somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোমের মত গলে গেল হৃদয়

০৭ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক ইহুদীর ঘটনা । খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আলীর (রা) অধীনস্থ প্রজা সে । কিন্তু ইহুদীর কুটিলতা হাড়ে মাংসে। একবার সে হযরত আলীর (রা) লৌহবর্ম দখল করে বসল । হযরত আলী চাইলেন । অস্বীকার করলো ইহুদী । বলল, দেব না । এটা আমার । বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি। তাঁর সম্পদ জোর করে দখল করে আছে তাঁরই এক প্রজা । তাও ভিন্নধর্মী, সংখ্যালঘু ইহুদী । অসংখ্য মুসলিম সৈনিক-জনতা যেখানে খলীফার একটি অঙ্গুলির ইশারায় জান দিতে প্রস্তুত সেখানে মুসলমানদের জাতশক্র একজন ইহুদী তাদের রাষ্ট্রনায়কের অধিকার কেড়ে নেয় । খলীফা বিনয়ের সাথে তাঁর নিজের লৌহবর্ম চান । কিন্তু সে দিবেই না । খলীফার হাতে শক্তি প্রচুর তবে তিনি তা খাটাবেন না । কারণ, আইন আছে। আইন মানুষের অধিকার সংরক্ষণ করে, সমাজ করে সুশৃঙ্খল, সুন্দর ও নিরাপদ ।

অবশেষে বাধ্য হয়ে খলীফা মামলা দায়ের করলেন ইহুদীর বিরুদ্ধে ।বিচারক শুরাইহ ।খলীফার অধীনস্থ কর্মচারী । মামলা যথাসময়ে আদালতে উঠেছে। বাদী খলীফা নিজে। বিবাদী তাঁরই একজন প্রজা। বিচারক খলীফাতুল মুসলিমীনকে লক্ষ্য করে বললেন, আমীরুল মুমিনীন! আপনার দাবির পক্ষে সাক্ষী পেশ করুন । দু-জন সাক্ষী । হযরত আলী দু'জন সাক্ষী উপস্থিত করলেন যারা উভয়েই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী । একজন তাঁর ক্রীতদাস অন্যজন তদীয়পুত্র হযরত হাসান (রা) ।

সাক্ষী অস্বীকার করে দিলেন বিচারক । তিনি বলে দিলেন : আমীরুল মুমিনীন আইনের দৃষ্টিতে বাপের পক্ষে পুত্রের এবং প্রভুর পক্ষে ভৃত্যের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয় । তাই আমি আপনার এই সাক্ষী গ্রহণ করভে পারছি না । আপনার কাছে অন্য কোন সাক্ষী থাকলে পেশ করুন ।
খলীফা বিনয়ের সাথে বললেন : না, ঘটনার সময় এই দু-জন ছাড়া তৃতীয় কেউ উপস্থিত ছিল না । তাই আমি অন্য কোন সাক্ষী পেশ করতে অক্ষম ।
বিচারক বললেন - তাহলে আমি আপনার পক্ষে রায় দিতে পারছি না । আইনের বিধানমতে এই লৌহবর্ম বিবাদী ইহুদীরই পাওনা । আমি তার পক্ষেই রায় দিলাম ।

বিচার মেনে নিলেন হযরত আলী । সন্তুষ্টচিত্তে ত্যাগ করলেন বিচারালয় । যেন তার কোনই অভিযোগ নেই কারো প্রতি । ইহুদী প্রতিও তার কোন ক্ষোভ নেই । কারণ, আইনকে উপেক্ষা করতে পারেন না তিনি । করলে সমাজদেহে ভাঙন ধরবে। অবস্থা দেখে, বিস্ময়ে বিহ্বল হলো ইহুদী। সে ভেবে পায় না, এটা কি করে সম্ভব? একজন রাষ্ট্রপ্রধানের সম্পদ অন্যজন জোরপূর্বক নিয়ে নিবে তাও ভিন্নধর্মী, তাঁরই অধীনস্থ একজন সাধারণ প্রজা! কিন্তু বিধিসম্মত প্রমাণ দিতে না পেরে পরাজয় বরণ করবে? অধীনস্থ বিচারককে সত্য জানাশোনা অকাট্য বাস্তবতার উপরও চাপ দিবে না? আইনের গতির কাছে নিজের সকল ক্ষমতা এভাবে সমর্পণ করে দিতে পারে কোন ক্ষমতাশীল শাসক? হতবাক ইহুদী! মুসলমান শাসকের বিস্ময়কর মানবতার কাছে পরাজিত হয় তার সকল অস্তিত্ব । তার চেতনা-অনুভব মুহূর্তে পরাস্ত হয় বিবেকের কাছে। মোমের মতো গলে যায় এক মুসলিম শাসকের ঈমানী শিখার পরশে এক কঠিনহৃদয় ইহুদীর আকীদা-বিশ্বাস।অন্তঃকরণে পুঞ্জীভূত অন্ধকার বিদূরিত হয় সে আলোর ছোঁয়ায়। সবিনয়ে ফিরিয়ে দেয় খর্লীফার লৌইবর্ম।আর নবচেতনায় উদ্বেলিত বিশ্বাসে বলে উঠে- "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ "।



মুসলমানদের দেশে সংখ্যালঘু অমুসলিমদের অধিকার নিয়ে অধুনা যারা হল্লা করেন সেসব বুদ্ধিজীবীরা তাদের আধুনিক সভ্যতায় এমন একটি ঘটনার প্রমাণ দিতে পারবেন কি? যাদের স্বার্থ রক্ষায় রক্তাক্ত হয় আইনের অশরীরী গাত্র, যাদের সভ্যতার আঘাতে অমুসলিম কথিত সুসভ্য (?) দেশগুলোতে নির্বিচারে জীবন দিয়ে চলছে অসংখ্য মুসলমান, কাগজে লেখে তারাই নাকি সভ্য মানুষ । আর এসব সভ্য মানুষদের ণ্ডণকীর্তনে পঞ্চমুখ, পা-চাটা একটি বিশেষ শ্রেণী বজ্জাতগোষ্ঠী ইসলামী সভ্যতাকে বলে মধ্যযুগীয় বর্বরতা! কিছু বলার নেই। মনে হয়, নির্লজ্জতাই আধুনিক সভ্যতার চাণক্য-ফ্যাশন ।

২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×