একজন লুঙ্গী পরা লিটু মাস্তান কে চিনতাম । আমার শৈশবে তাকে দেখেছি ।
প্যান্ট পরাতে তার ব্যাপক এলার্জি । লুঙ্গী পরে মটরসাইকেল নিয়ে সে এলাকা দাপিয়ে বেড়াত । মটরসাইকেল নিয়ে সে হুদাই কোমর বাঁকিয়ে চালাতো । রাস্তা সোজা কিন্ত তারপরেও সে কোমরটা এমন ভাবে বেকিয়ে চালাতো যে তাকে টার্ন নিতে হবে এখনি ।
ভাব এমন যে জগত সংসারে সেই একমাত্র মানুষ যার উপর মটরসাইকেল চালানোর অহী নাজিল হয়েছে ।সমস্যা আসলে সেটাও না । সমস্যা হল এই লুঙ্গী লিটু বা মটরসাইকেল লিটুর চোখ পড়ে গেল এলাকার ডাকসাইটে সুন্দরীর উপর ।
সুন্দরীদের অনেক অদ্ভুত সমস্যা থাকে । আর এই সুন্দরী পৃথিবীতে আর যাই সহ্য করুক না কেন লুঙ্গী পরা কাউকে দুচোখে দেখতে পারেনা ।
কি ভয়ানক সমস্যা ! শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা লুঙ্গী লিটুর । হয় লুংগি ছাড়ো না হলে সুন্দরী ছাড়ো । বিরাট এক ক্যাচালে পড়ে যায় আমাদের লুঙ্গী লিটু ভাইসাহেব ।
দুরু দুরু পায়ে লুঙ্গী লিটু দর্জির বাড়ী যায় । আবার ফিরে আসে ।
আবার যায় । আবার ফিরে আসে ।
এতদিনের প্রিয় লুঙ্গী ! তাকে ত্যাগ করতে দুঃখে প্রান কাঁদতে থাকে ।
বহুত দোনোমোনো ! শেষতক লুঙ্গীর জয় হল ।
না, এখানে শেষ না । শেষ প্যাঁচটা খেলল লুঙ্গী লিটু ।লুঙ্গীর প্যাঁচ না
সে তো আবার এলাকার বড় মাস্তানের ছোট ভাই, তাই সে ঘোষনা দিল , এই মেয়েকে কেউ বিয়ে করতে পারবে না ।করলে বাসর রাতেই তাকে খুন করে সুন্দরীকে বিধবা করা হবে ।
লুঙ্গি লিটু এই প্যাঁচটা কষে নিজের লুঙ্গিটা ঢিলা করে আরামে ঘুমায় ।
সে ভাবে মানুষ কি বোকা । লুঙ্গির এত যে গুনাগুন তা সব্বাই জানেনা ।তাই সে লুঙ্গির গুনাগুন নিয়ে একটা বই লিখে ফেলতে চায় যদিও লেখাপড়ায় সে কাঁচা তবু এ কাজটা সে করতে চায় । বইটার নাম হতে পারে - - লুঙ্গির ১০০১ টা সুবিধা ।লেখক- -লুঙ্গি লিটু ।
সে একটা কাগজে আঁকাবাকা হাতের লেখায় রাফ করে –
লুঙ্গি পরতে কোন বেল্ট লাগেনা
লুঙ্গি উপরে নীচে বা উল্টা-সঠিক সব রকম পরা যায় অসুবিধা হয়না
লুঙ্গির কোন চেইন বা বোতাম নেই বলে তা লাগানোর ঝামেলা নেই
লুঙ্গি কে সহজে হাফ বা ফুলে রূপান্তরিত করা যায়
লুঙ্গি পরা থাকলে সহজেই শরীরের নীচের ভাগে ভেন্টিলেশন সম্ভব হয়
লুঙ্গি কে সহজে ব্যাগ বা থলে তে রূপান্তরিত করে বাজারপাতি করা যায়
লুঙ্গি কে সহজে শীতের বস্ত্র হিসাবে চালানো সম্ভব
লুঙ্গি কে সহজে পানিতে ভেসে থাকার টিউব বা ভেলা হিসাবে ব্যবহার করা যায়
লুঙ্গির মাধ্যমে সহজে পোশাক পালটানো সম্ভব । - - - - - - - - -
-- - - - এমন হাজারটা যুক্তি আছে লিটুর । এগুলো রাজকন্যাকে বলা দরকার । ও যদি লুংগির সুবিধাসমূহ শোনে তাহলে লুঙ্গির উপর যা তার অবরোধ আছে তা উঠিয়ে নেবে ।
মেয়েটার সাথে দেখা হওয়ার বিষয়টা জরুরী হয়ে পড়েছে । তাই সে একটা প্লে কাট লুঙ্গি কেনে যার দাম প্রায় হাজার দুয়েক টাকা ।পুরানা ঢাকার টাকাওয়ালারা যে গুলো পরে থাকে। সাথে লাল টাইপ একটা সার্ট ।লাল সার্ট পরার কারন হল এই সার্টে তাকে নাকি সবচে ভাল দেখায় ।অবশ্য এ কথা বলেছে ওর একান্ত চামচা লিটন ।
সে তো বলেই ফেলল – উস্তাদ , আপনারে তো একবারে মিঠুন চক্রবর্তির মত লাগছে । ওর ছোট ভাই হিসাবে চালায় দেয়া যায় ।খালি আপনার হাইট টা যদি আর ফুটখানেক বেশী হইতো ।আহা রে ।
আল্লাহর এইডা কোন বিচার হইল ! চেহারা দিলা মিঠুনের মাগার হাইট দিলা না ।
লিটুরও মন খারাপ হয়ে যায় । ধুর ! আর একটু লম্বা বানালে কি হত ?
লুঙ্গি লিটুর বাপ-ভাইয়ের প্রচুর টাকা পয়সা আছে মানে তারই আছে বলে সে ভাবে ।বাপ ভাই তো আর পর না ।সে জন্য বড় যন্ত্রনার লেখাপড়া তাকে কষ্ট করে করতে হয়নি ঐ এইট নাইন পর্যন্তই । একটু বড় হতেই একটা মটর সাইকেল বাড়ী থেকে পেয়ে গেছে । ওটাই চালিয়ে বেড়ায় । ও যখন এসব চালিয়ে বেড়ায় তখন এলাকায় হাতে গোনা মাত্র দুই-একটা মটর সাইকেল ঘুরাফিরা করে । সে জন্য তাকে অনেকেই সমীহ করে । সবাই দেখে একটা মানুষ সারক্ষন লুঙ্গি পরে থাকে ।কোন কারনে লুঙ্গির বদলে প্যান্ট পরে না । এতে এলাকার লুঙ্গি পরা জনতা লিটুকে খুব আপন ভাবে । এতে করে লিটু লুঙ্গি পরার আরো উৎসাহ পায় ।
সব ঠিক আছে । কিন্ত ঐ যে রাজকন্যা , তাকে সে কিভাবে বলবে মনের কথা ।
যে মেয়ে লুঙ্গির মত এমন একটা উত্তম বিষয় কে পছন্দ করছে না তার সাথে সে কিভাবে দেখা করবে ! বিরাট একটা সমস্যা । সমস্যা আরো আছে ।তার প্রেমের রাস্তায় কেউ আসলে তাকে তো খুনের হুমকি দেয়াই আছে ।তদসত্বেও একটা কানাঘুষা আছে যে এলাকার কারো সাথে কিছু একটা কিছু হয়েছে ।সেই ছেলের একটা চিঠি রাজকন্যার বড় বোনের হাতে পড়েছে ।বাসায় একটু বাতাস গরম ।
এই খবর দিয়েছে রাজকন্যার বাড়িতে কাজ করে রত্না ।
--লিটু ভাই, আপনার মনের মানুষ কিন্ত অন্য কারো হয়ে যাচ্ছে ।কিছু একটা করেন ।
-- কার এত্ত সাহস ! কে এইডা ?বলতো ।
-- এইডা কে তা তো জানা যাচ্ছে না । তয় হইছে কিছু একটা । আমি জানলে আপনারে জানায় দিবানে ।
লিটু একটা একশ টাকার নোট রত্নার হাতের মধ্যে চালান করে দেয় ।
লিটুর চিন্তা আরো এক ধাপ বাড়লো । এক লুঙ্গি সমস্যা তার উপর কোত্থেকে এক রেডিমেড প্রেমিক হাজির হল । ও নিজেই এখন রাজকন্যার সামনে দাঁড়াতে পারলো না ।
লুঙ্গি লিটুর কিছু ভাল লাগেনা ।
রাজকন্যাকে প্রায় রিকশায় আসতে যেতে দেখে । ও দূর থেকে মটর সাইকেল নিয়ে ওকে ফলো করে ।রাজকন্যা ভয়ে জড়সড় হয়ে থাকে ।
একদিন কলেজ যাওয়ার পথে লুঙ্গি লিটু মটর সাইকেলখানা দাড় করিয়ে , একটা গাছের ছায়ায় নিজেকে তিন ভাঁজ দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রাজকন্যাকে থামিয়ে কিছু বলবে । আজ তাকে বলতেই হবে ।
রিকশা আসছে , হ্রদয়সহ হাত পা এমনভাবে কাঁপতে শুরু করল যে মনে হচ্ছে শালার লুঙ্গিই খুলে পড়ে যাবে । একটাই ভরসা ।সে লুঙ্গির নীচে গোপন পকেট ওয়ালা হাফ প্যান্ট পরে । ঐ পকেটে একটা পাঁচশো টাকার নোট ছোট্ট ভাঁজ করে রাখা থাকে ।ইমার্জেন্সির জন্য । একবার ভীষণ বিপদে পড়েছিল মটরবাইক নিয়ে । কোন এক অচেনা দূর গ্রাম থেকে আসবার সময় রাস্তায় একজনের ছাগলের বাচ্চার উপর দিয়ে চালিয়ে দিয়েছিল বাইকখানা। এলাকাবাসি খেপে গিয়ে দু এক ঘা দিয়ে ফেলেছিল । তারা মেরে তার মানিব্যাগ থেকে টাকা পয়সা তা প্রায় হাজার দুয়েক টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছিল ।কোনক্রমে পালিয়ে এসে পরে ঐ গোপন টাকা দিয়ে পেইন কিলার, প্যারাসিটামল আর খাবার কিনে তবে বাড়ী ফেরে ।
রিক্সা কাছে আসতেই কোনক্রমে হাত উঁচিয়ে থামালো লিটু ।
কলেজে যাচ্ছে রাজকন্যা । আকাশী কালারের ড্রেসে রাজকন্যাকে আজ এক্কেবারে পরীর মত লাগছে । লিটু তো ওকে দেখে মুখে আর কথা নেই ।
- কি ব্যাপার , রিক্সা থামালেন কেন ?
- তোমার সাথে কথা আছে । জরুরী কথা ।
- জরুরী কথা ? আমার সাথে ? শোনেন, এইভাবে রাস্তায় একজন লুঙ্গি পরা মানুষের সাথে আমি কথা বলি না, লুঙ্গি পরা মানুষ আমি দু চোখে দেখতে পারিনা । আর তাছাড়া আপনি যা বলবেন তা একজন অলরেডি বলে ফেলেছে । আশা করি আপনি আপনার রাস্তায় চলবেন । আমায় আর বিরক্ত না করলে খুশি হব ।
লুঙ্গি লিটুর মাথা ভোঁ ভোঁ করতে থাকে । রিক্সা চলে গেলেও ও দাঁড়িয়ে থাকে । রাগে ক্ষোভে ওর সারা শরীর কাঁপতে থাকে ।লুঙ্গিটা শক্ত করে গিট দেয় । ওর সব রাগ গিয়ে পড়ে সেই না দেখা ছেলেটির উপর যে কিনা রাজকন্যাকে অলরেডি সব প্রেমের কথা বলে ফেলেছে । কে সে ? খুজেঁ বের করতেই হবে
চারিদিকে খোঁজ পড়ে গেল ।স্পাই লাগানো হল ।
লুঙ্গি লিটু মন খারাপ করে বসে থাকে । হটাৎ একদিন সন্ধ্যায় খবর আসে – বাছাধনকে পাওয়া গেছে ।ওরা দলবল বেঁধে রাজকন্যাদের বাড়ীর রাস্তায় ওৎ পেতে থাকে । রত্না মারফৎ খবর ছিল যে এলাকায় নতুন একটা সুন্দর ছেলে সে প্রায় রাজকন্যাদের বাড়ী যাচ্ছে । ওকেই ধরতে হবে ।
রাত ন’টার দিকে পাওয়া গেল চান্দুকে । একটু ফাঁকা হতেই ওকে ঘিরে ফেলা হল । কেউ কেউ ছুরি-টুরি বের করে ফেলেছে । ছেলেটা ঘটনার আকস্মিকতায় একবারে হতবিহব্বল । লুঙ্গি লিটুর চামচা গ্রুপ হেব্বি ধমকধামক দিতে শুরু করেছে ।পরে ছেলেটি বুঝলো এটা একটা প্রেমের কেস । সে তখন লুঙ্গি লিটুকে আশ্বস্ত করলো যে সে ঐ ছেলে না ।
বরং সেও তাকে খুজছে ।যদি জানতে পারে তাহলে লিটুকে সে অবশ্যই জানিয়ে হেল্প করবে । এত নামিদামী লুঙ্গি লিটু ভাইকে এ প্রেম করিয়ে দেবার ওয়াদা করে কোন রকমে প্রাণটা নিয়ে বাড়ী ফিরে গেল। ওদিকে লুঙ্গি লিটু পড়ল দারুন সমস্যায় । কে এই ছেলে ??
ছায়ার সাথে তো যুদ্ধ হয়না ।ওদিকে রাজকন্যা সেই ছেলের জন্য দিওয়ানা ।
কি করবে ভেবে পায়না সে ।
কিন্ত তাতে অবশ্য তার লুঙ্গি পরা বন্ধ থাকেনা । কোমর বাঁকিয়ে মটর সাইকেল চালনাও বন্ধ থাকেনা ।সবই চলতে থাকে ।
শুধু লুঙ্গি লিটুর বুকের মধ্যে জ্বলতে থাকে এক প্রতিশোধের আগুন ।
(ঘটনা কিন্ত সত্যি । বহুদিন অবশ্য লুঙ্গি লিটুর খবর জানিনা, তবে রাজকন্যারটা জানি)