সামু ব্লগের পরিচিত (হয়ত বা জনপ্রিয় ও) দম্পত্তি দূর্ভাষী ও অপরাজিতাকে নিয়ে আমার আজকের পোস্ট। প্রথমেই জানিয়ে রাখছি দূর্ভাষী আমার কাজিন, কাজিন মানে পাড়াত নয় আমার খালাত ভাই। তার আম্মা আর আমার আম্মা দু'জনই আমার নানীর সন্তান।
দূর্ভাষী বয়সে আমার বেশ বড়, মানে ৫ বছরের বড় আর কি! ছোটবেলা থেকে ভাইয়াকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে কারন ভাইয়াদের বাড়ি আর আমার বাবার বাড়ির মাঝে দুরত্ব ৫০০ গজ ও নয়। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি ভাইয়া খুব বেশী একরোখা, যা একবার না বলবে সেখানে হ্যা করানোর সাধ্য কারোর নেই। তাই বলে তিনি কিন্তু মোটেই গম্ভির নন, ছোট বড় সবাইকে সারাদিন হাসাতে হাসতে মেরে ফেলার জোগাড় করত। সে তুলনায় আমার ভাবী (অপরাজিতা) একটু গম্ভির বলা চলে।
ভাইয়া যখন ইন্টারমিডিয়েট এর ছাত্র তখন থেকে ভাবীর সাথে পরিচয়, ভাবীদের পরিবারের সাথে ভাইয়াদের পরিবারের একটা যোগসূত্র আগে থেকেই ছিল। সে হিসাবে ভাবীকে চিনতাম অপরাজিতা নামেই। বলে রাখি সে আর আমি সমবয়সী, তাই ভাইয়াদের বাসায় যখন অপরাজিতা যেত তখন আমরা তিনজন মানে আমি, অপরাজিতা আর ভাইয়ার ছোটবোন (সে ও আমার সমবয়সী) একসাথে ঘুরে বেড়াতাম, আড্ডা দিতাম এবং সে কারনে আমাদের ভিতর আলাদা একটা বন্ধুত্ব ও ছিল। অবশ্য ভাইয়া এবং ভাবীর মধ্যে সম্পর্কটা তখনও তৈরী হয়নি।
ভাইয়া ইন্টারমিডিয়েট পাস করে চলে গেল খুলনা শহরে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে, অপরাজিতাদের বাসাও ছিল খুলনা শহরে। সেখানেই তাদের সম্পর্ক টা তৈরী হয়। আর আমরা এদিকে ভাইয়াকে খুব বেশী মিস করতাম। এরপর ভাইয়া প্রতি শুক্রবার বাড়ি চলে আসত, কোন কোনদিন সংগি হত অপরাজিতাও। শুক্রবার বিকালটা হৈ হুল্লোড় করে কেটে যেত, শনিবার সকালে ভাইয়া চলে যেত খুলনায়।
যাইহোক, এভাবে এগিয়ে গেলো দিন, ভাইয়া বিয়ে করল, তার আগেই বিয়ে হলো ভাইয়ার ছোট বোনটির। আর তারপরেই ওরা আমাকে ও বসিয়ে দিল বিয়ের পিড়িতে। আমার বিয়েতে ভাইয়া যে কতটা মজা করেছে বলে বুঝাতে পারব না। ভাইবোনদের মধ্যে ও যেমন হাসি খুশী, কাজের সময় তেমন গম্ভির। আমার বিয়েতে বাইরের সব কিছু সামলেছে দূর্ভাষী, আর অন্দরমহল সামলেছে অপরাজিতা।
বিয়ের পর আমি চলে আসি শান্তাহারে আর ভাইয়া ভাবী আগে থেকেই ঢাকায়। কাজেই দেখা সাক্ষাত যা হয় তা ঈদের সময়ে, আর মোবাইলে মাঝে মধ্যে যোগাযোগ। এমন অবস্তায় একদিন আমি ঢাকা চলে এলাম ভাইয়ার বাসায়। মূল গল্প সেখানে।
ওদের বাসায় ওরা দু'জনই মানুষ, একজন সকাল ৯ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত অফিসে, আর একজন বিকাল ৫ টা থেকে রাত ৯:৩০ পর্যন্ত ক্লাসে। অবশ্য আমি যে ক'দিন ছিলাম ভাবী ক্লাসে যায়নি। সকাল বেলা সবার আগে উঠেন দূর্ভাষী, উঠে চা রেডি, চা খেতে খেতে ডাকেন আমাদের, এরপর দু'জনে মিলে নাস্তা তৈরী করে, খেয়ে দেয়ে বাইয়া বের হয়ে যায় আর ভাবী বসে যায় তার পড়াশুনা বা ব্লগিং এ। ব্লগিং ব্যাপারটা আমি তখন বুঝতাম না, অপরাজিতার মাধ্যমে ব্লগিং এ হাতে খড়ি আমার। আমার আগ্রহ দেখে ভাইয়া ও ভাবী আমার হাসবেন্ডে দিয়ে ল্যাপটপ কেনায় এবং জিপি মোডেম কিনে ব্লগিং এর খুটিনাটি শিখিয়ে দেয় ঢাকা থেকেই। সাথে মেসেঞ্জারের ব্যবহার ও শিখি ওদের কাছ থেকে।
আবার কোথা থেকে কোথায় চলে যাচ্ছি। যাইহোক, ভাইয়া অফিস থেকে ফিরে চা খেয়ে বসে যায় কম্পিউটার নিয়ে, কি কাজ করে সেই জানে। আর ভাবী ফিরলে দু'জনে মিলে আবার ও রাতের রান্না এবং খাওয়া সেরে গল্পে বসবেন এবং তারপর ঘুম। তবে কোনকোন দিন ভাইয়া রাতে খাওয়ার পরে আবার ও কাজে বসে এবং তখনই দেখা যায় অপরাজিতার অপরাজেয় মূর্তি। যতক্ষন ভাইয়া কাজ থেকে না উঠবে ততক্ষন ভাইয়ার খবর আছে।
তাদের ভিতর ঝড়গা যে একবোরে হয় না তা নয়, তবে একজন রেগে গেলে অন্যজন ভেজাবেড়াল কোন কথাই বলবে না। এক ধরনের চুক্তি আছে ওদের মধ্যে, যে একজন রেগে গেলে অন্যজনকে ঠান্ডা থাকতে হবে।
আজ ভালোবাসা দিবসে ওদের সংসার দেখেলে সত্যি ই ঈর্য়া হয়, তাই এই পোস্ট দিয়ে ওদের স্মরণ করলাম এবং সেই সাথে পোস্টটি এই পোস্টের চরিত্র দু'জনকে উৎসর্গ করলাম। সবাইকে ভ্যালেন্টাইনস ডে এর শুভেচ্ছা।