একতলা একটি ছোট্ট বাড়ি..সামনে সাদা গ্রিল দেওয়া খোলা বারান্দা...
ছোট্ট ছোট্ট পায়ে বারান্দার সামনের সিড়ি দুটো ডিঙ্গিয়েই সামনের দরজাটার জন্য দৌড়...আর দরজার সামনে এসেই.... ধপাস!
রুমের ভেতর নড়াচড়ার শব্দ হল...একটু পরই চশমা পরা এক বৃদ্ধ লোক বেড়িয়ে এল...
তেনাকে দেখেই মেয়েটির মুখে প্রথম কথা..."নান্না দোক্কান যাব"
"উহু নানুভাই তোমাকে কত্তবার বলেছি স্যান্ডেল ঠিক করে পড়তে...ঠিক করে পর....ওটা ডান পায়ে আর ওটা বাঁ পায়ে..." বলে নিজেই স্যান্ডেল দুটো ঠিক করে পরালো...
মেয়েটি আবার বল্ল "দোক্কান যাব"
"হুম এক্ষুনি যাব...."
পরবর্তী দৃশ্য:
বৃদ্ধ লোকটি কাঁধে করে পিচ্চি মেয়েটিকে নিয়ে রাস্তা ধরে হাটছে....
খানেক পথ যেয়ে বলল "নানু এবার একটু হাঁট ? "
"উহু কাদে করে যাব"
কি আর করা ফের হাটা শুরু করল...
একটি স্টেশনারী দোকানে পৌছানোর পর:
"নানুভাই কি লাগবে তোমার ?"
"নং পেন্সিল"
অতঃপর দোকানদার এর উদ্দেশ্যে : "এই আমার নানু ভাই কে সবচেয়ে ভালো রং পেন্সিল দাও"
ছোট নাতনীর সকল আবদার রক্ষা করার পর আবার কাঁধে করে বাড়ির পথে হাটা...
বাড়ির সামনে ছোট্ট বাগান....সেখানে খেলা করছে তাঁর বড় নাতনী আর তার সঙ্গী-সাথীরা....তাদের দেখেই ছোট নাতনী কাঁধ থেকে নেমে দৌড় দিল খেলতে.....
কানামাছি খেলা চলছে....পিচ্চি মেয়েটি তার বড় বোনের কাছে গিয়ে বলল "আমিও খেলব"
তখন বড় মেয়েটি বাকিদের কে বলল..."অ্যাই ও খেলবে....ও কিন্তু দুধভাত ( খেলায় পিচ্চিদের নেওয়া হলেও তাদের কে দুধভাত রাখা হয় যার অর্থ তাকে খেলায় অ্যকচুয়েলী নেওয়া হইনি কিন্তু ভান করতে হবে যেন সেও খেলায় আছে )"
কিন্তু পিচ্চিরা আর কতদিন পিচ্চি থাকবে....এটা শুনেই পিচ্চি মেয়েটা ভ্যা করে কেঁদে দিল....
তার এট্টু পরেই নানা দৌড়ে এল "কি হল নানুভাই কান্দে কেন ???"
কাঁদতে কাঁদতে পিচ্চি বলে "আমকে খেলায় নেয় না "
"ধুর! এই যে নানাভাই আছি না....আমি খেলব তো তোমার সাথে..."
পিচ্চি মেয়েটা দ্বিধায় পরে যায়... চোখ পিট পিট করে নানাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে নানাভাইয়ের সাথে কানামাছি খেলবে কিভাবে?আরো কিছু ভাবার আগেই নানা তার হাত ধরে ঘরে নিয়ে যায়...তারপর খাতা আর রং পেন্সিল দিয়ে বলে নানু ছবি আঁক....
=========================================
নানাভাইয়ের সেই পিচ্চি নাতনী আমি !
নানা আমায় ডাক্ত আর্টিস্ট নানুভাই....
পিচ্চিকালে নানার কাজের অকাজের সকল বই পত্তরে কতই না আঁকিবুকি করেছি....নানা সেগুলো সংগ্রহ করে রাখত...কেউ বেড়াতে আসলে ফাইল খুলে দেখাত আমার আঁকা কাউয়ার ঠ্যাং বগার ঠ্যাং ..
নানা ভাই আজ নেই..
মাঝে মাঝেই মনে হয় আমার খেলার সাথী নানা ভাই টা এখন কোথায় কিভাবে আছে...আমাকে যখন কেউ খেলায় নিত না তখন নানা আমার পাশে এসে দাড়াত... কিন্তু হায়! আজ নানার পাশে গিয়ে আমি চাইলেও দাড়াতে পারব না..
আজ নানাভাই কে ভিষন মনে পড়ছে...