somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অরক্ষণীয়া (শেষ পর্ব)

০৩ রা এপ্রিল, ২০১২ রাত ৯:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অরক্ষণীয়া (প্রথম পর্ব)


দরজা খুলতেই অবাক দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে থাকে রায়ান। যেন স্বর্গ থেকে কোন এক অপ্সরী নেমে এসেছে ওর সামনে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতেও ওর কষ্ট হচ্ছে। একদিকে মোহাবিষ্ট চোখ, অন্যদিকে ভীতসন্ত্রস্ত মন ওকে জাপটে ধরে।

“কি ব্যাপার? আজ এতো সেজেছো যে...”
অধরা কিছুই বলে না। মিষ্টি একটা হাসি হেসে রায়ানের হাতের দিকে তাকিয়ে বলে, “তোমার হাতে কি ঐটা?”
“ও...রাতের খাবার।“
“খাবার!”
“হুমম। তোমাকে রাঁধতে নিষেধ করছিলাম না। তাই কিনে আনলাম।”
“ও...আমি ভাবলাম”, মুহুর্তেই মুখের হাসিটা মিলিয়ে যায় অধরার।
“কি ভাবলে?”
“না...ভাবছিলাম বাইরে কোথাও...”
“বাইরে! তোমার মাথা ঠিক আছে তো? ভুলে গেছো সেদিনের কথা? এতোকিছুর পরও কি করে এমন এক্সপেক্ট কর?”

নাহ...অধরা ভোলেনি সেদিনের কথা। কখনো চাইলেও ভুলতে পারবেনা। কিন্তু ও ভেবেছিল রায়ান হয়তো ভুলে গেছে। কিন্তু না, আবারও ভুল প্রমানিত হল অধরার ধারনা।



কিছুদিন পরঃ

ল্যান্ডফোনটা বেজেই চলেছে। আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে দৌড়ে আসে অধরা। ফোনটা রিসিভ করে।

“হ্যালো।“
“আমি, রায়ানের মা।”
“আসসালামু আলাইকুম। ভালো আছেন মা?”
“থাক...আর ন্যাকামি করতে হবেনা। ঐ করে করেই তো আমার ছেলেটার মাথা খেয়েছো। ছেলেটাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে এখন জিজ্ঞেস করছো ভালো আছি কিনা?”
“আমি...”
“তুমি নয়তো কে? ছেলেটার মুখের দিকে তাকানো যায় না। বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে। সমাজে কারো সাথে মিশতে পারেনা। মন খুলে যে কারো সাথে দু-চারটা কথা বলবে সে উপায়ও তুমি রাখোনি।”
“এইসব কথা রায়ান বলছে আপনাকে?”
“তো কি আমি বানিয়ে বানিয়ে বলছি?”

আর কোন কথা সরেনা অধরার মুখ থেকে। নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা ও। তবে কি এই কারনেই রায়ান প্রতিদিন ওর সাথে এমন ব্যবহার করে? হাত থেকে রিসিভারটা পড়ে যায়।




দুপুর থেকে ফোনে ট্রাই করেই যাচ্ছে রায়ান। কিন্তু যতবারই করে ততবারই এংগেজ টোন শোনায়। কার সাথে এতো কথা বলছে অধরা বুঝে পায় না ও। বাসায় গিয়ে যে দেখবে সে অবস্থাও নেই। হাতে এতো এতো কাজ জমে আছে। কোনমতে হাতের কাজটা সেরে বিকেলের দিকে বাড়ির পথে রওনা দেয় ও।

অধরা রায়ানের জীবনে এখন একটা দুঃস্বপ্নের মতো। নিষিদ্ধ নগরীতে একটা রিপোর্ট করতে গিয়েই অধরার সাথে পরিচয় হয় ওর। অধরার মুখে ওর জীবনের দুর্বিষহ গল্প শুনতে শুনতে কেমন একটা টানের সৃষ্টি হয় ওর ভেতরটায়। আর সেই টানটাকেই ভালোবাসা ভেবে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করে বসে ও। রায়ান চেয়েছিল অধরাকে ভালো রাখতে। কিন্তু অধরাকে ভালো রাখতে গিয়ে নিজের স্বস্তিতে বেঁচে থাকাটাই যে দায় হয়ে যাবে সেটা ক্ষণিকের মোহে বুঝতে পারেনি ও। এখন এসব বেশ ভালোই বুঝতে পারে রায়ান। কিন্তু মুক্তির কোন উপায় ওর জানা নেই। তাই অদৃষ্টকেই মেনে নেবে বলে ঠিক করেছে ও। কিন্তু শত চেষ্টা করেও ও তা পারছেনা। প্রতিনিয়ত একটা অজানা আশঙ্কা ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। “ভাইজান, আসছি।“ রিক্সাওয়ালার ডাকে বাস্তবে ফিরে আসে রায়ান। বাসায় পৌঁছে গেছে ও।


৪-৫ বার কলিং বেল বাজানোর পর অধরা এসে দরজা খোলে। ভেতরে ঢুকেই রায়ান কথা শুরু করে, “দুপুর থেকে ফোন করেই যাচ্ছি আর এংগেজ টোন শোনাচ্ছে। কার সাথে এতো কথা শুনি? কি এতো কথা? কি হল এখন কথা বলনা কেন? আমার সাথে কথা বলতে এখন আর ভালো লাগেনা, না?”

সামনে এগুতেই রিসিভারটা পায়ের নিচে পড়ে রায়ানের।

রিসিভারটা তুলে ঠিক জায়গায় রাখে ও। হাজারটা প্রশ্ন এসে ভীড় করে ওর মনে। শুরুটা তাই অধরাই করে।

“তুমি কি আমারে সন্দেহ কর?”
বিস্মিত দৃষ্টি নিয়ে তাকায় রায়ান। “মানে?” এমন একটা প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিল না ও।
“মানেটাই তো জানতে চাইতেছি। সন্দেহই যদি না কর তাইলে এইভাবে ছুইটা আসলা ক্যান? তুমি তো কখনো বিকাল বেলা ঘরে ফিরোনা। তার উপর ফিরে আমাকে জিজ্ঞাস করতেছো আমি কার সাথে এতোক্ষন ফোনে কথা বলি। কার সাথে কথা বলবো আমি? কিসের এত্তো সন্দেহ তোমার মনে!”
“কথা শোন আমার।”
“আমারে নিয়া কোথাও ঘুরতে যাইতে তোমার রুচিতে বাঁধে। ঘর থেকে বাইর হলে চিল্লাচিল্লি কর আমার সাথে। সবসময় একটা ভয় কাজ করে তোমার আমারে নিয়া। ক্যান? তুমি তো সব জাইনাই আমারে বিয়ে করছিলা। না?”
“অধরা, তুমি আমাকে ভুল বুঝছো।“
“নাহ। এতোদিন ভুল বুঝছিলাম। মিলাইতে পারি নাই ক্যান তুমি আমার সাথে এমন কর। এখন পারছি। তোমার মা আমারে সব বলছে। অবশ্য তোমার আর কি দোষ বল? আমাদের সমাজটাই তো এমন। তুমি একা আর কদ্দুর পাল্টাবা। তবুও বলতে পারতা তুমি আমারে...মুক্তি দিয়া দিতাম। আমি তো তোমারে বাইন্ধা রাখি নাই।”
“অধরা তুমি এসব কি বলছো? আর কেনই বা বলছো? আমি সত্যিই তোমাকে......”, কথাটা বলতে গিয়ে থেমে যায় রায়ান যেন ধরা পড়ে গেছে অধরার শীতল নিস্পৃহ চাহুনির কাছে।
“পারলা না তো বলতে। জানতাম পারবানা। তবুও কেন জানি শুনতে খুব ইচ্ছা করতেছিল। কিন্তু তুমি পারো নাই। পারবাও না আর।“
“অধরা!”
“নাহ, স্বর্ণ...স্বর্ণলতা। বাপ-মায়ে অনেক শখ করে এই নাম রাখছিল। কিন্তু তারা জানতো না যে এটাও যে একটা আগাছা। দেখতে সুন্দর বলেই মানুষে বলে পরগাছা। আমার অবস্থাও ঠিক তাই। বিয়ের পর তুমি নাম দিলা অধরা। বলছিলা এর মানে হইলো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে যা...। তাই হয়তো তোমার ভালোবাসা আমারে ঠিক মতো ছুঁইতে পারে নাই। ছোঁয়ার আগেই পালায় গ্যাছে। ভেঙ্গে গ্যাছে তোমার মোহ।“


বলার মতো কোন কথা খুঁজে পায় না রায়ান। ও জানে অধরার একটা অভিযোগও মিথ্যে নয়। তাই প্রতিবাদ করার কোন ভাষা নেই ওর।

অধরা এগিয়ে আসে ধীরে ধীরে রায়ানের কাছে। শক্ত করে রায়ানের হাতদুটো ধরে ও। “আমি সত্যিই জানিনা তুমি আমারে কতো ভালোবাসো। আদৌ বাসো কিনা তাও জানি না। কিন্তু আমি তোমারে অনেক ভালোবাসি। তোমার কষ্ট আমার সহ্য হয় না। আমি চাই না আমার কারনে মানুষের কাছে তুমি অপদস্থ হও। তোমার দিকে কেউ অন্য চোখে তাকাক।“

অধরাকে দুহাতে শক্ত করে ধরে রায়ান বলে ওঠে, “প্লিজ চুপ করো”

“চুপই তো ছিলাম। আবারো চুপ হয়ে যাবো। আর জ্বালাবো না তোমারে। তুমিই তো বলছিলা, যেকোন সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাসটা সবচাইতে বড়। বিশ্বাসটা যখন ফুরায়া যায়, তখন ভালোবাসাও জানলা দিয়া পালায় যায়। আর আমার প্রতি তোমার বিশ্বাসটাও তো অনেক আগেই ফুরায়া গেছে। তার মানে ভালোবাসাটাও......এরপরেও কোন দাবি নিয়া থাকবো আমি, বলতে পারো?”

বোবা দৃষ্টি নিয়ে অধরার মুখের দিকে তাকায় রায়ান। “ভয় নাই। অনেক কিছু দিছো তুমি আমারে। অনেক সম্মান, মর্যাদা। বিনিময়ে আমিও না হয় কিছু দিলাম আজ।“ বিস্ফোরিত দৃষ্টি মেলে চেয়ে থাকে রায়ান অধরার দিকে। “হুমম...আমারে আর খুঁইজোনা। আইজ থেকে তুমি মুক্ত...সম্পূর্ণ মুক্ত। মুক্তি দিলাম তোমাকে।“


***


সেদিন অধরাকে রায়ান ধরে রাখতে পারেনি। হয়তো অতোটা চেষ্টাও করেনি, কিংবা ভেবেছিল অধরা আবার ফিরে আসবে, অথবা খুঁজে পাবে ওকে। কিন্তু পায়নি, হয়তো খোঁজেনি, হয়তো অনেক খুঁজেও পায়নি।

জানি না। শুধু এটুকুই জানি, অধরা হারিয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে চিরদিনের জন্য.....কারন সময়ের স্রোতে ভুলে গেলেও সে যে জানে...যে সে অরক্ষণীয়া....
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১২ রাত ৯:১৬
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×