somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন আধুনিক ও গালিবিদ নারীর ছ্যাকা/প্রেম কাহিনী

২৪ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই সাতসকালেই আমার বন্ধু মিথিলা আমার দিকে হিংস্র বিলাইয়ের মত তাকিয়ে দাত কিরমির করে বেশ গালাগালি করলো।আমি শুধু শুনলাম "হালুম হালুম হালুম"।বুঝলামনা মেয়ে এত চেতলো কেন।আমি এমন কি বললাম?ওর কাছে এক ছেলে নিয়মিত কুরিয়ার করে হাবিজাবি পাঠায়, আমারে এ কথা জানালে আমি ওকে শুধু বলছিলাম “ভালোইতো।আমাকে কিছু দিয়া দিস”"।এই সামান্য কথায় এতগুলা গালি খেলাম মেয়ের কাছে!

আসলে আমি নিজেও মনে হয় একটু নির্লজ্জ হয়ে গেছি।প্রতিদিন ক্লাসে আসার পর থেকে বাসায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওর গালি খেতে খেতে আমি অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি।ও যখন আমাকে গালাগালি শুরু করে আমি সুন্দর করে তা হজম করি এবং মাঝেসাঝে প্রতিবাদ করতে যেয়ে একটু মিউ ধ্বনি দেই-এই আর কী।তবে মেয়ের দিল একেবারে হুইল পাউডারের মত সাদা।ব্রেক টাইমে প্রায়ই সে আমাকে এইটা সেইটা খাওয়ায়।যদিও এইখানেও ঘটনা আছে।সে আমাকে যাহাই খাওয়ায়, বলে ওইটা তার নিজের হাতে বানানো।কিন্তু ওগুলা যে ওদের কাজের বুয়া বা বাসার পাশের খাবার দোকান থেকে কেনা এইটা আমি বাথরুম করতে যেয়ে ভালোই বুঝতে পারি।সমস্যা একটাই, মেয়েকে আমি বেশ ডর খাই।তবুও কিভাবে যেন আমরা বেশ ভালো বন্ধু।

পাঠকেরা, সারা জীবন হয়তো শুনে আসছেন লেকচার ক্লাসে মেয়েরা সবচেয়ে মনযোগী হয়।স্যারের লেকচার সুন্দর করে খাতায় তোলার জন্য মেয়েদের কোন বিকল্প নেই।কিন্তু মিথিলার কেসটা একটু ডিফারেন্ট।সে আমারে দিয়ে লেকচার লেখায় নেয় আর নিজে ঘুমায়।

আজকে শ্রাবণ বারিধারা মাথায় করে ক্লাসে এসে এমন ঘুম পেলো যে আমি লেকচার তোলার কথা ভুলে ক্লাসের পিছনে যেয়ে নাক ডাকা শুরু করলাম।লেকচার শেষ, ঘুমও শেষ।মিথিলা আমারে এসে বলে, “দেতো তোর খাতাটা।কি অগামগা লিখছিস দেখি”"।

আমি অত্যন্ত বিনয়ী হয়ে বললাম, “মিথিলা দোস্ত আজকে তো কিছু তুলিনাই।ঘুম থেকে উঠছি মাত্র"”।

মিথিলা আমার দিকে নরম সরম দৃষ্টি দিয়ে বললো “লোভী কুকুর, তুই আরেকবার আমার সামনে আসিস।তোর এত ঘুম পাইলে আগে জানাস নাই কেন?আমি নিজেই আজকে লেকচারটা তুলতাম”"।

আমি ওকে মিউ মিউ করে বললাম, “গালি দিসনা।ক্ষিদা লাগছে, কিছু আনছিস বাসা থেকে বানায়?”
মিথিলা বিরক্ত হয়ে আমার সামনে থেকে দূরে সরে গেলো এবং একটু পর খাবার নিয়ে এসে বললো, “নে খা! খা!”

আমি আরাম করে খাবার খেয়ে থ্যাঙ্কস জানিয়ে ওর কুশলাদি জানতে চাইলাম।কালকে নাকি সে আবার গিফট পেয়েছে।এবার ওকে একটা ছোট্ট টেডি বিয়ার পাঠিয়েছে।আমি তো হাসতে হাসতে মারা।ওকে বললাম, “তুই এই বুইড়া বয়সে টেডি দিয়ে কি করবি?আমাকে দিয়া দে।আমি আমার ছোট্ট কাজিনরে দিয়া দিবো”"।

মিথিলা ভেংচি দিয়ে বললো, “যাহ! কি সুন্দর টেডি দিছেরে।আমার খুব পছন্দ হয়েছে।যাই বলিস না কেন ছেলে আমার পছন্দ বুঝে”"।
আমি বিচকা হাসি দিয়ে বললাম, “চল কোন ছেলে এটা বের করি।তারপর ধইরা তোর সাথে বিয়ে করায় দেই”।
মিথিলা লাজুক হয়ে বললো, “দেখনা আমার প্রাণসখাকে একটু খুজে পাস কিনা”"।

এমন সময় রিয়াদ ক্লাসে ঢুকে মিথিলা আর আমার কাছে এসে বললো, “দোস্তরা চাঙ্কু খবর আছে।আমার তো ফিট হয়া গেছে”"।
মিথিলা ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, “ওই মেয়ে তোরে পছন্দ করলো?তোর মত ছেলের কি আছে?”
রিয়াদ ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললো, “ওই ইনসাল্ট করবিনা।আমি টাইগার খাই, আমি স্মার্ট"”।

এরপর তিনজনে মিলে হাসাহাসি হই হুল্লোড় করে কাহিনী বের করলাম।ঘটনা খুব সাধারণ।রিয়াদ বহুদিন ধরে এক মেয়েকে পছন্দ করে।মেয়ে ওদের পাশের বিল্ডিং এ থাকে।প্রায়ই রিয়াদ জানালা দিয়ে উকিঝুকি মেরে মেয়ের কোমল মুখদর্শন করার ব্যর্থ চেষ্টা নেয় কিন্তু বদলে মেয়ে তার জানালার পর্দা টেনে দেয়।মাঝে মাঝে লুইচ্চা, হারামজাদা, ছ্যাচ্চোর বলে প্রশংসা বাণীও শুনতে পায়।কিন্তু সপ্তাহখানেক আগে মেয়ে ওকে খুব কড়া কথা বলে।ও যখন উকি ঝুকি মারছিলো, তখন মেয়ে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে চিক্কুর দিয়ে বলে “এই পিচকি তোমার লাজ শরম নাই।আরেকবার জানালা দিয়ে উকি দিলে বাসায় এসে থাবড় দিয়ে যাবো”"।

এই ঝাড়ি খেয়ে রিয়াদ তো পুরা ক্যারা খায়া বিছানায় পড়ে গেলো।সে এক বছর ধরে মেয়ের পিছনে ঘুরাঘুরি করে, মেয়ে বাসা থেকে বের হলেই তাকে দূর থেকে ফলো করে, মেয়ে ছাদে উঠলে সেও ছাদে উঠে। ছাদে উঠা নিয়ে একটা মজার ঘটনা আছে।কোন একদিন সে ভর দুপুরে ছাদে উঠছিলো দেখে আন্টি তাকে দরজার কাছে ধরে জিজ্ঞেস করে, “বাবা কই যাও”"।
রিয়াদ এইভাবে ধরা খাবে তা তো বুঝেনাই।সে মাথা চুলকায় বলে “আম্মা ছাদে যাই”।

মায়েদের একটা মজার ব্যাপার আছে।তারা কি করে যেন ছেলে মেয়ের চোখের দিকে তাকালেই সব বুঝে ফেলে।আন্টি, রিয়াদের বিশিষ্ট মাতা এর ব্যতিক্রম না।সে বললো, “এই ভরদুপুরে ছাদে যেয়ে কি করবা আব্বাজী”"।

রিয়াদ এমনিতে ওর মাকে প্রচন্ড ভয় পায়।সেদিন ওর আম্মা যেভাবে ইনভেস্টিগেশন শুরু করলো তাতে সে আরো ভয় পেয়ে কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারছিলোনা।সে তবুও কোনরকমে থতমত খেয়ে বললো, “আম্মা ছাদে চুল শুকাইতে যাই"”।

এমন হাস্যকর উত্তর শুনে ওর আম্মা কি করছিলো সেইটা আমাদের রিয়াদ বলেনাই।তবে আমরা সবাই জানি ঝাড়ু দিয়ে কুংফু খেলায় কসম খোদার, কেউ রিয়াদের আম্মাকে হারাতে পারেনা।

যাই হোক মূল গল্পে ফিরে আসি।রিয়াদ তো মেয়ের কঠিন ঝাড়ি খেয়ে চ্যাগা হয়ে বিছানায় পড়ছে।ওর আব্বা আম্মা তো কিছুই বুঝেনা।জানি শুধু আমরা ওর বন্ধুরা।পুরো চারদিন সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আমার মরণ হয়না কেন বলে চিৎকার করতে থাকলো আর আমরা ওকে শান্তনা দেই, "বাস ট্রেন বারবার আসে, এদের পিছনে ছুটতে নেই"।

রিয়াদ শুধু বলে, "কিন্তু এমন এসি বাস আর লাক্সারী ট্রেন একবারই আসে গর্দ্ধভেরা"।

চার দিন কেটে যাওয়ার পর রিয়াদ যখন একটু নিজেকে সামলে নিলো, তখন তার লুইচ্চামী রোগ পুনরায় জেগে উঠে তাকে জানালার কাছে টেনে নিয়ে গেলো।সে উকি দিলো চোখ পিট পিটিয়ে, ভয়ে ভয়ে।উকি দিয়ে যা দেখলো তাতে তার আত্না খাচা ছাড়া হয়ে গেলো প্রায়।দেখে মেয়ে যুদ্ধংদেহী ভঙ্গী করে জানালায় দাঁড়িয়ে আছে।ওকে দেখে অবশ্য মেয়ে চুপ করে তাকিয়ে ছিলো।তারপর রিয়াদের থেকে যা শুনলাম তাতে মেজাজটা পুরা বিলা হয়ে গেলো।ভাবছিলাম সে আরো কিছু গালি খাবে, আমরাও একটু হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবো। কিন্তু রিয়াদ বললো যে মেয়ে নাকি ওকে দেখে বড়ই প্রেম শীতল কন্ঠে বলছে, "এই তুমি আর উকি দাওনা কেন, আমাকে কি মেরে ফেলবা?তোমার ফোন নাম্বারটা দাও তো দেখি!"

এইভাবেই আমাদের রিয়াদের অধঃপতন শুরু হলো।আমরা ওর প্রেম দেখি আর বলি, মারহাবা মারহাবা!

এইবার মিথিলার কাহিনী শুরু।আগে আপনাদের যা বলেছি তাতে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন সে কঠিন একটা চীজ।কিন্তু সমস্যা হলো মেয়ে তো, তাই প্রেম প্রীতির মত ব্যাপারগুলো কোন না কোন ভাবে মিথিলাকে হিট করবে আগেই জানা ছিলো।তাই রিয়াদের ঘটনার দু সপ্তাহ পরে যখন মিথিলা আমার কাছে এসে বললো যে সে প্রেম করছে, আমি খুব একটা অবাক হলাম না।কিন্তু ঘটনা হলো, কার সাথে।ও নিজেই বললো, ডিপার্টমেন্টের দুই বছর সিনিয়র মিশু ভাইয়ের সাথে।কিভাবে? সে জানালো, বাংলালিঙ্ক আছে না?

ঘটনা হলো, এই ছেলের প্রতি তার বহু আগে থেকেই কিছুটা দুর্বলতা ছিলো।সে আমাকে বন্ধুত্বের প্রথম দিকেই বলেছিলো যে ছেলেটিকে নাকি তার সাদা তেলাপোকার মত লাগে। আর মেয়েরা যখন কাউকে নিয়ে এমন কিছু বলে তখন বুঝে নিতে হয় ঘটনা খারাপ।১৪৩(আলাভু) এর ব্যাপার আছে।রিয়াদ একদিন মিশু ভাইয়ের সাথে ওর পরিচয় করায় দেয়।মিশু ভাই আর রিয়াদ আবার একই স্কুল কলেজের ছিলো, এই হিসেবে বেশ খাতির।আমি, মিথিলা আর রিয়াদ তিনজন মিশু ভাইয়ের কাছে প্রায়ই এই সেই নোটের জন্য যেতাম।মিথিলা অবশ্য কখনো লজ্জায় মিশু ভাইয়ের সাথে কথা বলতে পারতোনা।তবে এটা আমার কখনো মনে হয়নাই যে মিশু ভাইয়ের সাথে ওর সিরিয়াসলি এফেয়ার হয়ে যাবে।মিশু ভাই ওকে নাকি প্রপোজ করছে তিনদিন আগে।মিথিলা তাকে দুদিন ঝুলায় গতকাল হ্যা বলে দিছে।

আমি আর রিয়াদ বড়ই মর্মাহত হলাম।এত কিছু হয়ে গেলো, আমাদের সে কিছুই জানালোনা।তবে মুখে কিছু বললাম না।ও ওর প্রেম কাহিনী আমাদের বর্ণনা করে আমাদেরকে শেষমেষ জানালো, "দোস্তরা আজকে আমার প্রথম ডেট।তোরা একটু দোয়া রাখিস"।

আমি আর রিয়াদ একসাথে বললাম, "আগে কিছু খাওয়া"।

মিথিলা সাথে সাথে তার ব্যাগ থেকে টিফিন ক্যারিয়ার বের করে আমাদের দিকে এগিয়ে বললো, "হে হে! আমি জানি তোরা কোন জাতের ছুচো বিলাই"।

মিথিলা আর মিশু ভাই আজকে তাদের প্রথম ডেটিং করতে যাচ্ছে ধানমন্ডি লেকের রবীন্দ্র সরোবরে।আমি আর রিয়াদ আজকে তাই একসাথেই বাসায় ফিরছিলাম।রিয়াদ আমাকে জিজ্ঞেস করলো, "দেখলি কিভাবে দুইটা সেট হয়া গেলো"।

আমি হাসিমুখে বললাম "হ্যা।মিশু ভাইয়ের মত স্মার্ট, ভালো ছাত্রের সাথে সেট হবেনা তো কার সাথে হবে"।

রিয়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, "তাই তো, তাই তো!কিন্তু একদিক দিয়ে তোর ভালো হলো।মিথিলাকে আর গিফট পাঠাইতে হবেনা লুকায় লুকায়।বিগ মানি সেভ হবে"

আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম "ঠিক!"

রিয়াদ মাথা চুলকাতে চুলকাতে শুধু বললো, সরি দোস্ত।


এরপর দুই সপ্তাহ কেটে যায়।মিথিলা আর মিশু ভাই বেশ ভালোই প্রেম করছে বলে মনে হলো।আমি নিজের মত করে ক্লাস,লেকচার সবই চালিয়ে গেলাম।সমস্যা হলো, যখন রাতে ঘুমাতে যাই।বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা প্রায় দুসপ্তাহ থেকে ঘুমাতে পারিনি।মনে হয় কি যেন নেই।ক্লাসে যখন মিথিলা কথা বলতে আসে আমি ওর সাথে আগের মতই স্বাভাবিক।শুধু আজকে কেন যেন মিথিলা দুপুরের ক্লাস ব্রেকে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, "কি হয়েছে তোর।চোখের নিচে তো কালি ফেলে দিছিস"।

আমি হাসতে হাসতে বললাম, "কলম কিনার টাকা নাই।এই কালি দিয়েই লিখালিখি করি"।

মিথিলা আমার দিকে আবার হাসিমুখে বললো, "আজকে মিশুর সাথে কড়াই গোশতে ইফতারী করবো।হে হে।ওইখানে হালিম খুব ভালো বানায়"।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বললাম, "রমজান মাসে এত খাই খাই করিস কেন"?
মিথিলা তার গা জ্বলানো হাসি দিয়ে বললো, "প্রেমে পড়েছি আমি প্রেমে পড়েছি, তাই দিনরাত শুধু খেয়েই চলেছি"।

আমি কিছু না বলে হাতের থেরাজার ইলেকট্রিক্যাল মেশিন বই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।মিথিলা নিজে থেকে আবার আমাকে বললো, "কিন্তু একটা সমস্যা হইছে বুঝছিস"।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কি?"

"আমার কাছে আর গিফট আসেনা বুঝলি।আমার আগের গিফট প্রায় অনেকগুলা মিশুকে প্যাকেট করে রি-গিফট করে দিছি।এখন খুব বেশি আর বাকি নাই বুঝলি।পয়সা দিয়ে আবার গিফট কিনবো, এটা ভাবতেই বুঝছিস অনেক কষ্ট হচ্ছে।আমি বুঝতে পারছিনা ছেলে কি করে বুঝলো আমি আরেকজনের সাথে প্রেম করি?" মিথিলা প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকায়।

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি, "হুম!"

মিথিলা তারপর আমার দিকে চালাক চালাক দৃষ্টিতে বললো, "আমি অবশ্য খুজে বের করছি যে ওই গাধাটা তুই ছাড়া আর কেউ না"।

প্রিয় পাঠকেরা একবার চিন্তা করুন, এহেন কথা শুনে আমার অনুভূতি কি হতে পারে। লজ্জা নাকি দুঃখ, ভয় নাকি হতাশা?

সকল অনুভূতির সংমিশ্রণ নিয়ে আমি আমার পাগুলো সোজা করে দৌড়ানোর প্রস্তুতি নিলাম।হ্যা আমার কাছে তখন এটাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা বলে মনে হলো।

মিথিলা আমার দিকে ভুরু নাচিয়ে আবার বললো, "দেখলি আমি কত বুদ্ধিমান?জেমসের বন্ড আমাকে পেলে সব লুইচ্চামী ভুলে প্রেম করতো বুঝলি"।

আমি চিড়িয়াখানার মন খারাপ গন্ডারের মত করে ওর দিকে তাকিয়ে কথা শুনছিলাম।

মিথিলা আমাকে কানে কানে বললো, "সত্যি কথা বলি, গিফট পাঠানোর লুইচ্চামী যে তুই ছাড়া আর কেউ করিসনা এইটা আমি অনেক আগে থেকেই জানি।কিন্তু আমি মিশু ছাড়া কাউরে চিনিনা, বুঝিওনা।সো আমাকে আবার গিফট পাঠায় হেল্প কর দোস্ত"।

রাগে তখন আমার গা জ্বলছে।ও এইভাবে কথা বলছে কি করে আমি বুঝতে পারলাম না।নিজেকে আমার একটা জোকস মনে হলো।আমি বুঝতেও পারছিলাম না। সে আমাকে অপমান করছে নাকি ব্যাপারটাকে হালকা করে দেখছে।

আমি ওর দিকে জীবনে এই প্রথমবার রাগত ভঙ্গীতে তাকিয়ে বললাম, "যা ভাগ!"

ইফতারীর আগ দিয়ে রিয়াদ আমার বাসায় এলো।আমার দিকে তাকিয়ে তার সে কি হাসি।বুঝলাম মিথিলা আমার আজকের কাহিনী সব তাকে বলে দিয়েছে।আমি ওকে লাথি দিয়ে বললাম, "তোর আর তোর মিশু ভাইয়ের আমি গুস্টি কিলাই।আমার মিথিলারে নিয়ে তোরা গেম খেলিস।সময় আসুক একবার"।

রিয়াদের হাসি তো থামেনা।হাসতে হাসতেই বলে, দোস্ত তুই এমন একটা ছ্যাকা খাইলি।যায়া দেখ মিশু ভাইরে এখন মিথিলা যায়া তোর গল্প রসিয়ে রসিয়ে বলতেছে।আর তুই এমন ছাগলের মত বাসায় বসে আছিস কেন?ও প্রেম করে ফুর্তি করতেছে আর তুই এমন দেবদাস হয়ে মশা মারতেছোস।চল নিচে চল, একটু হেটে আসি"।

আমি মন খারাপ করে রিয়াদের সাথে হাটতে হাটতে গলির মাথায় এলাম।ওকে বললাম, "কি করে কি হয়ে গেলো বুঝছিস।মেয়ে এমন হুটহাট প্রেম করলো, কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না"।

রিয়াদ মুচকি হাসি দিয়ে বলে, "আরে আবাল, এইটা ২০১০।তোমার মত মজনু সেজে লাইলীর জন্য কেউ গোপনে উপহার পাঠায় প্রেম আশা করেনা।আমার মত মরদ হ"।

আমি বিরক্ত হয়ে খেকিয়ে বললাম, "কে যেন তোরে বাসায় এসে থাবড় দিবে বলছিলো"।

রিয়াদ বললো, "চুপ কর শালা।যে বলছিলো সে এখন আমার সতিসাধী বউ।আর তুই ছ্যাকা খাওয়া কলু মিয়া।বেশি কথা না বইল্যা চল মেন রোডের কফি শপে যাই।আজকে একসাথে ইফতারী করি চল"।

আমি আর কিছু না বলে ওর পিছ পিছ গেলাম।কফি শপের ভিতরে ঢুকে সে আমাকে বললো, "দোস্ত একটু দাড়া, আমি বাহির থেকে একটা কল করে আসি"।

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, "ইফতারীর আগেও বউ ছাড়া কিছু বোঝোনা"।

কফি শপের ইফতারী আমার খুব প্রিয়।প্রতি রোজাতেই আমি কফি শপে ইফতারী করি।খুব একটা ভীড় হয়না, ছিমছাম পরিবেশ।আর সব মামুগুলার সাথে বেশ ভালো খাতির আমার।সেদিন কফি শপে ঢুকে দেখি, মিথিলা বসে আছে মুখ কালো করে।বুঝলাম রিয়াদ ছাগলা মিথিলার সাথে মিলে নাটক সাজিয়েছে।

আমি মিথিলার কাছে যেয়ে বললাম, "তোর মিশু কই?"

ও আমাকে অচেনা হাসি দিয়ে বললো, "মিশু তো নাই।আজকে তোর সাথেই না হয় ইফতারী করি।"

আমি লক্ষী ছেলের মত ওর বিপরীতে বসে গেলাম।মিথিলা আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকলো।কখনো সে আমার দিকে এভাবে তাকায়নি।আমি লজ্জায় লাল্লু হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম "ঘটনা কি?"

মিথিলা তার রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বললো, "ঘটনা হলো তুই একটা ছাগল।কিন্তু আমি তো ছাগল না, তাই না?তুমি যে আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছো তা আগেই বুঝছি।গিফটের গায়ে যখন লিখালিখি করিস, তখন একবার মনে হয়নাই যে তুই গাধার থেকেই আমি ক্লাসের লেকচার তুলি?"

আমি ক্যাবলাকান্তের মত ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম।কিছুই মুখে আসছিলোনা।অবাক হচ্ছিলাম মেয়ে আমার সাথে এত স্বাভাবিকভাবে কি করে কথা বলে।

ওই আবার আমাকে বললো, "সাহসী হ বুঝলি,সাহসী হ! আমি আসলে তোকে বেল দিতাম না, কিন্তু পরে মনে হইলো এখনকার মডার্ণ যুগে সবই দুষ্টু ছেলের দল।তাই তোর মত ভ্যাবলা একটা ঝুলায় রাখাই ভালো।ভবিষ্যৎ নিরাপদ।"

আমি মূলা খাওয়া হাসি দিয়ে বললাম, "মাশাল্লাহ তোর কমন সেন্স ভালো।কিন্তু আমি এত ভ্যাবলা না তুই যতটা ভাবিস।"

মিথিলা বললো, "আমাকে ছেড়ে আর কারো সাথে টাংকিবাজী করবা নাকি?"

আমি এবার বেশ সিরিয়াসলি বললাম, "পাশের বাড়ির সুন্দরী তন্বীর কসম, আমি একজন ভালো প্রেমিক হয়ে আজীবন থাকবো"

পাঠক যে উৎকৃষ্ট গালি আমি এরপর খেয়েছি তা নাহয় উহ্য রাখি।

ইফতারী শেষে মিথিলাকে যখন বাসায় নামিয়ে আসছিলাম, তখন ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছিলো।ছাতাহীন মোরা দুই এখনো না হওয়া প্রেমিক প্রেমিকা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গেলাম।আমি উঁকি মেরে বারবার মিথিলার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।বৃষ্টির পানিতে আমার সাড়ে তিন বছর ধরে ভালোবাসা মাখা মেয়েটি কেমন যেন আরো পবিত্র হয়ে উঠেছে।আমি শুনতে পেলাম ও আমাকে বললো, "হাতটা ধরো"।
৭৬টি মন্তব্য ৬৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×