somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আর নয় ঘৃনা, আর নয় হত্যা, আর নয় ইসলামোফোবিয়া: মুক্তচিন্তার নামে আর নয় হেইট ক্রাইম

০২ রা মে, ২০১৫ রাত ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হলো ওয়াশিকুর রহমান বাবু নামের এক ব্লগারকে। তার কয়েকদিন আগে একই ভাবে হত্যা করা হলো আরেক ব্লগার এবং বিজ্ঞান লেখক অভিজিত রায়কে। ‘থাবা বাবা’কেও একই ভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে মৌলবাদী দুর্বিত্তদের হাতে। এদের সবার অপরাধ একটাই; এরা সবাই ইসলামের বিরুদ্ধে, ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলত। এরা সবাই মুক্তচিন্তার মুক্তমনা মানুষ। এরা সবাই আত্মস্বীকৃত নাস্তিক। সবাই তাদের 'ফ্রিডম অফ স্পিচ' এর অধিকার প্রয়োগ এবং প্রতিষ্ঠায় ছিল সচেষ্ট। উপরোল্লেখিত এই তিনজন ব্লগারের সবার উদ্দেশ্য একই হলেও এদের মধ্যে অভিজিত রায়ের প্রকাশভঙ্গি বা 'এক্সপ্রেশন' ছিল কিছুটা ভিন্ন এবং মার্জিত। অভিজিত রায় মূলত: তার লিখিত বইগুলির মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক ভাবে ব্যাখা করার চেষ্টা করেছেন যে সৃষ্টিকর্তা বলে কেও নেই, সুতরাং ধর্মেরও কোনো ভিত্তি নেই। তার লেখার বেশির ভাগই অবশ্য ক্রিস্টোফার হিচেন, রিচার্ড ডকিন্স, লরেন্স ক্রাউস প্রভূত লেখকগনের ভাবধারার বাংলা রূপান্তর।

অন্যদিকে, বাকি দুই ব্লগার স্বল্পশিক্ষিত বিধায় তাদের এক্সপ্রেশনও ভিন্ন ধরনের - এক কথায়: কটাক্ষ ধর্মী । ব্যক্তি জীবনে সম্পূর্ণ অসফল এই ব্লগারদ্বয় (থাবা বাবা এবং ওয়াশিকুর রহমান) এ সমাজ এবং পারিপার্শিকতাকে থোরাই কেয়ার করে 'ফ্রিডম অফ স্পিচ' এর দোহাই দিয়ে চালিয়ে গেছে বাক-স্বেচ্ছাচারিতা। বাংলাদেশে শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। এই বৃহৎ ধর্মবিশ্বাসী জনগোষ্ঠিকে এবং এদের বিশ্বাসকে এরা কঠাক্ষ করেছে নিয়মিত। তথাকথিত মুক্তচিন্তার ব্লগ এবং লেখনীর মাধ্যমে এরা সমাজে ছড়িয়ে দিয়েছে ঘৃনা বা ‘হেইট’ এবং বিদ্বেষ। এই ঘৃনা বা বিদ্বেষ মূলত বাংলাদেশের আপামর মুসলমানদের প্রতি। এবং এ ধরনের ঘৃনা বা বিদ্বেষ প্রকাশ ক্রমান্বয়ে বেড়েই যাচ্ছে- যা কিনা জাতির জন্য কোনভাবেই শুভো নয়।

আমার আজকের লেখার বিষয়বস্তু হচ্ছে সমসাময়িক এবং প্রসঙ্গিক কয়েকটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করা: (১) মুক্তচিন্তা বলতে আমরা কি বুঝি? (২) ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন কি এবং এর সীমাবদ্ধতা, (৩) হেইট ক্রাইম কি এবং বর্তমান বিশ্বে এর আইনগত দিকসমূহ, (৪) ইসলামফোবিয়া কি এবং (৫) ব্যক্তি, গোত্র এবং সমাজের প্রতি আমাদের মুষ্টিমেয় কয়েকজন ব্লগারের স্বেচ্ছাচারিতা এবং তা প্রতিরোধের উপায়।

মুক্তচিন্তা বা ‘Freethought’ হচ্ছে মূলত একটি দার্শনিক ভাবধারা যেখানে সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে যুক্তি, কারণ এবং পরীক্ষালব্ধ প্রমান বা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। প্রাধিকার, মতবাদ, বিশ্বাস অথবা সামাজিক প্রথা দিয়ে কোনো সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। অন্যদিকে ধর্ম বা রিলিজিওন এর ভিত্তিই হচ্ছে বিশ্বাস (faith) যেখানে সৃষ্টিকর্তা হচ্ছে মূল অথরিটি। ধর্মের সত্যতা প্রমানে যুক্তি, কারণ অথবা পরীক্ষালব্ধ প্রমানের কোনো প্রয়োজন পরে না। এটা জানা স্বতেও যারা ধর্মে বিশ্বাস করে তাদেরকে আমরা বলি বিশ্বাসী বা ধার্মিক। এবং এ সাথে সাথে ধর্মে বিশ্বাস করার স্বাধীনতা ওই ধার্মিকের ‘রাইট’ বা অধিকারে পরিগণিত হয়। স্বাভাবিক ভাবেই মুক্তচিন্তা (Freethought) এবং ধর্ম (Religion) সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী বিষয়। একটিকে আরেকটির সাথে মিশিয়ে ফেলা বা তুলনা করা কোনো ভাবেই সমীচীন নয়। উপরন্তু, কারণ, যুক্তি এবং পরীক্ষা দ্বারা ধর্মকে ভ্রান্ত প্রমানের প্রয়াসও অযৌক্তিক। কারণ আপনি যখন কোনো কিছুর দৈর্ঘ্য পরিমাপ করবেন তখন আপনি ব্যবহার করবেন স্কেল বা ফিতা, আবার যখন ওজন পরিমাপ করবেন তখন দাড়িপাল্লা। বাজার থেকে দুধ পরিমাপের জন্য আপনি কিন্তু স্কেল নয়, ব্যবহার করবেন তরল পরিমাপের জন্য মাপচোঙ। একই কারণে, ধর্মের গুরুত্ব পরিমাপের জন্য আপনি যদি মুক্তচিন্তার নিক্তি নিয়ে মাপঝোপ করেন, তা হবে বোকামি। ধর্মের গুরুত্ব পরিমাপের জন্য আপনাকে তাকাতে হবে সামাজিক, মানবিক এবং দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে।

মুক্তচিন্তার ব্লগারগন সবসময়ই বলে থাকেন যে ধর্ম মুক্তচিন্তার এবং বিজ্ঞানচর্চার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়, আর তাই বিজ্ঞান চর্চার জন্য ধর্মকে উচ্ছেদ করতে হবে। আসলেই কি তাই? হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলার এবং বর্তমান সময়ের তত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম সারির প্রফেসর, স্ট্রিং থিওরির পুরোধা, মিচিও কাকু (Michio Kaku), যিনি কিনা আধুনিক বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তার লেখিনি এবং টিভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে; সয়ং তিনিই বলেন: "Science and religion can be in harmony, but only if rational people on both sides engage in honest debate." - অর্থাত, ধর্ম এবং বিজ্ঞান ভালোভাবেই মিলেমিশে পাশাপাশি সহবস্থান করতে পারে যদি দু’ পক্ষেই বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ সততার সাথে বিতর্কে অবতীর্ণ হয়। এখন, যদি মুক্তমনা ব্লগারগন একচোখা দৃষ্টিতে শুধুমাত্র 'ধর্মীয় কুসংস্কার' গুলোকে টেনে এনে মূল ধর্মকে ডেমোনাইজ (demonise) করার বা দানবিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করে; এবং এর প্রতিবাদে যখন অতিসংবেদনশীল অসহিষ্ণু তথাকথিত ধার্মিকগণ হাতে তুলে নেয় চাপাতি, তখনি শুরু হয় দ্বন্দ্ব। এবং নিঃসন্দেহে এ' দ্বন্দ্ব এক অযৌক্তিক দ্বন্দ্ব। এক অপ্রত্যাশিত দ্বন্দ্ব। এ দ্বন্দ্বে যে প্রাণহানি ঘটছে তার দায়ভার নিতে হবে দু' পক্ষকেই। ধর্মীয় অনুভুতি অথবা মুক্তচিন্তার দোহাই দিয়ে কোনো পক্ষই পার পেতে পারেনা এ সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপরাধের হাত থেকে। দু' পক্ষকেই দাঁড়াতে হবে আইনের কাঠগড়ায়।

ইদানিং বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ব্যাঙাচির মত জন্ম নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ ব্লগার। এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার মত তেমন কোনো কার্যকরী 'জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি'ও নেই! আর এ সমস্ত রুগ্ন ব্যাঙাচি ব্লগারদের একটাই 'মাতৃভাষা'- তা হলো মুক্তচিন্তার ভাষা- এরা সবাই মুক্তমনা। আর আমার মত, কালেভদ্রে যারা দু' এক কলম লেখার চেষ্টা করে, তারা সবাই ব্যাক-ডেইটেড 'ছাগু' বা 'বামাতি' বা 'পিনাকীয়' ব্লগার!

সদ্য প্রয়াত মুক্তমনা ব্লগার ওয়াশিকুর বাবু ওরফে 'কুচ্ছিত হাঁসের ছানা' ২৬ শে ফেব্রুয়ারী ২০১৫ তে তার ফেইসবুক স্ট্যাটাস আপডেট লিখলেন এই রকম (আমি হুবুহু নিচে তুলে দিলাম):
“এক থাবা বাবার মৃত্যু হাজার থাবা বাবা জন্ম দিয়েছে,
এক অভিজিৎ রায়ের মৃত্যু লাখো অভিজিৎ রায়কে জন্ম দিবে।
কলম চলবে, চলতেই থাকবে। তোদের বিশ্বাসের মৃত্যু না ঘটা পর্যন্ত।
ইসলাম ধ্বংস হোক,
ইসলাম ধ্বংস হোক,
ইসলাম ধ্বংস হোক...”

একজন গাড়ি ড্রাইভার মদ খেয়ে মাতাল হয়ে গাড়ি চালালে যা হয়ে, ঠিক তাই হলো ওয়াশিকুর বাবুর জীবনে এই ধরনের ঔদ্ধতপূর্ণ, অসামাজিক, অপমানসুচক তথাকথিত 'মুক্তচিন্তার' বহিঃপ্রকাশের জন্য। মাতাল চালকটির মত 'কুচ্ছিত হাঁসের ছানা' টিও অবলীলায় ভুলে গেল ব্লগার হিসেবে সমাজের প্রতি, সমাজে বসবাসকারী লক্ষ-কোটি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী নিরীহ মানুষগুলির প্রতি তার দায়বদ্ধতার কথা। দায়বদ্ধতা মানে কিন্তু পরাধীনতা নয়। দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হয় দায়িত্বশীলতা থেকে। স্বাধীনতার নামে সামাজিক মূল্যবোধ এবং গণমানুষের বিশ্বাসকে উপেখ্যা করার কোন অবকাশ নেই। অন্যদিকে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত লাগার অজুহাত খাড়া করে মাদ্রাসার ব্রেইন ওয়াশড বিপথগামী কয়েকজন 'ইডিয়ট' চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করলো ওয়াশিকুর বাবুকে। এ ঘটনায় ব্লগার ওয়াশিকুর এবং খুনি মাদ্রাসার ছাত্র সবাই, মিচিও কাকুর কথা মতে, irrational বা বিচার শক্তিহীন অসহিষ্ণু পক্ষ্য। এ ঘটনার জন্য কোনভাবেই ধর্মকে দায়ী করা যাবে না। এখানে নৈতিক অধ:পতন এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাহীনতাই দায়ী।

ধর্মে বিশ্বাসীদের প্রতি এ ধরনের বিদ্বেষী এবং অপমানসুচক কটুক্তিপূর্ণ বক্তব্য যে শুধু স্বল্পশিক্ষিত 'Narrow minded’ ব্লগারদের মধ্যেই দেখা যায় তা নয়; অনেক উচ্চশিক্ষিত নাস্তিকতাবাদ প্রচারকগণও অহরহ এ ধরনের কটুক্তি করে থাকেন। যেমন: স্বনামধন্য নাস্তিকতাবাদ প্রচারক রিচার্ড ডকিন্স প্রায়ই মুসলমানদেরকে কটাক্ষ করে থাকেন এই বলে যে ইসলাম ধর্ম মানে হচ্ছে আল-কায়দা, আইসিল অথবা বোকো হারাম ধরনের মৌলবাদিতা! কিন্তু যে কোনো বিবেকবান মানুষই বুঝবে কথাটি কতটা অমূলক। মূলত: এটা ধর্মের বিরুদ্ধে এক সংঘবদ্ধ অপপ্রচার। মূলধারার ধর্ম এবং এর অনুসারীগণ সম্পূর্ণ ভাবে এ ধরনের বক্তব্যর বিরোধিতা করে এবং দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি সুশিক্ষিত নাস্তিক বা ধর্মে অবিশ্বাসীগণও এ ধরনের বক্তব্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়! যেমন: ২০১৩ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরুস্কার বিজয়ী ব্রিটিশ বিজ্ঞানী প্রফেসর পিটার হিগস রিচার্ড ডকিন্স এর ইসলামোফোবিক বক্তব্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "What Dawkins does too often is to concentrate his attack on fundamentalists. But there are many believers who are just not fundamentalists. Fundamentalism is another problem. I mean, Dawkins in a way is almost a fundamentalist himself, of another kind."(The Guardian, 26 December 2012). অর্থাত, মূল ভাবার্থ এই রকম: ডকিন্স সমগ্র মুসলমানদের মৌলবাদীদের সাথে এক কাতারে এনে ধর্মকে বিষোদ্গার করেছেন, যা এক ধরনের অবিচার- কোনো ভাবেই মুক্তমনার পরিচায়ক নয়। এ ধরনের হঠকারী বক্তব্যের জন্য বিজ্ঞানী হিগস ডকিন্সকে এক 'বিশেষ ধরনের মৌলবাদী' আখ্যা দিয়েছেন। আমি (সম্ভবত: আরও অনেকেই) এ ধরনের মৌলবাদিতাকে নাম দিয়েছি 'নাস্তিকতার মৌলবাদিতা'। এর উপরে অনেক দিন আগে একটা ব্লগও লিখেছিলাম, উত্সাহীগণ ব্লগটি পড়তে পারেন এই লিঙ্কে

মুক্তমনাদের বক্তব্য হচ্ছে মন থেকে সম্পূর্ণ ভাবে 'সৃষ্টি কর্তা এবং ধর্মে বিশ্বাস' ধুয়ে মুছে সাফ করতে না পারলে কোনো ভাবেই বিজ্ঞান চর্চা করা যাবে না; কোনো ভাবেই প্রগতিশীল হওয়া যাবে না; কোনো ভাবেই কুসংস্কার এর অন্ধকার ছেড়ে আলোতে আসা যাবে না! বাংলাদেশের মোটামুটি সব ক্ষুদ্রবুদ্ধি সম্পন্ন (আমি সবাইকে এক কাতারে ফেলছিনা) মুক্তমনা ব্লগারদেরই একই অভিমত! এ ধারনাটা যে কতটা ভ্রান্ত তার কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি:

সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস যদি বিজ্ঞান চর্চায় বাধা হত তাহলে কোনো ভাবেই বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের জন্ম হত না। লেখা হত না সেই বিখ্যাত বই 'প্রিন্কিপিয়া ম্যাথমেটিকা', যার আলোতে আলোকিত হয়েছে আধুনিক বিজ্ঞান। নিউটনের জন্ম না হলে এখনো আমরা পড়ে থাকতাম অন্ধকার যুগেই। এ পৃথিবীতে যিনি জ্বালালেন বিজ্ঞানের আলো, সেই মহাবিজ্ঞানী নিউটনও ছিলেন সৃষ্টিকর্তা এবং ধর্মে বিশ্বাসী! তিনি বিশ্বাস করতেন সৃষ্টিকর্তা (God) তাঁকে পাঠিয়েছেন বৈজ্ঞানিক ভাবে সৃষ্টিরহস্য উদঘাটনের জন্য। আরেক মহান গণিতজ্ঞ, লেইবনিজ (Leibniz) যিনি সৃষ্টি করেছেন ক্যালকুলাস এবং বাইনারি সংখ্যাতত্ব যা বর্তমান ডিজিটাল কম্পিউটারের ভিত্তি, তিনিও ছিলেন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী। তার মতে ধর্মতত্ব এবং দর্শনতত্ব একে অপরের সাথে সংঘাতপূর্ণ নয়।

এ রকম উদহারণ রয়েছে আরো অনেক। তবে উপরের দুটি উদহারণই প্রমানের জন্য যথেষ্ট যে ধর্মে বিশ্বাস কারো মনস্তাত্বিক বিকাশ বা বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে অন্তরায় নয়। বস্তুতপক্ষে, ধর্ম এবং বিজ্ঞান সম্পূর্ণ ভাবে দুটো ভিন্ন বিষয়। ধর্মের শুদ্ধতা প্রমানের জন্য বিজ্ঞানের কোনো প্রয়োজন নেই এবং বিজ্ঞান অধ্যোনের জন্যও ধর্ম অপরিহার্য নয়। বিজ্ঞান সদাপরিবর্তনশীল (ever changing), কিন্তু ধর্মের কন্টেন্ট এবং বক্তব্য অপরিবর্তনীয়। আর এ কারনেই চার্চের পাদ্রী এবং প্রথিতযশা জোতির্বিদ জর্জ লেমিট্রা (Georges Lemaître) যখন আইনস্টাইনের সুত্র প্রয়োগ করে বিগ ব্যাং (Big Bang) তত্বের প্রস্তাবনা করলেন; অন্য পাদ্রীদের অনুরোধের সত্বেও তিনি তার তত্ব প্রয়োগ করে সৃষ্টি কর্তার অস্তিত্ব প্রমান করতে চান নি। তার মতে, একদিন তার 'বিগ ব্যাং' থিওরি ভুল প্রমানিত হতে পারে, তাই তিনি অনিশ্চিত কোনো বৈজ্ঞানিক সুত্র দিয়ে ধর্মকে যাচাই করার বিপক্ষে ছিলেন। প্রসঙ্গত: বলে রাখা ভালো, যে লেমিট্রাকে বিগ ব্যাং তত্বের ফাদার বলেও অবিহিত করা হয়,- তিনি কিনা একজন চার্চের ফাদারও ছিলেন! যে বিগ ব্যাং নিয়ে মুক্তমনাগণ মাতামাতি করেন সেটির সৃষ্টিই হয়েছে কিন্তু ধর্মবিশ্বাসী একজনের মস্তিস্কে!

সমাজ থেকে ধর্মকে (এবং ধার্মিকদের ঘাড় থেকে ধর্মের ভুতকে!) বিতারিত করার জন্য বাংলাদেশের জ্ঞান বিবর্জিত তথাকথিত মুক্তমনা কিছু ব্লগার (নিঃসন্দেহে সবাই নয়) যে হাতিয়ারটি ব্যবহার করে তা হলো 'বিজ্ঞান'! বস্তুতপক্ষে, এই ‘থাবা বাবা’ অথবা ‘কুচ্ছিত হাঁসের ছানা’ গোত্রের ব্লগার সম্প্রদায় বিজ্ঞান সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ! এর অবশ্য বেশ কিছু কারণও আছে। প্রধান একটি কারণ হচ্ছে এদের জ্ঞান অর্জনের সুত্র বা সোর্স। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই ব্লগার সম্প্রদায় বিজ্ঞানের তথ্যগুলো সংগ্রহ করে অনির্ভরযোগ্য অবৈজ্ঞানিক পত্রিকা বা ট্যাবলয়েড থেকে! যেখানে বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো অতিরঞ্জিত অথবা কখনো কখনো সম্পূর্ণ ভুল ভাবে উপস্থাপন করা হয়। এদের ভেতরে অবশ্য দু-একজন যারা ইংরেজিতে লিখিত অথেন্টিক বিজ্ঞান বিষয়ক বই পুস্তক পড়ার চেষ্টা করেন, তারা তা অনুধাবন করেন ভুল ভাবে এবং বাংলায় ব্লগ বা বইয়ের মাধ্যমে তা উপস্থাপন করেন অতিরঞ্জিত ভাবে। এদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে এরা ‘fact’ শব্দটির সাথে 'belief', 'assumption', 'thought', 'conjecture' ইত্যাদি শব্দগুলোকে মিলিয়ে ফেলেন, কখনো ইচ্ছাকৃত ভাবে আবার কখনোবা নেহাৎ না বুঝে । এরা ভাবেন বিজ্ঞানের বইতে যা লেখা থাকে তা সবই 'ফ্যাক্ট' বা 'thruth'! আসলেই কি তাই?

বিজ্ঞানের জগতে প্রাকৃতিক ঘটনা বা ‘ফ্যাক্ট’ গুলোকে দুই ভাবে ব্যাখা করা হয়: ১) তত্বীয় ভাবে, যাকে ইংরেজিতে বলে theory-laden, ২) পরীক্ষালব্ধ প্রমান বা experimental finding এবং সর্বপরি ৩) পর্যবেক্ষণলব্ধ প্রমান বা observational fact (Philosophy Now, April 2015)। অস্ট্রিয়ান পদার্থবিদ এবং দার্শনিক আর্নস্ট ম্যাক (Ernst Mach) এর মতে যে বৈজ্ঞানিক তত্ব পরীক্ষা অথবা পর্যবেক্ষণ দ্বারা প্রমান করা না যায় সেই তত্বকে নির্ভুল ভাবার কোনো অবকাশ নেই। বস্তুত: এ কারনেই আলফ্রেড নোবেল তার উইল এ উল্লেখ করে গেছেন যে কোনো ধরনের বৈজ্ঞানিক তত্ব যতক্ষণ না পর্যন্ত পরীক্ষা বা পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে সত্য প্রমান না করা যায় ততক্ষণ পর্যন্ত ওই তত্বের জন্য কোনো বিজ্ঞানীকে নোবেল পুরুস্কার দেয়া হবে না।

আবার বৈজ্ঞানিক ভাবে যে সকল সত্যের উদঘাটন সম্ভব, তাও কিন্তু ঠিক নয়। স্বনামধন্য গণিতজ্ঞ এবং যুক্তিবিদ কার্ট গোডেল (Kurt Godel) তার বিখ্যাত 'গোডেল'স ইনকমপ্লিটনেস থিওরি' এর মাধ্যমে প্রমান করেছেন যে এ মহাবিশ্বে অনেক 'সত্য' আছে যা গণিত অথবা লজিক দিয়ে সত্য বলে প্রমান করা সম্ভব নয়। উপরন্তু, মানুষের পক্ষ্যে এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের সকল 'সত্য' বা সৃষ্টি রহস্য সম্পূর্ণ রূপে জানাও সম্ভব নয়। এটা আমার কথা নয়। বিখ্যাত তত্বীয় পদার্থ্যবিদ, জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক প্রফেসর ব্রায়ান গ্রীন (Brian Green) কে একবার প্রশ্ন করা হলো: আপনি কি মনে করেন যে মানুষ একদিন প্রকৃতির সকল সত্য উদঘাটন করবে? উত্তরে ব্রায়ান গ্রীন বললেন, “Intelligent brain can be limited. Our brain is also limited in that sense. May be the true nature of reality is right in front of us. Right here for us to grasp. And we just don’t have the brain power to understand it. That’s a real possibility. One day we hit the wall and can’t go any further.” (ভিডিও থেকে নেয়া, World Science U). অর্থাত, মানুষের পক্ষে প্রকৃতির সকল সত্য উদঘাটন সম্ভব নয় কারণ আমাদের মস্তিস্কের কর্মক্ষমতার ও এক সীমা রয়েছে। আর মস্তিষ্কের এই সীমাবদ্ধতার কারণেই আমাদের জানার ও বোঝার ক্ষমতাও সীমিত।

কিছুদিন আগে জোতির্বিদ লরেন্স ক্রাউস (Lawrence M. Krauss) ‘A Universe from Nothing’ নামে একটি বই প্রকাশ করলেন। এ বইয়ের মাধ্যমে তিনি নিশ্চিতভাবে দাবি করলেন যে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে ‘শুন্যতা’ বা ভ্যাকুম থেকে এবং মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে সৃষ্টিকর্তার কোনো প্রয়োজন পরেনি। ভ্যাকিউম (Vacume) বা শুন্যতায় কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েষণ (Quantum fluctuation) এর মাধ্যমে হঠাত করে আপনা আপনিই সৃষ্টি হয়েছে এই মহাবিশ্ব! আমি বইটি পড়েছি। ভালো লেগেছে। অবাক হয়েছি। যেহেতু আমি পদার্থবিদ নই, তাই বইটির বক্তব্যে যে বৈজ্ঞানিক ত্রুটি রয়েছে তা জানতাম না। লরেন্স ক্রাউসের ত্রুটিপূর্ণ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে জানতে পারলাম যখন পরের বছর ‘Why Science Does Not Disprove God’ নাম আরেকটি বই বের হলো। বইটিতে জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক এবং গণিতজ্ঞ ড. আমির একজেল (Amir D. Aczel) কোয়ান্টাম তত্বের ব্যাখ্যাসহ দেখালেন যে, লরেন্স ক্রাউস 'শুন্যতা' (nothingness) বা ভ্যাকুম বলতে যা বুঝিয়েছেন তা সম্পূর্ণ ভাবে শুন্য নয়। মূলত 'কোয়ান্টাম ভ্যাকুম' কোয়ান্টাম ফোম (Quantum foam) নামক মিডিয়াম দিয়ে পরিপূর্ণ। মিচিও কাকুর বই 'প্যারালাল ওয়ার্ল্ড' থেকে জানা যায় যে এই 'কোয়ান্টাম ফোম' হচ্ছে আইনস্টাইনের 'স্পেস-টাইম কার্ভেচার'। এবং এই 'কোয়ান্টাম ফোম' মহাবিশ্ব সৃষ্টির আদি থেকেই অবস্থান করছে। সুতরাং, লরেন্স ক্রাউস যে দাবি করেছে যে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি নাথিংনেস (nothingness) বা শুন্যতা থেকে তা সঠিক নয়।

আর এ কারণেই, প্রয়াত অভিজিত রায় তার বইতে নিশ্চিত ভাবে যে দাবি করেছেন শুন্যতা থেকে আপনা আপনি (spontaneously) এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি; এবং এই সৃষ্টিতে স্রষ্টার কোনো প্রয়োজন পরে নাই- তাও ভিত্তিহীন। তিনি তার লেখুনিতে একচোখা দৃষ্টি দিয়ে শুধুমাত্র লরেন্স ক্রাউসের ভাবধারাকে তুলে ধরেছেন; কোনো ভাবেই প্রকৃত বিজ্ঞানকে তুলে আনেন নি। লরেন্স ক্রাউসের ব্যখ্যা যদি সত্যিই হত তাহলে উনি বইটি প্রকাশের সাথে সাথেই পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরুস্কার পেয়ে যেতেন। মোদ্দাকথা হচ্ছে, বর্তমানে বিজ্ঞানীদের হাতে যে বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমান আছে তা দিয়ে কোনো ভাবেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমান অথবা খণ্ডন করা যায় না।

বর্তমান সময়ে প্রকাশভঙ্গির স্বাধীনতাকে (Freedom of expression) খুব গুরুত্ব সহকারে নেয়া হয়। বাকস্বাধীনতা (Freedom of speech) প্রকাশভঙ্গির স্বাধীনতারই একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। একটি স্বাধীন দেশে একজন স্বাধীন নাগরিক বক্তব্য প্রকাশে সম্পূর্ণ ভাবে স্বাধীনতা ভোগ করবে- সভ্য সমাজে এটি ব্যক্তি অধিকার। একজন ধার্মিক বা বিশ্বাসী যেমন তার বিশ্বাসের কথা বিনা বাধায় বলার অধিকার রাখে; ঠিক তেমনি একজন অবিশ্বাসী বা নাস্তিকও অধিকার রাখে তার বক্তব্য অন্যদের মাঝে প্রচার করার। তবে স্বাধীনতার সুফল ভোগ করার অর্থ কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতা নয়। স্বাধীনতার ব্যাপ্তিতে কিন্তু একটা সীমাবদ্ধতা বা লিমিটেশন থাকে। সমাজকে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্যই এই সীমাবদ্ধতার প্রয়োজন। একটা উদাহরণ দেয়া যাক।

ধরুন আপনি আপনার বাসার আঙ্গিনায় সন্ধ্যা ৬ টা থেকে পার্টি করছেন এবং উচ্চ স্বরে গান বাজাচ্ছেন। ভালো, এতে কারো কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। সপ্তাহে একটি দিন আপনি আপনার বাসায় পার্টি করতেই পারেন। এটা আপনার স্বাধীনতা। এখন আপনি যদি গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে গান বাজান এবং এর কারণে আপনার প্রতিবেশীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটান, তাহলে ওটা হবে আপনার স্বেচ্ছাচারিতা। কেননা, আপনার স্বাধীনতা ভোগের কারণে আপনার প্রতিবেশী তার নির্বিঘ্নে রাতের ঘুম ঘুমোনোর স্বাধীনতা হারাচ্ছেন। ব্রিটেনে এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতাকে বলে 'পাবলিক নুইসেন্স' (Public nuisance)। আর এই স্বেচ্ছাচারিতার সাজা জেল পর্যন্ত গড়াতে পারে। আপনার স্বাধীনতা যতক্ষণ পর্যন্ত আরেকজনের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত না করে ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি আপনার স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকার রাখেন।

আপনার বাক স্বাধীনতা যদি আরেকজনের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে হরণ করে তাহলে আপনার বাক স্বাধীনতা প্রশ্নের সম্মুক্ষীন হবে। সে ক্ষেত্রে আপনার বাকস্বাধীনতা রোধ করারও প্রয়োজন পড়তে পারে।

একজন মানুষ সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করবে কি করবে না, একজন নারী হিজাব পড়বে কি পড়বে না, একজন মদ পান করবে কি করবে না, একজন সমকামী আরেক সমকামীকে বিয়ে করবে কি করবে না এটা সম্পুর্ন ভাবেই তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা। আপনার বক্তব্য (Expression) যদি এদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে, তাহলে জেনে নিন আপনি অপরাধ করছেন। আপনি যদি সমাজে সবার মাঝে বসবাস করেন, তাহলে জেনে নিন আপনার বাক স্বাধীনতা সম্পূর্ণ স্বাধীন নয়।

ব্রিটিশ 'হিউম্যান রাইটস' আইন এর দশম অনুচ্ছেদ (Article 10) আমাদের দিয়েছে ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন প্রয়োগের অধিকার। আবার এই একই অনুচ্ছেদ পরিষ্কারভাবে লিপিবদ্ধ করেছে, কোন কোন ক্ষেত্রে এই ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন প্রয়োগ করা যাবে না। একে বলা হয় ‘দশম অনুচ্ছেদ’ এর সীমাবদ্ধতা। সীমাবদ্ধতা গুলো নিন্মরূপ:
ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন প্রয়োগ করা যাবে না যদি:
১) আইন এর বাধ্যবাধকতার কারণে
২) লেজিটিমেট এইম বা বৈধতার লক্ষ্যে; যেমন:
ক) দেশ, জনগণ এবং জাতীয়তার স্বার্থে
খ) অপরাধ এবং বিশৃঙ্খলা রোধে
গ) জনগনের স্বাস্থ্য এবং নৈতিকতা (morals) রক্ষার ক্ষেত্রে
ঘ) অন্যের খ্যাতি এবং অধিকার (rights) রক্ষার্থে
ঙ) বিচারিক নিরপেক্ষতা এবং প্রাধিকার রক্ষার্থে।
বিস্তারিত আইনগত দিকটি এই লিঙ্কে দেখুন (National Council for Civil Liberties)।

বাংলাদেশের সিংহভাগ বিশ্বাসী বা ধার্মিকেরা মনে করেন ধর্ম নৈতিকতা (morals) শিক্ষা দেয়। ধর্ম চর্চা তাদের এবং তাদের সন্তানদের অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে দূরে রাখবে। আর এই বিশ্বাসে অটল থাকার অধিকার তাদের রয়েছে। এখন কেউ যদি বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে তাদের কর্মকান্ডের মাধ্যমে এই বৃহৎ জনগোষ্ঠির ধর্ম বিশ্বাসের উপর আঘাত হানে তাহলে সে আর্টিকেল ১০ এর ২গ এবং ২ঘ অনুযায়ী অপরাধ করলো। আবার স্বেচ্ছাচারী বাক স্বাধীনতা প্রয়োগের কারণে যদি দেশের বা সমাজের মাঝে হানাহানি, খুনোখুনি, বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি সৃষ্টি হয়, সে ক্ষেত্রে আর্টিকেল ১০ এর ২ ক, ২ খ এবং ২ গ অনুযায় এই বাক স্বাধীনতাকে রহিত করতে হবে। সম্প্রতি ব্লগার হত্যা সম্পর্কিত সকল বিশৃঙ্খলার পেছনে একটাই কারণ তা হলো ধর্ম বিদ্বেষী বাক-স্বেচ্ছাচারিতা বা হেইট স্পিচ (Hate speech)।

এককভাবে বা সংঘবদ্ধভাবে কেও যদি কোনো সম্প্রদায় বা গোত্রকে তাদের কথা, লেখা বা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে হেও বা অপমান বা আক্রমন করে তাকে বলে হেইট ক্রাইম (Hate crime)। ইহুদি গোষ্টিকে উদ্দেশ্য করে এন্টি-সিমেটিক বক্তব্য দেয়া যদি অপরাধ হয়, তাহলে বাংলাদেশের মুসলমান সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে এন্টি-ইসলাম বক্তব্য দেয়া কেন অপরাধ হবে না? হোমোফোবিয়া আচরণ যদি নিষিদ্ধ হয় তাহলে ইসলামোফোবিয়া আচরণ কেন নিষিদ্ধ হবে না? ব্রিটেনে কিন্তু হোমোফোবিয়া এবং ইসলামোফোবিয়া এই দুই ধরনের আচরণকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যে দেশে শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ মুসলমান সে দেশে ইসলামোফোবিক আচরণ অবশ্যই নিকৃষ্ট অপরাদের মধ্যে ফেলতে হবে। হেইট স্পিচ কখনোই বাক স্বাধীনতার আওতায় পরে না।

"ইসলাম ধ্বংস হোক, ইসলাম ধ্বংস হোক, ইসলাম ধ্বংস হোক...” -- এই ধরনের বক্তব্য 'হেইট স্পিচ'!

বৃটেনের ল' কমিশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী হেইট ক্রাইম হচ্ছে: The hostility relates to: (1) disability; (2) transgender identity; (3) race; (4) religion; and (5) sexual orientation.” ল' কমিশন এর আইন অনুযায়ী তিন ভাবে হেইট ক্রাইম সংঘঠিত হয়; এর ভেতরে একটি হচ্ছে: “through offences of stirring up hatred contained in the Public Order Act 1986. The offences prohibit certain types of conduct intended or likely to stir up hatred on grounds of race, religion and sexual orientation.” ব্রিটেনে কঠোর ভাবে হেইট ক্রাইমকে দমন করা হয়। তাহলে বাংলাদেশে কেন হেইট ক্রাইম আইন করে দমন করা হবে না? বৃটেনের হেইট ক্রাইম আইন বিস্তারিত পাবেন এই লিঙ্কে

বাক স্বাধীনতার নামে অনেক হয়েছে বাক-স্বেচ্ছাচারিতা। এবার থামুন। সমাজের প্রতি, সমাজের প্রতিটি মানুষের প্রতি, তাদের বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হউন। দেশ এবং জাতির প্রতি হউন দ্বায়িত্ব শীল। সুষ্ঠভাবে লিখুন আপনার অবিশ্বাসের কথা। তীক্ষ্ণ কটাক্ষ অথবা হেইট স্পিচ বাদ দিয়ে যুক্তি দিয়ে আপনার বক্তব্য তুলে ধরুন। আপনি যদি মনে করেন এই বিশ্বব্রম্মান্ড সৃষ্টি হয়েছে 'শুন্য' থেকে লিখুন শুদ্ধ ভাবে, আপনি যদি মনে করেন স্রষ্টার অস্তিত্ব বলে কিছু নেই, সবই ভ্রান্তি, তা লিখুন। আপনার লিখার জবাব কেও না কেও দিবে যুক্তি এবং কলমের মাধ্যমে। আর যদি কিছু নপুংশক আপনার উত্তর দিতে কলম ছেড়ে হাতে তুলে নেয় চাপাতি, তাহলে ধরে নিন--- বিশ্বাসীরা পরাজিত। তবুও অনুরোধ সকল মুক্তমনা ব্লগারদের উদ্দেশ্যে: আর নয় ঘৃনা, আর নয় ইসলামোফোবিয়া, আর নয় হেইট ক্রাইম। আসুন বিতর্ক করি, যুদ্ধ নয়।

খোন্দকার মেহেদী আকরাম,
শেফিল্ড,
ইউকে
১ মে ২০১৫
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৪০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×