সুপ্রভাত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী!
আজ সকালে উঠে আপনাদের কথা প্রথম পড়লাম পত্রিকার পাতায়। জানলাম, আপনারা রূপগঞ্জের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।খুবই ভাল কাজ করেছেন। দেশ রক্ষার কাজ খুবই সোয়াবের কাজ।
জানি, দেশরক্ষা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার জন্যে আপনাদের কত দরদ আছে।দরদী মন না থাকলে দেশসেবা করা যায় না। তবে, আমার অবুঝ মনে একটা প্রশ্ন জেগেছিল: আপনারা সেনাবাহিনী মামলা করতে পারেন সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে, কিন্তু আমরা পারিনা কেন আপনাদের বিরুদ্ধে?
আমার মনোবেদনার কথাও বলি। সবচেয়ে বড় কষ্ট লাগে যখন আপনারা মিথ্যার বেসাতি করেন।পাহাড়ে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি যেখানে আপনাদের বিরুদ্ধে অঙ্গুলি নির্দেশ করা হয়নি। প্রত্যেকটি ঘটনায় আপনারা বরাবরই নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে এসেছেন এবং ভবিষ্যতেও করে যাবেন।আপনাদের দুষ্কর্মের কথা যখন পাহাড়ী জনগণ তুলে ধরে তখন উল্টো পাহাড়ীদের বিরুদ্ধে দোষ চাপান। আপনারা বলেন, সুশৃংখল সেনাবাহিনীর “ভাবমূর্তি” ক্ষুন্ন করার জন্যে এসব অভিযোগ আনা হয়।কিন্তু এযাবত কোন সরকারই এসব অভিযোগ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করেনি এবং প্রমাণ করতে পারেনি পাহাড়ীদের অভিযোগ মিথ্যা। সরকার ও আপনারা “স্পর্শকাতরতা”, “দেশের ভাবমূর্তি”, “নিরাপত্তা” ইত্যাদির আবরণে গণহত্যা, নির্যাতন ও মানবতাবিরোধী কার্যক্রমকে সমর্থন করে আসছেন। ফলে আপনাদের মধ্যে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি; আপনাদের মধ্যে উগ্রতার সংস্কৃতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করছে।অন্তত পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় একথা নির্জলা সত্য।আপনাদের কৃতকর্মের জন্যে কোন জবাবদিহিতা করতে হয় না। তাই আপনারা অপকর্ম করতে খুব উৎসাহ বোধ করেন।আপনাদের মধ্যে বড় ধরনের অহমিকা কাজ করছে। অহংবোধে অন্ধ সেনাবাহিনী আপনারা গণমানুষের বাহিনী হতে পারেননি। যার প্রমাণ সমতলেও মাঝে মাঝে দেখা যায়। আজকের রূপগঞ্জের ঘটনাটিও আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর চরিত্র কী।
আপনাদের সত্য বলার অভ্যাসটা আজ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিফলিত হয়েছে। রূপগঞ্জের ঘটনার পরদিনই একজন লোক নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে আপনারা আইএসপিআরের মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন:
“সেনাসদস্যদের কাছ থেকে তাদের অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে দুর্ঘটনাবশত কয়েকটি গুলি বেরিয়ে যায়। এতে একজন বেসামরিক লোক আহত হন”।
কিন্তু আজকের বিভিন্ন দৈনিকে বলা হয়, আপনারা মামলায় উল্লেখ করেছেন:
“…আত্মরক্ষা ও সরকারি সম্পদ রক্ষার জন্য সেনাসদস্যরা ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেন। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিরা তাতেও নিবৃত্ত না হওয়ায় সেনাসদস্যরা আবারও ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেন।এ সময় ক্যাম্পের মধ্যে আহতাবস্থায় একজন বেসামরিক ব্যক্তিকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়”।
এখন আপনাদের কোন বক্তব্যটা সত্য বলে ধরে নেবো? দু’টো বক্তব্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে।প্রথম বক্তব্যে “দুর্ঘটনাবশত” কথাটি বলেছেন। এ কথার মাধ্যমে আপনারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন নিজেদের পবিত্রকর্ম জায়েজ করতে। যদি “দুর্ঘটনাবশত” না হয়ে আপনাদের ক্ষোভবশত: গুলি বের হয়ে যেতো, তাহলে রূপগঞ্জবাসীর পরিণতি কী হতো? ভেবেই মনটা শিউরে উঠছে।
অন্যদিকে আপনারা আগের বক্তব্য থেকে সরে এসে এখন বলছেন “আত্মরক্ষা ও সরকারি সম্পদ” রক্ষার জন্যে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করতে হয়।“দুর্ঘটনা” আর “আত্মরক্ষা ও সরকারি সম্পদ” এক কথা নয়। জানিনা, আপনারা কোন রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করতে গিয়েছিলেন রূপগঞ্জে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বইয়ে পড়েছিলাম, রাষ্ট্রের অন্যতম উপাদান হলো “জনগণ”। আপনারা সেই “জনগণ”কে রক্ষা না করে “রাষ্ট্রীয় সম্পদ” রক্ষার জন্যে জনগণের উপর ফাঁকা গুলি ছোঁড়েন। ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে যদি লোক মারা যায়, তাহলে টার্গেট করে গুলি ছুঁড়লে রূপগঞ্জবাসীর পরিণতি কী হতো? আল্লাহ যা করেন, মঙ্গলের জন্যে করেন।
ক্যাম্প স্থাপন নিয়েও আপনারা এখন সত্য-মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগে বলেছিলেন, “অস্থায়ী ক্যাম্প” স্থাপন করে প্রকল্পের কাজ তদারকি করা হচ্ছিল। এখন সেই “অস্থায়ী ক্যাম্প” পরিণত হয়ে গেলো “অস্থায়ী প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে”।“অস্থায়ী ক্যাম্প” ও “অস্থায়ী প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে”-র মধ্যে তফাত কী? মনে হয়, আছে!আছে! অনেক তফাত আছে। আপনারা এখন সেটা বুঝে গেছেন।
মনে হচ্ছে, রূপগঞ্জের ঘটনায় আপনারা লাউ-কদু’র মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেননি। তাই জনগণের সামনে আপনাআপনি নিজেদের “সত্য” কথা প্রকাশ করে ফেলেছেন। আপনারা কী আর মিথ্যা বলতে পারেন! সত্য সব সময়ই সত্য হয়।
আপনাদের সত্য ভাষণ পড়ে আজ দিনটা শুরু করলাম।আপনাদের সত্যভাষণ শুনে রূপগঞ্জবাসীরাও দিনটি শুভসূচনা শুরু করুক সেই কামনা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৪:০৪