somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংবিধান সংশোধন বিল পাসঃ বাঙালদের শঠামি ও আদিবাসীদের করণীয়

০২ রা জুলাই, ২০১১ রাত ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী বিল ২০১১ পাস হয়ে গেলো। সংবিধান সংশোধন বিষয়কটি প্রথমে ৫১টি সংশোধনী প্রস্তাব করে। পরে আরো চারটি সংশোধনী যোগ করা হয়। অর্থাৎ বর্তমান সংবিধানে মোট ৫৫টি সংশোধনী আনা হয় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙাল এমপি’র উল্লাস ধ্বনিতে সেসব সংশোধনী পাস হয়ে যায়।

পঞ্চদশ সংশোধনী বিল ২০১১ বিল পাস হয়ে যাওয়ার পরপরই গতকাল ৩০ জুন আমার প্রতিক্রিয়া লিখতে বসেছিলাম। লিখতে বসে বিদ্যূতও আমার সাথে বিতলামি শুরু করে দিলো। আসে আর যায়। ফলে গতকাল আর লেখা হয়নি। তাই আজকে আজকে আবার লিখতে বসলাম। কিন্ত সমস্যা দেখা দিলো কী লিখবো? কেননা, গতকাল লেখার যে আবেগ ছিলো, আজকে একদিন পরে লিখতে বসে সে আবেগ কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। ফলে আজকে কম্পউটারে আঙুল যেন আর চলতে চাচ্ছিলো না। যেই কী বোর্ডে আঙুল চাপি, তখন মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে কী লিখবো?পঞ্চদশ সংশোধনী বিল ২০১১-এ তো অনেক সংশোধনী আছে। সেসব সম্পর্কে কি বলবো! তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমার এই এলোমেলো লেখার অবতারণা।

আদিবাসী হিসেবে সংবিধানে আমাদেরকে কী দেওয়া হলো? আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন বাঙাল নেতা্রা আমাদের প্রতি কী ন্যায় বিচার করলেন? সংবিধান দেশের পরিচালনার পবিত্র দলিল হিসেবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিকের আশা-আকাংখা ধারন করার কথা, সব নাগরিকের সমান অধিকার, মর্যাদা, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার কথা এবং সব নাগরিকের সমানভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার কথা – এসব আকাংখা কী আমাদের সংবিধান ধারন করতে পেরেছে? আদিবাসী হিসেবে আমাদের চোখে এ সংবিধান একটি এলোমেলো দলিল এবং আদিবাসীদের আকাংখা ধারন করতে পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা, এই সংবিধান প্রণয়ন ও সংশোধনকালে আদিবাসীদের অংশগ্রহণ ছিলো না। কাজেই রাষ্ট্র পরিচালনার দলিল হিসেবে এই সংবিধানকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই।

আওয়ামীলীগ সরকার সংবিধান সংশোন নিয়ে অনেক কথাই বলেছে, অনেক যুক্তি দাঁড় করাতে চেষ্টা করেছে। যেমন, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়া, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সুদৃঢ় করা, ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ’৭২-এর সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রীয় মূলনীতিঃ জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হলেও তা করা হয়েছে খন্ডিতভাবে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিকের জন্যে এ সংবিধান নয়, এ সংবিধান বাঙালদের জন্যে ও মুসলমানদের জন্যে।কাজেই এ সংবিধান সার্বজনীন নয় – একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

উগ্রবাঙালী জাতীয়তাবাদের পুনরুত্থান
সংবিধানের নাগরিকত্ব অনুচ্ছেছদ ৬-এর (২) সংশোধন করে বাংলাদেশী নাগরিকত্বের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে,
বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশি বলিয়া পরিচিত হইবেন।

এই অনুচ্ছেদ সংযোজনের মাধ্যমে বাঙালরা আমাদেরকে আবার বাঙালিতে রূপান্তরিত করলো। নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশী হলেও জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব তো আর রইলো না। অর্থাৎ একক সত্ত্বাবিশিষ্ট বাঙালের জাত ছাড়া বাংলাদেশে আর অন্যকোন জাতির অস্তিত্ব রইলো না। বাংলাদেশ একটি একক জাতবিশিষ্ট রাষ্ট্রে পরিণত হলো। অথচ গত ২১ ফেব্রুয়ারীর বইমেলা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গর্ব করে বলেছিলেন, “বাঙালি জাতীয়তাবাদের মধ্যে কোন সংকীর্ণতার স্থান নেই”।কিন্ত সংবিধানে এই অনুচ্ছেদ সংযোজন করে তিনি বা আওয়ামীলীগ কী পরিচয় দিলেন? কোথায় অবশিষ্ট রইলো বহু ভাষা ও বহু সংস্কৃতির চেতনা?

আমাদের সবার জানা, স্বাধীনতার পর যখন ’৭২-এ দেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হচ্ছিল, তখন বাঙাল নেতারা জাতি, জাতীয়তা ও নাগরিকত্ব ধারনাকে এক করে গুলিয়ে ফেলেছিলেন। সেদিনও তারা বাঙালী জাতীয়তাবাদের খোলসে সব জাতিকে ঢুকাতে চেয়েছিলেন।সেই সময়ে উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ করেছিলেন তখনকার একমাত্র আদিবাসী প্রতিনিধি তথা গ্রামবাংলার গরীব দুঃখী মানুষের একমাত্র কন্ঠস্বর এম এন লারমা।তিনি চেয়েছিলেন সত্যিকার অর্থে বহুজাতি, বহুভাষী ও বহু সংস্কৃতির একটি আধুনিক রাষ্ট্র, আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। কিন্তু সেই সময় তার কথা শোনা হয়নি। তাই তিনি সংকীর্ণ বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছিলেন। সর্বশেষ গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনের পথ রুদ্ধ হয়ে গেলে তিনি সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করেছিলেন।যার খেসারত বাংলাদেশকে দীর্ঘ দুই তিন যুগেরও অধিক সময় ধরে দিতে হয়েছিলো।জেএসএস-এর সাথে চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ সরকার সেই ঐতিহাসিক ভুলের মাসুল শোধরানোর জন্যে চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু নতুন করে আবারো বাঙালি জাতীয়তাবাদের পুনরুত্থান ঘটিয়ে আওয়ামীলীগ আবারও সেই ঐতিহাসিক ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটালো।

ধর্মনিরপেক্ষতা আর আওয়ামীলীগের ভন্ডামি
আওয়ামীলীগ ধর্ম ব্যবসায়ী জামাতীদের চেয়েও ভন্ড এবং পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখে সেই ভন্ডামির চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে।শুরুতে বিসমিল্লাহ রেখে কীভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা হয়? রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে আওয়ামীলীগের চরম ভন্ডামি দেখার মত,

প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সম-অধিকার নিশ্চিত করিবেন।

জানি, এদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলাম অনুসরণ করে।কিন্ত আমাদের বক্তব্য হলো, ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। কোন নির্দিষ্ট ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করে অন্য ধর্ম অনুসারীদের প্রতি বৈষম্য করা হয়।একদিকে ইসলামকে বলা হলো প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম, অন্যদিকে বলা হলো হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সম-অধিকার নিশ্চিত করবে। এটা স্ববিরোধী বক্তব্য নয় কি? একটা ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করে অন্যান্য ধর্মগুলো কীভাবে সমমর্যাদা ও সম-অধিকার ভোগ করবে এটা বোধগম্য নয়। রাষ্ট্র তো ইসলামকে আসনটা বরাদ্দ দিয়ে ফেলেছে, অন্য ধর্মগুলো কীভাবে সে আসনে বসতে পারবে? সমমর্যাদা ও সম-অধিকার থাকলে কেন অন্যান্য ধর্মাবলম্বী যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের পুলিশের প্রহরায় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করতে হয় ?

কোথায় সমান অধিকার? সমান মর্যাদা?


পার্বত্য চট্টগ্রামে কেন বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা হয়? বৌদ্ধমন্দির আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়?যারা মন্দির পুড়িয়ে দিয়েছিলো, লুন্ঠন করেছিলো, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা হরণ করেছিলো, তাদের ব্যাপারে রাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নিয়েছিলো?রাষ্ট্রি একটি নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট বলে পার্বত্য চট্টগ্রামে উগ্র বাঙাল ও উগ্র ইসলামন্থীরা অন্যধর্মের উপর আঘাত করার সাহস পায়, অবাধে জুম্ম জনগণের উপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানোর লাইসেন্স পায়।তাই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, পক্ষপাতদুষ্ট রাষ্ট্র কী আমরা চাই?

তুমি হলে বাঙালি, আমারে করলে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতি সত্তা, নৃ গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়!

এবারের সংবিধান সংশোধনীতে আরো একটি নতুন চমক হলো, যারা আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির জন্যে রাষ্ট্রের কাছে দাবী জানাচ্ছি, তাদেরকে বাঙালের আওয়ামী সরকার “উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতি সত্তা, নৃ গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়” হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছে। আওয়ামী বাঙালদের শঠতার আর কোথায় অবশিষ্ট রইলো? কোথায় আমরা সমান অধিকার পেলাম?কোথায় সম-মর্যাদা রইলো আমার? একটি অনুচ্ছেদের মাধ্যমে একদিকে সবাইকে বাঙালি বানালেন, অন্যদিকে আবার আমাদেরকে (আদিবাসীদেরকে) “উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতি সত্তা, নৃ গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়” বানালেন? বাংলায় বলে, কানাছেলের নাম পদ্মলোচন। হে বাঙালের আওয়ামীলীগ, আমাদেরকে কানা বানিয়ে পদ্মলোচন নাম দিলেন। এতে করে কী আমরা আপনাদের মত করে সমান মর্যাদা ও সমান অধিকার ভোগ করতে পারবো?

সংবিধান সংশোধন করে পদ্মলোচনের জন্যে কী দিলেন? ২৩ অনুচ্ছেদে ২৩ (ক) সংযোজন করে পদ্মলোচনদের মনে সান্তনা দেওয়ার জন্যে একটা বাক্য ঢুকিয়ে দিলেন,

"রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতি সত্তা, নৃ গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন”।

এই বাক্যটা দিয়ে বড় ‘বাঙোদি’ (বাঙালিনী) হাসিনা খুব খুশী হয়ে সংসদে বললেন, “আমরা ক্ষুদ্র জাতিসত্তাদের অনুভূতিতে আঘাত দিতে চাইনি”।বড় বাঙোদি হাসিনা বলতে চেয়েছিলেন, ‘ক্ষুদ্র’দেরও সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সবার অধিকার নিশ্চিত করা হয়ে গেছে। বড় বাঙোদি হাসিনা আমাদের সাথে বড়ই পরিহাস করলেন।

কিন্তু বাঙোদি হাসিনা “উপজাতি/ক্ষুদ্রজাতিসত্তাদের” এমন একটা অনুচ্ছেদে (২৩ অনুচ্ছেদ) ঢুকিয়ে দিলেন সেটাও বড়ই গোঁজামিল অনুচ্ছেদ। এই ২৩ অনুচ্ছেদ কেবল বাঙালদের জন্যে বরাদ্দ। সেখানে শিরোনাম দেওয়া আছে, “জাতীয় সংস্কৃতি”। কোন জাতির সংস্কৃতি? কিন্তু সংবিধান তো কেবল বাঙাল জাতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কাজেই, [বাঙাল] “জাতীয় সংস্কৃতি”র সাথে একটু কায়দা করে যে বাক্যটা ঢুকিয়ে দিলেন তার মূল্য আর কতটুকু রইলো? [বাঙালদের] “জাতীয় সংস্কৃতি”র আগ্রাসনে “উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতি সত্তা, নৃ গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য” সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা কী সম্ভব হবে তো? বাঙোদি হাসিনা বিবি, বড় ভয় হয়, পরে যখন “উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতি সত্তা, নৃ গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের” লোকরা সংবিধানের এই ২৩ (ক) অনুচ্ছেদ বলে নিজেদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্যে দাবী জানাবে তখন কী বাঙালরা “জাতীয় সংস্কৃতির” দোহাই দিয়ে “ক্ষুদ্রদের” কন্ঠরোধ করবে না তো? বাঙালদের শঠামি দেখে আমার বিশ্বাস হতে চায় না।

একক সত্তাবিশিষ্ট বাঙাল জাতঃ অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রগঠনে মূল অন্তরায়

সংবিধান সংশোধন নিয়ে নতুন করে বেশি কিছু বলার নেই। বাঙালদের রাষ্ট্রগঠনের যে মূল দর্শন সেটার মূল ভিত্তি হলো একক সত্তাবিশিষ্ট বাঙাল জাতি রাষ্ট্র। স্বাধীনতার পর ’৭২-এ যে সংবিধান বানানো হয়েছিলো্ সেখানেও মূল চেতনা ছিলো বাংলাদেশকে বাঙাল জাতি রাষ্ট্র বানানো। সে কারণে বাঙাল ভিন্ন অন্য কোন জাতিসত্তার নাম তাদের মনে পড়েনি। এবার যখন সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো তখন অনেকে মনে করেছিলেন, অন্তত পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘ সশস্ত্র সংগ্রাম থেকে বাঙাল নেতারা শিক্ষা নেবেন এবং জুম্মজনগণসহ সারা বাংলাদেশের আদিবাসী জনগণকে বিলম্বিত রাষ্ট্রগঠন প্রক্রিয়ায় তাদেরকে সম্পৃক্ত করবেন। কিন্তু না, সেই আশায় একেবারে গুড়ে বালি।বাঙালরা আদিবাসীদের সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করেননি। বাঙাল নেতারা অতীত থেকে শিক্ষা নেননি। তাই তো সংবিধানে বাঙালী জাতীয়তাবাদ পুনরুজ্জীবিত করে গ্রহণ করা হয়েছে,

"ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি”।

দেখুন, সংবিধানে কেবল ভাষাগত ও সংস্কৃতিগতভাবে একক সত্তাবিশিষ্ট বাঙাল জাতির কথা বলা হয়েছে, অন্য জাতির ভাষা ও সংস্কৃতির কথা এখানে নেই। এখানে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর লোকজন মুক্তিযুদ্ধে যে অবদান রেখেছিলেন সেই অবদানের কোন স্বীকৃতিও নেই।কাজেই বাঙালরা যখন রাষ্ট্রপরিচালনার জন্যে সংবিধান রচনা করেন, এবং কোন আইন বা নীতি তৈরী করেন, তখন তারা বেমালুম আদিবাসীদের কথা ভুলে যান।কারণ তারা একক সত্তাবিশিষ্ট বাঙাল। বাঙালদের এ একক সত্তা ও বিস্মৃতিপ্রবণতাই অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র বা রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথে বড় অন্তরায়।এই বাধা ভবিষ্যতেও সহজে দূর হবে তেমনটা বিশ্বাস করা কঠিন।

এখানে আরো একটি কথা না বললে নয়, একক সত্তাবিশিষ্ট বাঙালরা প্রায়ই আদিবাসীদের দোষারোপ করে থাকেন – আমরা নাকি মূল স্রোতধারায় মিশতে চায় না। বিচ্ছিন্ন হতে চায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কে ‘মূলস্রোতধারায়’ মিশতে চায় না? আদিবাসীরা মূলস্রোতধারায় মানে বাঙালদের সাথে সম মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্যে ’৭২ সালে যেমন স্থান চেয়েছিলো, তেমনি ২০১১-তে এসেও স্থান চেয়েছিলো। কিন্তু বাঙালরা স্থান দেয়নি।এখন যদি আদিবাসীরা একক সত্তাবিশিষ্ট বাঙাল জাতিকে মানতে না চায়, নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে একক সত্তাবিশিষ্ট বাঙাল জাত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায় তাহলে কী বাঙালরা আদিবাসীদের উপর দোষ চাপাবেন? বাঙাল নেতারা যদি সত্যি সত্যি বাংলাদেশকে একটি বহু সংস্কৃতি, বহুভাষী ও বহু মত ও ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান তাহলে তাদেরকে একক সত্তাবিশিষ্ট বাঙাল জাতের ধারনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।



সাংবিধানিক স্বীকৃতির প্রশ্নে আদিবাসী রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা কী ছিলো?

আদিবাসী বন্ধু-বান্ধবীরা, কেবল বাঙালদের দোষ দিলে হবে না। নিজেদেরও আত্মসমালোচনা দরকার। আমার কথায় অনেকে হয়ত বেজার হবেন আবার অনেকে হয়ত খুশী হবেন। বিশেষ করে যারা জেএসএস আর ইউপিডিএফ করেন তাদের বেজার হওয়ার সম্ভাবনাটা বেশি।

সাধারণ মানুষের আশা ছিলো, রাজনৈতিক দল হিসেবে জেএসএস–ইউপিডিএফ সাংবিধানিক স্বীকৃতির ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া যখন শুরু হয় তখন থেকেই তাদের তরফ থেকে কোন কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি।দু’দলই মিটিং, মিছিল করেছিলো, সংবিধান সংশোধন কমিটির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলো।ব্যাস! এটুকুর মধ্যে তাদের দায়িত্ব সারা।যখন সংবিধান সংশোধনী পাস হয়ে গেলো দু’দলই প্রত্যাখান করে বিবৃতি দিলো। ইউপিডিএফ লাল পতাকার মিছিল করলো। আর জেএসএসও সংবাদ সম্মেলন করলো, আর ‍বিবৃতি দিলো।এক সময় দু’দলই হয়ত ভুলে যাবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবী।

কিন্তু দু’দলই আসল কাজ করেনি। জুম্মজনগণ চেয়েছিলো পাহাড়ের দু’দল অন্তত সাংবিধানিক স্বীকৃতির প্রশ্নে একবাক্যে কথা বলবে।কিন্তু তা হয়নি। ইউপিডিএফ চেয়েছিলো সংখ্যালঘু জাতি হিসেবে পরিচিত হতে, আর জেএসএস চেয়েছিলো আদিবাসী হিসেবে। কে সঠিক ছিলো কে বেঠিক ছিলো সেটা বিষয় নয়, আমার মত সাধারণ মানুষদের চাওয়া ছিলো জেএসএস–ইউপিডিএফ জোরালোভাবে একবাক্যে কথা বলবে।জনগণের সে চাওয়া দু’দলই পূরণ করতে পারেনি। একদল চাইলো ‘সংখ্যালঘু জাতি’ আর অন্যদল চাইলো ‘আদিবাসী’ হিসেবে পরিচিত হতে। শেষে সরকার বানালো বাঙালি। বাঙালির সাথে আরো বানালো ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতি সত্তা, নৃ গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়’।এখন দু’দলেরই নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত, চাইলাম কী আর পাইলাম কী? করলাম কী আর পাইলাম কী? তাদের মনে রাখা উচিত, কেবল রাজপথে মিটিং, মিছিল করলে, ঝাঁঝালো স্লোগান দিলেই রাজনীতি হয় না। বুদ্ধি-প্রজ্ঞা দিয়ে আন্দোলনকে চালিত করতে হবে। রাজপথে মিটিং মিছিলে ঘেউ ঘেউ করার চেয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সাথে লবি-অ্যাডকোসি করলে ফল পাওয়া যেতো। লবিষ্ট নিয়োগ করা যেতো। কিন্তু সেসবের কোন কাজ হয়নি।পাহাড়ের রাজনীতিবিদরা এসব কিছুই করতে পারেনি। জেএসএস-ইউপিডিএফ কেবল খুঁজে পায় ছোটোখাটো দলের নেতাদের যেমন পংকজ ভট্টাচার্য, রনো, মেনন, ইনু, মেসবাহ কামাল আর বদরউদ্দীন উমরদের মত লোকদের।এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু মেনন ও ইনু ছাড়া ওরা তো কেউ ক্ষমতার কেন্দ্রের মধ্যে নেই।সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এককথায়, জেএসএস-ইউপিডিএফ বাংলাদেশের ক্ষমতার রাজনীতিতে বন্ধুহীন। একদিকে বন্ধুহীন, অন্যদিকে তারা চরমভাবে যোগ্যতাহীন এবং কেবল ঘেউ ঘেউ করে সাধারণ মানুষকে তটস্ত করতে জানেন, দোষারোপ করার সংস্কৃতি চর্চা করতে জানেন।কীভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে হবে, কীভাবে লবি-অ্যাডভোকেসি করতে হয় বা বিভিন্ন স্তরে ডিপ্লোম্যাসি চালাতে হয় এ ব্যাপারে তাদের কোন যোগ্যতাই নেই।এই যোগ্যতাহীন নেতাদের দিয়ে কীভাবে আমরা সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবী অর্জন করতে পারি?

অন্যদিকে, যতটুকু জানি, চাকমার রাজা দেবাশীষ রায়ের উদ্যোগে কিছু লবি-অ্যাডভোকেসির উদ্যোগ ছিলো।তিনি আদিবাসী এমপিদের সাথে সংযোগ রক্ষা করে সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে আদিবাসীদের পক্ষে প্রস্তাবনা তৈরী করেছিলেন (অবশ্য সেখানে দু’একজন জেএসএস নেতাও ছিলেন বলে জানা গেছে) সংসদীয় আদিবাসী ককাসের সাথে মতবিনিময় করেছিলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন লেখনির মাধ্যমে তিনি আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির সপক্ষে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। জানা গেছে, সর্বশেষ পর্যায়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেও আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির ব্যাপারে বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন। সংবিধান সংশোধনী বিল সংসদে উঠার আগে আইনমন্ত্রীর সাথেও সাক্ষাৎ করে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু একা রাজার পক্ষে কতগুলো কাজ করা সম্ভব?

রাজার পাশাপাশি নাগরিক উদ্যোগও ছিলো। নাগরিক কমিটি গঠন করে ঐ কমিটি বিভিন্ন সভাসেমিনার করে চুক্তিবাস্তবায়নসহ সাংবিধানিক স্বীকৃতির ব্যাপারে দাবী তুলেছিলো। কিন্তু দুঃখের বিষয়, রাজাসহ ঐ নাগরিক উদ্যোগগুলোকে একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার জন্যে জেএসএস কিংবা ইউপিডিএফ কোন কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। বরং দু’দলই নাগরিক উদ্যোগকে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছিলো অথবা নাগরিক উদ্যোগগুলোকে নিজেদের মধ্যে অঙ্গীভূত করে নেওয়ার পাঁয়তারা করেছিলো। দু’দলই প্রমাণ করতে চেয়েছিলো জুম্মজনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা তথা সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্যে তারা কতই না নিবেদিতপ্রাণ!

আদিবাসী নেতাদের এই অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে সরকারও পাত্তা দেয়নি। সরকারের পাত্তা না দেওয়ার আরো একটি উদাহরণ হলো, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কিংবা জেলা পরিষদসমূহের সাথে সাংবিধানিক স্বীকৃতির ব্যাপারে কোন আলোচনা করেনি। অন্যদের কথা না হয় বাদ দিলাম, সাংবিধানিক স্বীকৃতির সরকার অন্তত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্ত লারমার মতামত নিতে পারতেন কিংবা পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদও সরকারকে পরামর্শ দিতে পারতেন।কিন্তু সেরকম কোন ঘটনা ঘটেছিলো বলে জানা নেই।

তাই আদিবাসী নেতাদের চরম অনৈক্যে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে সরকার কতটুকু পাত্তা দেবে সেটা আমাদের নেতাদেরই ভেবে দেখতে হবে।

বাঙালরা আদিবাসীদের মানেন নাঃ এ প্রেক্ষিতে আদিবাসীদের করণীয় কী?
আদিবাসী ভাইবোনেরা, বেশি কথা বলার আর দরকার নেই। বাঙালরা তো স্পষ্ট করে সংবিধানে লিখে ফেলেছে তারা একক সত্তাবিশিষ্ট বাঙাল জাতি। একক সত্তাবিশিষ্ট বাঙালদের ঘরে বাঙাল বাদে অন্যদের জায়গা নেই।তবুও তারা আমরা না চাইলেও আমাদেরকে ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতি সত্তা, নৃ গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়’ হিসেবে নাম দিয়েছে।ওরা আমাকে ‘উপজাতি’ বলুক কিংবা ‘ক্ষুদ্র জাতি সত্তা’ বলুক, বা ‘নৃ গোষ্ঠী’ বলুক এতে আমার কিছু এসে যায় না। বাঙালরা যে নামে ডাকুক না কেন, আমাদের আদিবাসী পরিচিতি আমাদের মন থেকে মুছে যাবে না। কাজেই বাঙালদের দেওয়া নাম নিয়ে আমাদের হতাশ হতে নেই।আমরা আমাদের পরিচিতি আমাদের লেখনিতে এবং আমাদের শয়নে স্বপনে বারবার উচ্চারণ করে যাবো – আমরা আদিবাসী।

সেই সাথে আমাদের করণীয়ও ঠিক করতে হবে। বাঙালরা আমাদেরকে সাংবিধানিকভাবে অধিকার না দিলে কী আমরা চুপ করে বসে থাকবো? আমাদের কী করণীয় নেই?

এ প্রসঙ্গে আমাদের মাননীয় চাকমা রাজার কথা স্মরণ করতে হয়। এবারের জাতিসংঘে আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামে যখন বাংলাদেশ প্রতিনিধি “বাংলাদেশে আদিবাসী নেই, যারা আছে তারা সংখ্যালঘু উপজাতি” বলে সবক দিচ্ছিলেন, তখন তার প্রত্যুত্তরে চাকমা রাজা একটা কথা বলেছিলেন, সরকার উপজাতি বলুক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলুক বা যে নামেই ডাকুক তাতে কোন অসুবিধা নেই। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে এসব প্রত্যয় আদিবাসীদেরকে বুঝানো হয়ে থাকে। কাজেই বাংলাদেশ সরকার ‘উপজাতি’ কিংবা ‘ক্ষুদ্র জাতি সত্তা’ বা ‘নৃ গোষ্ঠী’ যে নামেই অভিহিত করুক, বাংলাদেশের আদিবাসীদের অধিকার দমিয়ে রাখতে পারবে না।

ঠিক রাজাবাবুর সাথে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, বাংলাদেশ সরকার যে নামেই আমাদের ডাকুক এতে হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। হাত গুটিয়ে বসে থাকারও কোন কারণ নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে আমরা আদিবাসী জাতি বা Indigenous Peoples. আদিবাসী জাতি হিসেবে আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আছে। আর আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার তো মানবাধিকার। এই অধিকার কোন রাষ্ট্রের বা কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দয়ামায়ার উপর নির্ভর করে না।এ অধিকার হতে কেউ আমাদের বঞ্চিত করতে পারবে না। বাঙালরাও পারবেনা, বাঙালদের সংবিধানও আমাদের বঞ্চিত করতে পারবে না। আমাদের অধিকার আমাদেরই আছে। তবে আমাদের আদিবাসী জাতিসমূহকে ঠিক করতে হবে কীভাবে আমরা এ অধিকার প্রয়োগ করবো – বাঙাল রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে নাকি বাঙাল রাষ্ট্রের সীমানার বাইরে?

আদিবাসী ভাইবোনেরা, পরস্পরকে দোষারোপ বাদ দিন। দালাল ফালাল ইত্যাদি বিভেদমূলক শব্দ বাদ দিন। দালাল ফালালদের উপর আমাদের ভাগ্য ছেড়ে দেবো কেন? দালাল ফালালরা যদি এতই শক্তিশালী হয়ে থাকে তাহলে কেন আমাদের জুম্মনেতারা (জেএসএস-ইউপিডিএফ) রাজনীতি করছেন জনগণের অধিকারের নামে? জুম্মনেতাদের দোষারোপের সংস্কৃতি চর্চা হতে বিরত থাকতে হবে। বিভেদমূলক কাজ ও হিংসা হানাহানি হতে বিরত থাকতে হবে। সৃজনশীল মন নিয়ে চিন্তা করুন কী করা যায়। চিন্তা করুন যাদেরকে দালাল বলা হচ্ছে তাদেরকে কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়। চিন্তা করুন – একতাই শক্তি, জ্ঞানই শক্তি।আমরা যদি এক হই, দালাল ফালাল টিকতে পারবে না। কেবল আজকের জন্যে চিন্তা করবেন না। এই শতাব্দির জন্যে চিন্তা করতে হবে। আমরা যদি বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হই, এই শতাব্দি হবে আমাদের জন্যে, আদিবাসীদের জন্যে।

আসুন আমরা এমন এক স্বপ্ন দেখি, এই শতাব্দীতে আমাদের আর বাঙালের সংবিধান লাগবে না। আমরা আদিবাসী জাতিরাই আমাদের সংবিধান আমরাই রচনা করে ফেলেছি। আসুন, আমরা এমন এক সমাজ স্বপ্ন রচনা করি, যেখানে বাঙাল নেতারা নয়, আমরা আদিবাসীরাই আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা নির্ধারণ করে ফেলেছি – আমরা বাঙালের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নই, বরং আমরাই ঘরে বসে বোতাম টিপে বাঙালদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
-------------------------------------------
অডঙ চাকমা, ১ জুলাই ২০১১


৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×