শহরের সরকারি বেসরকারি যত ব্যাংক আছে, সবগুলোর ক্যাশ কাউন্টারের পাশে প্রিন্ট করা লেখা দেখবেন, "এখানে ময়লা ও ছেঁড়া নোট জমা নেয়া হয়"। পাশে বসা অফিসারকে আপনি ছেঁড়া নোট দিন, তারপর টের পাবেন আসলেই তারা ছেঁড়া নোট জমা নেন কি না। আপনাকে একদম রূঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করবে।
ছেঁড়া নোট জমা নেয়া তো দূরে থাক, উলটো উনাদের থেকে নগদ টাকা যদি তুলতে যান তাহলে দেখবেন সুন্দর ভালো নোটের ভেতর ছেঁড়া ছেঁড়া টাকা ঢুকিয়ে দিয়ে দেবে। আজকাল মনে হয় যেন ব্যাংকগুলোই বরং ছেঁড়া নোটের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। মাত্র কয়েক হাজার টাকা তুলতে গেলেও দেখা যায় ক্যাশিয়ার সাহেব বান্ডিলের ভেতর চার পাঁচটি ছেঁড়া নোট দিয়ে দেয়। ব্যাংক থেকে টাকা নেয়ার সময় আপনাকে খুব সাবধানে নোটগুলো চেক করে নিতে হবে। নয়তো পরে বান্ডেল খুলে দেখবেন ভেতরে লেনদেনের অযোগ্য নোট দিয়েছে, পরে সেই ছেঁড়া টাকা নিয়ে একই অফিসারের কাছে গেলে উনিও আর ফেরত নেবেন না। এমন একটা ভাব দেখাবে, মনে হবে যেন উনারা ছেঁড়া টাকা নেনও না, দেনও না।
অথচ এমন হবার কথা নয়। সরকারের অর্থ বিভাগের সাথে জড়িত অফিসগুলোর উচিৎ ছিল নির্দিষ্ট সময়ান্তে ছেঁড়া টাকা প্রত্যাহার করে বাজারে নতুন নোট নিয়ে আসা। শোনা যায়, পুরনো টাকা প্রত্যাহার করার কাজ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু এজেন্ডা আছে। তা কতটুকু পালিত হয় কে জানে।
দুই, পাঁচ এবং দশ টাকার নোটের সমস্যা
এদেশে সাধারণ মানুষের আর্থিক লেনদেনের বেশিরভাগ হয় হাটে বাজারে, বাসে রিক্সায় যাতায়াতে। এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় দুই, পাঁচ এবং দশ টাকার নোট। টাকার নিয়ম হল, যত বেশি হাতবদল হয় তত ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে। যেহেতু এই টাকাগুলোই বেশি হাত বদল হয় তাই এগুলোই ড্যামেজ হয় সবচেয়ে বেশি। একই সময়ে মুদ্রিত পাঁচশত কিংবা হাজার টাকার নোটের চেয়ে দশ টাকার নোটটাই বেশি ময়লা হয়ে পড়ে।
একসময় এই ময়লা নোটগুলো এমন হয়ে পড়ে, বেচারাকে কেউ আর নিতে চায় না। এসব পুরনো টাকা দেয়া নেয়া নিয়ে হাট বাজারে সওদাগর এবং বাসের কন্ডাক্টরের সাথে ক্যাচাল লেগে থাকাটাই যেন বাংলাদেশীদের ভাগ্য।
এতো পুরনো টাকা বাইরে থাকবে কেন?
যেসব টাকা দ্রুত নষ্ট হতে থাকে, সেগুলো নির্দিষ্ট সময় পর বাজার থেকে সরকারের তুলে নেয়া উচিৎ। সেই ২০০৭ সালের দুই/পাঁচ টাকার নোট সম্পূর্ণ জরাগ্রস্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে এখনও বাজারে চলছে। এই নোটগুলো দেয়া নেয়া নিয়ে মানুষে মানুষে তর্ক বিতর্ক চলছেই, কিন্তু কি আশ্চর্য, বাজারে এসব নোট থাকবেই থাকবে!
এই সমস্যা কি সমাধানের অযোগ্য?
উন্নত দেশগুলো কিভাবে পুরনো কিংবা ছেঁড়া মুদ্রার সমাধান করে তা সেসব দেশে বসবাসরত ভাই বোনেরা হয়তো বলতে পারবেন। আমার মনে হয় পুরনো টাকা সমস্যার একটাই সমাধান, সরকার নিজ উদ্যোগেই বাজার হতে পুরনো টাকাগুলো প্রত্যাহার করে নতুন টাকা রিপ্লেস করবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা বিভাগ রাখা উচিৎ যারা সার্বক্ষণিক এই সমস্যা মোকাবেলায় কাজ করে যাবে। অল্প কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রায় দুইশ জন সহকারী পরিচালক নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ হয়েছে, উনাদের নিয়োগ যে কোন সময়ে হয়ে যাবে। এর মাঝেই নতুন করে ২২৫ জন সহকারী পরিচালক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও চলে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট দেখুন, সবসময়ই ব্যাংকে বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। হাজার হাজার কর্মকর্তা সম্বলিত বাংলাদেশ ব্যাংক কি পুরনো টাকা সমস্যা সমাধানে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকবল দিয়ে একটা বিভাগ চালু রাখতে পারবে না?
আরেকটি কথা বলা যায়, যেহেতু দুই পাঁচ টাকার নোটগুলো বেশি ব্যবহারের ফলে দ্রুত নষ্ট হয়, এসকল টাকার কাগজের নোট বাদ দিয়ে ধাতব মুদ্রা চালু করলেই হয়তো ভালো হবে।
সরকার প্রায়ই বিভিন্ন ইস্যুতে স্মারক মুদ্রা ছেড়ে থাকে, এসব স্মারক মুদ্রার পেছনে সময় ও অর্থ ব্যয় কমিয়ে সাধারণ জনগণের সুবিধার্থে পুরনো এবং ছেঁড়া নোট সমস্যা মোকাবেলায় মনোযোগ দেয়া উচিৎ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২২ বিকাল ৪:২১