somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সারপ্রাইজ

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দশ মিনিট হয়ে গ্যাছে, সজীব চুপচাপ বসে আছে। নামিরাও চুপচাপ বসে আছে সজীবের মুখোমুখি। সজীবের কেন যেন মনে হচ্ছে নামিরা ওর সাথে দুষ্টুমি করছে। নামিরা নিরবতা ভেঙে বললো, “ সজীব ভাইয়া, আমার ওপর প্লিজ রাগ করবেন না। অফিসের এইচ আর হিসেবে আমাকেই এই কথাটা আপানাকে বলতে হচ্ছে” সজীব কিছু না বলে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে উঠে পড়লো, ফিরে এলো নিজের ডেস্কে। এটা কিভাবে সম্ভব! সজীব গত একটা বছর ধরে এই অফিসে কাজ করে যাচ্ছে। সবাই মোটামুটি ওর কাজে খুশি। নিরব তো প্রায়ই বলে যে সজীবের খুব শিঘ্রী প্রমোশন হবে এতে সে নিশ্চিত। কিভাবে ওর চাকরী চলে যেতে পারে! হাতে ধরা খামটা খুলতেও ইচ্ছে হচ্ছে না। নামিরা বলেছে রাশেদ স্যার ওর নামে কমপ্লেইন করেছে! সজীব একটা দিনও ঠিক সময়ে অফিসে আসেনি। কিন্তু কোন ওয়ার্নিং ছাড়া শুধু এই কারনে রাশেদ স্যার এমন করতে পারলো! সেই রাশেদ স্যার যার সাথে সজীবের এতো বন্ধুত্বপূর্ন একটা সম্পর্ক! কিছুতেই কিছু মেলাতে পারলো না সজীব! কাল সকালে এসে ওকে সব কাজ গুছিয়ে দিতে হবে। একটা দিন আগে কিভাবে ওরা স্যাক করতে পারে? নাহ, মাথাটা পুরো গরম হয়ে গেছে সজীবের। কাউকে কিছু না বলে সজীব চলে এলো বাসায় তিনটার দিকেই।

বাসায় এসেই গোসল করে ফেললো ও যাতে মাথাটা একটু ঠান্ডা হয়। কিন্তু কিসের কী! উল্টো আরো গরম হয়ে গেলো মাথাটা। ইচ্ছে করছে কাচের গ্লাসগুলো ভেঙে গুড়ো করতে। সব রাগ কেন যেন লাগলো রাশেদ স্যারের ওপর। উনি এভাবে অপমান করতে পারলেন! এর আগে দুইটা অফিসে কাজ করেছে সজীব। দুটোতেই চলে যাবার আগে সবাই ফেয়ার ওয়েল দিয়েছে। ওরা কেউই সজীবকে যেতে দিতে চায়নি। আর এরা এতোটা অপমান করার সাহস পায় কিভাবে? রাশেদ স্যার আজ ওর সাথে একটা কথাও বলেনি। অথচ প্রতিদিন ওরা একসাথে লাঞ্চ করে। কোন যোগ্যতা ছাড়াই এই লোকটা অফিসের এতো বড় একটা পোষ্ট দখল করে আছে, আর এই সত্যটা সজীব জানে। অফিসের বাকি একটা লোকও জানে না রাশেদ স্যারের পোষ্ট গ্যাজুয়েশন ডিগ্রীও নেই। উনি এখন ইষ্ট ওয়েষ্ট ইউনিভার্সিটিতে ইএমবিএ করছেন। সজীবকে এতোকিছু খুলে বলার একটাই কারন, স্যার সজীবকে দিয়েই তাঁর সব অ্যাসাইনমেন্ট করিয়ে নিত। আর সজীব এই গোপনীয়তাটা খুব ভালোভাবেই বজায় রাখতো এতোদিন পর্যন্ত। তাহলে কি এই জন্যই রাসেদ স্যার ওকে তাড়িয়ে দিচ্ছে? এতোটা ছোটলোক হতে পারে কেউ! কাল যদি অফিসে ওর শেষ দিন হয়, তবে, কালই হবে সব গোপনীয়তার ধর্ষণ। এটা ভেবে একটু মাথাটা ঠান্ডা হলো সজীবের।

পরদিন সকালে অফিসের সামনে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো সজীব। সবাই এতোক্ষনে নিশ্চই জেনে গেছে যে সজীবকে স্যাক করা হয়েছে। কি লজ্জা! কি লজ্জা। ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকলো সজীব। সবাই খুব স্বাভাবিক আচরন করছে দেখে বেশ অবাকই লাগলো ওর। মানুষজন এতো ভালোভাবে মনের ভাব লুকোতে পারে আজকাল! ডেস্কের কাগজপত্র, ল্যাপটপ এর মধ্যেই উধাও। সজীব রনিকে ডেকে পেনড্রাইভটা তার হাতে দিয়ে বললো, “ রনি, এখানে রাশেদ স্যারের এম বি এ এর অ্যাসাইনমেন্ট আছে, একটু প্রিন্ট করে দেন” রনির মুখের ভাব দেখে খুব আনন্দ পেল সজীব। ও ঠিক যেরকম আশা করেছিলো তেমনই ছিলো রনির মুখটা। লাঞ্চ এর সময় রফিক ভাই আর মনিকা এসে চুপিচুপি সজীবের কাছে এ ব্যাপারে যখন জানতে চাইলো তখন সজীবের ষোলকলা পূর্ণ হয়ে গেছে। আজ আর কোন ক্ষোভ নেই ওর।
নামিরাকে ডেস্কের চাবিটা দেয়ার সময় শেষ ঝামেলাটা বাঁধলো। রাশেদ স্যার ডেকে পাঠিয়েছেন সজীবকে। নিশ্চই উনার কানে কোনভাবে ব্যাপারটা চলে গ্যাছে। তাতে কী? ভয় পায় নাকি সজীব? চাকরীটা তো আগেই চলে গ্যাছে। তবু স্যারের চোখের দিকে কেন যেন তাকাতে পারছিলো না সজীব। স্যার বসতে পর্যন্ত বললেন না। হাত ধরে যখন রুমের বাইরে নিয়ে গেলেন তখন পা কাঁপছিলো সজীবের। তারপর যা হলো তা সজীবের কল্পনার বাইরে... নামিরা ততক্ষনে অফিসের সবাইকে ডেকে এনেছে। স্যার সজীবের কাঁধে হাত রেখে অ্যানাউন্স করলেন, এখন থেকে সিনিয়র এডিটর হিসেবে কাজ করবে ও। গতকাল যে ছোট্ট একটা নাটক সাজানো হয়েছিলো সজীবকে আজকের সারপ্রাইজটা দেয়ার জন্য এটা বুঝতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো ওর। কিন্তু আজ সকাল থেকে ও যা করলো তার সারপ্রাইজটা রাশেদ স্যার যখন পাবেন তখন কেমন লাগবে সজীবের?

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×