somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা ও শিশু স্বাস্থ্য অগ্রগতিতে পিছিয়ে আছে সিলেট

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মা ও শিশু স্বাস্থ্য অগ্রগতিতে দেশের অন্যান্য বিভাগের তুলনায় বেশ পিছিয়ে আছে সিলেট বিভাগ। সিলেট বিভাগে বর্তমানে গড়ে প্রতি বিবাহিত মহিলা ২.৯ জন সন্তান জন্ম দেন। যা জাতীয় হারের চেয়ে ১ জন সন্তান বেশি। তবে, বিগত দশকে সিলেট বিভাগে মহিলা প্রতি গড় সন্তান সংখ্যা কমেছে ১.৩ জন। জাতীয় হারের তুলনায় এখনো ১৮% দম্পতির পরিবার পরিকল্পনা সেবার আওতায় আসেননি। এদিকে, সিলেট বিভাগে শিশু অপুষ্টির হার সবচেয়ে বেশি। এ বিভাগে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৫০% খর্বকায় এবং ৪০%-এর ওজন বয়সের তুলনায় কম। গত ৩ বছরে সিলেট বিভাগে খর্বকায় শিশুদের হার অপরিবর্তিত রয়েছে। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট) এর ‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক এন্ড হেলথ সার্ভে ২০১৪” এর এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে আসে। বৃহস্পতিবার সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট) এর মহাপরিচালক এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ওয়াহিদ হোসেনের উপস্থিতিতে এমন তথ্য দেন গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা।

এদিকে, সেমিনারে উপস্থিত সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, সিলেটে ভাসমান বসবাস কারি ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে অনেক এলাকায় পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ণ সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে প্রবাসী অধূষিত এলাকার অনেক দম্পতির ক্ষেত্রে পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়ণ অনেকটা অসম্ভব হয়ে দাড়িঁয়েছে। এসব বিষয় হিসেব করলে, সিলেটে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সিলেট অনেক দূর এগিয়েছে। গবেষণার রিপোর্টে দেখা যায়, সিলেট বিভাগে বর্তমানে ৪৮% দম্পতি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করেন। যা জাতীয় হারের তুলনায় এখনো ১৮% কম। স্বাস্থ্য-জনসংখ্যা-পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচি (এইচপিএনএসডিপি)-২০১৬ এর আওতায় পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের হার (সিপিআর) ৭২ শতাংশ হওয়ার কথা। বর্তমানে বাংলাদেশে সিপিআর ৬২ শতাংশ চলছে। তবে সিলেটে তা মাত্র ৪৮ শতাংশ।

প্রথমত, প্রবাসি অধূষিত এলাকায় স্বামি-স্ত্রীর মধ্যে শতকরা ৭ শতাংশ পরিবার পরিকল্পনার আওতায় আসনে না। প্রবাসিদের দেশে আসা যাওয়ার উপরই তা নির্ভর করে। ফলে তাদের ক্ষেত্রে তা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ণ সম্ভব হয় না। গত ৩ বছরে এ বিভাগে আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের হার ৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে একই গবেষণায় দেখা গেছে, অপুষ্টি আমাদের প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। শিশু অপুষ্টি হ্রাসে জাতীয়ভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত ২০১৬ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। বর্তমানে ৫ বছরের কম বয়সী ৩৬% শিশুর উচ্চতা বয়সের তুলনায় কম এবং ৩৩% শিশুর ওজন বয়সের তুলনায় কম। গত ৩ বছরে খর্বকায় শিশুর হার ৫% এবং কম ওজনের শিশুর হার ৩% হ্রাস পেয়েছে। তবে সিলেট এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। সিলেট বিভাগে শিশু অপুষ্টির হার সবচেয়ে বেশি। সিলেট বিভাগে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৫০% খর্বকায় এবং ৪০%-এর ওজন বয়সের তুলনায় কম। গত ৩ বছরে সিলেট বিভাগে খর্বকায় শিশুদের হার অপরিবর্তিত রয়েছে। অন্যান্য সূচকেও সিলেট পিছিয়ে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। তার মধ্যে গত ৩ বছরে সিলেট বিভাগে দক্ষ সেবাদানকারীর সহায়তায় প্রসবের হার মাত্র ৩% বৃদ্ধি পেয়ে ২৭% হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে দক্ষ প্রসব সেবা গ্রহণের হার ৪২%। মাতৃ স্বাস্থ্য সেবা ব্যবহারে সিলেট বিভাগ সবচেয়ে পিছিয়ে আছে। এ বিভাগে মাত্র ২০% মা বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী কমপক্ষে চারবার গর্ভকালীন সেবা গ্রহণ করছেন এবং প্রসবের দুই দিনের মধ্যে প্রসব পরবর্তী সেবা নিচ্ছেন মাত্র ২৩% মা।

নিপোর্টের পরিচালক (গবেষণা) মো: রফিকুল ইসলাম সরকার-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিপোর্টের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন এনডিসি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান মো: হেলাল উদ্দিন, পরিচালক স্বাস্থ্য ডা: গৌর মণি সিনহা এবং সিলেটের উপ-পরিচালক পরিবার পরিকল্পনা ডা: লুৎফুন্নাহার জেসমিন।

সেমিনারে নিপোর্টের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন এনডিসি বলেন, স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাতে সিলেট বিভাগের সাম্প্রতিক সাফল্য আশাব্যঞ্জক। এ সাফল্যকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ভৌগলিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতাকেও জয় করতে হবে। তিনি বলেন, দেশে প্রতি তিনটির মধ্যে একটি শিশু অপুষ্টির শিকার হবে তা কাংখিত নয়। শিশুর খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে মা, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সচেতন করার বিষয়ে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন। সেমিনারে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান জনাব মো: হেলাল উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ক্ষেত্রে গত দশ বছরে সিলেট বিভাগে অনেক উন্নতি হয়েছে এবং উন্নতির আরও সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি সকল পর্যায়ে পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে ওয়ান-ষ্টপ সার্ভিস অর্থাৎ সকল সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সেমিনারে সিলেট বিভাগের পরিচালক স্বাস্থ্য ডা: গৌর মণি সিনহা বলেন, বিডিএইচএস সার্ভের তথ্য বিভাগীয় পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনায় একটি মাইলফলক। কার্যক্রমের উন্নয়নের জন্য নিজেদের আত্ম-সমালোচনা প্রয়োজন। সামাজিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা দূর করে কার্যক্রমকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেমিনারে সিলেটের উপ-পরিচালক পরিবার পরিকল্পনা ডা: লুৎফুন্নাহার জেসমিন বলেন, গত ৩ বছরে জাতীয়ভাবে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির ব্যবহার ১% বাড়লেও সিলেট বিভাগে বেড়েছে ৬%। তিনি এ সাফল্য এগিয়ে নেয়ার জন্য নতুন উদ্যমে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের জন্য সিলেট অঞ্চলে ভৌগলিক প্রতিবন্ধকতা প্রধান অন্তরায়। সেমিনারে সিলেট বিভাগে কর্মরত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের জেলা, উপজেলা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, এনজিও কর্মকর্তাগণ এবং মহিলা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানগণ অংশগ্রহণ করেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন নিপোর্ট-এর তত্ত্বাবধানে ইউএসএইড/বাংলাদেশ-এর আর্থিক সহায়তায় এ সার্ভে পরিচালনা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আইসিএফ ইন্টারন্যাশনাল এ সার্ভের কাজে কারিগরি সহায়তা প্রদান করে।


সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×