রেস্তুরেন্টে প্রথমে মেয়েটা একটু ইতস্ততঃ করছিল । বললাম “প্লিজ বি ইজি । আপনার ক্ষুদা লেগেছে । আপনি খাওয়া শুরু করন ।“
অনেক খিদে লেগেছিল মনে হয় । খাওয়া শেষ করে মেয়েটা বলল “আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । আমার আসলেই অনেক ক্ষুদা লেগেছিল । লজ্জা আর সংকার কারনে কাউকে কিছু বল বলতেও পারছিলাম না ।“
“ আচ্ছা এবার আপনার গল্প বলুন । ব্যাগ হারালেন ।“
মেয়েটা তার নাম বলল লিয়ানা ।
লিয়ানা !! বেশ সুন্দর নাম ।
লিয়ানা বলল “আমি এদিকে থাকি না । গুলসান-২ এ থাকি । এদিকটা ঠিক মত চিনিও না আমি ।“
“ তাহলে এদিকে কেন এসেছেন ?”
লিয়ানার খানিকটা অন্ধকার হয়ে আসল । বলল “আজ সকালে আম্মুর সাথে রাগারাগি করে চলে এসেছি । আসা উচিত্ হয়নি । এখন বুঝতে পারছি ।“
“ হু উচিত্ তো হয়ই নি । যদি অন্য কোন বিপদে পড়তেন ।“
“ এজন্যতো কাউকে বলতে ভরসা পাচ্ছি লাম না ।“
আমি বললাম “আপনি পথ হারালেন কিভাবে ?”
“ আসলে আমি ঢাকায় নতুন । অল্প কয়দিন হয়েছে ঢাকায় এসেছি । আগে চট্টগ্রামে থাকতাম । পথ ঘাট কিছুই চিনি না । আর সব সময় গাড়িতে চলা ফেরা করিতো তাই কিছুই চেনা হয়ে ওঠেনি । আজ সকালে আম্মুর সাথে রাগারাগি করে যখন চলে আসি তখন কিছুই ভাবি নি । ক্যাব নিয়ে ছিলাম । কি মনে করে এদিকে চলে আসলাম জানি না । আর সব সময় ব্যাগ গাড়িতেই থাকতো । ব্যাগ না নিয়ে কখন যে ক্যাব থেকে নেমে পড়েছি বুঝতেই পারি নি ।“
“ বাসার নম্বর কি মনে আছে ?”
“ হ্যা রোড নম্বর বাসা নম্বর মনে আছে । কিন্তু কিভাবে যাবো বুঝতে পারছি না ।“
আগেই বলেছি সুন্দর মেয়েদের কে তো সাহায্য করতেই হয় ।
“আমি আপনাকে নিয়ে যেতে পারি তবে একশর্তে !”
লিয়ানার মুখ কালো হয়ে গেল । ও ভেবেছিল আমি কি না কি চেয়ে বসবো !
“আমি আপনাকে বাসা পর্যন্ত পৌছে দিবো কিন্তু আপনি আমাকে আপনার বাসায় যেতে বলতে পারবেন না ।“
লিয়ানার মুখ থেকে কালো ছায়াটা ঝট করে কেটে গেল । সেখানে একটু বিশ্ময় দেখলাম ।
“কেন ? আপনি আমার এতো উপকার করছেন । তাহলে ?”
“ কারন আছে ।“
কেন যে কথাটা বললাম জানি না । কেবল মনে হল তাই বললাম । তবুও ওকে বাসায় নামিয়ে দেওয়ার সময় লিয়ানা অনেক অনুরোধ করল নামার জন্য । আমি নামলাম না । যোগেযোগ করার জন্য মোবাইল নাম্বর চাইল । তবুও ওকে দিলাম না । কেন দিলাম না তবুও জানি না ।
হাসলাম একটু বললাম “হয়তো আবার দেখা হতে পারে ! আথবা হবে না ।“
চলে আসলাম ।কেবল মনের মধ্যে চমত্কার এক অনুভূতি ছিল একটা চমত্কার মেয়ের সাথে কিছু সময় কাটানোর । কাহিনী এখানেই শেষ হতে পারতো । কিন্তু হল না ।
ঠিক এগারো দিন পর লিয়ানার ফোন এল ।তখন বেশ রাত । আমার নাম্বরে সাধারনত আননোন নাম্বর থেকে ফোন আসে না । তাই অপরিচিত নাম্বর দেখে খানিকটা বিরক্ত হলাম ।
“হ্যালো ।“
“ হাই !!”
খানিকটা চমকালাম । একে তো মেয়ে কন্ঠ তার উপর এতো আদুরে কন্ঠ । আর এতো আদুরে ভাবে হাই বলল যে মনে হল । “সরি কে বলছেন ?”
“ বলুন তো কে বলছি ।“
“ কাকে চাচ্ছেন বলবেন প্লিজ ।“
“ আমি আপনাকেই চাচ্ছি অপু হাসান ।“
আরো খানিকটা অবাক হলাম ।মেয়েটা আমার নামও জানে ।
‘আপনি কে ?” মেয়েটা হাসল । হাসির শব্দ শুনলাম ।
“আপনার কি মনে আছে ঠিক এগারো দিন আগে আপনি একটা মেয়েকে হেল্প করেছিলেন ?”
লিয়ানার কথা মনে তখন প্রায় ফিকে হয়ে এসেছে ।
“লিয়ানা ??”
“ যাক নাম মনে আছে তাহলে !”
আমি খুব অবাক হলাম । খুব বেশি হবাক হলাম ।
“আমার নাম্বার পেলেন কোথায় ?!”
“ বের করেছি ।“
“ কিভাবে ?’
“ তা না হয় নাই শুনলেন । বের করেছি এটাই বড় কথা । আমি বের চেয়েছি তাই পেরেছি । শুনুন কাল আমি আপনার সাথে দেখা দেখা করবো । আপনি না চাইলেও কিন্তু আমি দেখা করবই । কারন আমি আপনার সম্পর্কে পুরো খোজ খবর বের করেছি ।“
আমি আরো খানিকটা অবাক হই ।
(চলবে)