ভাবছে অনিশা আজকে কার মুখ দেখেই না উঠেছিল যে সব অপ্রিয় ঘটনা গুলো ঘটছে...
১. কলেজ এ পৌছে রিকশা থেকে নেমেই আবিষ্কার করা স্যান্ডেল টা ছিড়ে গেছে...
২. তাড়াতাড়ি ছেড়া স্যান্ডেল পায়ে যুদ্ধ করতে করতে সিড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে উষ্ঠা খাওয়া এবং সাথে সাথেই চশমা টা ভেঙে ফেলা
৩. বায়োলজি প্র্যাকটিকাল ক্লাসে কেঁচোর পৌষ্টিকতন্ত্র উদঘাটন করতে না পারা এবং ফলাফল শাস্তিস্বরুপ তা উদঘাটিত না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস পরিত্যাগ না করা..
সেই কেঁচো নামক গা গুলানো বস্তুর পৌষ্টিকনালী আবিষ্কার করা না পর্যন্ত যেহেতু সে বাসায় যেতে পারছে না...তাই নিতান্ত অনিচ্ছা সত্যেও অনিশা তা করে যাচ্ছে ...অথচ কিছুতেই মন বসছে না......বার বার তার চোখ চলে যাচ্ছে বাহিরে আকাশের দিকে...
আকাশে মেঘ জমেছে...আধা ঘন্টার মধ্যে কেঁচো কাটাকাটি ( নাকি খুচাখুচি ? ) শেষ করতে না পারলেই আরেকটা অপ্রিয় ঘটনার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে সে ...বৃষ্টি !!
বৃষ্টি অনিশার মোটেই পছন্দ না...সে বুঝে পায় না মানুষ বৃষ্টি এত ভালোবাসে কেন ? বৃষ্টি মানেই তো রাস্তাঘাটে কাঁদা..হাঁটতে গেলেই পায়ে কাঁদা লেগে যাওয়া ..ভিজা কাপড়ে বাসায় ফিরা..জর বাধিয়ে ঘরে বসে থাকা....গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসগুলো মিস করা এবং ফাইনাল এ তুষ্টির চেয়ে কম মার্ক পাওয়া...
তুষ্টির কথা মনে পরতেই অনিশা আবার কেঁচো কাটায় মন দেওয়ার চেষ্টা করল...
প্র্যাকটিকাল শেষ করে কলেজ থেকে বের হয়ে আরেক ধাক্কা!!!...পুরো রাস্তা ফাঁকা, একটাও রিকশা নেই...
কি আর করা পায়ে হেটেই বাড়ির পথ ধরল...
কিছুদুর যেতে না যেতেই মরার উপর খাঁড়ার ঘা এর মত শুরু হল বৃষ্টি....নাহ! আজকে দিনটা আসলেই খারাপ ভাবল অনিশা...
একটু দুরে দেখা যাচ্ছে ছোট্ট একটা চায়ের দোকান....ছেড়া স্যান্ডেল হাতে নিয়ে সেটার ছাউনির দিকেই এগিয়ে গেলো..
ছাউনিতে এসে হাতের বইগুলোর উপর থেকে পানি মুছতে ব্যাস্ত হয়ে পরল...
হঠাৎ তার পাশে থেকে কেউ একজন বলে উঠল...
"এক্সকিউজ মি...আপনি কি কাইন্ডলি আমার সাথে একটু বৃষ্টি তে ভিজবেন? "
অনিশা আচমকা এমন কথায় এতই অবাক হল যে বাক্হারা হয়ে গেল...
ছেলেটা বলল..."না মানে ...ইয়ে...আসলে বৃষ্টি তে একা ভিজার মধ্যে কোনো মজা নেই....
অনিশার চেহারা এবার কঠিন ভাব ধারন করল...
তখন আবার ছেলেটা বলল..."বিশ্বাস করেন এখানে আর কেউ থাকলে আপনাকে বলতাম না....বুড়ো দোকানদার অবশ্য আছে কিন্তু সে মনে হয় ঘুমাচ্ছে .........উমমমম...আচ্ছা থাক! সরি !"
ছেলেটার মুখ দেখে মনে হল যেন মনটা ভিষন খারাপ হয়ে গেছে...
তা দেখে অনিশার মনে এক আজব অনুভূতি হল...
ছেলেটাকে অবাক করে দিয়ে বলল..."চলুন"
ছেলেটা প্রশ্নসুচক দৃষ্টিতে তাকালো...
অনিশা আবার বলল..."চলুন বৃষ্টি তে ভিজি..."
ছেলেটা সুন্দর করে একটু হাসলো...অনিশার মনে হল এত সুন্দর হাসি সে আগে কখনো দেখে নি....
অনিশার গা শিরশিরিয়ে উঠলো...সে এক নতুন অনুভূতি....
ঝুম বৃষ্টি তে ভেজা যে এত মজার হতে পারে সে কল্পনাও করেনি...এ যেন বৃষ্টি নয় কোনো মনমুগ্ধকর সঙ্গীত...যার তালে তালে নাঁচতে মন চাইছে তার...
সে দেখল ছেলেটা দুহাত মেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে..যেন গায়ে বৃষ্টি মাখছে....অনিশার ও ইচ্ছে হল এমনটা করতে..
ছেলেটা কিছুক্ষন রাস্তার মধ্যে লাফালাফি করল...তারপর রাস্তার ধারে জমা পানিতে গিয়ে লাফাতে লাগলো....দৃশ্যটা দেখে অনিশা হেসে ফেলল আর বাচ্চাদের মত একটু হাততালী দিয়ে দিল....ছেলেটা তাকাতেই লজ্জা পেয়ে গেলো সে...
এভাবে আরো অনেকক্ষন বৃষ্টি তে ভিজল তারা....
এক সমসয় বৃষ্টি থেমে গেল....
ছেলেটা অনিশার কাছে এসে বলল "থ্যাংকস....চললাম "
অনিশার মন টা কেন জানি একটু খারাপ হয়ে গেলো...ইস্! বৃষ্টি টা যদি আরো কিছুক্ষন থাকত .....
ছেলেটা হেঁটে যাচ্ছে...কিছুদুর গিয়ে একটু অনিশার দিকে ফিরে তাকালো...উপহার দিল তার সেই অপুর্ব হাসি...
অনিশা অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে থাকলো সেদিকে....যতক্ষন না রাস্তার শেষ প্রান্তে হারিয়ে যায় ছেলেটার ছায়া....!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:৪৫