somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিউনারেল ব্লুজ !

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৫:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল, ১৫/০৪/২০১৫, বুধবার দুপুর ২টায় (ফোনালাপে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ি) গাউছিয়া হক কমিটি কেন্দ্রিয় শাখার সাধারন সম্পাদক জনাব জামাল আহমেদ শিকদার ইন্তেকাল করেছেন।

ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন!

জামাল শিকদার, যাকে আমি অনেক ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি এবং যাকে "শিকদার নানা" বলে সম্বোধন করে আসছি, উনি মারা গেছেন। খবরটা হজম করতে আমার একটু সময় লেগেছে। জামাল শিকদারকে দেখলে আমার প্রায়ই বটবৃক্ষের কথা মনে হত। বটবৃক্ষের কখনো বয়স বাড়ে না। বটবৃক্ষ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে ছায়া হয়ে, আশ্রয় হয়ে, ঐতিহ্য হয়ে। বটবৃক্ষের অমোঘ অপরিবর্তনীয়তার মতই ধ্রুব ছিলেন জামাল শিকদার; অন্তত আমার কাছে। সাম্প্রতিক সময়ে শারীরিক অসামর্থ্যতার কারণে হয়ত তার অনুপস্হিতি নিত্যদিনকার প্রাত্যহিকতায় তেমন দৃষ্টিগোচর হবে না কিন্তু তাঁর শুন্যতা ঠিকই হাড়ে হাড়ে টের পাবেন বিজ্ঞ জনেরা।

অনেক ছোটবেলা থেকেই চেনা হলেও তাঁর সাথে আমার মিথষ্ক্রিয়া, যাকে বলে "ইন্টারেকশন", সেটা হয় অনেক পরে এসে। তখন আমি কলেজে পড়ি। একদিন হাফেজ আবুল কালাম মারফত খবর পেলাম আমাকে ডাকা হইছে একটা মিটিং-এ। একটা কম্পিউটার কম্পোজ করা চিঠি যাতে আমার নামটা হস্তাক্ষরে লেখা। জীবনে এর আগে এত সম্মান করে কেও মিটিং -এ ডাকে নাই। একটা ছেলেমানুষি গাম্ভীর্য নিয়ে যাই দেখা করতে। বলার অপেক্ষা রাখেনা মিটিংটা ডেকেছিলেন আর কেও না এই জামাল আহমেদ শিকদার। তিনি পাঁচটা চিঠি ইস্যু করেছিলেন আমি আর হাফেজ কালাম ছাড়া চিঠির প্রাপক ছিলো মোজাম্মেল আহমেদ, এইচ আর মেহবুব, নুরুল আতাহার আসিফ। শেষোক্ত দু'জন অবশ্য আলোচ্য মিটিং-এ ছিলোনা। মিটিং শেষ করে যখন ফিরছি তখন আমার মনে রাজ্যের বিস্ময়। জামাল শিকদার তাঁর পরিকল্পনা দিয়ে আমাকে মুগ্ধ করতে পেরেছিলেন। সেদিন প্রথমবারের মত তিনি যে পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছিলেন সেটাকে আমরা এখন শিশু কিশোর সমাবেশ হিসেবে চিনি। মাইজভান্ডারি দর্শন ও ঘরনার ভবিষ্যত সম্বৃদ্ধিতে নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণের প্রয়োজনিয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন তিনিই প্রথম। আর আমকে তিনি এনে দিয়েছিলেন বৈপ্লবিক ইতিহাসের সৃষ্টিলগ্নের স্বাক্ষি হওয়ার দূর্লভ সুযোগ। নিজ ক্ষুদ্রতার কারণেই তাঁর সেবারের পরিকল্পনায় আমি থাকতে পারিনি। তাতে অবশ্য তাঁকে থামানো যায়নি তিনি ঠিকই করে দেখিয়েছিলেন। তাঁর সাথে সেদিনের সেই আলাপ এবং পরবর্তিতে শিশু কিশোর সমাবেশ দেখে আমাদের ভাবনা জাগে দরবারি ঘরণার তরুণদের নিয়ে মুক্ত বুদ্ধির একটা যুব সংগঠনের যেটাকে পরবর্তিতে রাহবারে আলম মওলা হুজুর মাইজভান্ডারি (ক.) নাম দেন "তাজকিয়া"।

কিন্তু আমার মুগ্ধতা শিশু কিশোর সমাবেশের পরিকল্পনা শুনে হয়নি, আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম মাইজভান্ডারি দর্শনের তাঁর ইন্টারপ্রিটেশন এবং মওলার খেদমত করার তাঁর স্বকিয় পদ্ধতি দেখে। তিনি প্রগতিশীল ভক্তি চর্চার পুরোধা ব্যাক্তিত্য। তাঁর লেখনি, সংগঠন চিন্তা, হক মজ্ঞিলের বৈষয়িক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আশেককুলের মধ্যে সম্প্রিতি প্রতিষ্টা তাঁর লিগেসি হয়ে থাকবে।

জামাল শিকদার মাইজভান্ডার এসেছিলেন অসি-এ-গাউছুল আজম হযরত সৈয়দ দেলাওয়ার হোসাইন মাইজভান্ডারির (ক.) চরনে। অসি-এ-গাউছুল আজম এর নিয়মতান্ত্রিকতা এবং সংঘবদ্ধতার প্রতি গুরত্বারোপ তাঁকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে এবং তাঁর জীবন দর্শন গঠন করে। তৎস্বত্বেও তাঁর ভক্তির সকল অর্ঘ্য তিনি মূলত সঁপে ছিলেন শাহানশাহ হযরত সৈ্য়দ জিয়াউল হক্‌ মাইজভান্ডারিকে (ক.)। শাহানশাহ মাইজভান্ডারির ভাবনা ছিলো তাঁর আনন্দ এবং তাঁর কথা প্রচার ছিলো তাঁর উপাসনা। পরমসাধকের পদচিহ্ন ধারণ করতে করতে তিনি যেনো নিজেই গুপ্ত সাধক। অন্ত:র্দৃষ্টি উন্মোক্ত এই অনাড়ম্বর প্রি্য় মানুষটি শেষ কটা বছর কাটিয়েছিলেন দৃষ্টিহীন। শান্তি কুন্জের তিন তলার কোনার রুমটাতে যখনই যেতাম দেখতাম তিনি আলাপরত আছেন কারো না কারো সাথে। তাঁর ব্যাক্তিগত পরিচারক বই-খবরের কাগজ পড়ে শোনাত তাঁকে আর জানালার পানে দৃষ্টিহীন চোখ মেলে তিনি চেয়ে থাকতেন কোন সূদূরে। সেই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে তিনি চলে গেছেন তাঁর পরম প্রিয়ের কাছে।
তাঁর প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।

অন্তু নূর।
১৬/০৪/২০১৫।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×