somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিবর্তনবাদের সরল ব্যাখ্যা

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিবর্তনবাদ কি? সাধারণ লোকের উত্তর হবে এরকম, “বিবর্তনবাদ হচ্ছে এমন এক তত্ত্ব, যাহতে ডারউইন বলেছেন, মানুষ বানর থেকে সৃষ্টি হয়েছে বা বানরের বংশধর”। বেশির ভাগ মানুষের কাছেই ব্যাপারটা অচিন্তনীয়, কারন নিজেদের উকুন খাওয়া বানরের বংশধর হিসেবে চিন্তা করা, খুবই হাস্যকর অথবা অবাস্তব। সে দৃষ্টিতে দেখলে, আমরা বলতে পারি বীগল জাহাজে যাত্রা শুরু করার আগে যদি ডারউইনকে বলা হত, মানুষ বানরের বংশধর তবে ডারউইনের কাছেই ব্যাপারটা অবাস্তব বলে ধরা দিত। কোন দর্শনের ভিত্তিতে ডারউইন বিবর্তনবাদ প্রস্তাব করলেন? অন্য ভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, “বিবর্তনবাদের মূল কথা কি?”


ডারউইনের বিবর্তনবাদের মূল কথা হল, “Natural selection on the basis of survival of the fittest” ন্যাচারাল সিলেকশন বলতে আমরা বুঝি “প্রাকৃতিক নির্বাচন”। অর্থ্যাৎ, পরিবেশে কোন কোন জীব প্রজাতি থাকবে, তা নির্বাচিত হয় প্রকৃতি দ্বারা। সবথেকে যোগ্যটির বেচে থাকবার ক্ষমতার ভিত্তিতে প্রকৃতি এ নির্বাচন করে। ঠিক আমরা যেমন সৎ, যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করতে চাই, প্রকৃতিও তেমনি ভাবেই নির্বাচন করে। পার্থক্য শুধু এতটুকুই, রাষ্ট্রের নির্বাচনে সকলের টিকে থাকার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়, অন্যদিকে প্রকৃতিতে দূর্বলের টিকে থাকবার কোন অধিকার নেই।


এবার একটা সহজ উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাপারটা তুলে ধরি। ধরুন, আমাদের এই ঢাকা শহরে মশা মারতে ড্রেনে ড্রেনে কীটনাশক দেওয়া হয়। কোন একটা রোগের ঔষুধে যেমন ঐ রোগের সব রোগী সুস্থ হয় না, তেমনে একই রোগে আক্রান্ত সব রুগীই কিন্তু মরে না, কেউ না কেউ, ঠিকই বেঁচে যায়। বেচে যায় তারাই যাদের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা, ঐ রোগের বিরুদ্ধে সব থেকে শক্তিশালী। অতএব, ঐ রোগের বিরুদ্ধে টিকে থাকবার জন্য তারাই সব থেকে যোগ্য। তেমনি মশার ক্ষেত্রেও সব মশাই কিন্তু মরে না। কিছু ঠিকই বেচে যায় ,কারন তারাই শুধু ঐ কীটনাশকের বিরুদ্ধে লড়বার জন্য সবথেকে যোগ্য। টিকে যাওয়া মশাগুলোর আর খাদ্যের জন্য অন্য মশাদের সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে হয় না। ওরা অফুরন্ত খাদ্য পেয়ে সংখ্যায় অধিক হয়ে পরে। একসময় আমরা দেখি, ঐ কীটনশকে আর মশা মরে না। তখন, নতুন কীটনাশক দিতে হয়। পূর্বের মতই, কিছু মশা বেচে যায় যারা দুইটি কীটনাশকের বিরুদ্ধেই টিকে যেতে পারে। এভাবে, বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে যারা সবথেকে যোগ্য ওরাইটিকে থাকে। নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য গুলোর জীন মশার দেহ কোষে জড় হয় এবং এক সময় দেখা যায় মশার একটি নতুন প্রজাতীর উদ্ভব হয়েছে। নতুন প্রজাতীর এমন কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, যা তাদের প্রতিকুল পরিবেশের সাথে টিকে থাকতে সাহায্য করে। যেমন, আমাদের সেই নতুন মশা প্রজাতী কয়েকটি নতুন কীটনাশকের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে সক্ষম হবে। মূলত, ডারউইন এটাই প্রস্তাব করেছিলেন আর এটাই বিবর্তনের মূল কথা।


এবার মানুষ ও প্রাইমেট (সরলকথায় বানরজাতীয় প্রানী) ব্যাপারে ছোট্ট একটা কথা বলি (যদিও আরো অনেক ব্যাপার আছে)। মানুষের একেবারে নিজস্ব যে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তার মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল ”হাত মুষ্টি বদ্ধ করা”। বানরকে খাওয়ার সময় ভাল করে লক্ষ করলে দেখবেন, ওরা মুষ্টিবদ্ধ করতে পারে না। আর হাত মুষ্ঠি বদ্ধ করা মানুষকে প্রতিকুল পরিবেশের সাথে টিকে থাকতে, বিশেষ যোগ্যতা দিয়েছে। বানরজাতীয় প্রানীদের যেগুলো প্রতিকুল পরিবেশের সাথে সব থেকে বেশি খাপ খাওয়াতে (অভিযোজন) সক্ষম হয়েছে, তারাই বিবর্তনের ধারায় পরিনত হয়েছে আজকের মানুষে।



নতুন প্রজাতীর উদ্ভবে ডারউইনের বিবর্তনবাদ কতটুকু সরল করে উপস্থাপন করতে সক্ষম হলাম জানি না। সরলতার স্বার্থে আমি গভীরে যাই নি এবং জটিল উদাহরণ টেনে আনি নাই। বিবর্তনবাদ ঠিক না বেঠিক তা নিয়ে বিতর্কে যাবার ইচ্ছা আমার নেই। আমি শুধু ডারউইনের তত্ত্বের মূলকথাটাই আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব সরল করে তুলে ধরতে চেষ্টা করলাম।

তবুও প্রশ্ন জাগতে পারে, মশার কোষে নতুন বৈশিষ্ট্যের জীনের উদ্ভব কি করে ঘটে? ঐ জীনটা কি বাইরে থেকে আসে নাকি নিজে থেকেই উদ্ভব ঘটে? একমাত্র আনবিক জীববিজ্ঞানের (Molecular biology) ছাত্র ছাড়া অন্যদের কাছে সহজভাবে এ ব্যাপার তুলে ধরা, আমার জন্য বড়ই কঠিন। তাই সে চেষ্টা আর করলাম না।



~বিবর্তনবাদী~
ডিসেম্বর ২৬, ২০০৭
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:২২
৭৩টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×