somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবিশ্বাসী অনুভুতি !

১৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৩:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খা খা রোদের মধ্যে হেঁটে বেড়াচ্ছে শান্তনু । সময় এখন দুপুর ২ টা কিন্তু এই পর্যন্ত সে কিছু খায় নি । প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে ওর । দেখতে ছিমছিমে আর নাক খাড়া করা চেহারা তার । কিছুক্ষণ পরপর মোবাইল বের করে ঘড়ি দেখছে সে । দাঁড়িয়ে আছে শাহবাগ গ্রন্থাগারের সামনে । এখানেই তার খুব খুব কাছের একটা বন্ধুর আসার কথা কিন্তু সে এখনো আসছে না । অগত্যা কিছু করতে না পেরে চারুকলার পাশে থাকা বইয়ের দোকানগুলোতে ঘুরতে লাগলো সে । আরো আধা ঘণ্টা পরে হঠাত কে যেনো পেছন থেকে ডাক দিলো , “ এই শান্তনু , বেয়াদব , এদিকে তুই আর আমি তোকে খুজছি সেই ১০ মিনিট ধরে । “
শান্তনু কিছু বলে না না সে অনেক আগেই এসেছে । বললো , “ না , বই দেখছিলাম । দেখ , হিমুসমগ্র কিনতে ইচ্ছে করছে কিন্তু টাকা নেই । “
-“ আরে বাদ দে তোর হিমু সমগ্র । আরে শোন একটা মজার ঘটনা । আজকে মার্কেটে গিয়েছিলাম দিনার সাথে । যা মজা হলো না । “
শান্তনু জানে এখন তার এসব কথা এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে দিলেই ভালো হয় ! কারণ মেয়ে মানুষের এই একটা সমস্যা । একটা কিছু পেলে আর ছাড়ে না । শান্তনু চুপ করে তার বন্ধুর কথা শোনে ।
কারণ ও জানে , ওর নিজের কত্ত কাছের , কত্ত বিশ্বাসের এই বন্ধুটি । কয়েকবার খাওয়ার কথা বলতে গিয়ে বাধা পেয়ে শেষ পর্যন্ত বললো , “ এই আমি কিছু খাই নি । তুই কি খেয়েছিস ? “
-“ আবার জিগায় । দিনা যা একটা খাওয়া দিলো না । আরে জানিস , আজকে ভাইয়া মানে দিনার বয়ফ্রেন্ড এসেছিলো । উনি আমাদের খাওয়ালেন KFC তে ।
শান্তনু বুঝতে পারলো এখন এই ভাইয়ার কথা চলবে আরো কিছুক্ষণ । সে চুপ করে হাঁটতে লাগলো ।
ও , শান্তনুর এই বন্ধুটির নাম বলা হয় নি এখনো । ওর নাম প্রমা । বয়সে শান্তনুর কয়েক মাসের ছোট হবে । শান্তনু যেদিন প্রমার সাথে প্রথম কথা বলে সে ঘুনাক্ষরেও ভাবেনি তার সাথে যে প্রমার এত্তো ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে যাবে ।
শান্তনুর একটা বড় আফসোস ছিলো তার কোন বোন নেই । কিন্তু ওর কাছে প্রমাকে তার আপন বোনের মতোই মনে হয় । প্রতিদিন ক্লাস , আড্ডা , মজা করতে করতে কিভাবে যে শান্তনুর একটা সুন্দর বন্ধুসংঘ জুটিয়ে গেলো সে টেরও পেলো না । ছোটবেলায় শান্তনু অনেকবার শুনেছে মায়ের কাছে , “ তোর একটা বোন থাকলে যে কত্তো ভালো হতো !! “
কেনো ভালো হতো সেই কথা আগে শান্তনু বুঝে নি । তার কাছে মনে হতো ভালো হতো কারণ ছেলে হিসেবে সে মাকে যতটুকু সাহায্য করতে পারে , মেয়ে নিশ্চয়ই মাকে আরো বেশি সাহায্য করতে পারবে ! কিন্তু আস্তে আস্তে সময়ের পথচলায় শান্তনু বুঝতে পারে আসলে বোনের স্নেহ , বোনের ভালোবাসারও আলাদা একটা ব্যাপার থাকে । বোন ভাইকে যেভাবে আগলে রাখে , তার শত অন্যায়গুলোকে মার কাছ থেকে যেভাবে দূরে সরিয়ে দেয় একটা ভাই বা অন্য কেউ তা পারে না !
তার সেই বোনখরা মোচন হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে । খুব আদরের ভাই হিসেবে শান্তনুর পথচলা শুরু হয়ে গেলো নতুন জায়গায় , নতুনভাবে । এখানে কেউ নেই তার পরিবারের , এমনকি দূর সম্পর্কেরও । কিন্তু এত্তো সুন্দর একটা পারিবারিক পরিবেশ অনেকে তো নিজের বাড়িতেও পায় না ।
প্রমা হঠাত করেই শান্তনুকে বললো , “ এই শোন , চল সবাই মিলে একদিন শিশু পার্কে যাই ! “
এই বয়সে শিশুপার্ক যাওয়া উচিত হবে কিনা তা চিন্তা না করেই শান্তনু সায় দিলো । প্রমার গাড়ি আসবে ৪ টার দিকে । সে চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত শান্তনু তার সাথেই থাকবে । ওর কাছে মনে হয় নিজের আপন বোনকে সে জীবনে যেহেতু পায় নি , তাই এই পর্যন্ত জমে থাকা সবটুকু স্নেহ সে প্রমাকেই দিবে !
প্রায় ৪ টার দিকে গাড়ি আসলে প্রমা চলে যায় । এটা রুটিনমাফিক হয়ে গেছে । প্রতিদিন শান্তনুর বন্ধুরা একসাথে যতক্ষন পারে চুটিয়ে আড্ডা দেয় , তারপর যে যার মত মায়ের ছেলে-মেয়ে হয়ে যায় ! মানে সবাই যার যার ঘরে ফিরে যায় । শুধু শান্তনু যায় না । তার পরিবার এই শহরে থাকে না । সবাই চলে যাওয়ার পরে তার মায়ের বলা কথাগুলো ওর কানে বাজে , “ শোন , বেশি বন্ধু জোগাড় করবা না । কারো সাথে ঝগড়া করবে না । রিকশাওয়ালার সাথে ভাড়া নিয়ে তর্ক করবে না । মানুষের অভিশাপ নেয়ার কোন দরকার নেই ! “
মা টা যে কি !! কিচ্ছু বুঝে না , বুঝে না , তার ছেলে এখানে একটা পরিবার গড়ে তুলেছে । সেখানে রোজ আড্ডা হয় , হাসি হয় , মারামারি হয় , দুঃখ পায় , আবার সেই হাসি সবার মাঝে বিলিয়ে আনন্দ পায় বা দুঃখ ভাগ করে সবাই মিলে মন খারাপের গান গায় ! আর শান্তনু কত্ত ভাগ্যবান । এখানে না আসলে কি সভব হতো এত্তো সুন্দর একটা পরিবেশ পাওয়ার । ঢাকার মানুষরা নাকি চার দেয়ালে বন্দি হয়ে আছে । তারা যান্ত্রিক হয়ে গেছে , যেখানে তাদের স্পর্শ করে না কোন আবেগ , হাসায় না কোনা আনন্দ , কাদায় না কোন দুঃখ ! কত্তো বড় মিথ্যে কথা ! মা’কে আসলে দেখানো দরকার ,” দেখো না , ঢাকার মানুষ যান্ত্রিক না । তারাও আবেগ ছোঁয় , তারা স্বার্থপর না , যখন ইচ্ছে তারাও ঝাপিয়ে পরে বন্ধুর জন্য , ভাইয়ের জন্য ।
কয়েকদিন পর পর শান্তনুর মাথায় নানা ভুতুরে চিন্তা আসে , যেমন ক্লাস আগে শেষ হয়ে গেছে । তো কি করা যায় ? কুবুদ্ধি বা আজাইরা চিন্তা ওর মাথায় ভালো খেলা করে । দেখা গেলো কারো জন্মদিন , জোড় করে খাবার আদায় করতে হবে । হঠাত করে শহরের এই মাথা থেকে সেই মাথায় চলে যেতে হবে । কেক কেটে বন্ধু দিবস উদযাপন করতে হবে , পরিক্ষায় কম মার্কস পেলে চাঙ্খারপুলে বিরিয়ানি খেয়ে সেই দুঃখ ভুলতে হবে ! শান্তনু কখনোই যায় না তার কোন বন্ধুরা কষ্ট পায় । সে যথাসম্ভব চেষ্টা করে সবসময় তাদের পাশে থাকার , তাদের ভালোবাসার ।
এভাবে দিন চলে যায় , মাস চলে যায় , একসময় নতুন বছর শুরু হয়ে যায় । ঢাকায় আসায় স্থায়িত্বটা আস্তে আস্তে বড় হয় । শান্তনুর কাছে মনে হয় আস্তে আস্তে সব পালটে যাচ্ছে , পালটে যাচ্ছে তার চারপাশ , পালটে যাচ্ছে কাছের মানুষগুলো , শুধু মা বাদে । মা সেই আগের মতোই আগের কথাগুলোই বলে যান । শান্তনু চুপ করে শোনে আর মায়ের কথায় সাড়া দেয় ।
শান্তনু সবসময় চেষ্টা করেছে তার যেই বন্ধুদের পাশে থাকার , তার কাছে আস্তে আস্তে স্পষ্টত হয় আসলে তারা তার কাছাকাছি নেই । শান্তনুর আবেগময় দিনগুলোতে তার পাশে কেউ থাকে না । সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে । প্রমার সাথে কথা প্রায় হয় না । যে যার নিজের কারণে ব্যস্ত , নিজের মতোন করে আনন্দ ফেরি করে বেড়ায় । কেউ তার খোঁজ নেয় না । শান্তনু আস্তে আস্তে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সবার সাথে । নিজেকে তার আজ বড় একাকী লাগে , অসহায় লাগে নিজের আগের ভাবনাগুলোকে । বোনের স্নেহ , ভাইয়ের ভালোবাসা যা ছিলো সব তার কাছে মেকি লাগে ! তার কাছে মনে হয় , যা ছিলো সব আলেয়া , যা ছিলো সব অধরা , যা ছিলো সব মিছে , যা ছিলো সব কল্পনা ! “
একদিন তার কাছে দিনা ফোন দেয় , বেশ অবাক হলো সে । অনেকদিন পরে দিনা তাকে ফোন করেছে । দিনা বললো , “ দোস্ত , জানিস নাকি প্রমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । আগামী পরশু গায়ে হলুদ । চলে আসিস । আমরা তো ধুমাইয়া মজা করছি ! “
শান্তনু মনে মনে হাসে , যেই মানুষগুলোকে সে অতি বিশ্বাসে অনেক আপন করে নিয়েছে তারা তাকে একবার এটা জানালো না যে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ওর বোনের । হতবাক হয়ে যায় শান্তনু । নিজের উপর কেমন জানি একটা রাগ জমে যায় এবার , ঘৃণা জমে যায় আবাগের উপর , পাথর হয়ে যায় চোখ দুটো ।
আস্তে আস্তে সে মাঠের দিকে যায় । ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকায় সে । এক ফালি চাঁদ হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে , চোখ টিপে দিলো কেমন যেনো । তারাগুলো যেনো তাকে আপন করে নিয়েছে , তাকে তাদের সঙ্গে নিতে চায় ! চাঁদের আলো গায়ে মাখছে শান্তনু আর খিলখিল করে হাসছে । তার অনেক আনন্দ লাগছে । এই কারণে যে সে সত্যিকারের বন্ধুর দেখা পেয়েছে , যে তার গায়ের জড়িয়ে দেয় স্নেহের পরশ , তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় হাজারো নাম না জানা তারা , তার সাথে পথ চলে এক ফালি চাঁদ । শান্তনু চাঁদের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে উঠে , “ এই চাঁদ , এই তারা , তোরা কি আমার বোন হবি ?? তোরা কি আমার ভাই হবি ? তোরা কি আমার বন্ধু হবি ?? “
পাজি চাঁদটা মেঘের ভেতর থেকে উঁকি দিয়ে তার কথায় যেনো সায় দিয়ে যায় ! শান্তনু সত্যিকারের ভালোবাসা পেয়ে পাগলের মতো দৌড়াতে থাকে মাঠের মাঝে !!
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×