somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বোরকা পরা সেই মেয়েটি কেন ফেসবুক ছেড়ে দেয়

২৯ শে মার্চ, ২০২২ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তখন আমি নতুন নতুন ফেসবুক চালানো শুরু করেছিলাম।
সে সময়ে ফেসবুকে যতগুলো ফিমেইল আইডি দেখা যেত এর সত্তর ভাগই ছিল ভুয়া। চালাক ছেলেরা মেয়ের নাম দিয়ে আইডি খুলে ফেসবুকিং করতো। আর বেকুব ছেলেরা এসব ভুয়া আইডিতে এড হয়ে তাদের সাথে প্রেম করার ব্যর্থ চেষ্টা করতো।
সেই সময়টিতে আমার ফ্রেন্ডলিস্টে পরিচিত কোন মেয়ে ছাড়া অপরিচিত কোন মেয়ে আইডিকে মোটেও এড করতাম না। কিন্তু যে কোন ভাবেই হোক, পুরো অচেনা একটা লোককে আমি এড করেছিলাম। তার আইডি নাম ছিল এঞ্জেল সোনিয়া, প্রোফাইলে বোরকা পরা এক মেয়ের ছবি। বোরকার মাঝে দুটো সুন্দর চোখ যেন আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। প্রথম প্রথম তার লিঙ্গ নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ থাকলেও পরে শিউর হয়েছিলাম এইটা অরিজিনাল মহিলা।
সে সময় মোবাইল ফোনে ফেসবুক চ্যাটিং এখনকার সময়ের মতো এতো আরামদায়ক ছিল না। একটা মেসেজ সেন্ট করলে সেটার রিপ্লাই এর জন্য কমপক্ষে দুই মিনিট বসে থাকতে হতো।
এমন কষ্টকর চ্যাটিং এর যুগে মেয়েটার সাথে আমার মোটামুটি খাতির জমে গেল। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে মেয়েটার সাথে কিছু মেসেজ চালাচালি হতো।
একদিন রাতের বেলা হঠাত বোরকা পরা মেয়েটি স্ট্যাটাস দিল, "বিদায় ফেসবুক। আর কখনো ফেসবুক চালাবো না, আজই হয়ত ফেসবুকে আমার শেষ দিন।"
এই স্ট্যাটাস দেখে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। আহা, মেয়েটা কেন এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে? আমি মেসেজ দিলাম, কেন চলে যাচ্ছেন ফেসবুক ছেড়ে? ফেসবুকের অনেক উপকারিতা আছে, এখানে ভালো টাইম পাস করা যায়।
মেয়েটি ডিরেক্ট বলে দিল, দুঃখিত, আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। আর আসবো না।
আমি মেয়েটার সাথে প্রেম ট্রেম না করেও কেমন যেন বিরহের ব্যথা অনুভব করে উঠলাম। ইস, কেন মেয়েটা এমন সিদ্ধান্ত নিল। প্রতিদিন আমি ঘুমানোর আগে তার সাথে কি সুন্দর সময় কাটাতাম, এখন আমার কি হবে? তাকে ছাড়া আমার ঘুম আসবে? মেয়েটার প্রতি যে আমার এতো টান ছিল, মেয়েটা ফেসবুক না ছাড়ার ঘোষণা না দিলে কখনো জানতেই পারতাম না। আহা, মেয়েটা না থাকলে আমার ফেসবুকিং করে কি লাভ! আমিও হয়তো আর ফেসবুকে আসবো না।
পরদিন বিকেলে ফেসবুকে ঢুকে দেখি চ্যাটলিস্টে তার নাম জ্বলজ্বল করে শোভা পাচ্ছে। কিরে, এই মেয়ে তো আর কখনো ফেসবুকে আসবে না, এখন তার নাম দেখা যায় কেমনে?
আমি মেসেজ দিলাম, মনে করেছিলাম সত্যিই আর ফেসবুকে আসবেন না।
অনতিবিলম্বে সে রিপ্লাই দিল, আসবো না তো। আমার দুলাভাই বিদেশ থেকে বললেন ফেসবুকে আমি যেন উনাকে আমার ভাগিনার একটা ছবি দিই, সেই ছবিটা সেন্ড করার জন্যই ফেসবুকে ঢুকেছি। ছবি সেন্ড হওয়া কমপ্লিট হওয়া মাত্র বের হয়ে যাবো।
তারপর তার সাথে আমার আবার চ্যাটিং চলতে থাকে। দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাস যায়।
প্রায় মাসখানেক পর বোরকা পরা মেয়েটি আবার স্ট্যাটাস দিল, "অনেক ভাবনা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি আসলে ফেসবুকের যোগ্য নই। বেহায়ার মতো ফেসবুক চালানো উচিৎ নয়। আর কখনো ফেসবুকে আসবো না।"
আমি সেদিনও খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু মনে মনে কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। আমার মনে হচ্ছিল মেয়েটা ফেসবুক ছেড়ে থাকতে পারবে না, সে অবশ্যই আবার ফিরে আসবে।
চব্বিশ ঘন্টা যাবার আগেই আমার ধারণা সত্য প্রমাণ হলো। পরদিন বিকেলেই মেয়েটা আবার অনলাইনে এসে গেলো।
এবার আর জিজ্ঞেস করলাম না, কেন সে চলে গিয়েছিল, কেনই বা ফিরে এলো। সে ফিরে আসায় আমি বরং খুশি, অন্তত ওর সাথে দিনের শেষ আলাপটা সারা যায়।
প্রতিদিন একটু একটু আলাপ করতে করতে মেয়েটার সাথে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলো। ততদিনে আমি ওর আসল নাম ঠিকানা ইত্যাদি জেনে গেলাম।
একদিন কোন এক কারণে আমার মন মেজাজ ভালো ছিল না। ফেসবুকে ঢুকে দেখি মেয়েটা স্ট্যাটাস দিল, kal amar vaginar cool kamea our deka takea obak holam, ou ato cute (কাল আমার ভাগিনার চুল কামিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম, ও এতো কিউট!)
সে যুগে সবাই ইংরেজি বর্ণ দিয়ে এরকম পোস্ট দিত। পোস্টগুলোর ভাবার্থ হাস্যকর হয়ে গেলেও সবাই এগুলোকে ইউজুয়াল ব্যপার হিসেবেই নিত। কাজেই মেয়েটার ভাগিনার এই পোস্ট ছিল স্বাভাবিক একটা ব্যপার। কিন্তু আমার খুব রাগ লাগলো। মেসেজ দিলাম, এই বেকুব মহিলা, ফেসবুকে এসব কি লিখেছেন?
সে রিপ্লাই দিল, আপনি আমাকে এভাবে কথা বললেন কেন?
আমার রাগ কমলো না, পালটা মেসেজ দিলাম- আপনি না কি কলেজে পড়েন, আপনি এটাও জানেন না vagina অর্থ কি! ডিকশনারি খুলে দেখেন। তারপর বুঝবেন।
কিছুক্ষণ পর ভাগিনার স্ট্যাটাস ডিলিট করে মেয়েটা নতুন স্ট্যাটাস দিল- "বিদায় ফেসবুক। এখানে কেউ আমাকে বুঝে না। আর কোনদিন ফেসবুকে আসবো না। কোনদিনও না। ভালো থাকবেন সবাই।"
আমি ভাবছিলাম কমেন্ট করবো, আপনি ফেসবুকে আর আসবেন না এটা আমি তো দূরে থাক আমার বাপেও বিশ্বাস করবে না। এমনকি আমার কবরবাসি দাদাও এতোদিনে বুঝে গেছে আপনি আগামীকাল সন্ধ্যার আগেই আবার ফিরে আসবেন।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০২২ রাত ৮:১৭
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×