somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার সাইকেল, বাড়িয়ালার মেয়ে এবং আমাদের দুজনের গল্প !

১৩ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-ভাইয়া কি করছেন?
নাজিফার কথা শুনে আমার মনটা বিরক্তিতে ভরে গেল । মেজাজটাও খানিকটা খারাপ হল ! এই রকম ন্যাকামো মার্কা প্রশ্ন শুনলে মেজাজটা কার ঠিক থাকে ?
এই ফাজিল মেয়েটা আমার বন্ধু রাফাতের মত কথা বলছে !
ঐ ব্যাটা কয়দিন আগে আমাদের ল্যান্ড লাইনে ফোন দিয়ে বলে দোস্ত তুই কই ?
আরে ব্যাটা ফাজিল তুই ফোন দিছিস ল্যান্ড নাইনে আবার জিগাস আমি কই ?
এমন বেকুবদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া কি ঠিক ?
আর এই মেয়ে দেখতে পারছে আমি সাইকেল মুছতেছি আবার জিগায় আমি কি করতেছি !
এই মেয়ের গায়ে আস্ত একটা তেলাপোকা ছেড়ে দিতে পারলে ভাল লাগতো, কিন্তু সে কাজ করার উপায় নাই !
একে তো মেয়ে দেখতে একেবারে ডানা কাটা পরী তার উপর আবার বাড়ি ওয়ালার মেয়ে !
এই মেয়েকে কিছু বললে আমার আব্বা আমাকে আস্ত রাখবে না । আমি হাসি মুখে বললাম
-সাইকেল মুছতেছি ?
-সাইকেল চালাবেন ভাইয়া ?
না সাইকেল চালাবো কেন ? আমি তো সাইকেলটা কিনেছি কেবল গ্যারেজ ভিতরে রেখে দেওয়ার জন্য !
-হ্যা একটু চালাবো ভাবছি !
-ইস ! সাইকেল চালাতে খুব খুব মজা, তাই না ভাইয়া ? আমি যদি চালাতে পারতাম !
আমি খানিকটা বিপদের গন্ধ পেলাম । এখন এই মেয়ে যদি বলে ফেলে ভাইয়া আমাকে সাইকেল চালানো শিখাবেন তাহলে আমিতো পরবো বিপদে ।
শুধু বিপদে না মহা বিপদে !
আমার মনের কথা মনেই রয়ে গেল নাজিফা বলল
-ভাইয়া আমাকে চালানো শিখাবেন ?
এই সেরেছে রে !!
আমি এখন কি বলি !
যদি না বলি তাহলে সোজা আমার বাসায় রিপোর্ট চলে যাবে ! আর আমা রবাপ যদি জানতে পারে তাহলে তো হয়েছে !!
নাফিজা আবার বলল
-ভাইয়া একটু শিখাবেন ?
-তুমি শিখতে পারবে ? পরে গেলে তো ব্যাথা পাবে !
কিন্তু এর পর নাজিফা যা বলল তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না । নাজিফা বলল
-কেন? পরবো কেন ? পরে গেলে আপনি ধরবেন ?
এই মেয়ে বলে কি ? আমি আর কথা বাড়ালাম না । এখন এখান থেকে পালাতে পারলে বাঁচি । নাজিফা বলল
-আচ্ছা তাহলে এখন যাই ভাইয়া । কোচিং থেকে আসছি তো । কালকে আমার কোচিং নাই । কালকে শিখবো কেমন !
হুম আসো ! তোমাকে শিখানোর জন্য আমিতো বসে আছি ।
-আচ্ছা ঠিক আছে ।
আমি সাইকেল নিয়ে বের হয়ে গেলাম । খুব বেশি চিন্তা লাগছে না এখন । কাল তানভীর স্যার আসবে বিকেল বেলা । খুব সহবেই পাশ কাটানো যাবে । আমি মনের আনন্দে সাইকেল চালাতে লাগলাম ।

কিন্তু বিপদে আমাকে পড়তেই হল । তানভীর স্যার প্রতিদিন একদম সময় মত এসে হাজির হয় কিন্তু স্যার তো সময় মত এলোই না ফোন করে বলল যে আসতে পারবে না ।
এ কি বিপদে পড়লাম । অন্যদিন তো আমি আল্লাহর কাছে দুয়া করি যেন আজ স্যার না আসে । আর আজকে আমি দুয়া করলাম স্যার যেন আসে কিন্তু হায় !
কপাল খারাপ হলে যা হয় ।
বিকেল বেলা ঠিক সময় মত নাজিফা এসে হাজির । একটা কথা না স্বীকার করে উপায় নাই ! মেয়েটা আসলেই খুব সুন্দর । যত ন্যাকামো মার্কা কথাই মেয়েটা বলুক না কেন এর আশে পাশে থাকলে কিছুক্ষনের ভিতর মনটার ভিতর কেমন একটা অচেনা অনুভুতি হয় !

সারাটা বিকেল মেজাজটা খারাপ হয়ে রইল কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না । তবে একটা ব্যাপার বেশ ভাল লাগল যে কাজীর গলির আর যে কয়টা ছেলে আছে সবাই আমার দিকে কেমন ঈর্শা ভরা দৃষ্টিতে তাকাতে লাগল ।
আর তাকাবেই না কেন ?
নাজিফা কে আমি সাইকেল চালানো শিখাচ্ছি আর এলাকার অন্য ছেলে গুলো কেবল দুর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর জ্বলছে ।
এটা একটা আনন্দের বিষয় ।
নাফিজা যাওয়ার সময় বলল
-কালকে আবার কেমন ?
তারপর মিষ্টি একটা হাসি দিল ।

দিন দুয়েক খানেক পরের কথা । স্কুল থেকে বাসায় আসছি । আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে ! গলির মধ্যে গাড়ি ঢুকতেই একটা অবাক করা দৃশ্য দেখলাম ।
নাজিফা সাইকেল চালাচ্ছে মনের আনন্দের ! একটা গোলাপী রংয়ের লেডিস সাইকেল । এই সাইকেল মেয়েটা পেল কোথায় ?
তার থেকেও বড় কথা নাজিফা এতো ভাল সাইকেল চালাতে শিখলো কোথা থেকে ?
গত দুইদিন আমি ওকে যে পরিমান শিখেইছি তাতে তো এতো ভাল চালানোর কথা না । ঐদুই দিন আমাকে সব সময় সাইকেলে পেছন পেছন থাকতে হয়েছে ।
ও বেশ কয়েক বার পরে যেতে নিয়েছে আমাকে তা আটকাতে হয়েছে ।
কিন্তু এখন তো দেখছি এই মেয়ে দিব্যি সাইকেল চালাচ্ছে ।
আমি গাড়ি থেকে নেমে নাজিফার সামনে দাড়ালাম ।
আমাকে দেখেই নাজিফা সাইকেলে ব্রেক ধরে দাড়িয়ে পড়লো ।
নাজিফার মুখে এক্সপ্রেশন দেখে মনে হল কোন একটা অন্যায় করে ধরা পড়লে মুখের যে ভাবটা হয়, ওর মুখে এখন ঠিক তেমন একটা ভাব ।
আমি কিছু না বলে ওর সামনে দিয়ে চলে এলাম ।
এই বার আমার মেজাজটা আসলেই খারাপ হল । এই আগে থেকেই সাইকেল চালাতে পারে । তাহলে আমাকে খামোখা কেন কষ্ট করালো !
এই ফাজিল মেয়ের গায়ে আসলেই একটা তেলাপোকা ছেড়ে দেওয়া উচিৎ !

প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় আমার সাইকেল চালানোর একটা অভ্যাস ! সািকেল চালাচ্ছিলাম । চালাতে চালাতে মিন্টু রোডের দিকে চলে গেলাম । এই এলাকাটা সাইকেল চালানোর জন্য বেশ ভাল । কাজীর গলিটা একটু ছোট !
আমি একদম মিন্টু রোডের শেষ মাথা পর্যন্ত চলে এলাম । আর সামনে যাওয়া যাবে না । ওখান থেকে আবার ব্যস্ত রাস্তা শুরু হয়েছে !
আমি সাইকেল ঘুরাতে যাবো ঠিক তখনই নাজিফা আমার সাইকেলর সামনের দিকেটা এসে একটা ধাক্কা দিল ।
একটু অবাক হলাম । মেয়েটা এতোদুর সাইেকল চালিয়ে এসেছে আমার পেছন পেছন ।
-সরি শামস ভাইয়া !
কিন্তু ওর মুখ দেখে মনে হল যে ও খুব একটা সরি ফিল করছে ! চেহারায় কেমন একটা দুষ্টামির ভাব ।
-আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন ?
না তোমার উপর রাগ করবো কেন ! তোমাকে তো কোলে তুলে নাচা উচিৎ ! আমাকে খামোকাহ দুইদিন তোমার সাইকেলের পিছন পিছন ঘুড়ালে আর এখন বলছে আমি রাগ করেছি কি না ? ফাজিল !!
-এই রকম করার মানে কি ?
-আপনি মানে বুঝেন নি !
আরে এখানে মানে বোঝার কি আছে ।
আমি বললাম
-না ! কেন করলে !
নাজিফা কিছু না বলে চুপ করে রইলো কিছুক্ষন । তারপর বলল
-আপনাকে আমি বেশ বুদ্ধিমান মনে করতাম । কিন্তু ........ একটা মেয়ে সাইকেল চালাতে পেরেও কেন আবার আপনার কাছে সাইকেল চালানো শিখতে চা্য় বুঝেন না ?

প্রথমে আমি কিছু বুঝতেই পারলাম না মেয়েটা কি বলতে চায় । দেখলাম নাজিফা অন্য দিকে তাকিয়ে আছে ! ওর চোখে মেন হল যেন পানি জমতে শুরু করেছে !
আরে আমি বুঝতে পারিনি এটাতে কান্নার কি হল ?
এই মেয়েগুলা এতো বেকুক...........!!
ওয়েট !
তাই !!
এতোক্ষন আমি বুঝে পারলাম ন।
এতোক্ষন পর আমি বুঝলাম যে কেন সাইকেল চালাতে পেরেই কেন নাজিফা আবার আমার কাছে সাইকেল চালান শিখতে চেয়েছে !
কেন ওর চোখে পানি এসেছে !
বেকুব তো এই মেয়ে না !
বেকুব তো আমি !
মহা বেকুব !!
নাজিফা বলল
-আমি যাই ! দেরি হয়ে যাচ্ছে !
-এখনই যাবে ! এখনও তো সাইকেল চালানো ভাল করে শিখাতেই পালাম না !
এইবার নাজিফার মুখে একটু হাসি আসলো !
নাজিফা বলল
-ইস কত শখ ! আমি আপনার কাছে শিখবো না !
এই বলে সাইকেল টান দিল ।
-এই কই যাও ........।
আমি ছুটলাম ওর পিছন পিছন !!
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×