ইতিহাসের পাঠ দিও না, আমরা জানি তোমরা কি শেখাতে চেয়েছো
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আমরা যারা সামহোয়ার ইন ব্লগে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালিখি করি, তাদের মাঝে মাঝে দারুণ সব সুপারিশ মিলে। বিশেষ কিছু লাইন চিহ্নিত করে আমাদের বলা হয়, এই জায়গাটি বা এই বিষয়টি সম্পর্কে পাঠকেদর ভুল জ্ঞান দেওয়া হচ্ছে। এবং কোন বইয়ে সত্যিকার উপাত্ত মিলবে তার নামও রেফার করা হয়। সম্প্রতি মিরাজকে তার স্টিকি পোস্টে এমনই এক রেফারেন্স দিয়েছেন এক ব্লগার। স্বাধীনতার শহীদের সংখ্যা যে তিরিশ লাখ নয়, আসলে অনেক কম, সেটা জানার জন্য তাকে তিরিশ লাখের তেলেসামাতি নামে একটি বই পড়ার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরেকজন বলেছেন আরেক বইয়ের কথা, লেখকের যে নাম ও বর্ননা দিয়েছেন (মুজিব নগর সরকারের ভ্রাম্যমান রাষ্ট্রদূত) তার কোনো হদিস গোটা সরকারী দলিল চষে খুজে পেলাম না।
বলা বাহুল্য এই উপদেশদাতারা একটি বিশেষ ঘরানার প্রতিনিধিত্ব করে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলাপ তাদের গায়ে জ্বালা ধরায় বলেই তারা অতীত নিয়ে না থেকে ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার তাগিদ জানায়। সেই ভবিষ্যত কি জানতে চাইলে তারা সৎ লোকের শাসনের ব্যাপারে উৎসাহিত করে। ঘুরেফিরে স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে দেশের ভার তুলে দেওয়ার প্ররোচনা যোগায়।
এ ব্যাপারে একদফা অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে। ১৯৯১ সালের প্রথম দফাটা বেশ মৃদু ছিলো বলেই তা আপাত উপেক্ষিত। ২০০১ সালেরটাই জোরালো। বিএনপির কাধে চেপে সরকারের অংশ হওয়া এই জামায়াতে ইসলামী নামের সিন্দবাদের দৈত্য সুযোগটা দারুণভাবেই লুফে নিয়েছিলো। তাদের প্রথম কাজই ছিলো মুক্তিযুদ্ধে তাদের যা কিছু অবদান তা সবিস্তারে মুছে ফেলা। সময়টায় রাজাকার আল-বদর এবং জামাত শব্দগুলি হাওয়া হয়ে গেছে পাঠ্যবাই থেকে। সুবাদেই যারা সে সময়কালে শিক্ষার্থী ছিলো তারা জামায়াতে ইসলামীর ফুলের মতো চরিত্রের ঘ্রাণ নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় মহাবিদ্যালয়গুলোতে পা রেখেছে। এদের অনেকেই হয়তো ব্লগে লিখে, এবং কুতর্কে প্রবৃত্ত হয়। এর আগে ৯৭ সালে জামাতে ইসলামী ও শিক্ষাবোর্ডের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলো পাঠ্যবইয়ে রাজাকার আলবদরদের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে। আদালত খারিজ করে দিয়েছিলো তা।
এই ঘৃণ্য অভিযানে আরেকটি বড় ধরনের অন্যায় তারা করেছিলো। সেবার তারা সরকারী উদ্যোগে কোটি টাকার প্রজেক্ট হাতে নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলেজ এবং সাধারণ লাইব্রেরীগুলোয় বিভিন্ন বই পাঠায়। বিভিন্ন লেখকের লেখা জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়ার ৫২টি আত্মজীবনীর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে মাত্র তিনটি বই বরাদ্দ করে তারা। প্রফেসর নিসার উদ্দিনের লেখা বাংলাদেশের কামাল আতাতুর্ক প্রেসিডেন্ট জিয়া এবং সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনর লেখা বইয়ের সঙ্গে তারা রেফারেন্স বই হিসেবে যুক্ত করে জেনারেল রাও ফরমান আলীর লেখা দ্য বার্থ অব বাংলাদেশ!
রাও ফরমান আলী কে আপনারা জানেন তো? ২৫ মার্চ রাতের কুখ্যাত গণহত্যার রূপকার রাও ফরমান আলী। শান্তি কমিটির প্রবক্তা রাও ফরমান আলী। আলবদরদের দিয়ে ১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবি হত্যার নির্দেশদাতা রাও ফরমান আলী। পালিয়ে যাওয়ার পর যার ডায়েরিতে পাওয়া গেছে বুদ্ধিজীবিদের তালিকা। যেখানে আরেক পাতায় লেখা পূর্ব পাকিস্তানের সবুজ জমিন লাল করে দিতে হবে। সেই লোক বই লিখেছেন, আর সেটা আমাদের শিক্ষার্থীদের উপর রীতিমতো নির্দেশ জারি করে পড়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
গোলাম আযমদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, মুজাহিদ-নিজামী-কামারুজ্জামানরা নিয়মিত তার কাছ থেকে নির্দেশ-অস্ত্র আর টাকা পয়সা নিয়ে এসেছে। গুরুকে প্রতিষ্ঠার মতো নির্মম রসিকতাটা তাই জামাতের পক্ষেই শোভা পায়। শোভা পায় তাদের উত্তরসূরীদের মুখে সেই সুপারিশ- ইতিহাস পড়ুন, পড়ুন আমাদের মতো করে। এবং আমরা তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করি।
পরিশেষে ব্লগে সম্প্রতি যারা জ্ঞানের অশেষ ভাণ্ডার নিয়ে এসেছেন। এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীদের মষ্তিষ্কের গ্রে মেটার নিয়ে বিশেষ চিন্তিত, তাদের বলি। স্যারেরা, বেসিক পাঠে ভীষণ গোলমাল রয়ে গেছে। একজন শিক্ষার্থী সঠিক ইতিহাস জানার মধ্যে দিয়েই জাত্যাভিমানের পাঠ নেয়। নিজেকে একজন বাঙালী এবং একাত্তর নিয়ে গর্বিত হওয়ার সুযোগটা যদি শুরুতেই কেড়ে নেয়া হয়, শত্রু সম্পর্কে তাকে অন্ধকারে রাখা হয়, তাহলে উচ্চতর অধ্যয়নে সমস্যাটা আরো প্রকট হবে। এই ছেলেটাই তো একদিন রাজনীতি করবে, সচিব হবে, ব্যবসা করবে, দেশ চালাবে- তাকে শুধরানোর বেসিক পাঠে মন দিন আগে। পরেরটা পরে।
ফুটেজ : রাও ফরমান আলী বিদেশী মিডিয়ায় দেয়া সাক্ষাতকারে অস্বীকার করছেন পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর বর্বরতার কথা। এই মিথ্যুকের বয়ান পড়েই আমাদের এক প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ভুল পাঠ।
কৃতজ্ঞতা : জন্মযুদ্ধ
৪১টি মন্তব্য ৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া
১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মিশন: কাঁসার থালা–বাটি
বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।