আজ বিশ্ব শ্রমিক দিবস (May Day) । ১৩৭ বছর ধরে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে কিন্তু শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে ততোটা অগ্রসর হতে পারে নি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে বলেছিলেন- "বিশ্ব আজ দুইভাগে বিভক্ত, এক দিকে শোষক, আর অন্য দিকে শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে”|
আমাদের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪, ১৫ (খ), ৩৪ এ কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তি, ন্যায্য মজুরি ও জবরদস্তিমূলক শ্রমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের সংবিধান যেভাবে শ্রমিককের অধিকার নিশ্চিতের কথা বলেছে বাস্তবতা তেমন নয়। এ বছরের মাঝামাঝি শ্রম আইন সংশোধন হবার কথা ছিল কিন্তু ঠিক কবে তা সংশোধন হয়ে যুগোপযোগী হবে বলা কঠিন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন -
“শ্রমিক ভাইয়েরা, আমি শ্রমিক প্রতিষ্ঠান করেছি। আপনাদের প্রতিনিধি ইনডাস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট, লেবার ডিপার্টমেন্টের শ্রমিক প্রতিনিধি বসে একটা প্লান করতে হবে। সেই প্লান অনুযায়ী কি করে আমরা বাঁচতে পারি তার বন্দোবস্ত করতে হবে”
আমাদের দেশে শ্রমিকদের পথে না নামলে অধিকার আদায়ের নজির নেই। বেতন, বোনাস, কারখানা বন্ধ, ছাটাই, লে অফ প্রভৃতি কারণে শ্রমিকদের পথে নেমে আন্দোলন করতে হয়। অতি সম্প্রতি একটি বিল পাশ হয়েছে যার নাম 'অত্যাবশক পরিসেবা বিল' এই বিলটি আইনে পরিণত হলে শ্রমিকেরা বা তাদের শ্রমিক সংগঠনগুলি ধর্মঘট করতে পারবে না। সরকার যদি জনস্বার্থ বিরোধী মনে করে তাহলে ধর্মঘটের জন্য শ্রমিকদের ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড/৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত শাস্তির একটি বিধান করেছে। শ্রমিকদের বাঁচার আন্দোলনও পরিসেবার মধ্যে পড়ে তা বন্ধ হতে চলেছে। নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় নিকট ভবিষ্যতে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের উপরেও কালো আইনের ছাপ পড়তে যাচ্ছে।
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই শ্রমিক শুধুমাত্র ধরন ভিন্ন। বেঁচে থাকার চেষ্টারত প্রতিটি মানুষকেই শ্রম বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে হয়। আমরা হয় তো গভীরভাবে বিষয়টা উপলব্ধি করি না। শোষক ও শোষিতের বিভক্তি থেকে না বের হতে পারলে মানুষের মুক্তি মিলবে না। জাতির পিতার একটি বক্তব্য দিয়ে শেষ করছি। সবাই এটি মাথায় রাখলে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার ও সম্মান নিশ্চিত হবে -
"আপনি চাকরি করেন আপনার মায়না দেয় ঐ গরীব কৃষক, আপনার মায়না দেয় ঐ গরীব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ঐ টাকায়, আমি গাড়ি চলি ঐ টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ওদের ইজ্জত করে কথা বলুন, ওরাই মালিক"