রাষ্ট্রভাষা হিন্দি করাটা মনে হয় আজ সময়ের দাবি।
দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর (কিশোরী, তরুণী, মধ্যবয়সী, বৃদ্ধা নিবিশেষে সকল নারী; ধনী, গরীব নির্বিশেষে সকল নারী; হিন্দু মুসলিম খ্রিস্টান, বৌদ্ধ নির্বিশেষে সকল নারী; হিন্দি সিরিয়াল না দেখলে যাদের ঘুম আসেনা, পেটের ভাত হজম হয়না) ভাষা প্রায় ইতিমধ্যে হিন্দি হয়ে গেছে। তাহলে হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করার ক্ষেত্রে ৫০% অগ্রগতি হল। (বলেন আলহামদুলিল্লাহ)।
বাকিটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। নারীদের সাথে ভাবের আদানপ্রদানের জন্য পুরুষদের সামনে হিন্দি ছাড়া আর কোন ভাষা থাকছে না। অগত্যা বেচারাদের এই ভাষাটা শিক্ষা করা আবশ্য কর্তব্য।বাকি ৫০% বাধা অপসারিত হল। (বলেন সুবহানাল্লাহ)।
আমার মনে হয় হিন্দিকে রাষ্ট্রীয়ভাষা করার প্রক্রিয়াটা অনেকদূর এগিয়েছে। গতকালের শাহরুখ খানের কনসার্ট থেকে এই ব্যাপারে সন্দেহাতীত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। স্টেজে উঠে আসা দর্শক সারির ১ জন ছাড়া সবার পারফরমেন্সে আমি মুগ্ধ। ব্যাচারা গাজী!!!!!!!! সবার মধ্যে যেন চলছিল হিন্দি বলার প্রতিযোগিতা। শাহরুখের সামনে নিজেকে যোগ্য(!) প্রমানের চেষ্টা। (শাহরুখ তাদের সনদ দিয়েছিলেন কিনা জানা যায়নি)।
আমরা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য রক্ত দেয়া জাতি। তাই সকল ভাষাকে আমরা শ্রদ্ধা করি। ভাষাকে ঘৃণা করতে শিখিনি।
কিন্তু, কোন ভাষা যদি মায়ের ভাষার উপর আগ্রাসী হয়ে উঠে, মায়ের ভাষাকে কোণঠাসা করে ফেলতে চায়...... তাহলে তাকে মনে হয় ঘৃণা করা যায়।
কালকের কন্সার্টটি আমার আমার কাছে কোন সাধারণ কনসার্ট মনে হয়নি। আসলে সেটা ছিল হিন্দি ভাষার আগ্রসনের চূড়ান্ত মঞ্চায়ন। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে হিন্দি ভাষা কেমন ভাবে যেকে বসেছে তারই একটা প্রতিছবি। এটা একদিনে হয়নি। হয়েছে খুব ধীরে ধীরে। এই আগ্রাসন হয়ত থামান যাবে না। হয়ত আজকের বাংলা একদিন হিব্রু বা সংস্কৃত এর মতো ভাষার দলভুক্ত হবে। একটা সম্প্রদায় যখন নিজের ভাষা বাদ দিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অন্য একটি ভাষাকে আপন করে নেয় তখন এই আগ্রাসনকে থামান বৃথা চেষ্টা মাত্র। তখন হয়ত একজন গাজী বলে উঠে “I hate hindi”। তখন কেউ কেউ লজ্জিত হয়। ঠিক যেমন কোন ফিলিস্তিনি ইসরাইলে আত্মঘাতী হামলা চালালে কোন কোন ফিলিস্তিনি লজ্জিত হয়।
আমি জানিনা গাজী কেন বলেছিল “I hate hindi”। কি ছিল তার প্রতিক্রিয়া। কেন সে হিন্দি বলতে চায়নি, আমি জানিনা। সে হিন্দি বুঝে না বা বলতে পারে না এটা মনে হয় সত্য নয়। যে সমাজের প্রত্যেকটি(ব্যাতিক্রম ধর্তব্য নহে) বাড়িতে হিন্দি সিরিয়াল/সিনেমা দেখা হয়, সেখানে সে হিন্দি জানবেনা, এটা হতে পারেনা, বিশেষ করে কেউ যদি ২৫০০৳ দিয়ে টিকেট কিনে হিন্দি সিনেমার নায়কের কনসার্ট দেখতে যায়।
তাহলে কেন সে হিন্দি বলতে চায়নি? ভাষার মর্যাদা বা আত্মমর্যাদাবোধ? কিংবা গোঁড়ামি? ......... সে যাই হোক, যারা তার আচরণে লজ্জায় মরে যাচ্ছেন, তারা ওই হিন্দি ভাষায় দক্ষদের নিয়ে কি কিঞ্চিত হলেও লজিত?
যদি আপনার উত্তর না হয়, তবে বলব আমি কিন্তু আপনাদের লজ্জা পাওয়া নিয়েই বেশি লজ্জিত।