somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~||~*~ এক বরষায় ~*~||~

১৫ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব সাবধানে মুখ বিকৃত করে মোম-ট্রে এর উপর রাখা জিনিস টার ছাল উঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছে অনিশা ....হুমম জিনিস ই বটে....উফ! দেখলেই গা গুলায়....

ভাবছে অনিশা আজকে কার মুখ দেখেই না উঠেছিল যে সব অপ্রিয় ঘটনা গুলো ঘটছে...
১. কলেজ এ পৌছে রিকশা থেকে নেমেই আবিষ্কার করা স্যান্ডেল টা ছিড়ে গেছে...
২. তাড়াতাড়ি ছেড়া স্যান্ডেল পায়ে যুদ্ধ করতে করতে সিড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে উষ্ঠা খাওয়া এবং সাথে সাথেই চশমা টা ভেঙে ফেলা
৩. বায়োলজি প্র্যাকটিকাল ক্লাসে কেঁচোর পৌষ্টিকতন্ত্র উদঘাটন করতে না পারা এবং ফলাফল শাস্তিস্বরুপ তা উদঘাটিত না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস পরিত্যাগ না করা..

সেই কেঁচো নামক গা গুলানো বস্তুর পৌষ্টিকনালী আবিষ্কার করা না পর্যন্ত যেহেতু সে বাসায় যেতে পারছে না...তাই নিতান্ত অনিচ্ছা সত্যেও অনিশা তা করে যাচ্ছে ...অথচ কিছুতেই মন বসছে না......বার বার তার চোখ চলে যাচ্ছে বাহিরে আকাশের দিকে...
আকাশে মেঘ জমেছে...আধা ঘন্টার মধ্যে কেঁচো কাটাকাটি ( নাকি খুচাখুচি ? ) শেষ করতে না পারলেই আরেকটা অপ্রিয় ঘটনার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে সে ...বৃষ্টি !!

বৃষ্টি অনিশার মোটেই পছন্দ না...সে বুঝে পায় না মানুষ বৃষ্টি এত ভালোবাসে কেন ? বৃষ্টি মানেই তো রাস্তাঘাটে কাঁদা..হাঁটতে গেলেই পায়ে কাঁদা লেগে যাওয়া ..ভিজা কাপড়ে বাসায় ফিরা..জর বাধিয়ে ঘরে বসে থাকা....গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসগুলো মিস করা এবং ফাইনাল এ তুষ্টির চেয়ে কম মার্ক পাওয়া...
তুষ্টির কথা মনে পরতেই অনিশা আবার কেঁচো কাটায় মন দেওয়ার চেষ্টা করল...

প্র্যাকটিকাল শেষ করে কলেজ থেকে বের হয়ে আরেক ধাক্কা!!!...পুরো রাস্তা ফাঁকা, একটাও রিকশা নেই...
কি আর করা পায়ে হেটেই বাড়ির পথ ধরল...

কিছুদুর যেতে না যেতেই মরার উপর খাঁড়ার ঘা এর মত শুরু হল বৃষ্টি....নাহ! আজকে দিনটা আসলেই খারাপ ভাবল অনিশা...

একটু দুরে দেখা যাচ্ছে ছোট্ট একটা চায়ের দোকান....ছেড়া স্যান্ডেল হাতে নিয়ে সেটার ছাউনির দিকেই এগিয়ে গেলো..
ছাউনিতে এসে হাতের বইগুলোর উপর থেকে পানি মুছতে ব্যাস্ত হয়ে পরল...

হঠাৎ তার পাশে থেকে কেউ একজন বলে উঠল...
"এক্সকিউজ মি...আপনি কি কাইন্ডলি আমার সাথে একটু বৃষ্টি তে ভিজবেন? "

অনিশা আচমকা এমন কথায় এতই অবাক হল যে বাক্‌হারা হয়ে গেল...

ছেলেটা বলল..."না মানে ...ইয়ে...আসলে বৃষ্টি তে একা ভিজার মধ্যে কোনো মজা নেই....

অনিশার চেহারা এবার কঠিন ভাব ধারন করল...

তখন আবার ছেলেটা বলল..."বিশ্বাস করেন এখানে আর কেউ থাকলে আপনাকে বলতাম না....বুড়ো দোকানদার অবশ্য আছে কিন্তু সে মনে হয় ঘুমাচ্ছে :| .........উমমমম...আচ্ছা থাক! সরি !"

ছেলেটার মুখ দেখে মনে হল যেন মনটা ভিষন খারাপ হয়ে গেছে...
তা দেখে অনিশার মনে এক আজব অনুভূতি হল...
ছেলেটাকে অবাক করে দিয়ে বলল..."চলুন"

ছেলেটা প্রশ্নসুচক দৃষ্টিতে তাকালো...

অনিশা আবার বলল..."চলুন বৃষ্টি তে ভিজি..."

ছেলেটা সুন্দর করে একটু হাসলো...অনিশার মনে হল এত সুন্দর হাসি সে আগে কখনো দেখে নি....



অনিশার গা শিরশিরিয়ে উঠলো...সে এক নতুন অনুভূতি....
ঝুম বৃষ্টি তে ভেজা যে এত মজার হতে পারে সে কল্পনাও করেনি...এ যেন বৃষ্টি নয় কোনো মনমুগ্ধকর সঙ্গীত...যার তালে তালে নাঁচতে মন চাইছে তার...

সে দেখল ছেলেটা দুহাত মেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে..যেন গায়ে বৃষ্টি মাখছে....অনিশার ও ইচ্ছে হল এমনটা করতে..
ছেলেটা কিছুক্ষন রাস্তার মধ্যে লাফালাফি করল...তারপর রাস্তার ধারে জমা পানিতে গিয়ে লাফাতে লাগলো....দৃশ্যটা দেখে অনিশা হেসে ফেলল আর বাচ্চাদের মত একটু হাততালী দিয়ে দিল....ছেলেটা তাকাতেই লজ্জা পেয়ে গেলো সে...

এভাবে আরো অনেকক্ষন বৃষ্টি তে ভিজল তারা....

এক সমসয় বৃষ্টি থেমে গেল....

ছেলেটা অনিশার কাছে এসে বলল "থ্যাংকস....চললাম "

অনিশার মন টা কেন জানি একটু খারাপ হয়ে গেলো...ইস্‌! বৃষ্টি টা যদি আরো কিছুক্ষন থাকত .....

ছেলেটা হেঁটে যাচ্ছে...কিছুদুর গিয়ে একটু অনিশার দিকে ফিরে তাকালো...উপহার দিল তার সেই অপুর্ব হাসি...

অনিশা অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে থাকলো সেদিকে....যতক্ষন না রাস্তার শেষ প্রান্তে হারিয়ে যায় ছেলেটার ছায়া....!

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:৪৫
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×