somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীল জাদু (দ্বিতীয় পর্ব)

১৬ ই মে, ২০১৫ সকাল ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঐ আগস্ট মাসেরই কথা।
একটা জন্মদিনের প্রোগ্রাম শেষ করে ফেরার সময় হুট করে মেয়েটা বলে বসলো, তোর কাজ না থাকলে চল্‌ একটু ঘুরে আসি।
কাজ ছিল কিনা মনে নাই, তবে আমি গেলাম ওর সাথে। ভার্সিটিতে ভর্তির পর তখনও ডিওএইচএস এলাকায় সেভাবে যাওয়া-আসা শুরু হয় নি। তখন সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। আমরা রিকশায় উঠলাম। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ঐদিনও বৃষ্টি ছিল। টিপটিপ-আদুরে ধরণের বৃষ্টি।

ইসিবি চত্তর পর্যন্ত গেলাম। সত্যি বলতে গেলে, ঐদিনই ভালোমত জায়গাটা ঘুরে দেখলাম প্রথমবার।

রাস্তায় বেশি লোকজন ছিলনা।
“এখানে বসা নিষেধ” সাইনবোর্ডের সামনে বসে ছিলাম আমরা দুইজন। ওর কালো ড্রেসটা স্পষ্ট মনে আছে আমার, আর আমার কালো পাঞ্জাবী। ওর ক্যামেরায় আমাদের অনেক সুন্দর একটা ছবি আছে ঐদিনের। রিকশাওয়ালা মামাকে দিয়ে তোলানো। দাঁত বের করা আমরা দুইজন। অজানা কারণে আমাদের 'ফটোগ্রাফার'ও কেন যেন ছবি তোলার সময় দাঁত বের করে হাসছিল।

সত্যি বলতে কি, নিজেকে ব্যাবিলনের রাজা মনে হচ্ছিল। আর পিছনে ইসিবি চত্বরের ভাস্কর্যটাকে মনে হচ্ছিল ব্যাবিলনের সেই বিখ্যাত ঝুলন্ত বাগান।
আমি বলতে পারবো না কখনও ঐ মুহূর্তগুলো কেমন ছিল। শুধু বলতে পারবো, মিনিটে আমার হার্ট ছিয়াত্তরের চেয়ে অন্তত দশবার বেশি কাঁপছিল। তবুও বাচ্চাদের মত অর্থহীন একটা আনন্দ হয় তখন, কেমন একটা নেশার মতন।
মাঝে মাঝে ওর দিকে তাকিয়ে দশটা অতিরিক্ত হার্টবিটের কারণ খুঁজতে ইচ্ছা হচ্ছিলো। কিন্তু কি লাভ? আমার হার্ট আর ব্রেইন কেমন অদ্ভুত রকমের একটা পরকীয়ায় একজন আরেকজনের সাথে যুক্ত। এখানে যেন আমার ইচ্ছার কোনও দাম নেই।

ডিওএইচএসে রাস্তার দুইপাশে খালি জায়গাগুলোতে আমার অনেক সুন্দর কিছু দুপুর কাটে। নিচু দেয়ালের উপর পা ঝুলিয়ে আমি আর ও এলোমেলো সব প্ল্যান করতাম; অর্থহীন, অ-জ্ঞানগর্ভ সব আলোচনা করতাম। যদিও ঐসব প্ল্যানের স্থায়িত্ব বড়জোর দশ মিনিট।

তবে এরই মধ্যে আমাদের ঐক্যজোটে বিরোধী দল আক্রমণ করতো যথারীতি। আমাদের দুইজনের পশ্চাদ্দেশে পিষ্ট দেয়ালের বক্ষ-বিদীর্ণ করে এদিক-সেদিক থেকে যোগ দিত পিঁপড়া। কিন্তু এখানেও বিপত্তি, পিঁপড়া মারতে গেলেও মহারাণী চোখ গরম করে তাকাবেন।

- খামাখা মারলি কেন এটা, বল্‌ কেন মারলি?


সাঙ্গু নদীর শান্ত পানিতে ক্ষণিকের জন্য রোদের শাসনের রূপ দেখলে বুঝতেন, মাঝে মাঝে অকারণে কেন আমি দুয়েকটা পিঁপড়া মেরে ফেলতাম। পিঁপড়া সমাজ এতকিছু জানলে এই পাপের জন্য নিশ্চয়ই ক্ষমা করে দিত আমাকে।

ফাঁকা প্লটগুলোতে পুকুরের মতন ছিল তখন কয়েক জায়গায়। ওগুলোই ছিল আমাদের ভরদুপুরের লাবণী-পয়েন্ট, আর বৃষ্টির ছিঁটেফোঁটা থাকলে তা-ই হয়ে যেত মাধবকুণ্ড।
ছোট্ট একটা পাথরের উপর বসে আমরা একদিন ঠাণ্ডা পানিতে পা ডুবিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। গল্পের মত টলটলে পানি ছিল না। বরং কাদা তো ছিলই, এমনকি কেঁচো-জোঁকেরও ভয় ছিল। কিন্তু আমাকে ঘেঁষে যতটুকু সময় ছিল ও, এগুলো মাথায় আসে নি একবারো।
জীবন একটা ‘লুপ’ হলে ঐ অংশটাই অসংখ্যবার রিপিট করাতাম আমি হয়তো।


সেদিন ওদিকটায় গেলাম অনেকদিন পর। জ্বলন্ত সিগারেটের ছাই ছড়িয়ে দিয়ে আসলাম এবার। আমার এবং আমার খুব প্রিয় একজনের মিশে যাওয়া পায়ের ছাপ আর পিষে যাওয়া পরাবাস্তবতার ওপর আমার পুড়ে যাওয়া দীর্ঘশ্বাসগুলো রেখে এলাম।

কারণ এখনও আমার কাছে ইসিবি ক্যান্টিনের মানে খুব সুন্দর ঐ মেয়েটা, খুব সহজেই যার চোখে আলো-আঁধারি খেলা করতো। এখনও করে নিশ্চয়ই। আমার ইচ্ছা করতো, খুব কাছ থেকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকবো। নিঃশ্বাস ফেলা দূরত্ব না হোক, অন্তত ওর মন খারাপের সময় কয়েক সেকেন্ড মাথায় হাত দিতে পারার মত দূরত্ব হলেই চলতো আমার।
(চলবে)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×