somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অরক্ষণীয়া (প্রথম পর্ব)

৩১ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের আঁধারটা বড্ড বেশি-ই কালো। আকাশে তারাদের ছিটেফোটাও দেখা যাচ্ছে না। নীল আকাশটাকে কোন দানব যেন তার অশুভ ছায়া দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। তবুও এতোটুকু ভয় হচ্ছে না অধরার। অথচ এই আঁধারটাকেই একটা সময় ও প্রচণ্ড ভয় পেতো। আসন্ন অন্ধকারের ভয়ে দেয়ালের সাথে সিঁটিয়ে থাকতো ও। মনে মনে প্রার্থনা করতো ঝলমলে দিনটা যাতে কখনো আঁধারে ডুবে না যায়। কিন্তু প্রকৃতির অমোঘ সত্য খন্ডাবে এমন সাধ্য কার। অথচ এই আঁধারের মাঝেই যে একটা অদ্ভুত সৌন্দর্য্য আছে তা জানাই ছিল না অধরার। রায়ানই তো ওকে শিখিয়েছে আঁধারের মাঝে সৌন্দর্য্য খুঁজতে।

রায়ান, অধরার স্বামী। প্রায় বছর ঘুরে এলো ওদের বিয়ে হয়েছে। মানুষটাকে যত দেখে ততই অবাক হয় অধরা। ভাবে এতো ভালো কি করে হয় মানুষ? এখনকার পৃথিবীতে এও সম্ভব! হয়তো সম্ভব। তা নাহলে রায়ান কি করে পারলো অসম্ভবকে সম্ভব করতে। সবসময় রায়ানের মুখে একটাই কথা - ভালোবাসা সবই পারে। তাহলে ওর সাথে কেন এমন হলো?

“এখানে কি করছো তুমি?” চমকে উঠে অধরা। রায়ান যে কখন ওর পিছে এসে দাঁড়িয়েছে টেরই পায়নি ও।
“তুমি! তুমি এখনো ঘুমাও নাই?”
“ছাদে কি করছো তুমি?”
“ঘুম আসতেছিল নাতো...তাই...”
“রাত ক’টা বাজে খবর আছে? আড়াইটা। এতোরাতে বাড়ির বউরা একা ছাদে ঘোরাঘুরি করে না। ঘরে এসো।“ বলে হনহন করে নিচে নেমে যায় রায়ান।

মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় অধরা। ঘোর কাটতেই ধীরে ধীরে নেচে নেমে যায় ও।


***

ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় রায়ানের। ফোনটা হাতে নিয়ে বেড-সাইড টেবিলের উপর রাখা ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে ৬.৩০ টা বাজে। মনে মনে গালাগাল দিয়ে ফোনটা রিসিভ করে ও।

“হ্যাঁ আসিফ বলো।“
“রায়ান ভাই, আপনি চলে যাবার পর তো ডেস্কের কাজগুলো সব তৌফিক ভাইই দেখতো। কিন্তু উনি হঠাৎ গেলেন। এখন সব কাজ আমাকেই দেখতে হচ্ছে। কিন্তু কি করবো বুঝতে পারছিনা। যদি একটু হেল্প করতেন...”
“কি লাগবে বলো?”
“তেমন কিছু না। জাস্ট একটা টাস্ক রিভিউ দিলেই চলবে।“
“ওক্কে...আমি অফিসে গিয়ে তোমাকে মেইল করে দেব।“
“থ্যাঙ্কস রায়ান ভাই। রাখি এখন। ডিস্টার্ব করার জন্য স্যরি।“
“না না ইট’স ওকে। বাই।“ বলে ফোনটা রেখে দেয় রায়ান। “শালা, দিলো তো এই সাত-সকালে ঘুমটা মাটি করে”, বিড়বিড় করতে করতে পাশ ফিরে দেখে অধরা নেই। মুহুর্তেই ভ্রুজোড়া কুঞ্চিত হয়ে ওঠে ওর। খাট থেকে নেমে ধীরে ধীরে রুম থেকে বের হয় ও। রান্নাঘরের কাছে যেতেই দেখে জোরেশোরে রুটি বানাচ্ছে অধরা। যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে ও। সামনে এগিয়ে পেছন থেকে অধরার কোমর জড়িয়ে ধরে ও।

“ও...তুমি উঠছো!”
“কি কর এতো সকালে?”
“দেখতেছোনা রুটি বানাই।“
“তাই বলে এতো সকালে!”
অবাক হয়ে ওর দিকে ঘুরে দাঁড়ায় অধরা। “এতো সকালে মানে! কয়টা বাজে জানো? সোয়া আটটা” বলে ডাইনিং এর দেয়াল ঘড়িটা দেখায় অধরা। অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে একবার দেয়াল ঘড়ির দিকে আরেকবার অধরার দিকে তাকায় রায়ান, “কিন্তু বেডরুমের ঘড়িতে...”
“ঐ ঘড়িই তো আমারে ডুবাইলো। নষ্ট হয়ে গ্যাছে।“
“ও।”
“তুমি যাও। হাত-মুখ ধুয়ে নাও। আমি নাস্তা দেই।“


নাস্তা সেরে অফিসের জন্য রেডি হয় রায়ান। ওর যা যা লাগবে সবকিছু হাতের কাছে এগিয়ে দেয় অধরা।

“ভালো করে দরজা আটকাবে। আমি ছাড়া অন্য কেউ আসলে দরজা খুলবে না। মনে থাকবে?”
লক্ষী মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় অধরা। “গুড”, বলে ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে বেরিয়ে যায় রায়ান। রায়ানের কথামতো ঘরের দরজা ভালোভাবে আটকে দিয়ে নিজের রুমে যায় অধরা।



নিচে নেমে কিছুদূর এগোতেই রায়ানের মনে পড়ে মোবাইলটা ঘরে ফেলে এসেছে ও। ঘরের দিকে যেতেই দেখে অধরা নেমে আসছে। ওকে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় রায়ানের
“নিচে নামছো কেন তুমি?”
“তোমার মোবাইলটা ফালায় আসছিলা...তাই...”
“তোমাকে না আমি ঘর বের হতে নিষেধ করছি। তাও বের হইছো!”
“মোবাইল...”, চোখজোড়া ছলছল করে ওঠে অধরার। ওর হাত থেকে মোবাইলটা একরকম কেড়ে নিয়ে রায়ান বলে, “ব্যাস...ঘরে যাও এবার। কি হল যাও।“
“যাই”, বলে ছলছল চোখে মাথা নিচু করে ঘরের দিকে পা বাড়ায় অধরা।



অফিসে আসার পর থেকে কেমন একটা অপরাধবোধে ভুগছে রায়ান। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না। সকালে অধরার সাথে এভাবে কথা না বললেও পারতো। মেয়েটা নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পেয়েছে। খুব অস্থির লাগছে ওর। মোবাইলটা হাতে নিয়ে চেক করে কোন কল এসেছে কিনা। না আসেনি...সকালের ঘটনার পর ওকে ফোন দেওয়া অধরার সাহসে কুলাবে না। তাই নিজেই ফোন করে রায়ান।

ওপাশ থেকে ফোনটা রিসিভ করে অধরা।
“হ্যালো।”
“স্যরি অধরা। আসলে সকালে আমার এমনটা করা উচিত হয়নি। অফিসে আসার পর থেকে খুব খারাপ লাগছে। আমি রিয়েলি স্যরি অধরা।“
“আমি কিছু মনে করি নাই। আমি বুঝতে পারছি, তুমি মনে হয় অফিসের কোন কাজ নিয়া টেনশনে ছিলা। তুমি চিন্তা করনা আমি ঠিক আছি।“
“থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। আর শুনো আজকে রাতের রান্না করা দরকার নেই।“
“ঠিক আছে।“ বলে ফোন রেখে দেয় অধরা।


***


খুব সুন্দর করে আজ সেজেছে অধরা। রায়ান আজ ওকে নিয়ে বাইরে খেতে যাবে ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে ওর। বিয়ের পর এটা ওর দ্বিতীয়বারের মতো রায়ানের সাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া। প্রথম যেদিন ওরা ঘুরতে বেড়িয়েছিল বিশ্রী রকমের একটা ঘটনা ঘটেছিল সেদিন। এরপর থেকে রায়ান আর কখনো ওকে নিয়ে বেরোয়নি।
সারাটাদিন এই চারদেয়ালের আবরনে বন্দী থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে অধরা। কিন্তু কখনো মুখ ফুটে কিচ্ছু বলেনি রায়ানকে। রায়ান যখন যেভাবে চেয়েছে নিজেকে সেভাবেই বুঝিয়েছে ও। আজ ওর কথা ভেবে, শুধুমাত্র ওর কথা ভেবে রায়ান ওকে বাইরে নিয়ে যাবে, অনেকদিন পর প্রানভরে ও নিঃশ্বাস নিতে পারবে একথা ভাবতেই চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে অধরার। টিপটা কপালে পড়তেই কলিং বেলটা বেজে উঠে।

“আসছি“ বলে অধরা ছুটে যায় দরজা খুলতে।

অরক্ষণীয়া (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১২ রাত ৯:১৮
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×