প্রায় সাড়ে ৩ বছর পর আবার শুরু হলো জনগনের হাত-পা বেধে দেয়ার খেলা।
রাজনীতিবিদদের উদ্ভাবনী শক্তি আসলেই কম। প্রায় একশো বছর আগে দ:আফ্রিকায় গান্ধীজি যে হরতাল আবিস্কার করেছিলেন এতদিনও বাংলাদেশের রাজনীতিবিদেরা এর উন্নততর সংস্করণ আবিস্কার করতে পারেনি। বরং এর ব্যবহার নিম্নগামী হয়েছে। গান্ধীজি ভারতের স্বাধীনতার জন্য যেটা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবহার করেছিলেন, জনগণকে কষ্ট দেবার জন্য সেই একই অস্ত্রের আমরা ধ্বংসাত্মক ও ভীতিকর ভাবে ব্যবহার দেখছি।
লক্ষনীয় যে, বাংলার জনদরদী(?) রাজনীতিবিদরা হরতালের কনসেপ্টটা গ্রহণ করেছে[কারণ এটার ধংসাত্মক অপব্যবহার আছে] ... কিন্তু সত্যগ্রহ এর কনসেপ্ট গ্রহণ করেনি।
সবচেয়ে মজার ব্যপার হচ্ছে , বিরোধীদল যেসমস্ত দাবিতে হরতাল ডেকেছে, নিজেরা সরকারে থাকার সময় এই দাবি গুলো পূরণ করতে পারেনি। যে ক্ষেত্রে নিজেরা ব্যর্থ, সে ক্ষেত্রে অন্যদের সফলটা আশা করাটা কি হাস্যকর নয়।
তাদের সময় কি বিদ্যুত পর্যাপ্ত ছিলো? তারা কয় মে:ও: বিদ্যুত গ্রিড এ যোগ করেছে? তাদের সময় কি পানির দাবিতে এক সাংসদকে(দৌড় সালাউদ্দিন) দৌড়ানো হয়নি? গ্যাস এর জন্য কি চুলা বন্ধ থাকে নি? সাংবাদিক নির্যাতন হয়নি? কতজন বিরোধী রাজনীতিবিদকে হত্যা করা হয়েছিল, তার হিসাব কি তারা দিতে পারবে?
আবার এই মেয়াদ শেষে আলীগ যখন বিরোধীদল(এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে কোন দল এদেশে টানা একাধিক মেয়াদে আসবেনা.... অন্যদলের সাফল্যে নয়, নিজদলের ব্যর্থতায়ই এক্ষেত্রে একমাত্র কারণ) হিসেবে মাঠে থাকবে, তখন দেখা যাবে তারা মোটামুটি এই ধরনের দাবি নিয়েই আবার হরতাল দেবে। মাঠ গরম করবে বিদ্যুত, পানি, গ্যাস এর দাবিতে। রাজনীতিবিদ- সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে তাদের কন্ঠ। গলা ফাটিয়ে দেবে রাস্তায় রাস্তায় জন সভা করে। অথচ, এই সমস্ত গণদাবি পূরণের মেন্ডেট নিয়ে তারা ক্ষমতায় এসে সব ভুলে বসে আছে।
এটাই এদেশের নিয়তি। এটাই এদেশের রাজনীতির ধারা।
বিরোধী দলে থাকলে এই ইস্যুগুলো তাদের খুব কাজে আসে। মাঠ গরম করার জন্য এগুলো খুব কাজের। সরকারে গেলে এই দাবিগুলো তাদের মনে থাকে না। রাজনীতিবিদদের দাবি(বিনা শুল্কে গাড়ি আমদানি, সংসদে সামনের সারিতে আসন, টেন্ডার, প্লট বরাদ্দ, বিল্ডিং বরাদ্দ ইত্যাদি) ই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।
ফলাফল: জনগনের চিরস্থায়ী দুর্ভোগ। হরতাল এর নামে যন্ত্রণা এদেশে চলতেই থাকবে(যে দলই বিরোধী দলে থাকুক না কেন)। কিন্তু (যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন)বিদ্যুত, পানি, গ্যাস এর জন্য হাহাকার চলতেই থাকবে। বিরোধী রাজনীতিবিদেরা নির্যাতিত হতেই থাকবে(এর জন্য কোনো অপদার্থের সমবেদনাবোধ করার প্রয়োজন নেই)। সাংবাদিক নির্যাতনও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।