মোবাইল হাতে নিয়ে লাস্ট কলগুলো চেক করতে গিয়ে আমার হার্টবিট বন্ধ হবার উপক্রম ! বুকের মধ্যে একটা ধাক্কা লাগলো । সাধারণত ঘুম থেকে উঠে লাস্ট কলগুলো আমি দেখে থাকি ।
দেখি , আব্বাকে অর্থাৎ আব্বার মোবাইলে আমার ফোন থেকে কল করা হয়েছে ।
নাহ , এমন হওয়ার কথা তো না । আব্বার ফোন প্রায় ৬ মাস ধরে বন্ধ ।
আব্বার সাথে পাঁচ মাসেরও বেশী সময় কথা হয়না, দেখা হয়না । কোন যোগাযোগ নেই এক স্বপ্ন আর কল্পনা ছাড়া । তো তাঁকে ফোন করার কথা না ।
ভাবলাম আমার ফোন দিয়ে অন্য কেউ ট্রাই করেনি তো ?
কেন করবে ? মেসেজ অপশনে গিয়ে দেখি আব্বাকে একটা মেসেজও সেন্ড করা হয়েছে । সত্যি , এবার আমি কেঁপে ঊঠলাম ! এ কি করে সম্ভব !
আব্বাকে ফোন বা মেসেজ পাঠানোর তো কোন উপায় নেই ।
অথচ আগে প্রতিদিন মোবাইলে আব্বার সাথে কথা বলাটা একটা রুটিন ছিল ।
ফোন করলে আব্বা এমন করে হ্যালো বলতেন যে– মনে হত হ্যালো শব্দটি তিনি হ্রদয় নিংড়িয়ে অজস্র স্নেহ মিশ্রন করে বলছেন । আমার ইচ্ছে হত বারবার আব্বার এই হ্যা – লো - -বলাটা শুনি । সে সময় প্রায় তাঁর সাথে ফোনে কথা হত আমার।
খুলনার বাড়িতে আব্বা –মা একা থাকেন । আমারা ভাইবোন সবাই খুলনার বাইরে তাই সহজ যোগাযোগের জন্য মাকে প্রথম মোবাইল দেয়া হয় । সবাই মা-র সাথে কথা বলে কারন মা- ইতো বরাবর সব খবরা খবরের সেন্টার পয়েন্ট । এতে আব্বা একটু সাইড লাইনে পড়ে যান । তার মন খারাপ হয় মোবাইল না থাকার জন্য। তিনি ভাবেন মোবাইল নেই বলে তার সাথে সবাই হয়তো কম কথা বলছে । তাই তিনি মোবাইল কিনে সবাইকে ফোন করে করে নাম্বার দিয়ে বলেছিলেন তার নাম্বার ।এবং সবাইকে কল করে বেশ লাজুক লাজুকভাবে কথা বলতেন ।আমার কাছে কিন্ত তাঁর হ্যালো বলাটা শুনতে বেশী ভাল লাগত । কথা বেশী হতোনা কিন্ত কথা হওয়াটা প্রায় প্রতিদেনের ঘটনা ছিল । আব্বা খুব যত্ন করে রাখতেন তার মোবাইলখানা ।
মোবাইলখানা আজও যত্নে রাখা আছে আলমারির মধ্যে । বন্ধ । কারন ওটাতে রিং করলে আর কেউ সেইভাবে মমতা মাখানো গলায় বলেন না - -হ্যালো -- - হ্যা .. লো .
ফোনের মালিক আর ফোন ধরেন না । তাঁর ফোনটা পড়ে আছে, আছে তাঁর চশমা ,ঘড়ি, ব্যক্তিগত সব কিছু । শুধু তিনি নেই ।
ছোটবেলায় আমরা বাড়ীর সব্বাই সপ্তাহ শেষ হবার অপেক্ষায় থাকতাম ।কারন সপ্তাহ শেষে আব্বা বাড়ী ফিরবেন ।আমি, আমার ভাই, আমার মা,আমার দাদী সব্বাই আব্বার সাথে মিলিত হবার খুশীতে তার ফেরার মুহুর্তগুলো গুনতাম ।
আজ আর অপেক্ষা শেষ হয়না । কত অপেক্ষা করি আব্বা আর আসেন না ।
জানি, কোনদিন আসবেন না আর এ অপেক্ষা শেষও হবেনা ।
কেননা গত ২৩ জুলাই তিনি আমাদের চিরতরে ছেড়ে চলে গেছেন । আর তাই তাঁর ফোনে কল করা দেখে আমি একটু চমকে গেছিলাম । পরে একটু ধাতস্থ হয়ে দেখি মোবাইলে চাপ লেগে আব্বার নাম্বারে কল চলে গেছে ।আব্বার নাম্বারটি Abba নামে সেভ করা যা এলফাবেটিক্যালি সবার প্রথমে ।আর তাই চাপ লেগে কল ও মেসেজ আব্বার নাম্বারেই চলে যায় ।
এখন ভাবছি আব্বার নাম্বারটা মোবাইলে সেভ থাকুক ।মাঝে মধ্যে কল যাক ।
আর আমি সেটা দেখে বার বার কেঁপে উঠি, আমার প্রিয় আব্বার সেই মমতা মাখানো হ্যালো শব্দটি শোনার বাসনায় আকুল থাকি সারাজীবন ।