somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মা, আমার সবকিছু.....

১৫ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্নায়ু-চাপের খুব বড় ধরণের একটা অসুস্থতা দেখা দিয়েছিল একবার। তখন আমি সবে মাত্র প্রাইমারি থেকে হাই স্কুলে উঠেছি। সময়টাও বার্ষিক পরীক্ষার আগ দিয়ে। না স্নায়ু-চাপের কারণ পড়ালেখা কিংবা পরীক্ষার জন্যে নয়। কারণটা আমার পিতৃতুল্য কাউকে হারানো। খুব মনে আছে, আমি পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে খুব কষ্টে ঘাড়ের ব্যথা সহ্য করে বাড়ির সামনে পর্যন্ত পৌঁছেই "আম্মা" বলে চিৎকার দিয়েই জ্ঞান হারিয়েছিলাম। এরপর প্রায় ঘণ্টা ৩ আমার কোন ধরণের স্মৃতি নেই। ঘণ্টা তিন পর নিজেকে ঘরের খাটে আর আমার চারপাশ জুড়ে পুরো ঘর কানায় কানায় ভরা আত্মীয়-স্বজন আর পাড়া-প্রতিবেশী সমেত আবিষ্কার করি।

এর মধ্যেই আব্বা ঢাকা থেকে ডাক্তার ডেকে নিয়ে এসেছেন (ঐ সময় মোবাইল ফোন ছিল না, আর যোগাযোগ একমাত্র ল্যান্ডফোন দিয়ে করতে হতো। সেটাও তখন আমাদের নেই। বাজারে থেকেই ঢাকায় অবস্থিত স্বল্পপরিচিত এক চাচাকে ফোন করে তাকে ডাক্তার নিয়ে আসার অনুরোধ করেন আব্বা)। ডাক্তার আমার পালস কিছুক্ষণ পরপর চেক করছে আর ফ্যাকাসে মুখ করে বার বার ঘড়ি দেখছে। জেগে উঠার মিনিট ১০ পার হবার আগেই আবার ব্যথা শুরু হয়, আর প্রায় সাথে সাথেই জ্ঞান হারাই ২য় বারের জন্যে। এর পর জ্ঞান ফিরে অনেক পরে, প্রায় এশার আজান হয়ে যাবার পর। এই সময়ের মাঝে ভিটামিন আর বিভিন্ন ঔষধ সহকারে স্যালাইন দেয়া হয় আমাকে। ঐদিন রাতে আর কোন সমস্যা হয়নি, সে যাত্রায় এতটুকুতেই পার পেয়েছিলাম।

এবার আম্মার কথায় আসি। আমি যখন দুপুরে "আম্মা" বলে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে রাস্তার উপরই পড়ে যাই তখন বাড়িতে আম্মা আর দাদী ছাড়া কেউ ছিল না। চিৎকার শুনে আম্মাই দৌড়ে বেরিয়ে আসে আর রাস্তা থেকে ঘরে নিয়ে যায়। কেউ একজন আব্বাকে খবর দিতে বাজারে যায় আর আব্বা তখনই ডাক্তার আনার জন্যে চাচাকে ফোন করে বাসায় ফিরে আসে। ততক্ষণে আম্মা আমার মাথায় বালতি কয়েক পানি ঢেলে একাকার করে ফেলেছেন (ঐ সময় চাপকল দিয়ে পানি তুলে ব্যবহার করতে হতো)। তারপর তার কোলে আমার মাথা রেখে সেই যে বসেছেন তারপর একেবারে পরদিন সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গার পর সেই বসা থেকে উঠেছেন।

এরপর কি করেছেন তার ছোট করে বলতে গেলেও অনেক বড় হয়ে যাবে। শুধু এতটুকু বলি, আম্মা এখনো যদি ভাত মাখিয়ে না দেয় তবে খেতে পারি না। এমন তো কিছু না সেই একই রান্না তবুও আম্মা যদি ভাত মাখিয়ে না দেয় তবে তা খেয়ে ঐ স্বাদ পাই না যেটা আম্মা মেখে দিলে পাই।

এখনো বাইরে কোথাও গেলে গড়ে ঘণ্টা খানিকের ভেতরে আম্মা একবার ফোন করেই। আর সেটা রিসিভ না করতে পারলে বাসায় আসলে ঝাড়ি এখনো শুনতে হয়। প্রতিটা প্রয়োজনের জিনিষ এখনো আম্মার কাছেই আবদার করি আর আম্মাও ছোটবেলার মত এখনো সেগুলি পূরণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে। আমি সাধারণত কারো সাথে তর্ক করতে পারি না। তাই মাঝে মাঝে রাগ করে খাওয়া-দাওয়া কথা-বার্তা বন্ধ করে দেই। কিন্তু সেখানেও আম্মা হাজির। রাগটা যদি তার সাথেও করি বকা দিয়ে হোক আর রাগ ভাঙ্গানোর কথা দিয়েই হোক, আম্মাই সেটা করে।

জানিনা তার ত্যাগ আর ভালোবাসার ঋণী হয়ে কতটুকু কি করতে পারবো তার জন্যে, তবুও প্রার্থনা আল্লাহ যেন আমার দ্বারা কখনো তার মনে কোন কষ্ট না দেয়।


ভালো থাকুক আম্মা'রা, ভালোবাসায় থাকুক তাদের সন্তানেরা......




══════════════════════════
মা'য়ের সম্মান রক্ষার্থে কিছু পরিশ্রমী ছেলে-মেয়ে অনলাইনে কাজ করছে। তাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য জনপ্রিয় সার্চ-ইঞ্জিন গুলি থেকে পবিত্র "মা" শব্দটি নিয়ে নোংরামি গুলি দূর করা। সেই উদ্দেশ্যে তারা একটি ইভেন্ট খুলেছে। কিন্তু শুধু দূর করলেই তো আর দূর হবে না। আমাদের সেই খালি স্থান নিজেদের ভালো ভালো লেখা দিয়ে ভরাট করতে হবে। কত বিষয় নিয়েই তো প্রতিদিন কত-শত কিছু লিখি। মা'কে নিয়েও না হয় লিখলাম নিজেদের মত করে। তাতে মা'য়ের সম্মান ও কিছুটা রক্ষা করা হবে আর নিজের কাছে মা'য়ের মূল্যবোধও পরিষ্কার হবে।

ইভেন্ট লিংক__: http://goo.gl/YdXtEr
পেইজ লিংক__: https://www.facebook.com/ma.valobasi
ব্লগ লিংক_____: http://www.mayermomota.blogspot.com/

ইভেন্টে মা'কে নিয়ে লেখা গুলি পোষ্ট করলে তারা পেইজ আর ব্লগে তা পোষ্ট করবে আপনার নামেই। চলুন না দেখি ভালো কিছু করা যায় কিনা একসাথে....


সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×