়াটা জলপরীর ভুয়া কাহিনী বলে আমারে বাঁশ দিল । জলপরীর কাহিনী যদি মিথ্যা হয় তাইলেতো আমার আম আর ছালা দুইটাই গেছে ।
এইবার লোকটা সত্যি সত্যি কেঁদে দিল, সে চিৎকার করে বলল, “এই তোমরা কেউ কি কোথাও আছো ? আমার বউ তো এতক্ষণে শেষ ! কেউ তারে বাঁচাও...” নদীর ধারে দাঁড়িয়ে লোকটা ভ্যা ভ্যা করে বাচ্চা ছেলের মত কাঁদতে লাগল ।
লোকটার কান্নার আওয়াজ শুনে জলকন্যা আর টিকতে পারল না । সে নদীর তলদেশ থেকে উঠে লোকটার সামনে এসে দাঁড়াল ।


জলকন্যার অপরূপ চেহারা দেখে লোভী লোকটা তার সমস্ত ফন্দি ফিকির ভুলে হা করে তাকিয়ে রইল । সে মনে মনে চিন্তা করল, “খাইছে, এই পরীটা এতো সুন্দর কেন ? সিনেমার নায়িকারা তো এই পরীর কাছে কিছুই না ! এই পরীর ফিগার দেখছো ! একদম কোকাকোলার বোতলের মত !” এসব বাজে কথা ভাবতে ভাবতে লোভী লোকটা তার লোভের হাতটা জলকন্যার দিকে বাড়িয়ে দিল ।
জলকন্যা এইবার আর চুপ থাকতে পারল না । সে লোভী লোকটার গালে প্রচণ্ড একটা থাপ্পড় মারল ।
থাপ্পড় খেয়ে লোকটা সম্বিত ফিরে পেল । সে বুঝল তার কাজটা একদম বাজে হইছে । কিন্তু ধুরন্দর লোকটা দমে না গিয়ে মুহূর্তে তার ভাবসাব পাল্টাইয়া কাতর কণ্ঠে বলল, “পরী আপু প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না । আমি আসলে খারাপ কিছু ভেবে আপনার দিকে হাত বাড়াইনি । আমার জান-আমার সোনা বউ এই নদীতে ডুবে গেছে । আমি তাকে খুব ভালোবাসি । তাকে ছাড়া আমি বাঁচব না । আপনি যেন তাকে নদীর জল থেকে তুলে আনেন সে রিকুয়েস্ট করতে আমি আপনার হাত ধরতেই নিজের হাত বাড়িয়েছিলাম ! প্লিজ আমাকে খারাপ লোক মনে করবেন না । আমি কিন্তু অন্যদের মত না ।”
কিন্তু এত কাতর আবেদন শুনেও জলকন্যার মন একটুও গলে নাই । সে আবারো ধাম করে লোকটার গালে থাপ্পড় কষে দিল ।
লোকটা চড় খেয়ে পুরাই বেসামাল হয়ে গেল । সে বুঝতে পারল এই জলকন্যার সৌন্দর্য সিনেমার নায়িকাদের চেয়ে বেশি এবং তার গায়ের শক্তিও বক্সিং খেলোয়াড়দের চেয়ে বেশি । এভাবে আর একটা চড় দিলে পেশাব করে নদীর জলের সাথে তার পেশাব মিশে বিশাল ঢেউ হয়ে যাবে । সে ভয় পেয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল ।
জলকন্যা লোভী লোকটাকে বলল, “বদমাইশ ! তুই কি ভাবছোস আমি কিছুই বুঝি না ? তোর এই সুন্দর বউ নিয়া তুই সন্তুষ্ট থাকতে পারলি না । এই বউরে গাঙ্গে ফেলে সানি লিয়ন পাইতে চাস ? যা ভাগ । নইলে তরেও পানিতে চুবাই মারমু ।”
লোভী লোকটা থতমত খেয়ে বলল, “আইচ্ছা ঠিক আছে সানি লিয়ন না হয় দিবা না, আমার বউটারে তো এনে দিবা !”
জলকন্যা হেসে বলল, “ব্যাটা বেয়াদব ! বউরে ফিরে পাবার আশা করছ ? তুই ঐ সহজ সরল সুন্দরী মেয়েটার যোগ্য না । ওরে আমি আমার কাছে রাইখা দিমু । এরপর কোন পুরুষ যদি খাঁটি ভালোবাসার প্রমাণ দিতে পারে তখন পুরস্কার হিসেবে ওর হাতে তোর বউরে তুলে দিমু ।”
এই কথা বলে জলকন্যা আবার নদীর তলদেশে হারিয়ে গেল । সে আর কখনো উঠে আসলো না ।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:১১
১৮টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×