somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলাদিনের জ্বিন অথবা একটা দুঃস্বপ্নের গল্প !!

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি অবাক না হয়ে পারলাম না ! অবাক হয়ে জ্বিনটার দিকে তাকিয়ে আছি । কেমন মাথা নিচ করে দাড়িয়ে আছে ফাজিলটা !
একটু আগে চেরাগ থেকে বেড়িয়ে হু হা করতে করতে বলল
-হুকুম করুন মালিক ! আমি আপনার তিনটি ইচ্ছা পূরণ করবো । আর এখন কেমন মাথা নিচ করে দাড়িয়ে আছে !!
আমি আবার বললাম
-আমার তিনটা ইচ্ছা তোমার পুরন করতে হবে না । কেবল একটা ইচ্ছাই তুমি পূরণ কর !!
বেটা ফাজিল জ্বিন তবুও কোন কথা বলল না । কেমন আস্তে আস্তে ধোঁয়ায় পরিনত হতে হতে চেরাগের ভিতর চলে যেতে লাগলো !
-বদমাইশ জ্বিন যাস কই !! আমার ইচ্ছা তোর পূরণ করতেই হবে । এই বলে আমি জ্বিন বেটাকে ধরতে যাই । দৌড়াতে থাকি দৌড়াতেই বালির মধ্যে উল্টে পরি .....
এমন সময়ে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় !
ইদানিং কি সব উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখি !! আালদিনের জ্বিন !! তিনটা ইচ্ছা !!
আপন মনে একটু হাসি আসে !
আচ্ছা এমনটা যদি সত্যিই হত !

ছুটির দিন ! অবেলায় ঘুমিয়েছিলাম । ঘড়িতে সময় দেখি ১২টার কিছু বেশি বাজে ! কতক্ষন ঘুমিয়েছি কে জানে ! ঘুম ভাঙ্গার পর আমার কেন জানি সব সময় নিশিকে খুব দেখতে ইচ্ছা করে । প্রতিদিন সকাল বেলা নিশির ডাকেই ঘুম ভাঙ্গে । চোখ মেলেই আমার সোনা বউটার হাসি দেখি ! দিনটা কি সুন্দর ভাবেই না শুরু হয় ।
দিন যদিও আগেই শুরু হয়ে গেছে তবুও নিশিকে একবার দেখতে ইচ্ছা করছে ।
আমার বউটা গেল কই ?
ওর নাম ধরে ডাক দেই !
রান্না ঘর থেকে আওয়াজ আছে ।
এই মেয়েটা কে নিয়ে আমি কি করবো ? কতবার বলেছি বান্নাঘরে না যেতে তবুও.......
একটু বিরক্ত হয়েই রান্না ঘরের দিকে হাটা দিলাম ।
নিশি রান্না ঘরে ইলিশ মাছ ভাজছে । সুগন্ধ সারা বাড়ি ছেয়ে গেছে । সুবাসেই বলে দিচ্ছে মাছটা খুব স্বাধ হবে খেতে !
আমি আর একটা জিনিস খ্যাল করলাম, নিশি আজ স্কার্ট পরেছে । কেমন হিন্দি সিনেমার টিনএজ নায়িকাদের মত লাগছে । আগে তো এই স্কার্ট একদম পরতে চাইতো না ।
হানিমুনে ওনে নিয়ে গোয়াতে গেছিলাম । এখান থেকেই কেনা স্কার্ট টা । আমি যখন ওকে স্কার্ট টা কিনতে বললাম ও যেন আকাশ থেকে পরলো । বলল
-এই জিনিস আমি পরবো ?
-কেন সমস্যা কি?
-সমস্যা কি মানে? আপু আমি দেশের মেয়েরা এমন পোষাক পরে না ।
-কে বলছে ? এখন তো অনেকেই পরে
-আচ্ছা ইদানিং মেয়েদের পোষাকের দিকে খুব লক্ষ্য করা হচ্ছে !! তাই না?
এই জন্য মেয়েদের সামনে কিছু বলার উপায় নাই । কোন কথা কোন দিক দিয়ে ঢরবে ঠিক নাই ।
আমি বললাম
-আরে আশ্চর্য ! কিসের ভিতর কি কথা ! এইটা নাও ! তোমাকে ভাল মানাবে !
-জি না ! আমি এ জিনিস পরবো না । এ পোষাকে আমি বাইরে যেতে পারবো না ।
-আচ্ছা তোমাকে বাইরে যেতে হবে না । আমি যখন বাসায় থাকবো তখ ন কেবল পরবে ।
-জি না ।
ও রাজি না হলেও আমি ইচ্চা করেই কিনেছিলাম । আগে পরতো না । কিন্তু এখন দেখি প্রায়ই পরে । যখন আমি বাসায় থাকি । বিশেষ করে ঐ ঘটনা পর থেকে আমার সব পছন্দের কাজ গুলোও এখক কেবল নিশি করে এখন । সব সময় কেমন যেন আমাকে খুশি করার চেষ্টা ।
আরে আমি কথা কেন ভাবছি । আমি না ওকে বকা দিতে এসেছিলাম ।
আমি ডাক দিলাম
-নিশি !!
-হুম !
আমার দিকে চোখ না তুলেই ও বলল কথা টা । মাছ ভাজাতেই ব্যস্ত !!
আর একটু কঠিন স্বরে বললাম
-নিশি ! কি করছো ?
-মাছ ভাজছি ! দেখতে পারছো না ?
-মাছ ভাজছো বুঝলাম । কিন্তু রান্না ঘরে কেন ?
নিশি এবার আমার দিকে তাকালো । এমন একটা ভাব করলো যেন আমি খুব বোকার মত একটা প্রশ্ন করে ফেলেছি ।
-রান্না ঘরে ছাড়া আর কোথায় মাছ ভাজবো ? ড্রয়িং রুমে কেউ মাছ ভাজে ? শুনেছ এমন কথা ?
-তোমাকে আমি রান্না ঘরে যেতে মানা করি নি ? করেছি কি না বল ! তুমি তো বাচ্চা খুকি না ! একটা কথা বললে তো সেটা শুনবা নাকী !
নিশি অন্য দিকে তাকাল । নিশির এই একটা দোষ ওর সাথে কথা বললে বিশেষ করে ওকে বকা দেওয়ার সময় ও অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে ! ঠিক মত বকা দেওয়াও যায় না । আমি আবার বললাম
- কি ব্যাপার ওদিকে তাকিয়ে আছো কেন ? আমি কথা কানে যাচ্ছে না ?
নিশি এবার আমার দিকে তাকালো । বকা দিলে বাচ্চা মেয়েরা যেমন মুখ করে তেমন মুখ করে বলল
-আমাকে এভাবে বকছ কেন ? আর কয়টা দিনই তো ! তারপর তো আর তোমাকে মাছ ভাজি করে খাওয়াতে পারবো না !!
আমার বুকের ভিতরটা কেমন যেন হু হু করে উঠে ! কি কঠিন একটা কথা কত সহজ ভাবেই বলে ফেলল মেয়েটা ।
লাইন গুলোর প্রতিটা শব্দ যেন আমাকে চিৎকার করে বলছে যে তোমার প্রিয় মানুষটা তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে । তুমি কিছুউ করতে পারছো না । কেবল চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া !
না !! এই কথা আমি বিশ্বাস করি না । আমার নিশি আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না কিছুতেই ।
আমি নিশির দিকে এগিয়ে গিয়ে যাই । ওকে জড়িয়ে ধরি !!
তবুও কেন জানি বুকের তোলপাড় থামে না !! নিশি বলল
-আই এম সরি অপু । আমার এই কথাটা বলা উচিৎ হয় নি ।
-অবশ্যই উচিৎ হয় নি । তুমি কোথায় যাবে আমাকে ছেড়ে ! আমি তোমাকে কোথাও যেতে দিবো না !! কোথাও না !
আমি নিজেও জানি কথাটা সত্যি না । আমি ওকে আটকে রাখতে পারবো না । যে মরন ব্যাধি ওর শরীরে বাসা বেধেছে সেটা ওকে আমার থেকে দুরে নিয়েই যাবেই !!
নিশি বলল
-এই ছাড়ো ! ছাড়ো ! মাছ পুড়ে যাচ্ছে !!
আবার মাছ !!
এই মাছের গায়ে আমি আগুন ধরিয়ে দিতে পারতাম !
আমার বাহু বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিশি মাছ ভাজায় মন দিল । আমি ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম
-তোমাকে না ডাক্তার আগুনের সামনে আসতে মানা করেছে ! তুমি কেন শুন না ?
-আরে বাবু কিছু হবে না ! তুমি বুঝ না তোমার জন্য এই কাজ গুলো করতে পারলে আমার কি পরিমান ভাল লাগে !! যাওায়র আগে এই আনন্দ থেকে আমাকে বঞ্চিত কর না প্লিজ !
-আবার ??
-আচ্ছা বাবু !! আর বলবো না । এখন বসার ঘরে গিয়ে বস ! আমি মাছ ভাজি নিয়ে আসছি ! যাও ......

আমি কিছুই করতে পারি না । কেবল দিন গুনি । যতটা দিন পার হয় আমার মনটা ততই উতলাই হয় । অফিস যাই না । যেতে ভাল লাগে না । ইচ্ছে হয় সারাক্ষন কেবল নিশির পাশেই থাকি । ওর সব কথা শুনি ।প্রতিটা হাসি নয়ন ভরে দেখি !! ওর সব ইচ্ছা পুরন করি । রাতের বেলা নিশিকে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমাই । কিছুতেই ও হারিয়ে না যা্য

বেটা ফাজিল জ্বিনটা আবার এসেছে । আমি ওটাকে কে চলে যেতে বললাম । বেটা তবুও গেল না । বলল
-আপনার হুকুম না পালন করলে আমি মুক্তি পাবো না ।
-আমি তো তোমাকে হুকুম দিয়েছিই । ঐটা পালন কর ।
জ্বিন বেটা মাথা নিচু করে রাখে !!
-আমি এই হুকুম পুরন করতে পারবো না মালিক । আমাকে অন্য হুকুম দেন
-দুরে গিয়া মর বেটা । আমার অন্য হুকুমের দরকার নাই ।
আমি মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকি । বেটা আমার পাশে এসে বসে ।
দুজনই বসে থাকি চুপচাপ !!
একসময় জ্বিন বলল
-পৃথিবীতে ভালবাসা উপেক্ষা করা খুব কঠিন একটা কাজ । যে কেউ এই কাজ পারবে না । নিশিও পারবে না !!
কেন জানি আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে ! আমি নিজেকে এতো দিন খুব ভাল করে শাসন করে রেখে ছিলাম যে কাঁদবো না কিছুতেই । আমার চোখে পানি দেখলে নিশিও যেন কেমন হয়ে যায় !! আমার সাথে রাগ করে ! কথা বলে না ।
গাল ফুলিয়ে বলে
-তোমার সাথে কথা নাই ! আামি ভাল থাকি তা তুমি চাও না, আমি কাঁদলেই তো তুমি খুশি হও !
আমি ভেবে পাই না । এই কথা কেন বলে । কারন জানতে চাইলে বলে
-তাহলে তুমি কেন কাঁদো ? আমি কেমন করে নিজের ধরে রাখবো যখন তোমার কন্না দেখবো ।
সেদিন থেকে ওর সামনে কান্না বন্ধ ! কিন্তু এখন এই জ্বিনাটর কথা শুনে কেন জানি আর কান্না আটকে রাখতে পারলাম না । তবে এটা দঃখের না আনন্দের কান্না !!
ঘুম ভেঙ্গে দেখি সত্যি আমার চোখে জল । নিশি আমার বুকে মাথা রেখে কি আরাম করেই না ঘুমাচ্ছে ! আমি তাকিয়ে থাকি !! আমার চোখে দিয়ে জল পড়তেই থাকে !!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:২৫
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আমাদের বাহাস আর লালনের গান

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৪১


দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হৈচৈ হচ্ছে, হৈচৈ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। একটা পক্ষ আগের সরকারের সময়ে হৈচৈ করত কিন্তু বর্তমানে চুপ। আরেকটা পক্ষ আগে চুপ ছিল এখন সরব। তৃতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ থাকে না কেউ থেকে যায়

লিখেছেন বরুণা, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০৩


চমকে গেলাম হঠাৎ দেখে
বহুদিনের পরে,
নীল জানালার বদ্ধ কপাট
উঠলো হঠাৎ নড়ে।

খুঁজিস না তুই আর খুঁজিনা
আমিও তোকে আজ,
আমরা দু'জন দুই মেরুতে
নিয়ে হাজার কাজ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরও একটি কবর খোঁড়া

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:০৪

গোরস্থানে গিয়ে দেখি
আরও একটি কবর খোঁড়া
নতুন কেউ আজ মরেছে
এমন করে বাড়ছে শুধু
কবরবাসী, পৃথিবী ছেড়ে যাবে সবাই
মালাকুল মওত ব্যস্ত সদাই
কখন যে আসে ঘরে
মৃত্যুর যে নেই ক্যালেন্ডার
যে কোন বয়সে আসতে পারে
মৃত্যুর ডাক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘটে যা’ তা’ সব সত্য নহে

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:৪৫

সত্য কী?
যাহা আমি বিশ্বাস করি তাহাই সত্য।
সত্য অন্মেষণ কী?
আমি যাহা বিশ্বাস করি তাহার পক্ষে যুক্তি খুঁজিয়া বেড়ানো।
ভাল কে?
যে আমার পক্ষে কাজ করে সে।
মন্দ কে?
যে আমার সমালোচনা করে সে।

গড় পড়তা বাঙালীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু কিছু মানুষ বলার শুরু করেছে, "আমরা আগেই ভালো ছিলাম"।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:০২



একাধিক কারণে মানুষ ইহা বলার শুরু করেছেন: (১) সাধারণ মানুষ কোমলমতিদের ক্রমেই চিনতে পারছেন, ইহা ভীতি ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে; কোমলমতিরা সরকারের গুরুত্বপুর্ণ অনেক পদে আছে ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×