somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবজাব পোস্ট

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষের জীবনে এত ব্যস্ততা কেন, এই প্রশ্নের উত্তর আমি আজ ও খুজে পেলাম না। ছোট্ট সংসারে মানুষ মাত্র দুইজন, আমি আর আমার তিনি। মাঝে মধ্যে যে আত্নীয় স্বজনের চাপ থাকে না তা নয়। দু'জনের এই সংসারে এত ব্যস্ততা দেখে আমি নিজেই শংকিত।

প্রথমে নিজের কথা দিয়েই শুরু করি। মাস্টার্স প্রায় শেষের পথে, ক্লাস বন্ধ, সেপ্টেম্বরে পরীক্ষা, তাই থিসিসের কাজ চলছে বেশ জোরে শোরেই। আমার থিসিস বলতে শুধু ফিল্ড সার্ভে করা, সুপারভাইজারের সাথে দেখা করা আর তার ফিডব্যাক নেয়া, ডাটা এনালিসিস আর রিপোর্টিং সম্পর্কে দূর্ভাষীর সাথে আলোচনা করা, এই যা বলতে চাইলাম নিজের কথা এসে গেলো দু'জনের কথা। :(

এসেই যখন পড়ল তখন দুজনের কথাই শুরু করি:
সকাল বেলা তিনি (দূর্ভাষী) ঘুম থেকে উঠতেই চান না, সাড়ে নয়টার অফিস তিনি কোনদিন ৯:৪৫ এর আগে পৌছাতে পারেন না, সকাল নয়টায় উঠে তিনি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা না খেয়েই ছোটেন অফিসে। সারাদিন অফিসে প্রচন্ড চাপ থাকে তার, বিশেষ করে যখন ট্রেনিং চলে তখন, (সে কি না আবার চিফ ট্রেইনার) ওদের ট্রেনিং এর সিডিউল টা একটু ঝামেলাপূর্ণ, একটানা ১১ দিন ট্রেনিং আর এর মধ্যে ৮ দিন তার সেশন, টানা আট ঘন্টা ট্রেনিং রুমের মধ্যে পায়চারি করা তার অভ্যাস। ট্রেনিং এ যতই ব্যস্ত থাকুক এই আটঘন্টায় তিনি তিনটা ব্রেক পান, সকালে-দুপরে-বিকালে। এই তিনবারে প্রতিবারে পাঁচ মিনিট করে মোট পঁনের মিনিট আমার জন্য বরাদ্দ। কল করে আমার সাথে কথা বলবেই। সব নিয়ম পাল্টে যেতে পারে তার এই নিয়মের কোন ব্যত্যয় আজ পর্যন্ত ঘটেনি। সাড়ে পাঁচটায় ট্রেনিং শেষ করে ছয়টায় তিনি অফিস থেকে বের হবেন আর আসবেন সোজা বাসায়, কলিগরা বন্ধুরা যতই বলুক, অপেক্ষা করা তারপক্ষে অসম্ভব। মাঝে মধ্যে অফিস থেকে বের হয়ে কলিগদের নিয়ে অফিসের পাশের চায়ের দোকানে চা খাবে, যদি রিক্সা পেতে দেরী হয় তাহলে।
বাসায় এসে, চা খেয়ে শুরু করবে মাস্টারি, আমার থিসিসের কি অবস্থা এটা নিয়ে। কিছুক্ষন এটা নিয়ে বকবক করে তিনি বাসা থেকে বের হবেন এবং বাসার মোড়ে মহল্লার পরিচিতদের সাতে গল্প সেরে বাজার করে বাসায় ফিরবেন। কিন্তু এই বাইরে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য আর কিছু নয়, সিগারেট ফুকা, কারন বাসায় সিগারেট খাওয়ার পারমিশন নেই।
বাসায় ফিরে, ঢুকবেন রান্না ঘরে, রাতের রান্নাটা সাধারনত সে নিজেই করে, আমি কিছুটা সাহায্য করি মাত্র। রান্না করতে করতে রাত ১০ টা সাড়ে ১০ টা বাজাবে, আমার কাজ ততক্ষনে পড়াশুনাটা এগিয়ে রাখা। সাড়ে দশটা নাগাদ খেয়ে দেয়ে কিছুক্ষন গল্প বা টিভি দেখা, এরপর আবার ও আমার থিসিস নিয়ে বসবে, ডাটা এনালিসিস, রিপোর্টিং এর কুটি নাটি সব দেখে মতামত দিয়ে তারপর আমাকে ছুটি দিবেন।
এরপর সাহেব বসবেন অনলাইনে, তার প্রোজেক্টের একটা অংশ নিয়ন্ত্রণ হয় সূদূর আমেরিকা থেকে, অনলাইনে রাত দেড়টা দুইটা পর্যন্ত তাদের সাথে বিভিন্ন আলাপ আলোচনা সেরে আবার কিছুক্ষনের জন্য বেডরুমের বারান্দায়, আমি হয়ত তখন কোন সিরিয়াল বা মুভি দেখছি টিভিতে। রুমের দরজা জানালা সব বন্ধ করে বারান্দায় বসবে কিছুক্ষন, বুঝতে পারি এই বসাটা আর এক পশলা সিগারেট খাওয়ার জন্য বসা।
তিনটার দিকে ঘুমাতে এসে শুরু করবেন পায়ে ব্যথার কারনে ঘুমাতে না পারার যন্ত্রনা সহ্য করা, সারাদিন ট্রেনিং এ পায়চারি আর রাতে রান্নাঘরে এক দেড়ঘন্টা দাড়িয়ে রান্না করার মাশুল এটা।

যদি পা টিপে দিতে চাই, অমনি সাহেবের মেজাজ খারাপ, কোন ভাবেই তার পায়ে হাত দেয়া যাবে না, এটা সে পছন্দ করে না। নারীবাদি মানুষ বলে কি তার অসুস্থতায় আমি তার সেবা ও করতে পারব না :( X((

এত গেল তাকে নিয়ে আমার কথা, কিন্তু নিজের কথা তো বলাই হলো না, সকালে আমাকে উঠতে হয় সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে, উঠেই বুয়াকে বলে দিতে হয় নাস্তায় কি কি থাকবে এরপর প্রথমে আমার গ্রামে থাকা শ্বাশুড়িকে ফোন করি, ভাসুরের বড় মেয়েটা সেখানে থাকে দু'জনের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে ফ্রেশ হয়ে জনাব কে ডেকে দিয়ে কিছুক্ষন গান শোনা, সাহেব অফিসে গেলে নাস্তা সেরে সব কিছু গুছিয়ে সাড়ে দশটা নাগাদ রওনা হই লাইব্রেরীর উদ্দেশ্যে, একটা পর্যন্ত সেখানে থেকে পড়াশুনা আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা, দুপুরে ফিরে ফ্রিজ থেকে দূর্ভাষীর রান্না করা খাবার বের করে শুধু গরম করে খাওয়া, তারপর একটা ঘুম। চারটা নাগাদ উঠে সন্ধ্যার নাস্তার আয়োজনে বুয়াকে তদারকি করা, আর সাহেব ফিরে এলে কি কি ঘটে তা আগেই বলে ফেলেছি।

সব কিছু মিলিয়ে আমাদের টুনাটুনির সংসার বেশ ভালোই কাটছে, মাঝে মধ্যে দূর্ভাষীর বন্ধু বান্ধবদের কিছু উৎপাত সহ্য করা ছাড়া কোন ঝামেলাই নেই সংসারে, তবে এটা সত্য যে ব্যস্ততা আছে। আর সংসারকে বোরিং মনে হয় যখন সাহেব ট্যুরে থাকেন।

(লেখাটি সম্পূর্ণ নিজের আত্নকথা, কাজেই অনেকের পছন্দ হবে না বলে আমার বিশ্বাস, পছন্দ না হলে মাইনাস সাদরে গৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:৫৫
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×