somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূমিকম্প: অতঃপর?

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাইতি, ইরান বা গুজরাটে যে ভূমিকম্প হল তার সিকিভাগও আমরা ঈদের দিন বা তার আগের রাতে অনুভব করি নাই। তবে, আমার জানামতে আমরা ব্লগারসকল কেউই এই যাবৎ বঙ্গদেশে এমন ঝাকি খাই নি। হতে পারে পরবর্তি ভূমিকম্পটি হবে একটু পরেই বা হয়ত শ্রীঘ্রই। কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার মাত্র। জীবনের এপর্যন্ত সব স্বপ্ন চিন্তা ভাবনা, যুদ্ধ, সংগ্রামের ইতিটেনে হয়ত পরে থাকতে পারি কোন দেওয়ালের নিচে পিষ্ট অবস্থায় অথবা ধ্বংসস্তুপে বসে আকাশ পানে বিদেশী ত্রানের অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকতে পারি বেচে থাকবার আশায় ।কয়েকটি মাত্র সেকেন্ড পরিবর্তন করে দিতে পারে জীবনের মোড়। অথচ, আমরা রাতের পর রাত বা মাসের পর মাস অপেক্ষা করি এমন কিছু পাবার জন্য যা কিনা “লাইফ চেঞ্জিং” বলেই আমাদের ধারনা। কিছু কিছু ক্ষণ কত ভয়াবহ হতে পারে তা অনুভব। যদি ভয়াবহ কিছু হয় তখন হয়ত ভূমিকম্পের এই অভিজ্ঞতাটা কাউকে জানানো যাবে না। নিজের অভিজ্ঞতাটুকু লিখে রাখাই অনেকদিন পর ব্লগ লিখবার খানিকটা প্রয়াস।


ঈদের চাঁদ দেখা গেছে কাল ঈদ। ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলাম। ডিপার্টমেন্টের গ্রুপ মেইলে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মেইলও দিলাম। হঠাৎ মনে হল ভূমিকম্প হল। নিশ্চিত ছিলাম না। ব্লগে ঢুকলাম। কেউ একজন দেখি পোস্ট দিয়ে ফেলেছেন। তিনিও আমার মতই অনিশ্চিত। তার সাথে সহমত প্রকাশ করলাম, “হ্যা আমিও বুঝতে পেরেছি ভূমিকম্প হয়েছে”। আর কারো মাঝে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখলাম না।
রাতে সোয়া এগারটার মত বাজে তখন। কি যেন করছিলাম, মনে হয় গুগলে মেইল চেক করছিলাম। হঠাৎ, বিল্ডিং কাঁপতে শুরু করল। মনে হল কে যেন ব্লিডিং এর উপরে হাত দিয়ে তালে তালে নাড়ছে। অন্য সময় রুমের দরজা বন্ধ থাকে। কি মনে করলাম জানি না, দ্রুত ল্যাপটপের সাথে লাগানো বিভিন্ন ইউএসবি কেবল পাওয়ার লাইন খুলে ফেললাম। হয়ত ভাবছিলাম, কোন কিছু হলে ল্যাপটপ সাথে নিয়ে দৌড় দেব। এর ভেতর আমার সব কিছুই আছে। এরপর দ্রুত চলে গেলাম ডাইনিং রুমে। বাবা ড্রইং রুমে টিভি ছেড়ে সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছিল। এদিকে মা দেখছি ছোট বোনের রুমে সোফা আকড়ে ধরে আল্লাহ আল্লাহ বলে চিৎকার শুরু করেছে। ওদিকে বাবা “ওরে বাবারে বলে চিৎকার দিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল” আর ডাইনিং রুমে এসে জিজ্ঞাসা করে, “কি হল কি হল”। আমি ডাইনিং টেবিল বা একটা চেয়ার ধরে সবাইকে ধমক দিয়ে শান্ত হতে বললাম। এ সবই মাত্র দশ কি বার সেকেন্ডের ঘটনা। থেমে গেল ভূমিকম্প।


শান্ত হলাম। বোঝা গেল ক্ষতি তেমন কিছু হয় নি। এখন প্রথম কাজ কি? প্রথমত, ফেসবুকে স্টাটাস আপডেট দ্বিতীয়ত ব্লগে পোস্ট। ততক্ষণে ব্লগে পোস্ট চলে এসেছে। আমিও একটা দিলাম। একের পর এক পোস্টে ভেসে গেল সামহোয়্যারের প্রথম পাতা। ফেসবুকে ব্লগার আইরিন সুলতানার সাথে কথা হল, জানলাম মিরপুরেও ভূমিকম্প হয়েছে। আমি থাকি টিকাটুলিতে। ব্লগ থেকে জানা গেল, ভূমিকম্প হয়েছে ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গায়। দ্রুতই ইউনাইটেড স্টেটস্ জিওলজিকাল সার্ভে সাইট থেকে পাওয়া গেল যাবতীয় সব তথ্য। তেমন কিছু না বুঝলেও জানতে পারলাম রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪.৬ এবং কেন্দ্র ছিল কুমিল্লার কাছে।


এরপর আবার বাবা মায়ের কাছে গেলাম। তারা ভীত, আমি প্রস্তাব তুললাম আমাদের চারজনেরই ভূমিকম্প কালীন কিছু প্লান থাকা দরকার। টেবিল চেয়ারের নিচে পিষ্ট হয়ে মরার চাইতে অন্য প্লান হিসেব করলাম। আমাদের বিল্ডিং ছয়তালা, আমরা থাকি পাঁচতলায়। আমাদের জন্য টেবিল চেয়ারের নিচে লুকানোর চাইতে ভাল হবে ছাদে চলে যাওয়া। মরলেও অন্তত খোলা আকাশের নিচে মরব।আর যাই হোক, বিল্ডিং এর ফাকে কোথাও আঁটকে থেকে না খেয়ে দেয়ে তিলে তিলে মরার সম্ভবনা কম। এরচে আত্মহত্যা হয়ত ভাল। এরপর শুরু করলাম এদিক সেদিক ফোন করা। অনেকেই ভূমিকম্পটের পেয়েছে। অদ্ভুত লাগল এই যে, কেউ কেউ আবার ঢাকাতে থেকেও ভুমিকম্পটের পায় নি। আজব!!


ভূমিকম্পের মাত্রা আরো বেশি হলে এই ঈদের দিনে নিজেকে কোথায় দেখতে পাই? হয় মৃত অথবা প্রিয়জন হারা অথবা সপরিবারে খোলা আকাশের নিচে। কোথায় ঈদের জামা? কোথায় ঈদের দাওয়াত? ঈদে যাদের যাকাতের কাপড় দেওয়া হল, দেওয়া হল ফিতরার টাকা তাদের সাথে এক কাঁতারে। আমাদের ঢাকা ইউনিভার্সিটির রেজিস্টার ভবন যদি ধ্বসে যায় তবে আমার বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেটের কোন প্রমান আর থাকবে কি? জানি না তারা কিভাবে তাদের তথ্য রাখেন। প্রিয়জনদের যদি হারাই তবে মানসিক অবস্থারই বা কি হবে? থাকব কি স্বাভাবিক? জীবনের সব স্বপ্ন, চাকুরি, চাতুরি যাবে কোথায়? অনেকগুলো প্রশ্নে জর্জরিত। উত্তর হাতে নেই। কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতা সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। র্যা নডম বা ইতস্তত ব্যাপারগুলো তারই হাতে। তারই উপস্থিতিতে সব র্যা নডম ঘটনাই একটা কাহিনীর মালা গাঁথে। সেই কাহিনীর চরিত্র আমি আমার পরিবার, আমার বন্ধু, আমার পরিচিত অপরিচিত সব মানুষ। আল্লাহ সবাইকে ভাল রাখুক।


ইদানিং গান বাদ দিয়ে ইন্সট্রুমেন্টাল শুনছি। আনন্দ সংকরের মিউজিকগুলো ভাল লাগছে। সবার জন্য কিছু লিংক শেয়ার করলাম।







১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×