(১) ইরান শিয়া জাতীয়তাবাদ ছাড়া কিছু বুঝে না।
.
জবাব : ইরান শিয়া জাতীয়তাবাদ ছাড়া কিছু বুঝে কিনা তা
জানতে হলে আপনাকে ইরানের সংবিধানে
ধর্ম ও মাযহাব সমূহের স্বাধীনতা ও অধিকার সংক্রান্ত
ধারাগুলো পড়তে হবে এবং বিপ্লবের পরে
সেখানে ধর্মীয় ও মাযহাবী কোনো
সমস্যা দেখা দিয়েছে কিনা তা খুঁজে
দেখতে হবে। বিপ্লবের আগে বেলুচ ও
কুর্দীরা ইরান থেকে স্বাধীনতা চাইতো,
কিন্তু এখন কেন চায় না তা জানতে হবে। (যদিও
তুরস্কের সুন্নী কুর্দীরা এখনো
স্বাধীনতা চায় এবং সুন্নী এরদোগ্বান
তাদেরকে হত্যা করছেন। তেমনি তথাকথিত
সুন্নী কমরেড সাদ্দাম হোসেন ইরাকী
কুর্দীদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছেন, কিন্তু
শতকরা ৬৫ ভাগ হয়েও ইরাকী শিয়ারা কেন্দ্রে
আরব সুন্নী ও কুর্দী সুন্নীদেরকে
ক্ষমতায় অংশীদার করে নিয়েছে বিধায় এখন
আর ইরাকী কুর্দীরা স্বাধীনতা চায় না।)
.
ইরান যদি শিয়া জাতীয়তাবাদী হতো তাহলে
সুন্নী হামাসকে অকাতরে সাহায্য দিতো না যার
সঠিক পরিমাণ কেউ জানে না, তবে আন্তর্জাতিক
মিডিয়ায় যার বার্ষিক পরিমাণ tens of millions of dollar
বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য অনেক
আরব দেশও, এমনকি পাশ্চাত্য জগতও
গাযাহবাসীদের জন্য মানবিক ও পুনর্গঠন সাহায্য
দিচ্ছে, কিন্তু হামাস ইসরাঈলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করছে একমাত্র ইরানী অস্ত্র দ্বারা। আমি আমার
“এটা কি অজ্ঞতা নাকি প্রভুদের খুশী করার
চেষ্টা?” শীর্ষক নোটেও সূদান, ইখওয়ান-
শাসিত মিসর, আন্-নাহদাহ, তাওহীদে ইসলামী
ইত্যাদির সাথে ইরানের সহায়তার কথা উল্লেখ
করেছি; সেগুলো নিশ্চয়ই শিয়া
জাতীয়তাবাদী হবার প্রমাণ নয়।
.
(২) (ইরান) কয়টা সিরীয়ান শরণার্থীকে আশ্রয়
দিয়েছে?!!
.
জবাব : ইরানের সাথে কি সিরিয়ার সরাসরি সীমান্ত
আছে? সিরীয় শরণার্থীরা কি ইরানে আশ্রয়
নিতে চায়? ইরানে আশ্রয় নিতে গিয়েছে
আর ইরান সিরীয় শরণার্থীদেরকে ফিরিয়ে
দিয়েছে এমন কোনো তথ্য আপনার কাছে
আছে কি?
.
(৩) সউদী যদি হয় আমেরিকার দালাল, ইরান-ও ২
নাস্তিকের দালাল।
.
জবাব : আপনি নিজেই সউদী আরবকে
আমেরিকার দালাল বলে উল্লেখ করেছেন।
সম্ভবতঃ আপনার জানা আছে যে, সউদী
আরবে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটি আছে। কিন্তু
ইরানে কি কোনো বাইরের দেশের
সামরিক ঘাঁটি আছে?
.
ইরান শুধু রাশিয়া ও আসাদের শাসিত সিরিয়ার সাথে
মৈত্রী গড়ে তোলে নি, বরং বিপ্লবের পর
পরই কিউবা, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া, জিম্বাবে
ও এ ধরনের আরো অনেক দেশের
সাথে মৈত্রী গড়ে তুলেছে। এর
সবগুলোই কৌশলগত মৈত্রী; এখানে
দালালীর প্রশ্ন আসে কেন? উল্টো যদি
বলতেন যে, তারা ইরানের দালালী করে
তাহলে অধিকতর যুক্তিযুক্ত হতো। আপনি
জানেন কি নবী করীম (ছাঃ) হুদায়বীয়াহর
সন্ধির পরে কয়েকটি মুশরিক গোত্রের
সাথে কৌশলগত মৈত্রী চুক্তি করেছিলেন এবং
মক্কাহর মুশরিকরা চুক্তি লঙ্ঘন করে এ ধরনের একটি
গোত্রের ওপর আক্রমণ করায় তিনি চুক্তি বাতিল
ঘোষণা করেন ও এরপর মক্কাহ্ বিজয়ের অভিযান
চালান?
.
আসাদ সরকারের সাথে ইরানের মৈত্রীর
একমাত্র কারণ হচ্ছে ফিলিস্তিন। কারণ, আসাদের
সিরিয়া হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র আরব দেশ
যে ফিলিস্তিনীদের সপক্ষে ও ইসরাঈলের
বিরুদ্ধে অটলভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তাছাড়া
ভবিষ্যতে ইরান ও ইসরাঈলের মধ্যে যুদ্ধ হলে
ইরানী বাহিনীকে সিরিয়ার মধ্য দিয়েই
ফিলিস্তিনে পৌঁছতে হবে। ইসরাঈলের বিরুদ্ধে
প্রতিরোধ সৃষ্টিকারী হিযবুল্লাহর কাছে ইরানী
অস্ত্রও সিরিয়ার মধ্য দিয়েই সেখানে
গিয়েছে। আর এ কারণেই আমেরিকা
আসাদকে উৎখাত করে সেখানে তার
দালালদেরকে ক্ষমতায় বসাতে চাচ্ছে।
.
(৪) চায়নার মুসলিম টর্চার নিয়ে ইরান চুপ কেন?
.
জবাব : একই বিষয়ে সরকার বহির্ভূত জনগণের ও
একটি সরকারের প্রতিক্রিয়ার ধরনের মধ্যে যে
পার্থক্য থাকে সে সম্পর্কে ধারণা থাকলে
আপনি এ প্রশ্ন তুলতেন না। কোনো সরকার
চাইলেই একটি দেশের অভ্যন্তরীণ
ব্যাপারে কথা বলতে পারে না।
.
সিনকিয়াং-এর মুসলমানদের মধ্যকার একটি দল
স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র হাতে নিয়েছে
বলেই সেখানকার মুসলমানদের ওপরে যুলুম-
নির্যাতন চলছে তা-ও দেখতে হবে। বিশ্বের
কোনো দেশই তার দেশের একটি অংশ
বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার জন্য তৎপরতা চালাবার অনুমতি
দেয় না। তুরস্কের কুর্দীদের হত্যার দিকে
তাকান; কোনো মুসলিম দেশ কি কথা বলছে?
চীন দাবী করছে যে, সেখানে মুসলিম
অসন্তোষের পিছনে আমেরিকার হাত
আছে। এখন এ ব্যাপারে ইরান যদি প্রতিবাদ করে
তো এটাই প্রমাণ হবে যে, এর পিছনে
ইরানের হাত আছে।
.
বিশেষ করে এ ধরনের স্বাধীনতার সাথে
ইসলামের কোনোই সম্পর্ক নেই;
মুসলমানদের উচিত যেখানেই থাকবে
ইসলামের প্রচার-প্রসারের চেষ্টা করবে।
সিনকিয়াং না হয় স্বাধীন হলো, চীনের অন্য
মুসলমানদের কী হবে? এই বাস্তবতার
আলোকে কাশ্মীরের বাইরে ভারতের
মুসলমানরা কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবীকে
সমর্থন করে না।
.
(৫) (ইরান) পরমাণু চুক্তির পর থেকে ইসরাঈলের
বিরুদ্ধে আগের মতো হুমকি দেয় না কেন?
.
জবাব : ইরান তো বহুত আগেই ঘোষণা
করেছে যে, সে ইসারঈলের
অস্তিত্বকে অবৈধ গণ্য করে এবং ফিলিস্তিন সমস্যার
একমাত্র সমাধান ইসরাঈলের বিলুপ্তি বলে মনে
করে। বিশ্বের মধ্যে একমাত্র দেশ ইরান যে
সরকারীভাবে এ অবস্থান গ্রহণ করেছে।
এমনকি পিএলও পর্যন্ত ইসরাঈলের অস্তিত্বকে
মেনে নিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, হামাসও আপাততঃ
ইসরাঈলের বিলুপ্তির দাবী থেকে সরে
এসেছে; কেবল গাযাহকে রক্ষা ও
শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ইরান তার
অবস্থানে অটল রয়েছে। আপনি কি মনে
করেন যে, ইরানকে প্রতিদিনই এটা বলতে
হবে? বরং ইসরাঈলই ইরানে হামলা করবে বলে
বার বার হুমকি দিয়েছে এবং পারমাণবিক চুক্তি
ঠেকানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছে।
.
ইরান যা করার তা কাজে করছে; হিযবুল্লাহ্ ও
হামাসকে অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য প্রদান অব্যাহত
রেখেছে। এরপরও ইরানী নেতৃবৃন্দ
বলেছেন, আগামী বিশ বছর পর ইসরাঈলের
অস্তিত্ব থাকবে না (লেখার সময় তথ্যসূত্রটি আমার
হাতের কাছে নেই, তাই প্রকৃত তথ্যে সামান্য
হেরফের হতে পারে)।
.
(৬) (ইরান কি) ইরাক যুদ্ধে আমেরিকার দালালী
করে নি???
.
জবাব : আপনার কাছে প্রমাণ থাকলে প্রমাণ দিন। বরং
প্রথম বার ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের সময়
আমেরিকা ইরানকে ডাকা সত্ত্বেও ইরান
সাদ্দামের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে যায় নি।
কিন্তু সাদ্দাম ছিলেন আমেরিকার দালাল এবং
আমেরিকার নির্দেশে কুয়েত দখলের নাটক
মঞ্চস্থ করেছিলেন।
.
ইরানকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে আমেরিকা তার
দালালদের মাধ্যমে ইরাককে যেভাবে
মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় সামরিক শক্তিতে
পরিণত করেছিলো সে লক্ষ্য অর্জন ছাড়াই যুদ্ধ
বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমেরিকা ইসরাঈলের নিরাপত্তা
নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কারণ,
এগারো লক্ষ্য সৈন্য ও দশ লক্ষ
স্বেচ্ছাসেবীর বিশাল বাহিনী ও বিশালায়তন
অস্ত্রভাণ্ডার (ইরানের শাহের অস্ত্রভাণ্ডার
ইসলামী বিপ্লবীদের হাতে পড়ার ন্যায়)
কোনোভাবে যদি কোনো মার্কিন-ইসরাঈল
বিরোধীর হাতে পড়তো তাহলে
ইসরাঈলের অস্তিত্ব থাকতো না। এ কারণেই
ইরাকের সামরিক শক্তি ধ্বংস করার লক্ষ্যে কুয়েত
দখলের অভিনয় করা হয়। (কুয়েত দখলের
আগে সাদ্দাম তা মার্কিন রাষ্ট্রদূত গ্লাসপি-কে
বলেছিলেন এবং তিনিও এতে মার্কিন সরকারের
অনাপত্তি জানিয়েছিলেন।)
.
একই কারণে, ইরান সাদ্দামকে কুয়েত থেকে
চলে আসতে বললে এবং তাঁর বিরুদ্ধে যাতে
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়া হয় সে ব্যাপারে
মুসলিম বিশ্বের সাথে মিলে ব্যবস্থা নেয়ার
আশ্বাস দিলেও তিনি তা মানেন নি।
.
কিন্তু আমেরিকা যখন হামলা চালালো তখন
বিনাযুদ্ধে সাদ্দাম ইরাকী বাহিনীকে ও তার
অস্ত্রভাণ্ডারকে ধ্বংস করার জন্য আমেরিকাকে
সুযোগ করে দেন। আর আমেরিকাও,
আরেকটি দেশ দখলের কারণে আন্তর্জাতিক
আইনে অপরাধী হওয়া সত্ত্বেও সাদ্দামকে
সুযোগ পেয়েও গ্রেফতার করা থেকে
বিরত থাকে এবং ইরাকের ক্ষমতায় বহাল রাখে।
.
অন্যদিকে পারস্য উপসাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাযের
উপস্থিতি এবং কুয়েত ও সউদী আরবের
কাছে বিপুল পরিমাণ মার্কিন অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্র
তৈরীর জন্য তিনি কুয়েত ও আমেরিকার
বিরুদ্ধে ফাঁকা হুমকি দিতে থাকেন। আর আমেরিকা
কেবল তখনি সাদ্দামকে সরিয়ে দেয়ার জন্য
চূড়ান্ত অভিযান চালায় যখন তাকে না সরালে ইরাকে
শিয়া মাযহাবের অনুসারী জনগণ ও ইরাকের
ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ পরিষদ-এর
সশস্ত্র গেরিলারা একই সাথে গণ-অভ্যুত্থান ও
সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে সাদ্দামকে উৎখাত
করবে বলে নিশ্চিত হয়ে যায়।
.
আমেরিকা ধারণা করেছিলো যে, সে
এগিয়ে এসে সাদ্দামকে উৎখাত করলে
ইরাকের শিয়া ও কুর্দী জনগণ আমেরিকার
সমর্থকে পরিণত হয়ে যাবে। কিন্তু ইরাকী
দ্বীনী নেতৃবৃন্দ সাদ্দাম ও আমেরিকা
কারো পক্ষ না নেয়ায় জনগণও নীরব থাকে
এবং সাদ্দামের উৎখাতের পরে তাঁরা আমেরিকার
প্রতি ইরাকত্যাগের আহবান জানান।
.
এখানে ইরান কোথায় আমেরিকার দালালী
করেছে তার প্রমাণ দিন।
.
(৭) তারা (ইরানীরা) নিজের স্বার্থ ছাড়া মুসলিমদের
হেল্প্ করে না।
.
জবাব : আগেই হামাসকে ইরানের সাহায্য করার কথা
উল্লেখ করা হয়েছে; তার পিছনে ইরানের
নিজের কী স্বার্থ আছে? সূদানে ইরানের
সহযোগিতার পিছনে ইরানের কী স্বার্থ
আছে? আর ইরান সাহায্য করতে চাইলেই কি
পরপদলেহী তথাকথিত মুসলিম সরকারগুলো তার
সাহায্য নেবে?
.
ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের বছর দুই পরের
কথা; একটি মুসলিম দেশে ইরানের একজন
মন্ত্রীর সফরের পর মন্ত্রী সাংবাদিকদের
দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন যে, ইরান ঐ
দেশটিকে “ইসলামী শর্তে” তেল
দেবে। এই “ইসলামী শর্ত” মানে কী এ
নিয়ে বহুত জল্পনা-কল্পনা হয় এবং শেষ পর্যন্ত
ইরানী সূত্রে জানা যায় যে, এর মানে হচ্ছে
“বিনা মূল্যে”। কিন্তু যে দেশটিকে দেয়া
হবে সে দেশটি তা নেয় নি। এছাড়াও ইরান একটি
মুসলিম দেশে একটি তেল শোধনাগার নির্মাণ
করে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু শেষ
পর্যন্ত যে দেশে তা করা হবে সে
দেশটি আর এ ব্যাপারে অগ্রসর হয় নি। কারণ? কারণ
হচ্ছে বিগ্ বস্ আমেরিকার রক্তচক্ষু।
.
(৮) ১৯৮৭-তে হজ্বে (ইরান) কী
করেছিলো?
.
জবাব : নিরস্ত্র ইরানী হাজ্বীরা ইসরাঈল ও
আমেরিকার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার
চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ইসরাঈল ও
আমেরিকাকে খুশী করার উদ্দেশ্যে
সউদী সরকার শত শত ইরানী ও অ-ইরানী
হাজ্বীকে হত্যা করেছিলো; এমনকি
বিক্ষোভ বন্ধ করে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাবার
সুযোগও দেয় নি; রাস্তা ও আশেপাশের
গলিগুলো বন্ধ করে গুলী চালিয়ে ও
কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তাঁদেরকে হতাহত
করা হয়।
.
* সউদী খারাপ, but ইরান একটা মিচকা শয়তান, যদিও
সউদী থেকে অনেক ভালো।
.
- এটা অোপনার একটি মন্তব্য মাত্র; এতে এমন
কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা প্রশ্ন নেই
যার জবাব দেয়া যেতে পারে। তবে ইরান
যে সউদী থেকে “অনেক ভালো”
আপনার এতোটুকু বোধেদয়ের জন্য
প্রীত বোধ করছি।