মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সালাম জানবেন। আপনি ও আপনার দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় একশ দিনেরও বেশী পার করে দিয়েছেন। স্বস্তিভরেই জানছি এত বিঘ্নের পরও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে। বিডিআর বিদ্রোহ ও সুবাদে সেনাবাহিনীতে অস্থিরতা কোনোমতে হয়তো সামাল দেওয়া গেছে। কিন্তু ঘরের কোণে যে আগুন লেগেছে সেটা নেভানোটা এই মুহূর্তে টপ প্রায়োরিটি হয়ে দাড়িয়েছে।
আমরা খুবই উদ্বেগ নিয়ে দেখছি একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলছে। একের পর এক ছাত্র সংঘাতে একটি অবশ্যম্ভাবী পক্ষ হয়ে দাড়িয়েছে ছাত্রলীগ। তার চেয়েও বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে কিছু জায়গায় প্রতিপক্ষও ছাত্রলীগ! কদিন আগেই ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিহত হয়েছে একজন হবু চিকিৎসক। গতকাল একই ঘটনা ঘটলো বরিশাল মেডিকেলে। আধিপত্য বিস্তারের নামে জয় বাংলা শ্লোগান নিয়ে এই যে ভাতৃঘাতি সংঘর্ষে জড়ানো- এতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চরম অবমাননা হয়। কারণ যে ঐতিহ্য নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলো, তার ছিটেফোটাও ধারণ করে না এইসব ছাত্র নামধারী গুন্ডারা।
ছাত্রলীগের একসময়কার একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবেই আমার জানা আছে এই অন্তঃকোন্দলের ইতিহাস। নব্বই দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলেছিলো গোপালগঞ্জ, বরিশাল এবং থার্ড ওয়ার্ল্ড গ্রুপ। আর তাতে ইন্ধন জুগিয়ে গেছেন যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের একদল নেতা। চট্টগ্রামে আখতারুজ্জামান বাবু ও মহিউদ্দিন চৌধুরী সমর্থিত ছাত্রলীগের রক্তারক্তির ছিটে আমারও হাতে লেগেছে। শিবির অধ্যুষিত চট্টগ্রাম কলেজ ও প্যারেড গ্রাউন্ডের সামনে দিয়ে আমরা নিরাপদেই চলাফেরা করেছি। কিন্তু ওআর নিজাম রোডের আশেপাশে যাওয়া ছিলো নিষিদ্ধ। জেলাভিত্তিক ও নেতাভিত্তিক এই গ্রুপিংয়ের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্বে সমস্যা করে স্থানীয় ও বহিরাগত বিভেদ। লোকাল ছেলে সে যতই অপগন্ড হোক, তাকেই নেতা করতে হবে- এই অহমের লড়াই আমার জানা মতে দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই দলকে টুকরো করে দিচ্ছে।
একজন ছাত্র যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে এবং রাজনীতিতে আসতে চায় কিংবা রাজনৈতিক চর্চা করতে চায়, তাহলে তার আদর্শ হওয়া উচিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। কিন্তু সে শর্ত স্বাধীনতার পর কোনো কালেই পালন করতে পারেনি তারা। এই যে আধিপত্যের লড়াই, তা নিতান্তই চাদাবাজি ও টেন্ডারের বখরার জন্যে। ডাইনিংয়ে ফাও খাওয়ার জন্য। অনুগতদের চিরকুট লিখে মার্কেটে পাঠিয়ে ইচ্ছেমতো জামা-জুতো নিয়ে আসার তাগদের জন্য। পরীক্ষায় পাসের জন্য লেখাপড়ার প্রয়োজন নেই, সংশ্লিষ্ঠ শিক্ষককে ফোনে হুমকি দিলেই হয়ে যায়। এই যে লোভনীয় সব প্রাপ্তি একজন হালের ছাত্রনেতার জন্য বরাদ্দ থাকে, সেটার জন্যই এই মরিয়াপনা। আমরা এও দেখেছি কোনো কোনো ছাত্রনেতার ছেলেপুলেও একই প্রতিষ্ঠানে ছাত্র হয়ে আসে, কিন্তু নেতার আসন টলে না। বখরা কমে না। এসব বন্ধ করুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
আপনি অভিমান করে দলের সাংগঠনিক নেতৃত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু তার থোড়াই পরোয়া করে এরা। সেদিন আপনার এক মন্ত্রী তো বলেই ফেললেন, নেত্রী যখন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তখন এই ছাত্রলীগের কোনো নেতাকে দেখা যায়নি একটা মিছিল আয়োজন করতে। আর এখন তাদের দাপটে টেকা দায়। এটা অতীব সত্য কথন। তৃণমূল পর্যায়ের সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যে ঐতিহ্য রয়েছে, তাতে বিষফোড়ার মতো হয়ে দাড়িয়েছে ছাত্রলীগ। সময় এসেছে শল্য চিকিৎসার। আর তা দক্ষ কিন্তু নির্মম হাতে আপনাকেই করতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
উপজেলা চেয়ারম্যানদের সঙ্গে ক্ষমতার লড়াইয়ে না নামিয়ে বরং আপনারি সাংসদদের বলুন তাদের নির্বাচনী এলাকাগুলোয় ছাত্রলীগকে নিয়ে বসতে। তারপর ঝামেলাবাজদের চিরতরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করুন। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নিয়ে আসুন একদম নতুন মুখ। প্রতিবাদ করলে সরাসরি বহিষ্কার। এসব দুষ্ট গরুই প্রকারান্তরে পিঠে ছুরি মারছে আওয়ামী লীগের। যারা ধান্দা ছাড়া আর কোনো মানেই জানে না রাজনীতির। যদি প্রতিটি জেলায় একশ জনে শুধু দশজন জেনুইন ছাত্রলীগ পাওয়া যায়, তাদের নিয়েই এগিয়ে যান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
যেভাবে ঘটনা ঘটছে তাতে সরকারের পতনের জন্য বিরোধী দলের প্রয়োজন হবে না। দখলদারি, খুন-জখম করে দেশটা অচল করে দেবে এই সব কুলাঙ্গাররা। সময় থাকতে ঠেকান প্রধানমন্ত্রী, কঠোর হাতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:০২