somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পক্ষপাতদুষ্টের ভীরে আমাদের অবস্থা

১৪ ই মে, ২০১৫ দুপুর ২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ আমাদের পক্ষপাতদুষ্ট স্বভাব নিয়ে একটু বলি। যদিও এইসব বলায় কিংবা লেখায় প্রকৃতপক্ষে কোন লাভ হয়না। তবুও, বলার জন্যেই বলা।

পক্ষপাত দুষ্টামিটা কিন্তু আমরা ছোট থেকেই বড়দের দেখে দেখে শিখি। প্রথমে শিখি একেবারেই ছোট বয়সে। ব্যাপারটা যদিও গুরুতর কিছু না, কিন্তু শুরুটা ওখানেই।

ধরুন পাশাপাশি বাসায় দুই বাচ্চার বসবাস, নিজেদের মাঝে বন্ধুত্বও আছে অল্পবিস্তর। তাদের অভিভাবক একজনের অবস্থা তুলনামূলক ভাবে অন্যজন থেকে ভালো। ফলাফল স্বরূপ ভালো অবস্থানে থাকা অভিভাবক তার বাচ্চাকে সাধ্যের মাঝে একটু দামী খেলনা উপহার দেয়। অপর দিকে অন্য বাচ্চাটির অভিভাবকের সাধ্যের সীমানা ততদূর পর্যন্ত বিস্তৃত নয়, যদিও ইচ্ছের কোন কমতি নেই তাদের মাঝে। কিন্তু বাস্তবতা মেনে যতটুকু সম্ভব তা মেনেই তারা বাচ্চার জন্যে খেলনা নিয়ে আসে। এরপর যখন দুই বাচ্চা নিজ নিজ খেলনা নিয়ে একসাথে খেলতে শুরু করে তখন সঙ্গত কারণেই দামী খেলনাটার ফিচার বাচ্চা দুটিকে বেশি আকৃষ্ট করে। আর সেই নিয়ে কম দামী খেলনাটা নিয়ে বাচ্চাটা তখন তার অভিভাবকের কাছে অভিযোগ করে, বায়না ধরে ঐ রকম দামী খেলনার জন্যে। তখন অভিভাবক বাচ্চাটাকে বোঝাতে শুরু করে যে ঐ দামী খেলনাটা তেমন টেকসই নয়, দেখতে অনেক সুন্দর আর অনেক ফিচার সমৃদ্ধ হলেও আসলে সেটা ততটা ভালোও নয়। বাচ্চাটা যদিও সেটা মেনে নিতে নারাজ তবুও যখন কোন কারণে দুই বাচ্চার মাঝে খেলনা নিয়ে কথা হয় তখন কিন্তু তারা নিজেদের খেলনাটাকে ভালো দেখানোর জন্যে ঐ অভিভাবকের কথা গুলি বলতে থাকে, বলে তোমার খেলনা অমন হলেও তেমন ভালো নয়। অপর দিকে দামী খেলনার মালিক ছেলেটাও বলে ফেলে যে তার খেলনাটাই দামী, আর সে একাই সেটা দিয়েই খেলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, তার কমদামী খেলনা নিয়ে খেলাতে আসার প্রয়োজন নেই।

খুবই সাধারণ ঘটনা, বাচ্চারা প্রায়ই এমন করে। কিন্তু পক্ষপাত দুষ্টামির ঘটনাটা এর মাঝেই ঘটে গেছে।

আচ্ছা, বাদ দিন। আরও একটু সামনের দিকে যাই। এবার বাচ্চা দুটি মোটামুটি বেশ বড়, মানে স্কুলে পড়ালেখা করছে। সে ক্ষেত্রেও দেখা যায় একজনের অভিভাবক তাকে একটু খরচে স্কুলে ভর্তি করিয়েছে। অন্যদিকে অপর বাচ্চাটিকে তার অভিভাবক ভালো কিন্তু একটু কম খরচে স্কুলে দিয়েছে।

একটা সময় এসে বন্ধুর কাছে তার দামী স্কুলের কথা শুনতে শুনতে অপর ছেলেটি তার অভিভাবকের কাছে আবার নিজের স্কুল নিয়ে অভিযোগ তুলে, বায়না ধরে বন্ধুটির মত দামী কোন স্কুলে নিজেকে ভর্তি করিয়ে দেবার জন্যে। অভিভাবককে বোঝাতে চেষ্টা করে যে তার বন্ধুটি ঐরকম করে বেড়ায় ঐ দামী স্কুলে, কিন্তু সে তা করতে পারে না, কারণ সেই সুবিধাটি তার স্কুলে নেই। এবারেও অভিভাবক তার সন্তানকে বোঝায় সে যে স্কুলটিতে আছে তা ঐ সকল সুবিধা ছাড়াও বেশ ভালো স্কুল। অন্য স্কুলটি খরচে স্কুল হলেও তার তুলনায় এই স্কুলের পড়ালেখার মান অনেক ভালো, শিক্ষকেরা ভালো, স্কুলের বাকি সব বন্ধুরা ভালো, এমন অনেক কিছুই ভালোর লিস্টে ফেলতে শুরু করে। ফলাফল, এবারেও যখন সেই দুই বাচ্চা নিজেদের স্কুল নিয়ে আলোচনা করে তখন নিজেদের স্কুলের সাপোর্টে সেই অভিভাবকের কথা গুলিই একে অপরকে বলে। একজন একটু কম খরচে স্কুলে পড়েও কি কি সুবিধা পাচ্ছে আর দামী স্কুলে পড়েও সে ঐসব পারছে না তার ফিরিস্তি দিতে থাকে। অপরজনও তার সাপোর্টে নিজের স্কুলের সুবিধা গুলি বলে নিজেকে উঁচু কিংবা আলাদা প্রমাণ করতে থাকে।

এটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। বাচ্চাদের মাঝে এমন দুই একবার হয়েই থাকে। কিন্তু এর মাঝেও পক্ষপাত দুষ্টামি ঘটে গেছে।

এবারে পক্ষপাত দুষ্টামির সাথে আরও কিছু বিষয় জুড়ে দেয়া যাক। ধরুন দুই বাচ্চা আরও বড় হয়েছে। প্রয়োজনের খাতিরে এখন তারা দুটো আলাদা আলাদা কোচিং এ যায়। দুটো আলাদা কোচিং এ যাবার কারণও অভিভাবকের আর্থিক অবস্থাকে ধরে নেই। কিন্তু এবারে শুধুমাত্র এই ব্যাপারটা ছাড়াও আরও একটা ঘটনা রয়েছে। এখানে একটা কোচিং সাজেশনের নাম করে পরীক্ষার পূর্ববর্তী সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশ্ন হাতে তুলে দেয়। আর অন্যটির তেমন সাধ্য না থাকায় কিংবা নিজেদের অল্প কিছু নীতিকে বিসর্জন দিতে না পেরে সাজেশনের নামে প্রশ্ন দেবার কাজে নিজেদের জড়ায় না।

ফলাফল এবারে প্রশ্ন কিংবা বিশেষ সাজেশন পাওয়া কোচিং এ পড়া ছাত্রটি সাজেশনের নাম প্রশ্ন না পাওয়া বন্ধুটির তুলনায় বেশি মার্কস পায়। এবারেও যখন এইসব অভিযোগ তারা নিজেদের অভিভাবকের কাছে জানায় তখন সাজেশন না পাওয়া ছাত্রটির পরিবার তাকে বোঝায় যে, সে নিজের চেষ্টাতে যে নাম্বার পেয়েছে তাতেই তারা খুশি, আর নিজে আরও ভালো করে চেষ্টা করলে সাজেশন ছাড়াই অনেক ভালো করতে পারবে। অপরদিকে যে ছাত্রটি সাজেশন পেয়ে ভালো নাম্বার পেয়েছে তার অভিভাবক তাকে বোঝায় যে, টিকে থাকাটাই আসল, এগিয়ে যাবার জন্যে এমন দুই একটা জিনিষের সহায়তা নিয়েই এগুতে হয়। এরপর যখন কোন কারণে এই দুই ছাত্র নিজেদের মাঝে তাদের কোচিং নিয়ে তুলনায় যায় তখনও ফলাফল উপরের ঘটনা থেকে অভিন্ন থেকে যায়। সাজেশন পাওয়া ছাত্রটি নিজের অবস্থান জেনেও নিজেকে আর তার কোচিং কে ভালো, উন্নত বলে প্রমাণের চেষ্টা করে। আর সাজেশন না পাওয়া ছেলেটি তার কোচিং এর নীতি আর তার নিজের পরিশ্রমকে তুলে ধরে নিজেকে এবং তার কোচিং কে উপরে দেখাতে চায়।

এটাও এখনকার সময়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নয়। আশে পাশে চোখ বুলালেই এমন দুই একটা উদাহরণ পাওয়া যাবে। সাথে ঘটনায় এদের মাঝে পক্ষপাত দুষ্টামি এখানেও লক্ষণীয়।

এবারে কয়েক ধাপ এগিয়ে চিন্তা করি। এবারে ঐ বাচ্চা দুটির অবস্থানে আপনাকে আমাকে নিয়ে আসি। এখন আপনার আমার মাঝে অনেক কমন ব্যাপার থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে আমাদের স্ব-স্ব-চিন্তা ভাবনা, আদর্শ, দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর নিজেদের এই দৃষ্টিভঙ্গি আর আদর্শকে আলাদা ভাবে উপস্থাপন করতে আমরা নিজেদের কাজগুলিকে কিংবা ঐ আদর্শ আর দৃষ্টিভঙ্গির হিসেবে ঘটনাকে পর্যালোচনা করি। সেই ধারাবাহিকতায় কোথাও কোন একটি দুর্ঘটনা ঘটলো কিংবা কোন অন্যায় হল। কিছু মানুষ যাদের দৃষ্টিভঙ্গি আর আদর্শ কাছাকাছি ধরণের তারা সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একরকম আচরণ করবে, আর কিছু লোকের আচরণ হবে তাদের উল্টো। একদল অন্যায় কে অন্যায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তার বিরুদ্ধে নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করবে। আর অন্যজন অন্যায়টাকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি আর আদর্শকে ভালো অবস্থানে দেখাতে মরিয়া হয়ে উঠবে।

আগের ঘটনা গুলি তেমন বড় কোন সমস্যা না হলেও এবারে কিন্তু বড় ধরণের সমস্যার সৃষ্টি করবে। কারণ আদর্শ আর দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতার কারণে আমরা মূল সমস্যাটাকে এক সময় বাদ দিয়ে নিজেদের আন্তঃ সমস্যাগুলিকে সামনে নিয়ে আসবো। আর নিজেদের এইসব কর্মকাণ্ডে মূল যে সমস্যা কিংবা অন্যায়টা ছিল তা ধামা চাপা পড়ে যাবে ক'দিন বাদেই। আর সেই সমস্যাটা পরবর্তী সময় আরও বড় আকরে সামনে আসবে, অপরাধটা আরও বৃহৎ আকারে ঘটতেই থাকবে বারংবার। কিন্তু আমরা আমাদের এই পক্ষপাত দুষ্টামি ত্যাগ করতে না পারায় তাকে বরাবরই পাশ কাটিয়ে নিজেদের ভাবমূর্তি, দৃষ্টিভঙ্গি আর আদর্শকে বড় করে দেখানোতেই ব্যস্ত থাকব।




এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার উপায় আমরা সবাই কম বেশি জানি, বুঝি। কিন্তু কেউই আপন অবস্থান থেকে নিজেকে একটু ঢিল দিয়ে অপরকে সম্মান জানাতে প্রস্তুত নই। প্রস্তুত নই নিজের দৃষ্টিভঙ্গির ভুল গুলিকে স্বীকার করে নিতে। প্রস্তুত নই অপরের ভালো কাজের সমর্থন জানাতে। কারণ পক্ষপাত দুষ্টামিতে আমরা বেশ ভালো ভাবেই ডুবে গেছি। কেউ চাইছি না নিজে থেকে সেই ডুবন্ত অবস্থা থেকে উঠে আসতে, কেউ চাইছি না অন্যের সহায়তা নিয়ে তা থেকে মুক্তি পেতে। আর তাই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে আমাদের ঘিরে। কখনো এই পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির পাশ মিলিয়ে তো কখনো অপর পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির।







৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×